ঢাকা ৮ মাঘ ১৪৩১, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড়

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ এএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পিএম
ফুটপাতে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড়
রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে শীত। বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলিস্তানে শীতবস্ত্র কিনতে উপচে পড়া ভিড়। ছবি: ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ

গায়ে পুলিশের জ্যাকেট। পরনে ট্রাউজার। পায়ে স্যান্ডেল। হ্যাঁ, ক্যাছে গিয়ে কথা বলে জানা যায় তিনি পুলিশসদস্য। গুলিস্তানের ফুটপাতে এসেছেন স্ত্রীর জন্য শীতের পোশাক কিনতে। কিনছেন পুরোনো পোশাক। পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বললেন, ‌‌ভাই নারীদের জন্য বেছে কেনা কষ্টকর। অনেক বাছাবাছি করা লাগে। দেখেন তো এটা কেমন? কালারটা ভালো না?

এরই মধ্যে দোকানদার বলে উঠলেন স্যার, দেখতেছেন ভালো কথা। দাম কিন্তু ছয় শ’র কম হবে না। পছন্দ করে কম দিতে চাইবেন তা কিন্তু হবে না। তখন ওই পুলিশসদস্য বললেন, ভাই আগে পছন্দ করি। তারপর তো দরদাম। পছন্দ না হলে দাম করে কী করব। এরপর নিচ থেকে আরেকটি টেনে বের করে এ প্রতিবেদকে বললেন, ভাই এটা কেমন হয়? প্রতিবেদক মাথা ঝুলিয়ে সায় দিলেন। এটা ভালো। কিন্তু এটার হাতাটা একটু কেমন ঢিলাঢিলা মনে হচ্ছে। এটা যদি আরও ঢিলে হয়ে যায় তখন পরতে সমস্যা হবে। পুলিশসদস্য বললেন- এটা আর ঢিলে হবে না, যা ঢিলে হওয়ার হয়েছে। এটা সেকেন্ড হ্যান্ড। কারও ব্যবহার করা। তাই যতটুকু ঢিলে হওয়ার হয়েছে। 

পোশাক পছন্দ হয়েছে। এবার দরদামের পালা। দোকানদারকে বললেন, ভাই এবার বলেন কত দেব। স্যার ছয় শ। এর নিচে পারি না। তবে আপনাকে ৫০ টাকা সম্মান করতে পারি। আপনি ৫৫০ টাকা দেন। পুলিশসদস্য বললেন, না ৫৫০ টাকা পারব না। ৪০০ টাকা হলে দেন। তাহলে নিয়ে যাই। আর না পারলে অন্য দোকান দেখি। দোকানদার বললেন, ‌না পারি না। আপনি পাঁচশই দেন। তখন পুলিশসদস্য বললেন আপনার লস হলে আপনি রেখে দেন। আমি অন্য দোকান দেখি। এই বলে তিনি অন্য দোকানে হাঁটা শুরু করেন। কয়েক কদম গেলে দোকানদার ডাক দেন। স্যার চলে যান কেন? শোনেন। আপনাকে আরও ৫০ টাকা সম্মান করছি। ৪৫০ টাকা দেন। পুলিশসদস্য বললেন আমি ৪০০ টাকার বেশি পারব না। আপনার লস হলে রেখে দেন। তখন দোকানদার বললেন, ঠিক আছে স্যার দেন। চারশই দেন। তখন তিনি দুটি ২০০ টাকার নোট দিয়ে পুরোনো ওই পোশাকটি কিনে নিয়ে জিপিওর দিকে রওনা হন। তার বুকের নেমপ্লেটে নাম নেই।

এ প্রতিবেদক তার পিছু পিছু হাঁটতে থাকেন। সামনে গিয়ে আরেক দোকানে আরেকটি পোশাক দেখতে শুরু করেন। তখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা হয় ওই পুলিশসদস্যের সঙ্গে। দুজনের কথোপকথন শুনে পাশের এক দোকানদার বলে ওঠেন, ‌পুলিশের কি আর ফুটপাত থেকে কেনা লাগে! পুলিশের কি টাকার অভাব!

এ সময় ওই পুলিশসদস্য তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, কি আর বলব ভাই। আমি আছি অন্য চিন্তায়। আপনি আছেন আপনার চিন্তায়। সবার চিন্তা সবার কাছে। আমার ছেলে এইট থেকে এবার নাইনে ভর্তি হবে। জানুয়ারিতে ভর্তি করতে হবে। ভর্তিতে লাগবে ছয় হাজার টাকা। মাসে মাসে দিতে হবে আট হাজার করে। ঝালকাঠিতে একটি মাদ্রাসায় পড়ত। জানুয়ারিতে বরিশালে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করাব। আমি আছি সেই চিন্তায়। সংসারে কি পরিমাণ খরচ হয়, বেতনের টাকায় খুব হিসাব করে চলা লাগে। পেরে উঠি না। বেতনের বাইরে একপয়সার সুবিধা কারও কাছ থেকে নিই না। যদি নিতাম তাহলে বউয়ের জন্য এই পুরোনো পোশাক কিনতে আসতাম না। নতুন কিনতাম। কিন্তু আমার নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। নতুন একটা পোশাক কিনতে গেলে কোনো মার্কেটে ১৫০০ টাকার নিচে হবে না। তাই এখানে কিনতে এসেছি।

