ঢাকা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পদের পাহাড় গড়া ছিল হানিফের নেশা

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
সম্পদের পাহাড় গড়া ছিল হানিফের নেশা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মাহবুবউল আলম হানিফ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং টানা তিন বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আর এই তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত চার জেলায় অনুসন্ধানে তার সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানা গেছে। মূলত রাজনীতির আড়ালে অর্থ আয় করা ছিল তার নেশা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন মাহবুবউল আলম হানিফ। তার দোসররাও পালিয়ে গেছে।

এদিকে হানিফের ক্ষমতাকে পুঁজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। মাত্র কয়েক বছরেই নিজের আখের গুছিয়েছেন তিনি। অল্পদিনেই হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। হাট ঘাট বা টেন্ডারবাজি সব ছিল তার দখলে। আতার ইশারা ছাড়া যেন কুষ্টিয়ার কোনো গাছের পাতাও নড়ত না। যার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী এবং দুর্দিনের কান্ডারিরা হয়ে পড়েন একঘরে। সরকার পতনের পর থেকে আতাও আত্মগোপনে চলে যান।

হানিফের উত্থান যেভাবে

মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম শেখ পরিবারের জামাই। সেই সূত্র ধরেই হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন পান তিনি। তবে পরাজিত হন। এরপর আরও একবার মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়নবঞ্চিত হন। মনোনয়ন দেওয়া হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। দল ক্ষমতায় আসে। হানিফকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। ওই বছর দলীয় কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি। বাড়তে থাকে প্রভাব-প্রতিপত্তি। দলে তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয় একাধিকবার একই পদ পেয়ে যাওয়ার কারণে। যদিও মন্ত্রী হওয়ার খায়েস থাকলেও আশা পূরণ হয়নি নানা অভিযোগের কারণে।

দলের নেতা-কর্মীদের পাত্তা না দিলেও বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন। এভাবে গত ১৫ বছরে প্রচুর সম্পদের মালিকবনে গেছেন হানিফ। তার পুরো পরিবার থাকে কানাডায়। এ ছাড়া সেখানে তার কয়েকজন ভাইবোনও বাস করেন। কানাডায় হানিফের গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে।

নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়

হানিফের কপাল খুলে যায় শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার কারণে। দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই তার কাছে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক নানা কাজের তদবিরও করতেন। দলের পদ-পদবি দেওয়ার নামে যেমন অর্থ বাণিজ্য করেছেন তেমনি নানা তদবির, টেন্ডার বাণিজ্য, বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। হানিফের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল। কারওয়ান বাজারে বিএমটিসি ভবনে তার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অফিস। সেই অফিস ও কুষ্টিয়ার বাসায় বসেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হানিফের আয়ের টাকার বড় অংশ পাচার করেছেন কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। আর দেশে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এ ছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। 

কুষ্টিয়ায় হানিফ ও তার ভাই আতার নামে মার্কেট, দোকান ও শপিং মলে দোকান আছে বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া শহরের তমিজ উদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘খেলার মাঠের পাশে দুই তলা নতুন যে মার্কেট হয়েছে সেখানে ৮টি দোকান আছে তাদের নামে। দোকানের ভাড়াটিয়ারা জানান, প্রতি মাসে আতা টাকা তুলতেন।’

জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় মহাসড়কের পাশে ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তার ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে।

শহরের বহুতল বিপণিবিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। ভাড়া ওঠে প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা। এ ছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্ল্যাট। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হাউজিংয়ের জমির সঙ্গে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। আতার নামে হলেও এর পেছনে ছিলেন হানিফ। পিটিআই রোডে ৪ কাঠা জমির ওপর তিন তলা বাড়ি কাগজে-কলমে আতা ও তার স্ত্রীর নামে হলেও হানিফের অর্থে করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। প্রথম দিকে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড এ বাড়িতে লাগানো হয়। 

আতার সম্পদ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করার পর সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার, ব্যাংকে ডিপোজিট আছে।

