
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. শাহ আলম ‘অসুস্থতার ভান’ ধরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ। কিন্তু ডিউটিরত পুলিশ সদস্যসহ থানার সুরক্ষিত ভবন থেকে শাহ আলম কীভাবে পালানোর সুযোগ পেলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। অনেকে এ ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলা বা সুযোগ সৃষ্টির অভিযোগ তুলছেন। তবে তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সারা দেশে সংশ্লিষ্টদের কাছে ‘ইমার্জেন্সি মেসেজ’ বা জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত (শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা) পলাতক ওই পুলিশ পরিদর্শককে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সারা দেশে পুলিশের সব শাখা বা ইউনিটে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। এটাকে রেড অ্যালার্ট বলা যায় না, মূলত আমরা সবখানে তাকে আটকের জন্য বলেছি। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা এবং বন্দরগুলোর ইমিগ্রেশনকে বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’
ডিসি তালেবুর রহমান আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় গত বুধবার রাতে তাকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়াকালে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান।
উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশ জানিয়েছে, শাহ আলম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে তাকে বদলি করা হয় কুষ্টিয়ায় ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে। সেখান থেকেই একটি হত্যা মামলায় বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ।
পুলিশের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সাবেক ওসি বা পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে সহকর্মীরা থানায় তার সঙ্গে যথেষ্ট সৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পালানোর আগমুহূর্তে শাহ আলম ওই থানার পরিদর্শকের (অপারেশনস) কক্ষে ছিলেন। সময় তখন আনুমানিক বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। এ সময় থানায় নিজ কক্ষে বর্তমান ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম কীভাবে পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানার এএসআই সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুহিব উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওনাকে (সাবেক ওসি শাহ আলম) আদালতে হাজির করার জন্য তখন একটা প্রস্তুতি চলছিল। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করছিলেন। এমন সময় পুলিশ সদস্যদের কারও মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত শাহ আলম জানতে পারেন যে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। রিমান্ডের কথা শুনেই তিনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। যেন অচেতন হয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা তার জন্য বাথরুম থেকে পানি আনতে যান। আর তখনই সুযোগ বুঝে শাহ আলম বাইরে গিয়ে পালিয়ে যান।’ ওসি মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘পালানোর জন্য শাহ আলম মূলত অসুস্থতার ভান ধরেছিলেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতার জন্য পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছি। দ্রুতই তাকে আটক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত থানার সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবউল্লাহকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।