ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পেতে ৬ থেকে ৮ মাস!

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পিএম
রেডিওথেরাপির সিরিয়াল পেতে ৬ থেকে ৮ মাস!
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত মেশিনের অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

গত ৬ আগস্ট, বেলা ১টা। রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। রেডিওথেরাপির তারিখ নির্ধারণ ও ফলোআপ রোগীদের জন্য ডাক্তারদের বোর্ড মিটিংয়ের রুম। রুমের সামনে দুই পাশের বেঞ্চের কোথাও খালি নেই। রোগী বসিয়ে স্বজনদের অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। রুমের ভেতর রোগী দেখায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা। ভেতরে তখন চারজন রোগী। বাইরে থেকে কেউ কেউ উঠে উঁকি দিচ্ছেন ডাক্তারদের রুমে।

কেউ গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসছেন, কখন তার সিরিয়াল। কত দেরি হবে? রুমের উল্টো পাশে বসে বারবার একজন বলছিলেন সেই সকাল থেকে বসে আছি! কখন যে সিরিয়াল আসে! তার সঙ্গে একজন নারীও আছেন। কথা হলো মাসউদ নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী মণ্ডলভোগ গ্রামে; এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে। 

মাসউদ জানান, বছরখানেক আগে স্ত্রীর স্তনে ক্যানসার ধরা পড়ে। প্রথমে ঢাকার মোহাম্মপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা শুরু করেন। ৩০ হাজারের বেশি খরচ করে দুটি কেমোথেরাপি দেন। সেখানে অপারেশন, কেমো ও রেডিওথেরাপি সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা। এ কথা শুনে বাজ পড়ে পেশায় গাড়িচালক মাসউদের মাথায়। খোঁজখবর করে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে। এখানে আসার পর আরও ছয়টি কেমোথেরাপি দেন। এর মধ্যে দুটি থেরাপি দেওয়ার সময় কিছু ওষুধ কিনে দিতে হয়। যেগুলোর সাপ্লাই ছিল না। ৫ হাজার টাকার মতো ওষুধ কিনে দিতে হয়েছিল।

কেমো দেওয়ার পর ক্যানসার হাসপাতালেই অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা রেডিওথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন। এতদিন সব ঠিকঠাক থাকলেও এবার ঘটে বিপত্তি। রেডিওথেরাপির ডেট নিতে গিয়ে জানতে পারেন আগামী ছয় মাসে কোনো সিরিয়াল নেই। গত ১৫ মে অপারেশনের ছয় মাস পর গত ৮ অক্টোবর রেডিওথেরাপি শুরু হয়। ১৯ দিন থেরাপি দেওয়া হয়। শেষ হয় ৫ নভেম্বর।

৬ নভেম্বর আসেন ফলোআপের জন্য। বেলা ১টার পর তারা চিকিৎসক দেখাতে পারেন। মাসউদ জানান, রেডিওথেরাপির জন্য প্রতি মাসে একবার করে আসতেন। এলে বলা হতো পরের মাসে এসে খোঁজ নেন। এভাবে ছয় মাসে ছয়বার এসেছেন। প্রতিবার আসা-থাকা-খাওয়ার ব্যয় বহন করা তাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর।

শুধু মাসউদের স্ত্রীরই নয়; দুই বছর ধরে সব রোগীরই রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন যারা রেডিওথেরাপি নেওয়ার জন্য আসছেন, তাদের ২০২৫ সালের জুন-জুলাই মাসে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। তার আগে কোনো সিরিয়াল নেই। রোগীরা জানান, কেমোথেরাপির সিরিয়াল পেতে সময় লাগছে না। বহির্বিভাগে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর কয়েক দিনের মাথায়ই কেমোথেরাপির ডেট পাচ্ছেন। কেমোতে দেরি হচ্ছে না। কিন্তু কেমো দেওয়ার পর বা অপারেশনের পর যখন রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হচ্ছে, তখনই ঘটছে বিপত্তি। সিরিয়াল পেতে সময় লাগছে ছয় থেকে আট মাস!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ছয়টি মেশিনে ক্যানসারের রোগীদের রেডিওথেরাপি দেওয়া হতো। চারটি মেশিন দুই বছর আগেই ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়। তার পর থেকে সচল মাত্র দুটি মেশিন। সেই দুটির একটিতে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়। সেটিতে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

পর্যাপ্তসংখ্যক রেডিওথেরাপির মেশিন না থাকায় মারাত্মকভাবে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন ক্যানসার আক্রান্তদের একটি বড় অংশ। যারা সেবা পাচ্ছেন, তাদেরও সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাসের পর মাস। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেডিওথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন হলেও সেই রোগীর ছয় থেকে আট মাসের আগে মিলছে না এই সিরিয়াল। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি মেশিন ইনস্টলের কাজ চলছে। জানুয়ারিতে ওই দুটি মেশিনে রোগীর সেবা দেওয়া শুরু হতে পারে। 

দেশে বর্তমানে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা কত, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। ধারণা করা হয়, দেশে বর্তমানে ২০ লক্ষাধিক ক্যানসার রোগী রয়েছেন। প্রতিবছর নতুন রোগী দেড় থেকে দুই লাখ যুক্ত হচ্ছেন। আর বছরে মারা যাচ্ছেন এক লাখের মতো। 