দল ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ী অজয় সুরেকার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় কোটি কোটি লগ্নি করা আছে হানিফের। এসব কারণে অজয় সুরেকাকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ করেন হানিফ। এসব বিষয়ে জানতে মুঠো ফোনে অজয় সুরেকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জোর করে দলীয় পদ দেওয়া ছাড়া হানিফের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। আর ওই পদ-পদবির পরিচয়ও তিনি দিতেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হানিফ প্রভাব খাটিয়ে নদী খননের বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন সারা দেশে। তার নিজের একাধিক ড্রেজার আছে খননের জন্য। সর্বশেষ গড়াই খননের একটি কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। সরকারি খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচে তিনি কাজ করেন। এতে তার নিজের ৩টি ড্রেজার কাজে লাগান। প্রতি ড্রেজারের দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা আছে হানিফের। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হানিফের নগদ টাকার পরিমাণ বহু গুণ বেড়েছে বলে দেখা গেছে।

২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে একটি সাধারণ মানের গাড়িতে চড়লেও পরে তিনি একাধিক দামি গাড়ি ক্রয় করেন। যার প্রতিটির দাম কোটি টাকার ওপরে। রাজধানীর গুলশানে তার বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে, আছে বনানীতেও। এ ছাড়া খুলনায় তার মাছের ঘেরের সঙ্গে আছে রিসোর্ট। জমি আছে পাবনার ঈশ্বরদী, কক্সবাজারের টেকনাফে। পার্টনারে গাজীপুরে নির্মাণ করেছেন একাধিক রিসোর্ট।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিতর্কিত একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে বেনামে যৌথ ব্যবসা আছে তার। নদী খনন ও শাসনের কাজ করতেন তারা দুজন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। তবে হানিফের কারণে পার পেয়ে গেছেন ঠিকাদার।

সর্বশেষ কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় পদ্মা নদীশাসনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। কাজ ভাগাভাগি হয় হানিফের ঢাকার অফিসে বসে। সেখানে হানিফ একাই ৫০০ কোটি টাকার কাজ নিজের কবজায় নিয়ে নেন। এসব কাজ পরে কমিশনে বিক্রি করে দেন। এ কাজ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ। তার সময় কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প, কুষ্টিয়া শহরে ফোর লেন করা, কুষ্টিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ, শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতু নির্মাণ, মুজিবনগর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া সম্প্রতি পদ্মা নদীশাসনে বড় একটি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিটি থেকেই হানিফ আগাম বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকার কমিশন। প্রতিটি প্রকল্প থেকে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ কমিশন আদায় হতো। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, বালুর ঘাটের কমিশনসহ অন্যান্য কাজ থেকে যে আয় হতো তা চাচাতো ভাই আতার মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়া মেডিকেলের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে হানিফের পছন্দের প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ।

কুষ্টিয়ার সব ঠিকাদারি কাজ, হাট-ঘাটের ইজারা, সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে নিয়োগ, পদ্মা ও গড়াই নদীর বালু মহাল থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্র থেকে কমিশন আদায় করেছেন হানিফ। এমন কি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পদ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে হানিফের বিরুদ্ধে।

প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন

হানিফের অত্যাচার নির্যাতন থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা যেমন বাদ যাননি তেমনি বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েন তার বাহিনী দিয়ে। জেলা যুবদল নেতা আল আমিন কানাই বলেন, গত নির্বাচনের আগে একজন কাউন্সিলর আমার বাসায় গিয়ে বলেন, হানিফের ভাই আতা সাহেব চা খাবেন। আমি বলি এত বড় নেতার সঙ্গে চা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর থেকে তারা আমার বাড়িতে মাস্তান পাঠিয়ে হেনস্তা করেছে, আমার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন আমি ব্রেন স্ট্রোকের রোগী। মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা আমাকেসহ দলের বহু নেতাকে গত ১৬ বছরে শেষ করে দিয়েছে।

সাংবাদিক নির্যাতন

আওয়ামী লীগ ও হানিফের নামে নিউজ করে মামলা ও হামলার স্বীকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-ছাড়া হয়েছেন একাধিক সংবাদকর্মী। মামলা দিয়ে জেলে পাঠান যুগান্তর প্রতিনিধি এ এম জুবায়েদ রিপনসহ বেশ কয়েকজনকে। এর বাইরে জুয়েল আহম্মেদ শাহিন ও অঞ্জন শুভ নামের স্থানীয় দুই সাংবাদিক হানিফের রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে যান। 

