ঢাকা ২৪ মাঘ ১৪৩১, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন!

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ এএম
আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আগামী বছরের শেষে দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্রগুলো থেকে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ নেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করার কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা চাপের মুখে রয়েছে। কারণ দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে। সংস্কার উদ্যোগসহ নানা ইস্যুতে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা জটিলতার মধ্যেও পড়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করায় সাম্প্রতিক জটিলতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফাঁস হওয়া বক্তব্য, ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এবিসিডি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি অবশ্য বলেন, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত মত। শেষমেশ কী হবে তা জানেন না বলেও মন্তব্য করেন। 

এর আগে গত ২৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা একমাত্র প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে। এ নিয়ে যারা কথা বলছেন তারা ব্যক্তিগত মতামত দিচ্ছেন বলেও জানানো হয় প্রেস উইং থেকে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত বুধবার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে আর কেউ ষড়যন্ত্রের সাহস পাবে না।’

বিএনপির অন্যতম প্রবীণ এই নেতা গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা দিনক্ষণ বা মাস এখন বলছি না। তবে যত শিগগিরই সম্ভব নির্বাচন দেওয়া উচিত। দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক- এমন সময়ের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনমুখী হতে হবে। দেশের জনগণ একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই, এ কথা একাধিকবার জানিয়েছি। এই কথা বুদ্ধিমান ও ভদ্রলোকদের দিনক্ষণ বলা লাগে না, তারা অনুমান করতে পারেন- আসলে কতটা সময় দেওয়া হয়েছে। তাই আশা করি, সরকার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সময় নির্ধারণ করেই নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।’ 

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় সব সংস্কার কাজ শেষে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, যেখানে ভোটাররা নিরপেক্ষভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এখানে সময়ের চেয়ে নির্বাচনের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগের মতো নির্বাচন হলে জনগণ মানবে না। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কারে পরই আমরা নির্বাচন চাই।’

জানা গেছে, সংস্কার প্রস্তাবসহ বিভিন্ন কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দুই-এক বছর ক্ষমতায় থেকে সংস্কার প্রস্তাব কার্যকরসহ বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর নির্বাচন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকারবিরোধী শক্তিগুলোর অপতৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ক্ষমতা আর দীর্ঘস্থায়ী করার পক্ষে নয় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে। তারা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হন্তান্তর করে নির্বিঘ্নে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে চান।

সূত্রের দাবি, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের পর্দার আড়ালে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সরকারকে সময়ও দিতে চায়। কিন্তু সেটি কোনোক্রমেই এক বছরের বেশি নয়। কারণ বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো মনে করে, বেশি দিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাতে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথ বিঘ্নিত হতে পারে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ পক্ষের শক্তির তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই সরকারের জন্য ভালো এবং বিএনপির জন্য নিরাপদ- এমন একটি আস্থার বার্তা দিতে চায় বিএনপি। 

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন দ্রুত হলে ভালো। আমরা সংস্কারের পর নির্বাচনের কথা বলেছি। তাই সংস্কারকাজ আরও গতিশীল করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কিছু সংস্কারকাজ আছে সেগুলো নির্বাচিত সরকার করবে। আবার নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত এমন কাজগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। তবে কোনো কাজেই কালক্ষেপণ করা যাবে না।’ 

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে তার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দল, স্টেক হোল্ডার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা প্রয়োজন। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন বন্দোবস্তের মাধ্যমে এবারের নির্বাচন হবে। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগবে এটাও পরিষ্কার করা দরকার। অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সবকিছু নির্ধারণ করা জরুরি।’ 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আগামী বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হলে দেশের জন্য ভালোই হবে। এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখবে রাজনৈতিক দলগুলো। ইসলামী আন্দোলনও শুরু থেকেই দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এর আগে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, সংবিধানসহ সংস্কার কাজগুলো শেষ করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগামী বছর নির্বাচন হবে- সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো স্পষ্ট মেসেজ আমরা পাইনি। বিশেষ করে বিগত ৩টি মিটিংয়ে তারা কোনো কিছুই বলেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১০টি সংস্কার কমিশন এই মাসে (ডিসেম্বর) সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আগামী এক বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের জাতীয় ঐক্য ধরে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারকাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সবার মতামতের ভিত্তিতে সময়োপযোগী দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে হবে।’ 