বছরে দুই লাখের মতো নতুন রোগী হলেও ক্যানসার হাসপাতালে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাকি রোগীদের মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছলরা বেসরকারি পর্যায়ে কিংবা ঢাকায় বা বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। একটা অংশ চলে যান দেশের বাইরে। আর দরিদ্রদের বড় একটা অংশ বঞ্চিত হন চিকিৎসা থেকে।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যানসার রোগীদের চার ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি। বেশির ভাগ রোগীরই এই চার ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নির্ধারিত সময়ে যদি কোনো একটার ব্যত্যয় ঘটে, সে ক্ষেত্রে ক্যানসার আবার ফিরে আসে এবং রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে রোগী মারা যান।

ক্যানসার হাসপাতালের চিফ রেডিও থেরাপি টেকনোলজিস্ট মো. মামুনুর রশীদ বলেন, এখন প্রতিদিন রেডিওথেরাপি পাচ্ছেন মাত্র ২২০ থেকে ২৩০ জন রোগী। আরও দুটি মেশিন ইনস্টল (বসানো) করা হলে হয়তো ৪৪০ থেকে ৪৬০ জনকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। রোগীর চাপ সামলাতে এই মুহূর্তে লোকবল বাড়িয়ে অন্তত ১০টি মেশিন সচল রাখা প্রয়োজন।

জানা গেছে, এক-দুই দিন থেকে শুরু করে রোগী বুঝে ৩৩ থেকে ৩৫ দিন রেডিয়েশন দেওয়া হয়। এক-দুই দিনের রোগী একেবারেই কম। প্যালিয়েটিভ পর্যায়ের, অর্থাৎ শেষ পর্যায়ের রোগীকে কিছুটা ব্যথামুক্ত রাখার জন্য এক-দুই দিন রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। স্তন ক্যানসারের রোগীদের ১৫ থেকে ২৫ দিন, জরায়ুমুখের ক্যানসারের রোগীদের ২৫ দিন, হেড-নেকজাতীয় ক্যানসারের রোগীদের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর্যন্ত দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য বর্তমানে যে দুটি মেশিন সচল আছে, তার মধ্যে একটি মেশিনে তিন বছর ধরে প্রায়ই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো মেইনটেন্যান্স খরচ দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানের টাকায় এটি মেরামত করে কোনো রকম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

রেডিওথেরাপি রোগীর শরীরের কোথায় দেওয়া হবে সেটি আগে প্ল্যান করতে হয়। সে জন্য তিনটি মেশিন ছিল। একটি কনভেনশনাল সিমুলেটর এবং অন্যটি সিটি সিমুলেটর। এর মধ্যে সিটি সিমুলেটর মেশিনটি নষ্ট। আর কনভেনশনাল সিমুলেটর মেশিনটি পাঁচ বছর ধরেই অচল। দুটি বাকি থেরাপি মেশিনের একটি চালু আছে। আরেকটি দ্রুত চালু হবে। প্ল্যানিং মেশিন না থাকায় এখন অ্যানালগ পদ্ধতিতে প্ল্যান করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি মেশিন চালানোর জন্য প্রতি শিফটে দুজন করে দক্ষ রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। সকাল-সন্ধ্যা দুই শিফটে ভাগ করে রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিন ইনস্টল করা হলে এগুলোসহ অন্যান্য মেশিন চালানোর জন্য ৪৮ থেকে ৫০ জন দক্ষ রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। কিন্তু আছেন মাত্র ১৩ জন। শুধু মেশিন বসালেই হবে না। মেশিন চালানোর জন্য দক্ষ জনবলও বৃদ্ধি করতে হবে। 

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী নিজামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিদ্যানন্দের উদ্যোগ সাহরির আয়োজনে সবার কদর সমান

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫২ এএম
সাহরির আয়োজনে সবার কদর সমান
চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানের প্যান্ডেলে সাহরি খাচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত কিছু মানুষ। ছবি: খবরের কাগজ

২০ মার্চ রাত পৌনে ৩টা। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানের প্যান্ডেলের ভেতর কিছু মানুষকে লাইন ধরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। একটু ভেতরে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে সেখানে সাহরি খাওয়ার আয়োজন চলছে। ভেতরে গেলে জানা যায়, শুধু ভাসমান মানুষ নয়, স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে এসেছেন। আশপাশের অনেক শিক্ষার্থীও এখানে নিয়মিত সাহরি খান। তবে তারা খাওয়ার পাশাপাশি যতক্ষণ থাকেন স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে সহযোগিতা করেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে এখানে সাহরি ও ইফতারের আয়োজন করে।
 
ষোলশহর স্টেশনসংলগ্ন বস্তি থেকে সাহরি খেতে আসা নূর মিয়া খবরের কাগজকে জানান, তিনি যেদিন শুনেছেন, এখানে সাহরি খাওয়ানো হচ্ছে সেদিন থেকেই আসতে শুরু করেন। প্রথম দিন তিনি একা এলেও এখন স্ত্রী ও বড় ছেলেকেও নিয়ে আসেন। পরিবারের যেসব সদস্য রোজা রাখেন না তাদের আনেন না বলে জানান তিনি।