৫ আগস্টের পর

হানিফ ও আতাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। গা-ঢাকা দিয়েছেন সব নেতা। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় বর্তমান পরিস্থিতি ও হানিফের বিষয়ে। বেশির ভাগই বলছেন, হানিফ রাজনীতি করার জন্য কুষ্টিয়ায় আসেননি। এসেছেন বাণিজ্য করতে। 

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন বলেন, হানিফ-আতা এই দুই ভাইয়ের কারণে কুষ্টিয়ার রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। একক আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছেন। 

বিপুল সম্পদের মালিক আতা

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন আতা। ঘষলেই বেরুত টাকা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামের প্রয়াত আবদুস সাত্তারের ছেলে। আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাবা আফসার আলীর চাচাতো ভাই। সেই সূত্রে হানিফ আর আতা চাচাতো ভাই। হানিফের পর আতা ছিলেন কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি। দুই ভাই মিলে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সব সরকারি কাজ ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এভাবে আতা জিরো থেকে বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। একসময় মোটরসাইকেলে চড়লেও এখন তার কোটি টাকা দামের একাধিক গাড়ি আছে। স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেও স্বামীর টাকায় তিনিও কোটিপতি। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে আতার।

দলের পদ-পদবি ও টেন্ডারে কাজ পেতে আতার কাছে ধরনা দিতে হতো সবাইকে। তার অত্যাচার ও নির্যাতনে দল ছেড়েছেন অনেকে। এমনকি ঠিকাদারি কাজও ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। অবৈধ বালুঘাট, হাট-বাজার, বিল ও বাঁওড় নিয়ন্ত্রণ করতেন আতা। তিনি এভাবে গত ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আতা গা-ঢাকা দেন। তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে। একই অবস্থা হানিফের বাড়িরও। আতার স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে দুনীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। আতার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময় মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।

২০২২ সালে আতার বিপুল অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে বলা হয়, ১০ বছরের ব্যবধানে বাড়ি-গাড়িসহ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিকবনে গেছেন আতা। এই অভিযোগ ওঠার পর ২০২২ সালে দুদক তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।

আতা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া অফিস থেকে সাড়ে ৫ কাঠার প্লট নিয়েছেন। শহরের হাউজিং এলাকায় ওই জমিতে ৭ তলা ভবনের কাজ চলছে। স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রীর নামে তিনি ওই সম্পদ করেছেন। এখানে বিনিয়োগের ব্যাপারে আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। অথচ ভবন করতেই খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। আতা-ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা এ তথ্য দেন। 

আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এবং মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে মাহাবুবউল আলম হানিফ এবং তার ভাই আতাউর রহমান আতার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

৪০ বছর ঘুরে মামলায় জিতলেন হরেন্দ্রনাথ, পাবেন ২০ লাখ টাকা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
৪০ বছর ঘুরে মামলায় জিতলেন হরেন্দ্রনাথ, পাবেন ২০ লাখ টাকা
হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র

আদালতের বারান্দায় ৪০ বছর ঘুরে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। অবশেষে গতকাল সোমবার আদালতে প্রমাণ হয়েছে তার বিরুদ্ধে করা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলাটি ভুয়া ছিল। এ কারণে হরেন্দ্রনাথকে মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে আগামী তিন মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।

আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। বিশ্বাস ছিল আমি জিতব। আদালতের এই রায়ে মোটামুটি খুশি। ৪০ বছর আইনি লড়াই করে সর্বস্বান্ত হয়েছি। মামলা চালাতে ১০-১২ বিঘা ফসলি জমি বিক্রি করতে হয়েছে। ভিটেমাটি, ঘরও আমার নেই। এখন আমি ভূমিহীন। আমার দুই মেয়ে। ঢাকার গাবতলীতে বড় মেয়ের বাসায় থাকতে হচ্ছে। মামলা চালানোর সামর্থ্যও আমার ছিল না। দুই বছর আগে ভূমিহীন হিসেবে আবেদন করে সরকারি উকিল নিয়ে মামলা চালিয়েছি।’ 