এই পুলিশসদস্যের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠি জেলায়। বাড়িতে স্ত্রী আর ছেলে থাকে। তিনি একা থাকেন ঢাকার রাজারবাগে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি যাবেন। তাই স্ত্রীর জন্য শীতের পোশাক কিনতে এসেছেন। তার তেমন একটা শীতের পোশাক নেই। ছেলের জন্যও কিছু ভালো চোখে পড়লে কিনবেন।

শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাতের শীতকাপড়ের দোকানগুলো। বিশেষ করে গুলিস্তান এলাকা।এসব দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। গতকাল গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের কেউ কেউ বাসায় ফেরার সময় কিনছেন শীতের পোশাক। কেউ কেউ যাচ্ছেন গ্রামে। চলতি পথে কিনে নিচ্ছেন শীতের পোশাক। দোকানগুলোতে চলছে হাঁকডাক। কোনো কোনো দোকানি মুখে হ্যান্ড মাইক লাগিয়ে ক্রেতা ডাকছেন।

গুলিস্তান হল মার্কেটের কোণে সজিবের দোকানে রেকর্ড বাজিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করা হচ্ছে। গেঞ্জি নিলে ৩০০, হুডি নিলে ৪০০। কথা হয় সজিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখান থেকে যারা কেনেন তারা চলতি পথের বেশি। গ্রামে যাচ্ছেন, কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ অফিস করে বাসায় ফিরছেন, কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন শ্রেণির কাস্টমার আসেন। সবাইকে তো দেখে চেনা যায় না। বোঝাও যায় না। মাঝে মাঝে পুলিশের লোকরাও সিভিল পোশাকে কিনতে আসেন। সিভিলে আসলে আপনি বোঝেন কীভাবে? সজিব বলেন, হাতে ওয়াকিটকি দেখে বুঝি। 

আরেক দোকানদার বলেন, এক শ্রেণির কাস্টমার আছেন, তারা প্রায়ই আসেন। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ভালো কিছু এলেই তারা কিনে নিয়ে যান। তারা বোঝেন কোনগুলো ভালো। তারা বেশির ভাগই চাকরিজীবী। অফিস থেকে ফেরার পথে দেখতে দেখতে যান। ভালো কিছু পেলেই কিনে নিয়ে যান। হোক নিজের জন্য বা ছোটদের জন্য কিংবা পরিবারের অন্য কারও জন্য। গুলিস্তানে ঘুরে এদিন শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোয় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অফিস থেকে বাসায় ফিরছেন এমন ক্রেতাই বেশি চোখে পড়ে।

আবারও ঋণখেলাপিদের সুবিধা!

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২১ এএম
আবারও ঋণখেলাপিদের সুবিধা!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

আবারও ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর যদিও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলে আসছেন। তা সত্ত্বেও এখন ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যবসায়ীদের নানামুখী দাবির মুখে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল, সুদ মওকুফ ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ইচ্ছাকৃত এবং চিহ্নিত ঋণখেলাপিরা এই সুযোগ পাবেন না। এ জন্য একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

জানা গেছে, পুরো কাজটি সঠিকভাবে করতে এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে বাছাই কমিটি। পুরো আর্থিক খাতের অংশীজনের সমন্বয়ে এই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বরত নির্বাহী পরিচালক (বর্তমানে মেজবাউল হক)। তিনি এই কমিটির আহ্বায়ক। আর সদস্যসচিব হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক বর্তমানে (মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী)। এর বাইরে তিনজন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন সাবেক ব্যাংকার মামুন রশীদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই সভাপতি (বর্তমানে প্রশাসক আবদুল হাই শিকদার)। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এটা শুধু খেলাপি ঋণের জন্য নয়। আমাদের যেসব নীতিমালা আছে- যেমন ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা, সুদ মওকুফ নীতিমালা- সেগুলো পর্যালোচনা করা এবং সেই অনুযায়ী সাম্প্রতিক আন্দোলন, অগ্নিকাণ্ড, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বন্যাসহ প্রকৃত ক্ষতির মুখে পড়া ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণে বিশেষ পুনঃতফসিলের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করাই কমিটির অন্যতম কাজ। মূলত তিনটি স্তরে এই কাজটা করা হবে। প্রথমত, আমাদের যে নীতিমালাগুলো আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা, ৫০ কোটি টাকার ওপরে যেসব ঋণ আছে, যেগুলো মনে করা হচ্ছে যে, বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় পড়েছে অর্থাৎ কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এই ঋণগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বাছাই কমিটির কাছে পাঠাবে। বাছাই কমিটি সেগুলো পর্যালোচনা করে একটা সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংকে দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সুপারিশ আবারও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। তৃতীয়ত, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে যেসব ঋণ শ্রেণিকৃত হবে সেগুলোর আবেদন প্রাপ্তিগুলোও পর্যালোচনা করবে। তবে যারা চিহ্নিত ঋণখেলাপি, তাদের কোনো বিষয় এখানে বিবেচনা করা হবে না। 

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের সময় যাচাই-বাছাই করে ঋণ বিতরণ না করায় সেই ঋণগুলো আর আদায় হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোও আদায়ে মনোযোগ না দিয়ে তাদের নানা ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। আগের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে সুবিধা দেওয়া হয়। এতে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম পড়ে যায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর। সেই সঙ্গে বিভিন্ন নীতিছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। আবার প্রভাবশালীরা কিস্তি না দিলেও খেলাপি দেখানো হচ্ছিল না। 