ঢাকা থেকে নাইটকোচে আসা রাঙ্গুনীয়ার বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন জানান, সাহরির সময় হয়ে গেছে। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি খেতে এসেছেন। এ ধরনের আয়োজনের জন্য তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাহরি খাওয়া রোজাদারের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। প্রথম দিন তারা দেড় শ মানুষের সাহরি খাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। এখন ৩০০-এর কাছাকাছি মানুষ খাচ্ছেন।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবী ওমর ফারুক খবরের কাগজকে জানান, তারা প্রথম সাহরি খাওয়ার আয়োজন নিউ মার্কেট এলাকায় করেছিলেন। সেদিন দেড় শতাধিক রোজাদার সাহরি খান। পরদিন সাহরি খাওয়ানোর স্থান সরিয়ে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় রোজায়ও প্রায় একই পরিমাণ লোক সাহরি খান। এরপর খবরটি আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে দিন দিন লোক বাড়তে থাকে। এখানে যারা খান তাদের মধ্যে ভাসমান মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিছু কিছু শিক্ষার্থীও আসেন, তারা সাহরি খাওয়ার পাশাপাশি কাজেও হাত লাগান। আশপাশের অনেক পরিবারও এখানে খেতে চলে আসে। সবাইকে চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এখানে সবার কদর সমান। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইফতারের পরপর তারা সাহরির রান্নার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সাগরিকা এলাকা থেকে প্রতিদিন রান্না করে খাবার নিয়ে আসা হয়। রাত ৩টার দিকে খাওয়া শুরু হয়। এখন ৩০০-এর কাছাকাছি রোজাদার প্রতি রাতে সাহরি খাচ্ছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
 
খাবারের মেন্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন গরু কিংবা মুরগির মাংসের সঙ্গে ডিম এবং ডাল থাকে। যেদিন শুধু ডিম থাকে সেদিন ডাল-ভাতের সঙ্গে দুটি ডিম দেওয়া হয়। কখনো মানুষ বেশি চলে এলে শেষের দিকে হয়তো কাউকে ডিম ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়। এই সংখ্যাটি খুবই নগণ্য। তবে খাবারের সংকট সেভাবে এখনো হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষ রমজান পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিন ঈদ আয়োজনের মাধ্যমে কর্মসূচি সম্পন্ন হবে।

পেট্রল পাম্পে ‘লাল’ হেলাল

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩০ এএম
পেট্রল পাম্পে ‘লাল’ হেলাল
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখীতে সরকারি জায়গা দখল করে পরিচালিত একটি পেট্রল পাম্প। ইনসেটে পাম্পের মালিক মো. হেলাল উদ্দিন      খবরের কাগজ

সিলেটে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মেগা প্রকল্প ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’। প্রায় ৭২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখীতে একটি গোলচত্বর করার মধ্য দিয়ে গত বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। গোলচত্বর করতে গিয়ে যেন গোলকধাঁধায় পড়ে সওজ। তখন সরকারি জায়গায় একটি পেট্রল পাম্পের কথিত বন্দোবস্তের চুক্তিনামার তথ্য প্রকাশ পায়। প্রকল্পের গোলচত্বর অংশের কাজ তখন থেকে বন্ধ রাখা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সওজ এ বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখে জায়গা বন্দোবস্তের চুক্তিনামাটিই জাল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে পেট্রল পাম্প মালিক মো. হেলাল উদ্দিন ক্ষমতার দাপটে জাল চুক্তিনামা দেখিয়ে ফোর লেন প্রকল্পের শেষ অংশের কাজ থামিয়ে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খবরের কাগজে ‘পেট্রল পাম্পে আটকা ফোর লেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। প্রতিবেদন সূত্রে সওজের সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনুসন্ধান করে চুক্তি জাল করার সত্যতা পায়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটানা প্রায় ৩০ বছর সরকারি জমি দখল করে পেট্রল পাম্পের ব্যবসায় অন্তত শতকোটি টাকা অবৈধভাবে রোজগার করেছেন হেলাল। তৎকালীন সরকারদলীয় কাউন্সিলর হওয়ার দাপটে জমি দখলমুক্ত করতে সওজের পক্ষ থেকে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন।

হেলাল সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ওই সময় খবরের কাগজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে হেলালের দাবি ছিল, মোট ১৪ ডেসিমেল জায়গা পেট্রল পাম্পের। এটা তার ব্যক্তিগত মালিকানার জায়গা। পেট্রল পাম্পের সামনে প্রায় সমপরিমাণ সরকারি জায়গা তিনি বন্দোবস্ত নিয়ে ব্যবহার করছেন।

পেট্রল পাম্পটির নাম ‘সফাত উল্লাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশন’। সওজ পেট্রল পাম্পসহ সেখানকার অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট অভিযান করতে গেলে তা স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। ওই রিট পিটিশনে তিনি সওজ এবং সিলেট জেলা পরিষদের সঙ্গে করা একটি চুক্তিনামা দাখিল করেন। এতে করে বন্ধ রাখা হয় ফোর লেন প্রকল্পের গোলচত্বরের কাজ। এরপর সওজ চুক্তিপত্র বের করে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

কাগজপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, পেট্রল পাম্পের জায়গাটি জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। আগে খাল ছিল। হেলাল সেখানে মাছ চাষ করতে এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে। কিন্তু মাছ চাষ না করে তিনি সেখানে মাটি ভরাট করে পেট্রল পাম্পের সঙ্গে যুক্ত করেন। জেলা পরিষদের সঙ্গে কথিত চুক্তিনামায় হেলাল উল্লেখ করেন ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাকে সাইল শ্রেণির ভূমি লিজ দিয়েছে সিলেট জেলা পরিষদ। কিন্তু সাইল শ্রেণির ভূমি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে লিজ দেওয়ার কোনো নিয়মই নেই। এমনকি ওই চুক্তিনামায় সাক্ষী হিসেবে তৎকালীন সিলেট জেলা পরিষদের সহকারী এম এ সাত্তারের যে স্বাক্ষর রয়েছে, তা জাল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় সওজ।