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী তৎপরতার পরে আগামী বছরের নির্বাচনের বিষয়টি জনগণের আলোচনায় স্থান পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কেউ চায় না- ‘ফ্যাসিবাদী’ শক্তির আবারও উত্থান হোক। এমন অবস্থান থেকেই সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ভারত প্রশ্নে সবাই একমত পোষণ করেছে। ফলে আগামী বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কবে হবে- এ ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে মানবিক বিপর্যয়ে রোহিঙ্গারা

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০ এএম
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪০ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে মানবিক বিপর্যয়ে রোহিঙ্গারা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এতে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য-সহায়তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত অন্য সব প্রকল্প ইতোমধ্যে বন্ধের ঘোষণা দিয়ে চিঠি দিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (ইউএসএআইডি)। এতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থী।

বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ট্রাম্প সরকার আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির অর্থায়নে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার জরুরি সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এসব জরুরি সেবায় অর্থায়ন করত যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের জটিল রোগের চিকিৎসায় পরিচালিত পাঁচটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত রোহিঙ্গাদের জটিল রোগের টিকাদান কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা বেশি উপকৃত হতো। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটি বিকল্প উপায়ে অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বিভিন্ন এনজিওর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি খারাপ সময় আসছে আগামী দিনগুলোতে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে মায়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতনে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া মোট বিদেশি অনুদানের বেশির ভাগই দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখন তারা রোহিঙ্গাদের জন্য শুধু খাদ্য-সহায়তা ছাড়া বাকি সব সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য মোট ৮৫২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে বিদেশি সহায়তা এসেছিল ৫৪৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। রোহিঙ্গাদের জন্য মোট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে ৩০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বিদেশি সহায়তার ৫৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, প্রায় ৫৫টি দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য মোট বিদেশি সহায়তার মধ্যে ইউরোপিয়ান কমিশনস হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট দিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ইউরোপীয় কমিশন ৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জাপান দিয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি দেশগুলো দিয়েছে মোট সহায়তার এক ভাগেরও কম। ফলে মার্কিন সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক সংকট নিরসন করা কঠিন হবে বলে সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ইউএসএআইডির মাধ্যমে সহায়তা হিসেবে অর্থায়ন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালের ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০১ মিলিয়ন ডলার ছিল রোহিঙ্গাদের জন্য। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশও।

একের ভেতর হরেক আয়োজন

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২২ এএম
একের ভেতর হরেক আয়োজন

বইমেলা কি শুধুই বইমেলা? বইমেলা আসলে অনেক অনেক মেলা। অনেক কিছুর মেলা। বইমেলায় সেমিনার হয়। কবিতা পাঠ হয়। আবৃত্তিশিল্পীরা আবৃত্তি করেন। সংগীতশিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। লেখকরা নিজেদের কথা বলেন। এর সবই প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন। এই আয়োজনগুলো করে বাংলা একাডেমি। একমাত্র লেখকদের কথা ছাড়া এর সবই অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে। লেখকরা শুধু পাঠকের মুখোমুখি হন লেখকমঞ্চে। এখানেই শেষ নয়। বলছিলাম এক বইমেলায় অনেক মেলার কথা। গতকাল সেই বহু বর্ণিল মেলার একটা নতুন মাত্রা দেখতে পেলাম। নতুন যুক্ত হয়েছে। 

গতকাল মেলার পঞ্চম দিনে টিএসসির দিক থেকে ঢুকছিলাম। ফুটপাতটা দেখলাম হকারমুক্ত। হকারদের চিরাচরিত অবস্থান নেই। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য। আগের দিনও দেখেছি সোহরওয়ার্দীর গেটে রিকশা, মোটরসাইকেল এসে দাঁড়াতে। হকারদের ভিড় ঠেলে মেলায় ঢুকতে হয়েছে। একটু ভালো লাগল। সঙ্গে বিস্ময়। এক দিনে ওরা সব ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেল নাকি! নাকি ওদের নির্মমভাবে মেলার পরিমণ্ডল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে? বইমেলা মানেই তো মূল প্রাঙ্গণে বই যেমন থাকবে, তেমনি বাইরে থাকবে নানা কিসিমের হকার। এই তো দেখে আসছি সেই ত্রিশ বছর ধরে। আজ ওদের হলো কী!