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ চুক্তির ফলে গত বছর থেকে খেলাপি ঋণের কঠিন শর্ত মানতে হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া অনেক ঋণ এখন খেলাপি হতে শুরু করেছে। আগের মতো বিশেষ সুবিধা বন্ধ হয়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধার আবেদন জানিয়ে আসছিল। গভর্নর ব্যবসায়ীদের কোনো অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হবে না বললেও বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নিয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা হবে না। এখান থেকে খুব বেশি অর্থ আদায় হবে না। কারণ এই অর্থ দেশের মধ্যে নেই। এটা বাইরে চলে গেছে। ফলে এসব সুবিধা দিয়ে সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করতে পারবে। কিন্তু সত্যিকারভাবে কোনো সমাধান আসবে না। এর মাধ্যমে খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ আদায় হতে পারে। বড় অংশটা আর কখনোই আদায় হবে না। কারণ এটা দেশের বাইরে চলে গেছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের যেসব সম্পত্তি দেশে আছে, সেগুলো ক্রোক করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ 

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বন্যাসহ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বিভিন্ন কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ ছাড়ের প্রয়োজন আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল, শ্রেণিকৃতসহ বিভিন্ন নীতি পর্যালোচনা করবে এই কমিটি। তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা এই বিষয়ে কোনো আবেদন করতে পারবে না।’ 

একই বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিধা দেওয়া হলে ভালো হবে। আগের মতো কোনোভাবেই ঢালাও সুবিধা দেওয়া ঠিক হবে না।’ তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণে সময় বাড়ানোর বিষয়টি ঠিক নয়। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি ঋণ নির্ধারণ করতাম। পরে সেখানে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে ছাড় দেওয়ায় কী লাভ হয়েছে! ২০০৯ সালে যেখানে আমাদের খেলাপিঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা; এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। ফলে আলটিমেটলি আমাদের কোনো লাভ তো হয়ইনি বরং ক্ষতি হয়েছে।’

এর আগে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে নিয়ম শিথিল করা হয়। নামমাত্র ডাউনপেমেন্ট দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে আবার ২ শতাংশ ডাউনপেমন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত এবং পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। করোনা শুরুর পর ২০২০ সালে ১ টাকা না দিলেও ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে কিস্তির ১৫ শতাংশ এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে অর্ধেক দিলেই নিয়মিত দেখানো যেত। আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে ২০২২ সালে ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালায় ব্যাপক শিথিলতা আনেন। আগে যেখানে ঋণ পুনঃতফসিলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ডাউনপেমন্ট দিতে হতো, তা কমিয়ে আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ করা হয়। পটপরিবর্তনের পর এখন আবার বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আ.লীগ বজলু-কচির পদ বাণিজ্য

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১০ এএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
বজলু-কচির পদ বাণিজ্য
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

ঘোষণা দিয়ে পদ-বাণিজ্য করেছেন (২০২১-২১ সালে) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। সভাপতি বজলুর রহমান তার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানার মাধ্যমে চুক্তি করে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। সাধারণ সম্পাদক কচি ‘বিনিময়ে’র মাধ্যমে কমিটি বাণিজ্য করেছেন। শীর্ষ এই দুই নেতার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের অভিযোগের শেষ নেই।

সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল হক রানা ছিলেন সভাপতি বজলুর খুবই ঘনিষ্ঠ। এই সুবাদে তুলনামূলক অল্প বয়সেই নগর উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান রানা। এরপর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অসদাচরণ শুরু করেন তিনি। অনেক নেতাকে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মহানগরের ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন শুরু হলে রানা আরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। বজলুর অনুসারীরা পদের জন্য টাকা নিয়ে রানার কাছে ধরনা দিতেন। শীর্ষ পদ ছাড়া বাকি সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্য পদের জন্য রানা নিজেই মোটা অঙ্কের টাকা অথবা ফ্ল্যাট-প্লট নিতেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য টাকার পরিমাণ নির্ধারণ হলে বজলুর সঙ্গে প্রার্থীদের কথা বলিয়ে দিতেন রানা। পদের জন্য তৃণমূল নেতাদের ফোন করে টাকা লেনদেনের কয়েকটি রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। যাদের কাছে টাকা চাওয়া যাবে না- এমন পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট, প্লটও নিয়েছেন বজলুর। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বজলুর রহমানের একাধিক বাড়ি রয়েছে। তার একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে মোহাম্মদপুর-বছিলা ও উত্তরায়।

পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে রানার ছিল অভিনব প্রক্রিয়া। দলের নাম বিক্রি করে তিনি নিজের আখের গুছিয়েছেন বেশ ‘দক্ষতার’ সঙ্গে। লালমাটিয়ায় রানা চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ ছাড়া আদাবর থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলে দুই নেতার কাছ থেকে দুটি প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। মোহাম্মদপুরজুড়ে বিভিন্ন হাউজিংয়ে রানার রয়েছে অংশীদারত্ব। সেই সব হাউজিংয়ে তার একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এ ছাড়া হাউজিংয়ে প্লট বরাদ্দকারীদের কাছ থেকে গ্যাসলাইন, বিদ্যুৎ, সড়ক-পানির লাইনের নামে চাঁদাবাজিও করেছেন তিনি দলের নাম ভাঙিয়ে।