যোগাযোগ করলে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেট্রল পাম্পের লিজ নেওয়া জায়গা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নবায়ন করা। এরপর লিজগ্রহীতা চাইলেও আর নবায়নের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেই জায়গায় এখন যা হবে বা হচ্ছে, তা এক কথায় অবৈধ।’

সওজের ভূমি শাখা সূত্র জানায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের জন্য সওজ সড়কের পাশের জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণ করা ভূমির দাগে হেলাল পেট্রল পাম্পের চলাচলের কারণে পাকা কালভার্টসহ সংযোগ রাস্তা নির্মাণের অনুমতির জন্য সওজ থেকে ভূমি লিজ অনুমতিপ্রাপ্ত হন। অনুমতিপ্রাপ্ত লিজ অনুযায়ী গ্রহীতা পাঁচ বছর খাজনা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে লিজের খাজনার রাজস্ব প্রদান না করার কারণে লিজের অনুমতিপত্রের শর্ত সাপেক্ষে লিজটি ১৯৯৫ সাল থেকে বাতিল হয়ে যায়।

এরপর হেলাল পেট্রল পাম্পসহ ওই ভূমিতে অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণ করেন। তখন সওজ উচ্ছেদ অভিযান করতে গেলে তিনি তা স্থগিত চেয়ে প্রথম দফা ২০০৭ সালে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ওই রিটের কোনোরূপ প্রতিকার না পেয়ে পুনরায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফা রিট করেন। এতে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে যে চুক্তিপত্র উল্লেখ করা হয়েছিল, জেলা পরিষদ বা সওজ দপ্তর থেকে এ ধরনের কোনো চুক্তি সম্পাদন হয়নি। তখন চুক্তিপত্রটি জাল ও প্রতারণামূলক বলে প্রতীয়মান হয়।

২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর ১২ মার্চ হেলাল ওই কাগজপত্রের মাধ্যমে আরেকটি স্থগিতাদেশের কপি সওজে হস্তান্তর করেন। এর বিরুদ্ধে সওজ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আবার আপিল করে।

গত বুধবার সওজের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই পাম্পের জায়গা আমাদের। কিন্তু হেলাল জাল চুক্তিনামা দেখিয়ে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনেছেন। তার দায়ের করা রিট মামলায় দেওয়া চুক্তিনামাটি ভুয়া ও মিথ্যা। ৩০ বছরের খাজনা প্রদান করা হয়েছে মর্মে সকল তথ্যও ভুয়া। সেটা সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।’

১৯৯১ সালে ৩০ বছরের জন্য সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো চুক্তিই হয়নি জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘তিনি (হেলাল) তৎকালীন চুক্তিনামা দেখিয়েছেন, যা কম্পিউটারে টাইপ করা। কিন্তু ১৯৯১ সালে আমাদের দপ্তরে কোনো কম্পিউটার ছিল না। তখন সব কাজ হাতে লিখে হতো। জালিয়াতির বড় প্রমাণ এটিই।’

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে মহাসড়কের পাশে মহামূল্যবান সরকারি জায়গায় পেট্রল পাম্প ব্যবসাই তার আর্থিক ভিত্তি। এই দখলযজ্ঞে ৭২৭ কোটি টাকার প্রকল্পকাজ আটকে থাকার পাশাপাশি পেট্রল পাম্প ব্যবসায় হেলাল গত ৩০ বছরে অন্তত শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। স্থানীয় লোকজন এ জন্য তাকে অধিক লাভবান অর্থে ‘লাল’ হেলাল বলে অভিহিত করছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে হেলাল সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের দাপটে চলাচল করতেন। এরপর ক্ষমতার রাজনীতির পালাবদলে সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেনের প্রভাবকে পুঁজি করে চলেন।

পেট্রল পাম্পে সরকারি জায়গা ব্যবহারে ভুয়া চুক্তিনামার বিষয়ে হেলালের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তেমুখীর বাসিন্দা তার কয়েক ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে তেমুখীর পাশে অবস্থিত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে তৎপর ছিলেন হেলাল। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় হেলাল প্রকাশ্যে চলাচল এড়িয়ে চলছেন। মামলার এজাহারে তিনি ৬৩ নম্বর আসামি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পেট্রল পাম্পে গিয়ে হেলালের দেখা মেলেনি। পেট্রল পাম্প থেকে জানানো হয়, তিনি (হেলাল) বাইরে আছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফেসবুকে সক্রিয় দেখা গেলেও মেসেঞ্জারে কল করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মাঠ প্রশাসনে মব ভায়োলেন্স আতঙ্ক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ১১:৪১ এএম
মাঠ প্রশাসনে মব ভায়োলেন্স আতঙ্ক
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

একের পর এক মব ভায়োলেন্সের ঘটনায় একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে মাঠ প্রশাসনে। সিভিল প্রশাসনের সর্বস্তরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনও ভায়োলেন্স ঘটার আশঙ্কায় স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। ফলে কঠোর হওয়ার পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কোথাও মিলেমিশে, আবার কোথাওবা বুঝিয়ে-শুনিয়ে আপাতত দৈনন্দিন কার্যক্রম সামাল দিচ্ছেন। 

অন্তর্বর্তী সরকার সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে। মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ফুটপাতের সামান্য একটি দোকানও তারা উচ্ছেদ করার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিষ্টরা লোকজন জড়ো করে মব তৈরির চেষ্টা করেন।
প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা এখনো অনুপস্থিত। পুলিশের মনোবলও এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি বলে পুলিশের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও একাধিকার স্বীকার করেছেন। 

