চলতি মাসে (নভেম্বর) ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলেও ডেঙ্গুর বাড়ার কারণ নাগরিকদের অসচেতনতা।
ফলে সরকারের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সহসাই এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চলতি মাসের প্রথম ১০ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু এ মৌসুমের যেকোনো মাসের প্রথম ১০ দিনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
রবিবার (১০ নেভম্বর) সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৬ জন, মারা গেছেন ৫৮ জন। চলতি বছর এ পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত রোগটিতে ৩৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমবে না। তারা বলেছেন, সারা দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় গলদ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থাসহ অন্য আরও বেশকিছু কারণে ডেঙ্গু কমছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১০৫৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩৯ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে ৩১১ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৫ জনের। এপ্রিলে ৫০৪ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ২ জনের। মে মাসে ভর্তি হন ৬৪৪ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৮ জনের। জুলাই মাসে ভর্তি হন ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের।
জুলাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি রোগী শনাক্ত হয় আগস্টে। এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে। আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি হন ১৮ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয় ৮০ জনের। অক্টোবরে ভর্তি হন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন, মৃত্যু হয় ১৩৪ জনের।
ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। সে সময় ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান। এর আগে ২২ সালে মারা যান ২৮১ জন। ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০ সালে করোনার কারণে ডেঙ্গুর প্রভাব বোঝা যায়নি। ১৯ সালে মৃত্যু হয় অন্তত ৩০০ জনের।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে মশার ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু থেকে নাগরিকদের রক্ষায় সরকার জনসচেতনতা সৃষ্টি, মশার প্রজননস্থল বিনষ্ট করা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং লার্ভা ও মশা নিধন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধন অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে। এসব কার্যক্রম সমন্বয় ও নিবিড় তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ১০টি কমিটি গঠন করেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগী ও মারা যাওয়া রোগীর নামের তালিকা (ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ) সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোয় নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুদে বার্তা ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।