এদিকে দলের চেয়ে ব্যবসায় মনোযোগী ছিলেন উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই কারণে একপর্যায়ে নগরের থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির কার্যক্রমে অমনোযোগী হয়ে পড়েন। বিজিএমইএতে কাঁচা টাকার প্রভাব থাকায় সেখানেই তিনি মনোনিবেশ করেন। নগরে দলকে শক্তিশালী করার জন্য তাকে বারবার ডাকা হলেও তিনি বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানিয়ে দায়িত্ব অবহেলা করেন। এর ফলে দুর্বল কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

এস এম মান্নান কচি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় দলীয় প্রভাব একচেটিয়া কাজে লাগিয়ে সুবিধা নিয়েছেন তার ভাই কাউন্সিলর আব্দুর রউফ (নান্নু)। তার বিরুদ্ধে মিরপুর এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

মিরপুর সাড়ে ১১-তে কয়েক একর জায়গায় নান্নু তৈরি করেছেন বিশাল মার্কেট। এই মার্কেটের কিছু অংশ তিনি ক্রয় করেন। তবে এর বেশির ভাগটাই তিনি দখল করেন। ওই মার্কেটের তিন পাশে রয়েছে ফুটপাত। সেখান থেকে দৈনিক চাঁদা যেত নান্নুর পকেটে। নান্নুর রয়েছে নিজস্ব বাহিনী, যাদের অধিকাংশই কিশোর গ্যাং সদস্য। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় মাদক ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। চিহ্নিতরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও দলীয় প্রভাবের কারণে প্রশাসন এতদিন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এই সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে।

এই মার্কেটের পাশেই রয়েছে এস এম মান্নান কচির বহুতল বাড়ি। গুলশান-২ নম্বরেও ৫ কাঠা জায়গায় একটি তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে কচির। উত্তরা, মিরপুর, বছিলা, তিনশ ফিটে তার একাধিক প্লট রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাউজিংয়ে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। ঢাকা মহানগর উত্তরের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক পদের বিনিময়ে খসরু চৌধুরীর কাছ থেকে উত্তরার দক্ষিণখান এলাকায় তিন বিঘার প্লট নিয়েছেন কচি। পরবর্তী সময়ে খসরু এই পদকে অবলম্বন করে ঢাকা-১৮ আসনের এমপিও হন। খসরুকে নিজের ব্যবসায়িক পার্টনারও বানিয়েছেন কচি। এ ছাড়া মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আব্দুস সালামকে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পদ দিয়েছেন কচি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক মাস আগে নির্বাচন ছাড়াই বিজিএমইএর সভাপতি হন কচি। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন ছাড়াই ব্যবসায়ীদের বৃহৎ এই সংগঠনের সভাপতি হন তিনি। কচিকে নির্বাচিত করতে বিপুল টাকাও ঢালেন খসরু চৌধুরী। বিনিময়ে গার্মেন্টের বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয় কচির সিন্ডিকেট। বিজিএমইএ সভাপতির পদে বেশি দিন থাকতে না পারলেও কচি ঠিকই নিজের আখের গুছিয়ে নেন। আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা রয়েছে তার। সরকার পতনের পর লন্ডনে পাড়ি জমান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। সেখানে (লন্ডন) তার প্রপার্টি এবং ব্যবসা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বজলুর রহমান ও কচির মধ্যে একসময় চরম মতবিরোধ ছিল। দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিগুলো আলোর মুখ দেখেনি। সভাপতি বজলুর রহমান কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নেন। আর সাধারণ সম্পাদক কচি দলের চেয়ে ব্যবসাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এই নিয়ে দুই নেতা এক টেবিলে বসলেই শুরু হতো বাগবিতণ্ডা। ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট সংগঠনের এক বৈঠকে বজলুর রহমান ও কচি বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন।

নগর উত্তরের তৃণমূল নেতারা বলেছেন, বজলুর ও কচি দলের শীর্ষ পদে থেকে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলন চলার সময়ে তৃণমূলে কোনো নির্দেশনা সঠিকভাবে আসেনি। কার নেতৃত্বে কর্মীরা মাঠে নামবেন তারও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারণ থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের কমিটি নেই। নেতাদের মাঠে নামার মতো দলীয় পরিচয়ও ছিল না। এর মূল্য দিতে হয়েছে দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

তবে সরকার পতন হলেও থেমে নেই ওই দুই নেতার চাঁদাবাজি। ৫ আগস্টের পর সভাপতি বজলুর রহমান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সাধারণ সম্পাদক কচি লন্ডনে পাড়ি জমান। আর দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নগরের বিভিন্ন স্তরের নেতাকে ফোন করে আওয়ামী লীগের নামে টাকা চাইছেন তারা।

উত্তরার দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাকে বজলুর ভাইয়ের এক ঘনিষ্ঠ লোক ফোন করে কিছু টাকা চেয়েছেন। তারা নাকি নেতা-কর্মীদের জন্য খরচ করছেন। ফান্ডে টাকা দিতে হবে। উত্তরে আমি জানিয়েছি, সময় হলে দেব।’

সওজের ৯৫০ কোটি টাকা লুটপাট

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১১ পিএম
সওজের ৯৫০ কোটি টাকা লুটপাট
ছবি : খবরের কাগজের গ্রাফিক্স

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) বিভিন্ন সেতু এবং সড়কের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ৯৫০ কোটি টাকা লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইউডিসি, শামীম এন্টারপ্রাইজ, র‌্যাগনাম, তানভির ও সিএনএস। এসব প্রতিষ্ঠান ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এসব কাজে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মির্জা আজম, সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) মদদ ছিল বলে জানান সওজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা জানান, সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও কার্যাদেশ বাগিয়ে নিত পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাবেক সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি সওজের অসাধু কর্মকর্তারা এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অসাধু উপায়ে কাজ পেতে সহযোগিতা করেছেন। তৃতীয় দরদাতা হয়েও কাজ পেয়ে যায় ইউডিসি 