আওয়ামী লীগের বিরোধী বলে পরিচিত (যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন) দলগুলোর বেশির ভাগ নেতাই এখন বেশ বেপরোয়া। তাদের কথাবার্তা ও আচরণে এমন একটা ভাব স্পষ্ট যে প্রশাসন তাদের কথার বাইরে কিছুই করতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন বলে আলোচনা আছে। এদের অনেকেই সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কথা শুনতে চাইছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা উল্টো প্রশাসনের লোকদের শাসাচ্ছেন। পুলিশ বা প্রশাসনের তরফ থেকে বলতে গেলে তাদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ অভিহিত করে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের চলতে হচ্ছে।

তা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সুবিধাভোগী সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে মাঠ প্রশাসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ওএসডি করাসহ বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। এতে মাঠ প্রশাসন এবং সচিবালয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা বিরাজ করছে। যেকোনো ঘটনার সূত্র ধরে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে যে কারও ভাগ্য ঝুলে যেতে পারে, এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে তাদের। 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গত সাত মাসে সারা দেশে মব ভায়োলেন্সসহ অন্যান্য গণপিটুনিতে অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রশাসনে সব মিলিয়ে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রশাসনে মোট ওএসডি আছেন ৫১৬ জন। এ ছাড়া দুজন গ্রেড-১ কর্মকর্তা, ৩৩ জন অতিরিক্ত সচিব, ৭৬ জন যুগ্ম সচিব, ১৩৬ জন উপসচিব, ১৫৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব, ৯৪ জন সহকারী সচিব এবং ৮ জন সিনিয়র সহকারী প্রধানকে ওএসডি করা হয়েছে।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এমন ৩৩ জন কর্মকর্তাকে গত ১৯ জানুয়ারি ওএসডি করা হয়েছে। একই কারণে এর আগে ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। 

মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে পুলিশের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তা ছাড়া মব জাস্টিস প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতা এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের তাড়ানোর নামে অরাজনৈতিক নিরপেক্ষ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদেরও হয়রানিসহ কথায় কথায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, ঝাড়ু মিছিল, ঘেরাও, এমনকি প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনাও ইতোমধ্যে ঘটেছে। 

এমন পরিস্থিতিতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলার ডিসির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন ডিসি খবরের কাগজের সঙ্গে ফোনে কথা বললেও দাবি করেন ‘কোনো কথা হয়নি’। কথার মধ্যেই আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। তবে শতভাগ গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেওয়ার পর কথা বলেন তিনজন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। 

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসনের চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে গুরুত্বপূর্ণ জেলার একজন ডিসি নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। সমঝোতা করেই প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। সকালে অফিসে আসি একটা আতঙ্ক নিয়ে। সারাক্ষণ মনের মধ্যে ভয় কাজ করে, এই বুঝি কোথাও মব তৈরি হয়ে গেল। আবার কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেল। সব সময় এই আতঙ্ক থাকে মনে।’

তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সমস্যা আমরা দেখছি না। সমস্যা মাঠপর্যায়ে। মাঠপর্যায়ে এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে জনগণের মধ্যে আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা। প্রত্যেকেই মনে করে স্বাধীন। তার ওপর খবরদারি করার কেউ নেই। তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। তারা নিজেদের মতো আইনশৃঙ্খলা বিচার-বিশ্লেষণ করে আইনকে হাতে নিয়ে নেয়। মনমতো না হলেই সে নিজের মতো করে প্রতিরোধ করতে চায়। এমন বিষয়গুলো আমরা এখন লক্ষ করছি। আরেকটা বিষয়, তা হলো আগে পুলিশ বা অন্য বাহিনী কিন্তু এখনো নিজেদের সক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এর ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন নেতাকেও কোনো অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার বা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাও ভয় পাচ্ছেন। এখন সামনে নির্বাচনের মতো একটা বড় বিষয় আছে। এমন পরিস্থিতিতে এমন জটিল অথচ বৃহৎ একটি কর্মযজ্ঞ কীভাবে হবে, তা বোধগম্য না।’

তিনি বলেন, ‘তৃতীয়ত; কথায় কথায় একটা মব তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় সময়মতো পদক্ষেপ নিতে না পারলে বড় কোনো দুর্ঘটনা যে ঘটে যেতে পারে। এটা যে কেউ যখন-তখন তৈরি করতে পারে। ছাত্ররা পারে, শ্রমিকরা পারে অথবা যেকোনো পেশার যেকোনো গোষ্ঠী, যখন-তখন একটা মব তৈরি করে ফেলতে পারে। আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে একটা আদেশ দিলেও এর বিরুদ্ধে জড় হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিয়ে ফেলে তারা।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘একটা পার্কে অবৈধ দোকান বসতে দেব না বা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করতে দেব না বা বাজারে অথবা ফুটপাতে অনুমোদনহীন দোকানপাট বসতে দেব না। এমন পদক্ষেপ নিতে গেলে দেখা যাবে দোকানিরা বা পরিবহন শ্রমিকরা জোট বেঁধে একটা মব তৈরি করে ফেলল। এভাবেই তারা আইনটাকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা আইন না মানার প্রবণতা, মব তৈরি করার প্রবণতা- এই বিষয়গুলো আমরা সাংঘাতিকভাবে দেখছি। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলের যেসব নেতা-কর্মী আছেন (নির্দিষ্ট কোনো দলের কথা নয়), তারা অনেকটা বল্গাহীন হয়ে গেছেন। তাদের ওপরে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। না প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ আছে, না তাদের নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের আছে। এই নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কেউ যেমন তেমন করে তাদের ইচ্ছামতো কার্যক্রম করছে। আসলে তারা এখন আর প্রশাসনকে একবারেই ভয় পাচ্ছে না। আগে ডিসিরা একটু উচ্চস্বরে কথা বলতে পারতেন। এখন তেমন হলেই ডিসির সঙ্গেই উদ্ধত ব্যবহার করা হয়। ডিসি জোরে কথা বললেও মানুষ এখন নেগেটিভলি দেখছে। এই বিষয়গুলো বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নরম হয়ে বাবা-সোনা বলে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আমাদের ম্যানেজ করতে হচ্ছে। আসলে এই মুহূর্তে ফোর্স ব্যবহার করে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগই আমরা দেখছি না। যতটুকু সম্ভব ভালো সম্পর্ক রেখে যেভাবে ম্যানেজ করা যায়, এখন সেটাই আমরা করছি। অন্যথায় যেকোনো সময় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমন একটা বিশ্বাস-আস্থা দিয়ে এখন আমরা প্রশাসনকে চালিয়ে নিচ্ছি। কারণ ফোর্স অ্যাপ্লাই করার এক শতাংশও সুয়োগ নেই মাঠ প্রশাসনের।’