বিস্ময়ের ঘোর নিয়ে আর্চওয়ে যখন পার হলাম, তখনই চিরচেনা হকারদের চোখে পড়ল। আরে, এই তো! মূল মেলায় ঢুকে পড়েছে। মেলার বাইরে থেকে একেবারে ভেতরে। চুড়িওয়ালি, বাচ্চাদের খেলনা বিক্রেতা, ফুলওয়ালি, পুষ্পবালিকারা। বাংলা একাডেমি আর্চওয়ে পেরোনোর পর সাময়িকভাবে ইটের যে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে, সেই রাস্তার দুই পাশে হকারকুল। পুলিশও আছে পাহারায়, একটু পেছনে। মেলার এই জায়গাটা কিছুটা খোলামেলা। সেখানেই হকারদের সামান্য ব্যবধানে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। আমার একটু কৌতূহল হলো। এগিয়ে গিয়ে একজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী? আজ হকাররা ভেতরে? তিনিই আমার সন্দেহ দূর করলেন। ‘স্যার, ওদের আমরা ভেতরেই জায়গা করে দিয়েছি। অফিসারের নির্দেশ। বাইরে ভিড় করলে আপনাদেরই তো ঢুকতে সমস্যা হয়, তাই এই ব্যবস্থা। তবে শর্ত হচ্ছে ওরা এই যাওয়া-আসার পথটি ছাড়া মূল মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবে না।’ ব্যবস্থাটা আমার ভালোই মনে হলো। মেলার ভেতরের পথগুলোর বাঁকে বাঁকে স্পন্সরড কফিশপ আছে। আইসক্রিম পারলার আছে। আলাদা বিশাল জায়গাজুড়ে খাবারের দোকান আছে। তাহলে ওরা নয় কেন? ওদেরও তো জীবন-জীবিকা আছে। হতদরিদ্র চেহারার কত ছোট ছোট মেয়েশিশুকে দেখি ফুলের মালা বিক্রি করতে। কত মলিন চেহারার বৃদ্ধ নারীকে দেখি চুড়ির পসরা নিয়ে বসতে। এই তো বইমেলা। এক মেলার মধ্যে হরেক মেলা। মেলা তো একেই বলে। এই যে বইমেলাকে ঘিরে বারোয়ারি মেলা, যারা বইমেলায় আসেন, তারা ঠিকই উপভোগ করেন। আমি অন্তত করি।

বইমেলার আসা-যাওয়ার পথের ধারে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। চত্বরটা প্রথম চার দিন প্রায় অন্ধকার হয়ে ছিল। গতকাল দেখলাম, আলো এসেছে। স্টলের নামযুক্ত ব্যানারও লাগানো হয়েছে। বাংলা একাডেমিই স্ক্রিনপ্রিন্ট করে সেটা লাগানোর ব্যবস্থা করেছে। সেখানেই একেবারে ঢুকতেই ‘কবিতাচর্চা’র স্টল। ‘কবিতাচর্চা’ কবি ও কবিতার লিটলম্যাগ। এর বাইরে অন্য কিছু ছাপা হয় না। কথা হলো কবিতাচর্চার সম্পাদক বদরুল হায়দারের সঙ্গে। বদরুল ভীষণ কবিতা-অন্তপ্রাণ মানুষ। তাকে দুই দশক ধরে চিনি। একেবারে আত্ম-আগ্রহে, নিজের গরজে ট্যাবলয়েড সাইজের কাগজটি বের করেন। সেই ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ বছরে ৭১টি সংখ্যা বের করেছেন বদরুল। বদরুলের নিজেরও অনেক কবিতার বই আছে। তিনি প্রকাশক হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল কবিদেরও বই প্রকাশ করেন। এবার লিটলম্যাগ চত্বরের বিন্যাস নিয়ে বদরুল খুশি।

গত কয়েক দিন মেলায় পরিচিত লেখকদের দেখা মেলেনি। এ নিয়ে কয়েকজন পাঠককে আক্ষেপ করতে শুনেছি। বিগত মেলাগুলোতে অনেক লেখক আসতেন। প্রথমাতে নিয়মিত এসেছেন আনিসুল হক ও মাসরুর আরেফিন। মাওলা ব্রাদার্সে মশিউল আলম। অনন্যায় ইমদাদুল হক মিলন। কিন্তু এবার গতকাল পর্যন্ত কারও দেখা আমি পাইনি। মেলায় নতুন বই এসেছে। আনিসুল হকের ‘নিশি ট্রেনের ভূত’, আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘সময় বহিয়া গেল’, মাসউদ আহমাদের ‘তিতাসের বুনো হাঁস’, আন্দালিব রাশদীর ‘সিক্রেটস’, মোস্তফা কামালের ‘বিষাদ বসুধা’ ও ‘কাটামুণ্ডু’সহ বেশ কয়েকটি বই। কিন্তু তাদের কেউই মেলায় আসেননি। আশা করছি, সপ্তাহান্তের ছুটির দুই দিন- শুক্র ও শনিবার পাঠকরা মেলায় তাদের দেখা পাবেন। আজ অবশ্য বিদ্যাপ্রকাশে পেয়ে গেলাম কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালকে। তার কী বই প্রকাশিত হয়েছে, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘আমার বই আমার বউ ও পুত্র আটকে দিয়েছে।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’ বললেন, ‘রহস্য আছে, পরে একদিন বলব।’ আমার ততক্ষণে মেলা ছেড়ে অফিসে আসার সময় হয়ে গেছে। 