জানা গেছে, তৃতীয় দরদাতা হয়েও কাজ পেয়ে যায় ইউডিসি। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় ৩৩ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) ও পোর্ট এক্সেস সড়কের টোল, ঈশ্বরদীর পাকশী সেতু (লালন শাহ সেতু), নাটোরের নলকা-হাটিকুমরুল রোডের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি পেয়েছিল ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, মির্জা আজমের সঙ্গে যোগসাজশে কামাল হোসেন সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও সওজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাগিয়ে নেন। বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ, প্রযুক্তি সহায়তা করতে তিনি এই কার্যাদেশ পান। 

২০২১-২২ সালে সওজের অধীনে থাকা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার মেঘনা সেতু, কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পায় ইউডিসি। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যাদেশের প্রথম দরদাতাকে (দর ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা) টপকে কাজ দেওয়া হয় তৃতীয় দরদাতা ইউডিসিকে (দর ৬৭ কোটি ৪৭ লাখ)। এই কার্যাদেশ পেতে ইউডিসিকে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মনিন্দ্র কিশোর মজুমদার, সওজের ঢাকা জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান (এখন ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের পরিচালক), নারায়ণগঞ্জ সড়ক সার্কেলের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নাজমুল হকের বিরুদ্ধে। সওজের নানা সূত্র বলছে, যোগ্য ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে না দেওয়ায় রাষ্ট্রের ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
 
সড়ক ও সেতু বিভাগের টেন্ডার জালিয়াতিতে ইউডিসির সঙ্গী হয়েছিল ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর প্রতিষ্ঠান শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড। টিটুর ভাই মো. আমিনুল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন। তিনি সড়ক ও সেতু বিভাগ থেকে লোপাট করা অর্থে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতে সি পার্ল বিচ রিসোর্চ অ্যান্ড স্পা লিমিটেড নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করেন, যা রয়েল টিউলিপ নামে পরিচিত। 

ইউডিসির অর্থ লোপাটের কর্মকাণ্ডে মোহাম্মদ হুসেইন জনির র‌্যাগনাম রিসোর্স লিমিটেড ও তানভির আহমেদ সানুর তানভির কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিভিন্ন নথি বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডু, মানিকগঞ্জের বাথুলী, নরসিংদীর চরসিন্দুর, ময়মনসিংহের শ্যামগঞ্জ-ঝারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর সড়ক, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের ওজন স্কেল স্থাপনের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে র‌্যাগনাম রিসোর্স ও তানভির কনস্ট্রাকশন। এতে প্রচ্ছন্ন মদদ ছিল সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের, যার নির্দেশে সওজের অনেক প্রকৌশলীও এই অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সওজে জমা হওয়া বিভিন্ন অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, র‌্যাগনাম ও তানভির কনস্ট্রাকশন, ইউডিসি ও এম এম বিল্ডার্সের নামে দরপত্র কিনে এসব প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তারাই পূরণ করতেন ও সমর্থনকারী হিসেবে জমা দিতেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মীরা সড়কে মালামালবাহী গাড়ি থেকে চাঁদাবাজিও করেছেন। অতিরিক্ত মালামালবোঝাই গাড়ি থেকে সরকার যে জরিমানার অর্থ পেত, তাও এই দুই প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে সওজে অভিযোগ রয়েছে। 

ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক এহসানুল হক মুকুল এ বিষয়ে বলেন, ‘এখন তো একটি বিশেষ সময় চলছে। আর আমাদের তো শত্রুর অভাব নেই। কে কী অভিযোগ করেছে তা আমরা জানি না। তবে সওজের কাজ পেতে ইউডিসি কখনো কোনো অনিয়ম করেনি।’

গত ৫ আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যান্য অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে বার্তা পাঠালেও একটি ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উত্তর আসেনি। ঠিকাদার র‌্যাগনাম রিসোর্সের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সওজের প্রতিটা টেন্ডার ছিল উন্মুক্ত পদ্ধতিতে। এখানে আমরা যত কাজ পেয়েছি, তার সব কটিতেই আমরা লোয়েস্ট প্রাইস বিড করেছি। আমাদের টেন্ডার স্পেসিফিকেশনের কাজগুলো করেছেন সওজের প্রকৌশলীরা। সড়কে আমরা যত ওজন যন্ত্র বসিয়েছি তার সব কটিই করেছি সওজের পরামর্শে। তারা যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের ওজন যন্ত্র কিনতে বলতেন, আমরা সেসব প্রতিষ্ঠান থেকেই কিনেছি। টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

অভিযুক্ত সওজ কর্মকর্তা সবুজ উদ্দিন খানের বক্তব্য জানতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি তার কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেননি।
 
নারায়ণগঞ্জ সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান, ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে সওজের চুক্তি রয়েছে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। ইউডিসি, শামীম এন্টারপ্রাইজসহ অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম সম্পর্কে নাজমুল হক বলেন, ‘এখন কোথাও কোনো অনিয়ম হয় না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু বলেন আর মেঘনা সেতুর কথা বলেন, আর মহাসড়কের নানা টোল; সবকিছু এখন সময়মতো সওজ কোষাগারে জমা হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা অভিযোগ।’