হরেন্দ্রনাথ আরও জানান, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার আরও একটি মামলা রয়েছে। ২০১২ সালে করা সেই মামলায় ব্যাংকে চাকরির শুরু থেকে অবসর সময় (১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওনা ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা চেয়েছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা সেই রিটের শুনানি আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে বলেও জানান তিনি। 

আদালতে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান। আর হরেন্দ্রনাথের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবায় নিযুক্ত হয়ে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে মামলায় লড়েছেন। মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, ‘এই বৃদ্ধ ব্যক্তি আজ ভারমুক্ত হলেন। ১৯৮৫ সালের একটি ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এরপর সব আদালতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিটি ধাপেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সর্বশেষ আপিলেও জয়ী হয়েছেন হরেন্দ্রনাথ। আরজিতে আদালত হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বছর আগে ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে। তবে সেই মামলায় খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করে মামলাটি জিইয়ে রাখে। এভাবে চার দশক কেটে গেলেও আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বিএ পাস করার পর ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় কাজ শুরু করেন হরেন্দ্রনাথ। চাকরিকালে রেমিট্যান্সসংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্রনাথসহ সবাই। একই বছর অপর এক মামলায় ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। 

আদালতের নির্দেশে সাজার পর অভিযুক্ত হরেন্দ্রসহ সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন। 

মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট এ আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ এএম
প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি
প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি। খবরের কাগজ গ্রাফিকস

চলতি সপ্তাহেই প্রশাসনে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে বড় পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তাদের খসড়া তালিকা প্রস্তুতির কাজ সংশ্লিষ্ট শাখা শেষ করেছে। এখন সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সময় নির্ধারণ করে দিলে এ-সংক্রান্ত সভা আহ্বান করা হবে। সভায় পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

এবার পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ২৪ ব্যাচের উপসচিব পদের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব ও ৩০ ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিব পদের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে।

তবে এবারই প্রশাসন ক্যাডার পদের বাইরে অন্য ক্যাডার পদ থেকেও কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য একই সভায় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এর আগে সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ক্যাডার পদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসএসবির ভিন্ন ভিন্ন সভায় বিবেচনা করা হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ও অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫৭২ জন কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী পদ থেকে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৩২৯ জন ও অন্য ক্যাডার থেকে ২২৩ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য এবার বিবেচনায় নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কর্মকর্তা জানান, আসন্ন সভায় এর আগে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। যেহেতু এবার একসঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, তাই সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের তালিকা একসঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এসএসবি কমিটি পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে দিলেই তালিকা প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

পদোন্নতিযোগ্য এসব কর্মকর্তা অনেক আগেই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার পদোন্নতি দেওয়া হলে এই পদেই অনুমোদিত পদ থেকে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা থাকবেন অনেক বেশি।

অনেক কর্মকর্তাই আলোচনাকালে জানান, পদোন্নতি পেলেও এসব কর্মকর্তার অনেকেই নির্ধারিত ডেস্ক ও দায়িত্ব পাননি এখনো। এমনও অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি পেলেও দায়িত্ব পালন করছেন নিম্নতম পদে। এর বাইরে পদমর্যাদা অনুযায়ী উপযুক্ত পরিসরের কক্ষ না পেয়ে একটি কক্ষকে ভাগাভাগি করে অন্য কর্মকর্তার সঙ্গে স্বল্প পরিসরের কক্ষে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ রয়েছে। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সবাই পদোন্নতি চান। কিন্তু সচিবালয়ের স্বল্প পরিসরের কোনো কক্ষে বসার ব্যবস্থা হলে আবার সমালোচনা হয়। আসলে প্রশাসনে অপ্রাপ্তির অভিযোগ বহুদিনের। সব অভিযোগই একবারে সমাধান করা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। এটাও কর্মকর্তাদের বিচেনায় রাখা উচিত বলে মনে করেন ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।

সবশেষ চলতি বছর গত আগস্টে ২০০ উপসচিব পদের কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। তাছাড়া এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে অন্য ক্যাডার পদের কর্মকর্তাসহ ২৩১ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনে যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ প্রায় ৫০০টি। এসব পদে কর্মরত আছেন ৮৫৬ জন কর্মকর্তা। এ ছাড়া সুপারনিউমারারি পদসহ প্রশাসনে উপসচিবের অনুমোদিত পদ আছে ১ হাজার ৪২৮টি। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৯৩ জন কর্মকর্তা।

‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। উপসচিব পদে কমপক্ষে ৫ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছর বা উপসচিব পদে কমপক্ষে ৩ বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, বলা হয়েছে বিধিতে।

একই বিধিমালায় উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, পদোন্নতি হলেও পদোন্নতি পাওয়া বেশির ভাগ যুগ্ম সচিবকে আগের কর্মস্থলে ইনসিটু হিসেবে থাকতে হবে। এমনিতেই বর্তমানে অনুমোদিত পদ থেকে একই পদের কর্মকর্তা রয়েছেন অনেক বেশি। ফলে এসব কর্মকর্তার অনেকেই নিচের পদে কাজ করছেন। তাই পদোন্নতি পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকেই ইনসিটু হিসেবে আগের কর্মস্থলেই থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদ

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

দেশে চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া মোট শিশুর সংখ্যা ১০৬২। আর বিভিন্নভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৬৯ জন নারী। একই সময়ে মব লিঞ্চিংয়ের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়েছেন ১০০ জন যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে হওয়া এসব ঘটনা যারা জাতির সামনে নিয়ে আসেন সেই সাংবাদিক শ্রেণির মধ্যে ৪৯৭ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা উঠে এসেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এটিকে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষক আর মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন দেশের মানবাধিকার রক্ষায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই। আর এমন অবস্থার মধ্যেই আজ ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের এ দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এতে বলা হয় জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। এই ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিন ১০ ডিসেম্বরকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আসকের ওই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে শুধু হত্যার শিকার হয়েছে ৪৮২ শিশু। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ২৮০ জন এবং শূন্য থেকে ৬ বছর বয়সী ৮২ জন। আর নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখ্যা ৫৮০। এ ছাড়া ওই সময়ে ৩৬৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে। 

বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ওই সময়ে মব লিঞ্চিংয়ের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়েছে ১০০ জন। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে মব লিঞ্চিংয়ের শিকার জয়েছেন ৫১ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৬, ২০২১ সালে ২৮ জন এবং ২০২০ সালে ছিল ৩৫ জন।

মূলত যখন একজন ব্যক্তিকে অপরাধী বলে সন্দেহ করে একদল লোক ভিড়ের মধ্যে মারধর করে বা হত্যা করে সেটাকেই মব লিঞ্চিং বা মব জাস্টিস বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এ বছর মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণ হিসেবে তারা নানা ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত থাকা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও জমানো ক্ষোভসহ আরও অনেক কারণের কথা বলছেন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মব লিঞ্চিংয়ে মানুষ হত্যা, গণপিটুনি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুট, অনেকেই চাকরিহারা ও পদহারা হয়েছেন। যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক ও কর্মজীবনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ সুবিধাবঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কষ্ট আছে, ক্ষোভও আছে। এসব কারণে কিছু মানুষ সংঘবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাকে হেনস্তা করছে। কাউকে চাকরিচ্যুত বা পদচ্যুত করছে, তো কাউকে কিছু না জেনেই অন্য মানুষের সঙ্গে মিলে মারতে মারতে মেরে ফেলছে। যা আইনের শাসনের পরিপন্থি। তাই যেকোনো সমস্যাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করাই সবার জন্য শ্রেয়। কারণ কেউ যদি তার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার নিজেই করেন তবে সমাজে একটি অস্থির অবস্থা তৈরি হয়। তখন সুযোগসন্ধানী মহল এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।’ 

মব লিঞ্চিং বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবসময়ই আমরা দেখে এসেছি সরকার পরিবর্তনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা বেড়ে যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এগুলো করছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও প্রতিশ্রুতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি এমন ঘটনা না ঘটানোর জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আমি এটাকে মব জাস্টিস বলতে চাই না কারণ এটির সঙ্গে জাস্টিস কথাটি যুক্ত করলে আসলে জাস্টিস শব্দটির অবমাননা হয়। আমি এটাকে মব ভায়োলেন্স বলি। বর্তমানে এটির কারণে আমরা মানবাধিকারের দিক থেকে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। এটা থামানোর জন্য আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে এবং আইন হাতে তুলে নেওয়া যে সমান অপরাধ সেটা মানুষকে বোঝাতে এবং সচেতন করতে হবে। আর যখনই এমন ঘটনা ঘটবে তখন তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। 