অপর এক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খবরের কাগজকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও পরে বলেন, ‘আমাদের এখন আইনের ভেতরে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য ফোর্স সহযোগিতা করছে। প্রশাসন মানুষকে বোঝোচ্ছে। 
দীর্ঘদিনের একটা অপচেষ্টা, অপসংস্কৃতির যে প্র্যাকটিস তা তো আর রাতারাতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এর জন্য সময় প্রয়োজন। আমরা আইনের ভেতরেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জুলাই-আগস্টের পর যে পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে চলাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা চেষ্টা করছি, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুষ্ঠু একটা পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। যাতে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে থাকতে পারে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাক আহমেদ জানান, একজন জেলা প্রশাসক কী কাজ করবেন তার একটা সীমা-পরিসীমা আছে। একটি জেলার যেকোনো বিশৃঙ্খল বা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই জেলা প্রশাসকের কাজ। যেকোনো পরিস্থিতি হোক। এটা ৫ আগস্টের আগের বা পরের কোনো বিষয় না। বরং ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। কারণ এখন রাজনৈতিক শক্তিমত্তার জায়গাটা অনুপস্থিত। কাজেই অন্য সময় যেসব চ্যালেঞ্জ থাকে, এখন বরং সেসব কম। তাই মাঠ প্রশাসনসহ সব সরকারি দপ্তরই কোনো চাপ ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারছে। তাই আমার কাছে কোনো চাপ মনে হয়নি, ভালোভাবেই কাজ করতে পারছি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার মতো কোনো কিছুই প্রশাসন বরদাশত করছে না।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সেটাই আমাদের বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য। এখন কেউ যদি নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চায়, সে ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন- এমন নির্দেশনা এই জেলায় দেওয়া হয়েছে। এই জেলার পরিবেশ বেশ শান্ত। এখানে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সবাই মিলেমিশে আছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মতো কোনো সংকট এখানে হয়নি।’

আইনি জটিলতায় কাজ শুরু করতে পারছে না ইসি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:৪২ এএম
আইনি জটিলতায় কাজ শুরু করতে পারছে না ইসি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতির অন্যতম ধাপ হলো সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা চূড়ান্তকরণ। তবে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধন না হওয়ায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু করতে পারছে না সংস্থাটি। ফলে এ-সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। এদিকে সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৬০টি আসনের সীমানা নিয়ে আপত্তি তুলে নির্বাচন কমিশনে সেগুলো পুনর্নির্ধারণের আবেদন জমা পড়েছে ৩৬৯টি। তার মধ্যে একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক আবেদন করেছেন সংক্ষুব্ধরা।

এ বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনি এলাকাগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ইসির পক্ষ থেকে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে বিদ্যমান আইনি জটিলতা দূর করতে সংশোধিত খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান সীমানায় বড় পরিবর্তনের সুযোগ রেখে করা সেই খসড়াটি প্রস্তাব আকারে সরকারের কাছে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। গত ২৭ জানুয়ারি ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণে ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা সামঞ্জস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৮ ধারায় ইসির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা হয়। ২০২১ সালে পাস হওয়া আইনে সেটা তুলে দেওয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে ‘স্বাধীন কমিশন’ গঠনের সুপারিশসহ এ-সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তাদের এমন প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি জানিয়ে সম্প্রতি সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ ইসির কর্তৃত্ব ও স্বাধীনতা খর্ব করবে, সেসব সুপারিশ মানবে না সংস্থাটি। 

সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন ও আইনি জটিলতা

বর্তমান সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন কমিশনের এ-সংক্রান্ত কমিটির বিশ্লেষণ- বিগত চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে করা সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজ যথাযথ হয়নি। এই কমিশন মনে করে, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক বিশেষ কারণে দেশের ১৩০ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়। পরে ওই সীমানার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব আসনে সীমানা পরিবর্তন করা হয়, সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে আগের অধ্যাদেশ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করে। 
ইসির এ-সংক্রান্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিদ্যমান আইনের ৪ ধারায়- এই আইনের অধীন কমিশন তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কোনো নির্বাচন কমিশনার বা তার কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দিতে পারবে। এই ধারায় ইসির প্রস্তাব হলো- এই আইনের অধীন কমিশন তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য কোনো নির্বাচন কমিশনারকে প্রধান করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করবে। কমিটি প্রয়োজনবোধে কোনো ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, পরিসংখ্যানবিদ, জনসংখ্যাবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