দরপত্র ছাড়াই কাজ পায় সিএনএস, আর্থিক ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা
মেঘনা সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ে আর্থিক দুর্নীতিতে নাম এসেছে সিএনএস লিমিটেডের। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভাইয়ের এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি সদয় দৃষ্টি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানেরও। জানা যায়, ২০১৫ সালে কোনো টেন্ডার আহ্বান না করে অভিজ্ঞতাবিহীন প্রতিষ্ঠান সিএনএসকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি সেতুর টোল আদায়ের কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। ১৯ শতাংশ কমিশনে সিএনএসকে ৫ বছরের জন্য কাজ দেওয়া হয়। জানা যায়, এতে ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ পেলে মাত্র ৫-৬ শতাংশ কমিশনে ঠিকাদার পাওয়া যেত। 

এ ছাড়া চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু, খুলনার খান জাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু), পাকশীর লালন শাহ সেতু, চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়ক, নাটোরের নলকা-হাটিকুমরুল সড়ক, ঘোড়াশালের শহিদ ময়েজ উদ্দিন সড়ক সেতু, ভৈরবের ব্রহ্মপুত্র সেতু, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু, যমুনা সেতু এবং পটুয়াখালীর লেবুখালী সেতুর টোল আদায় থেকেও কোটি কোটি টাকা সিএনএস বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব সেতুর মালামাল সরবরাহ, প্রযুক্তি সংযোগ-পরিচালন-রক্ষণাবেক্ষণসংক্রান্ত বিভিন্ন দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব সেতুতে ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন এবং যন্ত্র স্থাপনের পর আদায় করা জরিমানার টাকাও লোপাট করেছেন সিএনএসের কর্মীরা। 

এরও তিন বছর আগে ২০১২ সালে এই দুই সেতুর টোলপ্লাজার কাজ বাগিয়ে নিয়েছিল সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ রতনের প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সেতুর টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে মো. মহিউদ্দিন মঈনের এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে। জানা যায়, সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) সহায়তায় মো. মহিউদ্দিন সওজ ও সেতু বিভাগে টেন্ডার সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। ছোট ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে তিনি কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

জাল সার্টিফিকেট, ওয়েবসাইটে তথ্যের কারসাজি 
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদারদের নানা অনিয়ম তদন্ত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকিউরমেন্ট সার্কেল) মো. আহসান হাবিব। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞতার জাল সনদ দিয়ে বারবার কাজ পেয়ে যাচ্ছে। এতে সওজের কিছু দায় আছে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সওজের ওয়েবসাইটে খেয়াল-খুশিমতো তথ্য ও সনদ আপলোড করেন। দেখা গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান তার অভিজ্ঞতার প্রমাণ হিসেবে কয়েক শ সনদ আপলোড করেছেন। পরবর্তী সময়ে সব সনদ নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকে না সওজের কর্মকর্তাদের। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব সনদের অধিকাংশই ভুয়া। 

আহসান হাবিব বলেন, ‘এই ১৫টি প্রতিষ্ঠানই সওজের কাজগুলো পাওয়ার জন্য যথোপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ছিল। অভিজ্ঞতার দিক থেকে তারা এগিয়ে থাকত বলে বারবার তারা কাজ পেয়েছে। যেমন টোলপ্লাজার কাজের সিএনএস থেকে দক্ষ প্রতিষ্ঠান সওজ খুঁজে পায়নি। কারণ সওজের তখন নিজস্ব টোল কালেকশন সফটওয়্যার বা সিস্টেম ছিল না। বাধ্য হয়ে তাদের সেবা নিতে হয়েছে। তবে এখন আমরা টোল কালেকশনের টেন্ডারে নন-স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট সিস্টেম চালু করে দিচ্ছি। এতে করে যারা সফটওয়্যার বেইজড ফাইন্যান্স কালেকশনের কাজ করছে তারা সবাই আবেদন করতে পারবে। আর এখন টোল কালেকশন সফটওয়্যারও সওজ তৈরি করেছে। এতে এখন দুর্নীতি থাকবে না।’
 
উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় কোনো কার্যক্রমের প্রাক্কলিত দাপ্তরিক দর যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে দরপত্রে অংশ নেওয়া ঠিকাদাররা যদি ওই দরের ১০ শতাংশ কম বা বেশির মধ্যে দর না দেন, তাহলে ওই ঠিকাদারকে অযোগ্য বিবেচনা করা হবে। 

এটিকে দরসীমা বা প্রাইস ক্যাপও বলা হয়। সরকারি কেনাকাটার একটি পদ্ধতির কারণেও সওজের ঠিকাদাররা দুর্নীতির আশ্রয় নেন বলে মন্তব্য করেন আহসান হাবিব। তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ার কারণে ঠিকাদারদের মধ্যে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। সবাই তো জানেই কোন কাজের রেট কত। এখানে টেন্ডার বিড করে দক্ষতা প্রমাণ করতে ভুল কাগজ, সার্টিফিকেট জমা দিচ্ছেন ঠিকাদাররা। তবে ১০ পার্সেন্ট প্রাইস ক্যাপ সিস্টেমটা সরকার তুলে দিতে চায়। তখন হয়তো এই টেন্ডার জালিয়াতি, ভুয়া সার্টিফিকেটের রমরমা বাণিজ্য বন্ধ হবে।’

সওজ বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিলেও সুফল মেলেনি। যাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয় তারা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে আবার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে সওজের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন সওজের তদন্ত কমিটির এই সদস্য।

ভ্যাট খাতে সমন্বয়হীনতা

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ পিএম
ভ্যাট খাতে সমন্বয়হীনতা
এনবিআর

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও সোমবার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হয়নি। ফলে বর্ধিত হারেই ভ্যাট ও শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। 

গত ৯ জানুয়ারি দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫। এ দুটি অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। অধ্যাদেশ জারি করে ৯৩ পণ্য ও সেবা খাতের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে হাজারও পণ্য ও সেবা খাতে খরচ বেড়েছে। প্রায় সব ব্যবসাতেই খরচ বাড়ে। খরচের চাপে দিশাহারা ব্যবসায়ীরা বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর আবেদন জানিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সরকারি নীতিনির্ধারকদের কাছে ছুটছেন। অনেকে রাজপথেও নামছেন। 

গতকালও অটোমোবাইল খাতের ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে কর্মকর্তাদের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তারা। এর আগে মিষ্টান্ন খাতের ব্যবসায়ীরা, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরাও এনবিআরের সামনে অবস্থান নেন। তারা এনবিআর কর্মকর্তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘ভ্যাট না কমালে সেখান থেকে সরবেন না। ঘরে ফিরে যাবেন না।’ 

ব্যবসায়ীদের অনড় অবস্থানের কারণে এনবিআর কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট খাতের ভ্যাটের হার কমানোর ঘোষণা দেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব ঘোষণার একটিও বাস্তবায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আর এতে বন্দর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং বাজারে বর্ধিত হারেই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক নেওয়া হচ্ছে। 

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত হিসেবে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, অধ্যাদেশ জারি করে তফসিলভুক্ত ৯৩ পণ্য ও সেবা খাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাবে হাজারের বেশি খাতে আগের চেয়ে খরচ বাড়বে। অনেক পণ্যের দাম বাড়বে। অনেক ব্যবসায় খরচ বাড়বে। শুধু ইন্টারনেটে বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের কারণে শত শত খাতে খরচ বাড়বে। সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়ছেন। 

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে রাজপথে নেমেছেন। এনবিআর বাধ্য হয়েই আন্দোলনে থাকা ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। ফলে বর্ধিত হারেই ভ্যাট ও শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এনবিআরের উপকমিশনার (ভ্যাট) ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্শি খবরের কাগজকে বলেন, কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কিছুটা সমন্বয় করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ঠিক কতটা খাতে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। 

যতক্ষণ না এসআরও জারি করা হচ্ছে, ততক্ষণ সব খাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আগের হারে নেওয়া হবে না কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অধ্যাদেশ জারির পরই দাম বাড়লেও এসআরও জারি করে বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক না কমানো পর্যন্ত আগের দাম ও খরচ কার্যকর। 

বাংলাদেশ অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ কারখানা পরিচালিত হয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। ওয়ার্কশপ মালিকরা অন্যের জায়গা ভাড়া নিয়ে গাড়ি মেরামত করেন অথচ জায়গার মালিকের ওপর ভ্যাট নির্ধারণ না করে ওয়ার্কশপ মালিকদের ওপর ভ্যাট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা।’ 

গত ৯ জানুয়ারি ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওয়ার্কশপ সেবার ওপর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। আগে ১০ শতাংশ ভ্যাট ছিল। রেস্তোরাঁ সেবা খাতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এনবিআর। ওই খাতে ভ্যাট ছিল ৫ শতাংশ। ৯ জানুয়ারি তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ খাতের মালিকদের আন্দোলনের মুখে পুনরায় আগের হার নির্ধারণের ঘোষণা দেয় এনবিআর।

পাশাপাশি ই-বুকেও ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে ওষুধ, পোশাকসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর যে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা রিভিউ (পর্যালোচনা) করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। নতুন আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইসহ শিল্পমালিকরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তবে এখনো এসব ঘোষণা বাস্তবায়ন করে এসআরও জারি করা হয়নি।

চট্টগ্রামে বাড়ছে অপরাধ

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২১ এএম
আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩১ এএম
চট্টগ্রামে বাড়ছে অপরাধ
চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় পুলিশের দুর্বলতায় ক্রমশ বাড়ছে অপরাধ। মহাসড়ক ও বাসাবাড়িতে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা, হামলাসহ জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা দিন-দুপুরে ঘটছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাই, পুলিশকে মেরে রক্তাক্ত করা, ফাঁড়ি দখল করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীর অফিস স্থাপনের মতো ঘটনাও ঘটছে। অথচ এসব ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, অতি সামান্যই। 

পুলিশের আসামি ধরে আইনের আওতায় আনার কথা থাকলেও উল্টো পুলিশই হেনস্তার শিকার হচ্ছে। আবার কিছু পুলিশ সদস্যও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ নাগরিকরা।  কেউ কেউ বলছেন, এরকম চলতে থাকলে পুলিশের মনোবল বাড়ার পরিবর্তে আরও কমবে। এখনই নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। 

জানা গেছে, জেলার উপজেলাগুলোর মহাসড়কে ডাকাতি আর গরুর খামার লুটের সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে খুনের ঘটনাও ঘটছে। শহরে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা থেকে হচ্ছে হাতাহাতি। 

গত ১৪ জানুয়ারির ঘটনা। নগরের কাপ্তাই রাস্তার চেকপোস্টে একটি সিএনজি অটোরিকশা তল্লাশি করার সময় পুলিশের ৫ সদস্যকে তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে তারা গ্রেপ্তার করে। এদের একজন পটিয়ার বাসিন্দা প্রবাসী মোরশেদ খান। অন্যজন মোহাম্মদ করিম। অভিযোগ উঠেছে ওই ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য সিএনজি অটোরিকশায় থাকা প্রবাসীকে কীভাবে এনআইডি কার্ড পেয়েছেন- এরকম অবান্তর-অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করেছেন। পুলিশ পাল্টা ওই প্রবাসীর হামলার শিকার হওয়ার কথা বললেও ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতেও তিনি যে পুলিশকে মারধর করেছেন, এমনটা দেখা যায়নি। কেবল উত্তেজিত অবস্থায় দেখা গেছে ওই প্রবাসীকে। সেই ভিডিওতে প্রবাসী মোরশেদ খানকে উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘ট্যাক্স দিয়ে চলি আমরা, যারা চুরি করে, দুর্নীতি করে, তাদের আগে ধরুন। সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করে।’ অপরজনকে ‘কীভাবে পাসপোর্ট বানিয়েছেন, কীভাবে এনআইডি পেলেন, কীভাবে বিদেশে গেলেন’, এভাবে জেরা করতে শোনা যায়। বিষয়টি যে হয়রানিমূলক ছিল, ভিডিও দেখেই বোঝা গেছে।
 
এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁন্দগাও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাবউদ্দিন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের মারধর করা হয়েছে বলে দাবি করেন। অস্বীকার করেন তাদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ। গত ২১ নভেম্বর দুপুরে নগরের আকবরশাহ এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করে সীতাকুণ্ড থানার একটি বিস্ফোরক মামলার আসামি রায়হান উদ্দিনকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ১ পুলিশ সদস্য আহত হন।

আরেকটি ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নগরের আকবরশাহ থানার নাছিয়াঘোনায় পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস খুলে বসেন সন্ত্রাসী নুরুল আলম নুরু। পরে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে পুলিশ সেটি উদ্ধার করলেও নুরুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

এসব ছাড়াও পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে ডাকাতি, আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে খুনের ঘটনা বাড়ছে। গত ১৪ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাই বাণিজ্য মেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুন্না নামের এক যুবদল কর্মী খুন হন। 

তার আগে ২ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে মীর আরমান হোসেন (৪৮) নামে এক শ্রমিক দল নেতাকে পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডও  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে। 

এর আগে গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের অক্সিজেন কুয়াইশ এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা খুন হন। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চান্দগাঁওয়ে টার্ফ দখলকে কেন্দ্র করে জুবায়ের উদ্দিন বাবু নামে এক যুবদল কর্মী খুন হন। ১১ অক্টোবর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শান্তিনগরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী ইমনকে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

একই বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে দিন-দুপুরে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 

শুধু তাই নয়, গত ১৪ জানুয়ারি রাতে জেলার হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে গরু লুট করে ডাকাতরা। এর আগে পটিয়ায় এক খামার থেকে ১৯টি গরু ও নগরের পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, বোয়ালখালী, ফটিকছড়িতে বড় ধরনের গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ডাকাতের কবলে পড়ছেন চালক ও যাত্রীরা। এতে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা পুলিশ পরিচয়ে ঘটলেও অপরাধ দমনে পুলিশকে তৎপর দেখা যায়নি। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। থানায় অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিতে অনীহা দেখায় পুলিশ। পুলিশ আগে-ভাগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপেক্ষায় থাকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে।

অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছে পুলিশ 
গত ১৭ জানুয়ারি রাতে নগরের চকবাজার থেকে আলমগীর হোসেন নামে পুলিশের একজন এএসআই ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে ১৬০ গ্রাম আইস পাওয়া গেছে।

এর আগে ৫ ডিসেম্বর নগরের বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকার একটি বাসায় ডাকাতির সময় ৬ ডাকাতকে ধরে ফেলেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ফারুক নামে পুলিশের একজন এএসআই ছিলেন।

৩০ ডিসেম্বর শামীম ভূঁইয়া নামে পুলিশের বরখাস্তকৃত এক কনস্টেবল পুলিশ সদস্যের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে দেড় লাখ টাকা ‘নগদ’-এ লেনদেন করার সময় গ্রেপ্তার হন। 

এসব ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. রইছ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হবে। চেকপোস্টের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য। ৫ আগস্টের পর পুলিশ চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। যারা পটপরিবর্তনের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে এমন লাঞ্ছনার, হেনস্থার ও অনভিপ্রেত আচরণ করছেন তারা মোটেও ভালো করছেন না। এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশি সেবাও ব্যাহত হতে পারে। সাধারণ মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অন্যথায় কারোরই মঙ্গল বয়ে আনবে না।’ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। ৫ তারিখের পর পুলিশের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া বাহিনীটির ওপর জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাইরের শৃঙ্খলার অভাবে পুলিশের মনোবল একেবারে শূন্যের কোঠায়। পুলিশের অভ্যন্তরে বদলি, বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডির মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। খবর বেরিয়েছে পুলিশের কাছ থেকে পুলিশ ঘুষ গ্রহণ করছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থেকেও অনেকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই ব্যাপারগুলো পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশব্যাপী রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটছে। সম্মিলিতভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিক পুলিশের প্রতি সহযোগিতার হাত না বাড়ালে এ থেকে উত্তরণ ঘটা সম্ভব নয়।’