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই
দুর্নীতি দমন কমিশন

দেশের কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই। গত এক মাসে হাজারও অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। কিন্তু দুদকের কর্মকর্তারা নিষ্ক্রিয়। গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করায় আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কমিশন পুনর্গঠন হলে এসব অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম কমিশনবিহীন দুদক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করতে যাচ্ছে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই দিবস পালনে ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও প্রয়োজনীয় আলোচনা সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতি দিনই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা হচ্ছে। সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিড়ম্বনা, হয়রানি ও ঘুষ দুর্নীতির শিকার হয়ে দুদকে অভিযোগ দিচ্ছেন অনেকেই। বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, হাসপাতাল, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অবৈধ ঘুষ-দুনীতি ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছেই। কখনো দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে ফোন করে, আবার কখনো রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হচ্ছে লিখিত অভিযোগ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোতেও এ ধরনের অভিযোগ জমা হচ্ছে। কিন্তু কমিশনবিহীন দুদকের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আইন অনুযায়ী কমিশনের অনুমোদন ছাড়া এসব অভিযোগের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার দুদক কর্মকর্তাদের নেই। সরকারি দপ্তরে চলমান অনিয়ম-দুর্নীতি বা ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। কমিশন না‌ থাকায় সেই কাজ বন্ধ রয়েছে।

প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সরাসরি ঘুষ লেনদেন ধরতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ২৩টি অভিযান চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। কিন্তু কমিশন পদত্যাগ করার পর শত অভিযোগ এলেও একটিও অভিযান হয়নি।

এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণত অভিযোগগুলো অনুসন্ধানযোগ্য কি না তা খতিয়ে দেখতে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি কাজ করে থাকে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করতে হলে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন। গত ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেছে। এখন যেহেতু কমিশন নেই, ফলে নুতন কোনো অনুসন্ধান, মামলা দায়ের বা আদালতে চার্জশিট দাখিলসহ এ ধরনের আইনগত কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ (৯ ডিসেম্বর)। প্রতিবছর এই দিনটিতে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে থাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা ও করণীয় সংক্রান্ত মূল্যবান আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকতেন রাষ্ট্রপতি। বিশেষ অতিথি থাকতেন প্রধান বিচারপতি। সভাপতিত্ব করতেন দুদক চেয়ারম্যান। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। কারণ, চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন। কমিশনবিহীন দুদকের এবারের আয়োজনে ততটা আড়ম্বর নেই। এবার দুদক সচিবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথি থাকবেন দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবছর এই আলোচনা সভাটি দুদক ভবন সংলগ্ন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে হয়েছে। এবার সেখানে হচ্ছে না। একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সেটি বরাদ্দ দেননি। ফলে এ বছর আলোচনাটি হবে কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সকাল ৮টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠিত হবে। মিট দ্য প্রেসে দুদকের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরবেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। 

কমিশন পদত্যাগ করার পর চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এই কমিটি কয়েক দফা মিটিং করেছেন। তারা ৬ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। এর মধ্যে তিনজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এবং তিন কমিশনারের মধ্যে একজনকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে কমিশন পুনর্গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। 

‘মরে গেলেই ভালো হতো এত যন্ত্রণা পেতাম না’

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ এএম
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
‘মরে গেলেই ভালো হতো এত যন্ত্রণা পেতাম না’
পেটে গুলিবিদ্ধ রবিউল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

রবিউল ইসলাম (১৯) একজন কোরআনে হাফেজ। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে দিনাজপুর সদর জজকোর্টের গোল ঘরের সামনে পেটে গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশের শটগান থেকে তার পেটে অসংখ্য ছররা গুলি লাগে। দিনাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গোসাইপুর করিমপাড়া মহল্লার হতদরিদ্র শহিদুল ইসলামের একমাত্র ছেলে রবিউল।