বর্তমান আইনের ৬(২) ধারায় নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসংখ্যাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় দেশব্যাপী নির্বাচনি এলাকার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে ঘন বসতিপূর্ণ শহর এলাকায় আসনসংখ্যা বেড়েছে। আর গ্রাম এলাকায় আসনসংখ্যা কমেছে। এতে বেড়েছে জনমনে অসন্তোষ। এ ক্ষেত্রে ইসির প্রস্তাব- যতদূর সম্ভব সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রাখতে হবে। আর আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণে ৬(২) ধারা পাল্টে সেখানে নতুন চারটি ক্লাস্টার যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি।

এ ছাড়া ৮(৩) উপধারায় বিদ্যমান বিধানের উপধারা ৮(১) প্রতিস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। কারণ ৮(৩) উপধারায় করণিক ত্রুটির কারণে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরির শঙ্কা ছিল। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এই উপধারা সংশোধন হলে ওই শঙ্কা দূর হবে এবং ইসির ক্ষমতাও অক্ষুণ্ন থাকবে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান আইনের ৪, ৬ ও ৮ ধারায় অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় জনগণ এবং রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মনে সংশয় ও আপত্তি রয়েছে। ফলে এসব সংশয় ও আপত্তি দূর করতে দেশের নানা স্থান থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন জমা দিচ্ছেন সংক্ষুব্ধরা। বিদ্যমান আইনের এসব বাধা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজটাই শুরু করতে পারছি না। এরই মধ্যে আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছি। সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে এসব আবেদন নিষ্পত্তিতে আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।’ 

কোন আসনের জন্য কতটি আবেদন

দেশের সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৬০টি আসনের সীমানা নিয়ে আপত্তি-সংক্রান্ত ৩৬৯টি আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। আবেদনকারীদের বেশির ভাগই ২০০১ সালের সীমানায় ফিরতে চেয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৩টি আবেদন ইসিতে পড়েছে শুধু পিরোজপুর-২ আসনের জন্য। এই জেলার কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলার পরিবর্তে আগের ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মতো ‘কাউখালী, ভান্ডারিয়া’ অথবা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ‘কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও ইন্দুরকানী’ উপজেলার সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা।

এরপর কুমিল্লা-১০-এর নাঙ্গলকোট উপজেলাকে আলাদা করে এই জেলার ১১ আসনকে ১২টিতে উন্নীতকরণে ৮১টি আবেদন পড়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা-১, ২, ৬ ও ৯ আসনের জন্য আরও ১০টি আপত্তি আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। ৩৮টি আপত্তি আবেদন জমা পড়েছে মানিকগঞ্জ-১ আসনে। এই জেলার একটি আসন পুনর্বহাল করে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ করার দাবি উঠেছে। ঢাকা-৭ আসনের জন্য আবেদন পড়েছে ২৭টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত কামরাঙ্গীরচর থানাকে সংসদীয় আসন-২ থেকে আলাদা করে এবং ঢাকা-২ আসনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে কেটে ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা। আর ঢাকা-১ আসনের দুই উপজেলা দোহার ও নবাবগঞ্জকে আলাদাভাবে ঢাকা-১ ও ঢাকা-২ সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে এ পর্যন্ত ২৩টি আবেদন করেছেন স্থানীয়রা।

এ ছাড়া চাঁদপুর-৩ ও ৫ আসনের জন্য ১০টি আবেদন; সিরাজগঞ্জ-১, ২, ৫ ও ৬ আসনের জন্য ১০টি; বরগুনা-১ আসনের জন্য ৭টি, মুন্সীগঞ্জ জেলার আসন ৩টি থেকে ৪টিতে উন্নীত করতে ২টি আবেদন; গাজীপুর-১, ৩ ও ৫ আসনের জন্য ১০টি, ঢাকা-১৯ ও চাঁদপুর-৫ আসনের জন্য ৯টি করে, নোয়াখালী-১ ও ২ আসনের জন্য ৫টি করে; ফেনী-২, ৩ আসনের জন্য ৪টি, শরীয়তপুর-২ ও ফরিদপুর-৪ আসনের জন্য ২টি করে; ঢাকা-১২, ১৬ ও ২০ আসনের জন্য ১টি করে; চট্টগ্রাম-৭, ৮ ও ১০ আসন; বরিশাল-৩, পিরোজপুর-১, নেত্রকোনা-৫, কিশোরগঞ্জ-২, সাতক্ষীরা-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, রাজবাড়ী-১, নারায়ণগঞ্জ-১, সিলেট-১ ও ২, চাঁদপুর-৩, ও গাইবান্ধা-৩ আসনের জন্য ১টি করে আবেদন জমা পড়েছে।

এসব আবেদন প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেছেন, ‘আইনি জটিলতায় এখনো আমরা সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিজ্ঞপ্তি জারি করিনি। এ-সংক্রান্ত আবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট শাখাকে কম্পাইল করা এবং পর্যালোচনা করে কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর আবেদনগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই করা হবে।

বিশ্লেষকের মন্তব্য
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম খবরের কাগজকে বলেন, “সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ; যার জন্য দরকার বিশেষায়িত জ্ঞান ও টেকনিক্যাল দক্ষতাসম্পন্ন জনবল। কাজটি সঠিকভাবে করা চ্যালেঞ্জিংও বটে। এ জন্য কাজটি পরিচালনায় ভবিষ্যতে ‘স্বাধীন কমিশন’ গঠনের সুপারিশ আমরা করেছি; যেটা খসড়া আইনে রাখা হয়নি। এ ছাড়া ওই কমিশন গঠনের আগে পর্যন্ত সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসির নেতৃত্বে ‘বিশেষায়িত কমিটি’ গঠন করে কাজটি করার পরামর্শ রাখা রয়েছে। সেই কমিটিতে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিশেষায়িত জ্ঞান ও টেকনিক্যাল দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা থাকবেন।” সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়া সরকার অধ্যাদেশ আকারে জারি না করা পর্যন্ত ইসির কিছু করার নেই। একই সঙ্গে সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নির্ধারণের আগেই ইসিতে জমা পড়া আবেদনগুলো অর্থহীন মনে করছেন এই বিশ্লেষক।

ইসির বক্তব্য হলো, স্বাধীন কমিশন গঠন হলে ইসির কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা কমবে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. আলীম বলেন, ‘স্বাধীন কমিশন হলে ইসির ক্ষমতা কমবে কি না সেটা বড় বিষয় নয়, কাজটি সঠিকভাবে করাকে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। আর বিশেষায়িত কমিটি তো গঠিত হবে ইসির নেতৃত্বেই। সংস্কার কমিশন মনে করে, এই কাজের কর্তৃত্ব আলাদা কমিশনের অধীনে গেলে, তাদের মাধ্যমে কাজটি হলে ইসির ঘাড় থেকে দায় নেমে যাবে। কারণ বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসিকে অনেক বদনাম কুড়াতে হয়েছে।’ তিনি জানান, আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করেই সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ওই নীতিমালা মানা হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অনেক দেশেই আলাদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। 

বিশ্লেষকদের মতে, সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পরও নির্বাচন কমিশনকে এ কাজে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কারণ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আসনগুলোর বর্তমান সীমানা ত্রুটিপূর্ণ। এর আগে ২০০৮ সালে প্রশাসনিক অখণ্ডতা বিবেচনায় আসনগুলোর সীমানা ব্যাপকভাবে পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনি এলাকার ভোটার সংখ্যায় অসমতা সৃষ্টি হয়। পরে ইসিতে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে ৩ হাজার ৬৯০টি। তিনটি জাতীয় নির্বাচন- ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৯৮টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের ঘটনায় নানা রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়, সংক্ষুব্ধরা আদালতের শরণাপন্নও হন।

চট্টগ্রামে মুরগির দাম চড়া, স্থিতিশীল মাছ-সবজি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
চট্টগ্রামে মুরগির দাম চড়া, স্থিতিশীল মাছ-সবজি
চট্টগ্রামে খুচরায় আগের দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি। ছবিটি নগরের আসকারদীঘির পাড় থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

ঈদের সময় ঘনিয়ে আসতেই চট্টগ্রামে বাড়তে শুরু করেছে মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার, সোনালি আর দেশি মুরগির কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে মাছ, সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। 

শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর ঈদগা কাঁচাবাজার, কাজীর দেউড়ি ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের মুরগি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া সোনালি মুরগির কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

নগরের হালিশহর ঈদগা কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জয়নাল বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় ইফতার অনুষ্ঠান হচ্ছে। রমজানে বাসাবাড়িতেও মুরগির চাহিদা বাড়ে। সবমিলিয়ে চাহিদা বাড়ায় দামটা বেড়ে গেছে। আমাদেরও বাড়তি দরে কিনে আনতে হচ্ছে। আশা করছি, সরবরাহ বাড়লে কয়েক দিনের মধ্যে মুরগির দাম কমে আসবে।’ 

এদিকে এসব বাজারে গরু, খাসি ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে আগের দরে। বর্তমানে প্রতি কেজি হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৯০০ টাকা, গরুর কলিজা ৫৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজি ও মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোলবেগুন ৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, চিচিঙা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুমুখী ৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি শিম, মুলা, পেঁপে, শসা ও মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

অন্যদিকে, মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৮০ টাকা, কাতল ৩০০, তেলাপিয়া ১৭০, পাঙাশ আকারভেদে ১৮০ থেকে ২২০, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০, রূপচাঁদা আকারভেদে ৪৫০ থেকে ৯০০ ও কাচকি মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চালের বাজারে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি নাজিরশাইল সিদ্ধ চাল ৮৮ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ৮৪, কাটারিভোগ আতপ ৮৬, পাইজাম আতপ ৭০ ও কাটারিভোগ সিদ্ধ ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০, দেশি রসুন ১০০, চায়না রসুন ২৩০, চায়না আদা ২০০ ও কেরালা আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এ ছাড়া মুদি দোকানে প্রতি কেজি মসুর ডাল (মোটা) ১১০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) ১৩৫, বুটের ডাল ১২০, ছোলা ১২০, খোলা চিনি ১২০, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫, প্যাকেট ময়দা (দুই কেজি) ১৫০ টাকা ও প্যাকেট আটা (দুই কেজি) ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

নগরের কাজীর দেউড়ি ব্যাটারি গলি এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে মুরগি, চাল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছরই দেখি ঈদের সময় ঘনিয়ে এলে মুরগির দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে গিয়ে এক কেজি ভালো মানের চাল কিনতে ৮০ থেকে ৯০ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে। অথচ এসব ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আমরা সাধারণ ভোক্তারা ঠিকই বাড়তি অর্থ গুনছি।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তো সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকে। পরে সুযোগ বুঝে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। যারা সিন্ডিকেট করছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। বেচাকেনার রসিদ ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। মূল্যতালিকা টাঙাতে ব্যবসায়ীদের অনীহা দেখা যায়। এ ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে।’