আসার পথে অনন্যার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হকের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি তার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ বইয়ের কথা বললেন। সেসব বইয়ের কথা আগামীতে লিখব। আজ শুধু তার একটা কথা বলছি, ‘মানুষের জন্য কিছু অবদান রাখতে চাই বলে প্রকাশক হয়েছি। বই প্রকাশ করি। শুধু অর্থ উপার্জন করতে চাইলে তো সিন্ডিকেট করে আলু-পটোলের ব্যবসা করতাম।’ 

বইমেলা থেকে বেরোনোর সময় মনিরুলের কথাগুলো কানে বাজছিল। আলু-পটোল, সত্যিই তো। এসব ব্যবসায় কত্ত লাভ। কত্ত উপার্জন। সিন্ডিকেট করে সেটা তো দেখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের কিছু ব্যবসায়ী। সেই তুলনায় বই প্রকাশকদের আয় তো নস্যি। তবে এরা আছেন বলেই বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চা আর সৃজনশীলতার সংস্পর্শে আমাদের কেউ কেউ জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারছি। জয়তু প্রকাশকমণ্ডলী।

পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট করতে লাগবে না পুলিশ ভেরিফিকেশন, এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। 

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাসপোর্টের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি।
 
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিরা। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সভায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিনিধি পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন না রাখার বিষয়ে মত দেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে। 

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনকে পাসপোর্ট ইস্যুর মূলভিত্তি ধরা হয়। সে সভায় বলা হয়, এ দুটি সঠিক থাকলে পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।

মূলত উপদেষ্টা পরিষদের সভার পরই এ নিয়ে কাজ শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আসছে!

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩০ এএম
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আসছে!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

আগামী অর্থবছরে সীমিত সময়ের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ সুবিধার আওতায় সীমিত সময় হিসেবে অর্থবছরের তিন মাস বা ছয় মাস করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকে অপ্রদর্শিত অর্থ ঢালাওভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ঘোর বিরোধী। তারা মনে করছেন, এতে সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব জানা যায়।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা আছে। এ সময় এনবিআরের রাজস্ব বাজেটের আরও অনেক বিষয় নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে আছে আগামী অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়সীমা, করপোরেট করহার ও ন্যূনতম করের পরিমাণ কত হবে। ভ্যাটের একক হার ধার্য করা সম্ভব হবে কি না। বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামালের আমদানি শুল্ক নতুনভাবে নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা আছে। নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে শিল্প-কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করতে কারখানা নির্মাণের যন্ত্রপাতিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, বিগত কয়েক বছরে তৎকালীন সরকারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে কিছু অসাধু আমদানিকারক কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেদার অর্থ পাচার করেছেন। এদের কাছে দেশের মধ্যেও কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ আছে। বিদেশেও এরা অর্থ জমা রেখেছেন। গত কয়েক মাসে আইনের কঠোর শাসন থাকায় এসব আমদানিকারকের কারখানা প্রায় বন্ধ। এদের বাইরেও যারা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি করেছেন তারাও এখন বাধ্য হয়েই এসব দুর্নীতি কমিয়ে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির কাছে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা কীভাবে সরকারের কোষাগারে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য রাজস্ব বাজেট সাজানো হবে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারেও পদক্ষেপ থাকবে। খুব গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে যে কর ফাঁকির অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যায়। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ১৯টি শিল্প খাতকে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে আছে মৌলিক পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস (এপিআই ছাড়া), কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, আইটি-সক্ষম সেবা, উন্নত টেক্সটাইল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি। আরও আছে অটোমোটিভ পার্টস, ফুটওয়্যার, হালকা প্রকৌশল ও চামড়া। ইভি ব্যাটারি, মেডিকেল ডিভাইস, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল, খেলনা, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস, সেমিকন্ডাক্টর ও প্লাস্টিক খাতসহ অন্যান্য খাত। এসব খাতকে অধিক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে সব ধরনের রাজস্ব ছাড় দেওয়ার কথাও বিডা থেকে বলা হয়েছে। আজকে প্রধান উপদষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, বিডা থেকে হিটম্যাপ করা হয়েছে। এই হিটম্যাপে ১৯টি খাতকে অধিক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব খাতে আগামী অর্থবছরে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় তার সব ধরনের বন্দোবস্ত করতে করতে সরকারসংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এখন দেখা যাক সরকার কী করে। তবে সরকারও চাইছে যে আগামীতে দেশে বিনিয়োগ বাড়ুক।

আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট নিয়ে এনবিআরের প্রণীত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়েছে। এই অর্থ দেশে ফেরত আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভর হয়ে সরকারের জাতীয় বাজেটের বড় অংশ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের অর্থ জোগাড়ে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হবে। এ ছাড়া রাজস্ব খেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়েও সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রপ্তানি কমেছে। বড় মাপের অসাধু রপ্তানিকারকদের অনেকে গত কয়েক মাসে আমদানি-রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সরকারকে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

এরই মধ্যে বিডা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে আগামী বাজেটে করপোরেট করহার সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষভাবে ১৯টি অগ্রাধিকার খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করহার ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।

দুর্নীতির বেশি অভিযোগ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
দুর্নীতির বেশি অভিযোগ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গতবছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযাগ পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনও পিছিয়ে নেই। বিগত ১৫ বছরে যাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম অভিযোগ তোলার সাহস কারও ছিল না, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, খুন ছাড়াও ব্যাপকভাবে এসেছে দুর্নীতির অভিযোগ। এসব মামলায় অনেকেই কারাবান্দি আছেন। 

দুর্নীতিতে বরাবরই আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিসংখ্যানেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তবে ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাব পাল্টে গেছে। 

দুদক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিরোধী দলের ৩ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে চলতি বছরের ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অর্ধশতাধিক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ দাখিলের প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। ভুক্তভোগী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুদকে অভিযোগ দাখিল করছেন। বিশেষ করে গতবছর ৫ আগস্টের পর প্রতিদিন শত শত অভিযোগ দাখিল হতে দেখা গেছে। এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধসংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-এ পুরো বছরে দুদকে অভিযোগ এসেছে ১৫ হাজার ৮৪২টি। যার মধ্যে জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৭ মাসে অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৩৩টি। পুরো বছরে ১৫ হাজার ৮৪২টি অভিযোগের মধ্যে ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসেছে ৮ হাজার ৬২৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬১টির। সাবেক মন্ত্রী-এমপি, তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত-সংশ্লিষ্ট ৫ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যদিও নভেম্বরসহ দেড় মাস পদত্যাগের কারণে কমিশনহীন দুদকে কোনো কাজ হয়নি। 

এদিকে দুদকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মোট ৩৭৪টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৯৫৮ জন। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৩৮১ জন ও রাজনীতিক ২৩ জন। বাকিগুলো বেসরকারি চাকরি, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য। একই বছরে ৩৫৪টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এতে মোট আসামি ১ হাজার ৪১৫ জন। আসামির তালিকায় সরকারি চাকরিজীবী ৫৬০ জন, রাজনীতিক ১৪ জন, বাকিরা বেসরকারি চাকরি, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য।  

এ বিষয়ে দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, মূলত ৫ আগস্টের পর দুদকে অভিযোগ দাখিলের সংখ্যা বেড়েছে। সে অনুযায়ী, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারণ তারা এখন কারাগারে আছেন, জামিন নিয়ে যাতে বেরিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে আগামীতে অভিযোগ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

দুদক সূত্র জানায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর দুদকে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম ধাপেই শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামছুল হক টুকু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, ডা. এনামুর রহমান, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জুনাইদ আহমেদ পলক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাকির হোসেন, জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, আলাউদ্দিন নাসিম, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শামীম ওসমান, নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সরওয়ার জাহান, শরীফুল আলম জিন্নাহ, শহীদুল ইসলাম বকুল, শেখ আফিল উদ্দিন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, কাজী নাবিল আহমেদ, ছলিম উদ্দীন আহমেদ, এনামুল হক, মামুনুর রশীদ কিরণ, মহিবুর রহমান, মেহের আফরোজ চুমকী, আজিম উদ্দিন আহম্মদ, আনোয়ার হোসেন, নূর-ই-আলম চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শেখ হেলাল, কামরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, শামসুল হক চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, ইকবালুর রহিম, আব্দুল আজিজ, মাহাবুবউল আলম হানিফ, সাকিব আল হাসান, আমানুর রহমান রানা, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মির্জা আজম, জান্নাত আরা হেনরী, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। এই তালিকার অধিকাংশের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের পর গত ১০ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। অনুসন্ধান শেষে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

>আ.লীগের লুটপাটের চিত্র দেখছি
>ইনকোয়ারি করতে হবে
>সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে