
জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে- এ নিয়ে জনমনে কৌতূহলের মধ্যেই জানা গেল, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র খবরের কাগজকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে বলে গত বুধবার জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি বা তার সরকার খোলাসা করেননি যে কোন নির্বাচন আগে হবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গতকাল বৃহস্পতিবার খবরের কাগজকে বলেন, সরকারের অন্যতম দায়িত্ব সব নাগরিকের কাছে সরকারি সেবা সহজে পৌঁছে দেওয়া। বিগত সরকারের আমলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল। ওই জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগই এখন আত্মগোপনে রয়েছেন বা দুর্নীতির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক আছেন। এর ফলে নাগরিক জীবনের সব সেবা ঠিকমতো নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভেবেছিল, প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে এসব সেবা নিশ্চিত করা যাবে। সে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বাস্তব পরিস্থিত হলো- প্রশাসকের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব।’
অভিযোগ আসছে, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আর তাই নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় কি না, তা নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকার হিসাব কষছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চাপ আছে। বিশেষভাবে অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট জানিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর তার প্রেস সচিব শফিউল আলম জানান, আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন।
তবে বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
দ্রুত নাগরিক সেবা সরবরাহ করতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার করতে পারলে ভালোই হতো। তাহলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন নীতিনির্ধারক খবরের কাগজকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জবাবদিহিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জবাবদিহির জায়গাটি বাড়ানো হবে। এমনভাবে নির্বাচিতদের কাজ করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে, যাতে দূর্নীতি করার সুযোগ কমবে।
সম্প্রতি নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সেখানে সবার অভিমত হচ্ছে, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত। কারণ স্থানীয় নির্বাচন করার কারণে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে।’ এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার হচ্ছে এক ব্যক্তিসর্বস্ব, মেয়র বা চেয়ারম্যাননির্ভর। কাউন্সিলর ও সদস্যরা এখানে কেউ নন। মেয়র, চেয়ারম্যানরা তাদের কিছু দিলে পাবেন, না দিলে পাবেন না। এই পদ্ধতি এখন আমরা চালু করে রেখেছি। আবার এই পদ্ধতি এমনভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছি যে অন্য কেউ এখানে আসতেও পারবে না। আগে অন্য দলের মেয়র, চেয়ারম্যানরাও থাকতেন। তখন একটা ভারসাম্য তৈরি হতো। এখন সে অবস্থা নেই। দলের বাইরে কেউ এসে গেলে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’