রবিউল বলেন, ‘৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজের খরচে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। এরপর ৯ দিন বিভিন্ন রকমের টেস্ট, ওষুধে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য অনেক ধার-দেনা করেছেন। এতেও আমার অবস্থার উন্নতি হয়নি।’
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।  পেটের ভিতরে থাকা তিন শরও বেশি ছররা গুলির মধ্যে ৫০টা গুলি বিভিন্ন সময়ে অপারেশন করে বের করা হয়। রবিউল বলেছেন, ‘সেখানে প্রায় টানা ২৫ দিন চিকিৎসা গ্রহণ করার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ১৫ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিনাজপুরে ফিরে আসি। ডাক্তার সেই সময় একটি মলম কিনে লাগাতে বলেছিলেন। দাম ১ হাজার টাকা। টাকার অভাবে সেই মলমটি পর্যন্ত কিনতে পারিনি। পেটের নাড়িভুঁড়িতে এখনো অসংখ্য গুলি লেগে আছে। এখনো মাঝে-মধ্যেই পেটের যন্ত্রণায় অস্থির লাগে। কোনো কাজ করতে পারি না। এমনকি অটোরিকশাও চালাতে পারি না।’ 

রবিউলের বৃদ্ধ বাবা তেমন কাজ করেন না। তাদের কোনো আয়-রোজগার নেই। রবিউল বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয় সেদিন যদি মৃত্যুটা হয়ে যেত তাহলে হয়তো আজকের এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। এ পর্যন্ত কেউ আর্থিক সহযোগিতা করেনি। এমনকি সরকারিভাবেও না। শুধু আশার বাণী আর আশার বাণী শুনতে হচ্ছে।’
রবিউলরা এক ভাই তিন বোন। তিনি সবার ছোট। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকে। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তার বাবা খুব কষ্ট করে তাকে স্থানীয় এতিমখানার মাদ্রাসায় রেখে হাফিজিয়া পড়িয়েছেন। তিনি নিজেও একজন কোরআনে হাফেজ।’

রবিউল জানালেন, বাবার আর্থিক দুরবস্থা দেখে ভাড়ায় একটি অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছিলেন। মায়ের কোমরের হাড় ক্ষয় যাওয়ায় মা তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। অটো চালিয়ে মায়ের প্রতিদিনের ওষুধ কেনার দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা জোগান দিতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। রবিউলের কথায়, ‘এখন আমি নিজেই আহত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছি। হাঁটাচলা করতে পারলেও আয় রোজগার নেই। অটোরিকশাও চালাতে পারছি না। নতুন বাংলাদেশ নতুনভাবে অর্জন করেছি। দেশের প্রয়োজনে এবার আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বর্তমান সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমার কোনো কিছু হয়ে গেলে আফসোস নেই। তবে আমার পরিবারের পাশে যেন সরকার দাঁড়ায়।’ 

রবিউল বলেন, ‘আমার চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় চার-পাঁচ লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছে। পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত বাড়িতে আসছেন। তাদের দেখলেই দুঃখ-যন্ত্রণায় চোখের পানি টপটপ করে পড়তে থাকে। মনে হয় তাদের পাওনাটা শোধ করতে না পারলে আমি কবরে গিয়েও শান্তি পাব না।’ 

রবিউল ইসলামের মা লাইলী বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আমিও বাড়ির পাশেই একটি আলুর কোল্ডস্টোরে কাজ করি। ছেলে ৪ আগস্ট সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিল। দুপুরে আমি খবর পাই আমার ছেলে আন্দোলনে গেছে। পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এই খবরটি শোনার পর দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি, ছেলের লাশ দেখার জন্য। দৌড়ে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে গেছি। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দেখি আমার ছেলে কাতরাচ্ছে। রক্তে শরীর ভেসে যাচ্ছে। চিৎকার করেছি আর বলেছি আমার ছেলেকে বাঁচাও। আমি ছেলের জীবনটা ভিক্ষা চাই, আল্লাহ। আমি নিজে অসুস্থ। ছেলেকে চিকিৎসা করাব কী করে? সকালে খেলে দুপুরের খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় আমাদের। আর দুপুরে খেলে রাতে মাঝেমধ্যে এখনো না খেয়ে থাকতে হয়। সরকার যদি মুখ তুলে চাইত আমরা বাঁইচা যাইতাম।’

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });