
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন মো. রনি (৩০) নামের এক যুবক। একটি গুলি তার মুখগহ্বর ভেদ করে মেরুদণ্ডে বিদ্ধ হয়। এতে তার ৮টি দাঁত, জিহ্বা ও মেরুদণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক দফায় চিকিৎসা নেওয়ার পরও তার মেরুদণ্ড থেকে বুলেটটি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। এ কারণে রনির শরীরের একটা অংশ প্রায় বিকল হয়ে গেছে। এখন যন্ত্রণা দিন কাটছে তার। চিকিৎসরা জানান, বিদেশে নিলে রনি সুস্থ হতে পারেন।
এদিকে রনির চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তার পরিবার। এখন দুই বেলার খাবারের জোগান দিতে তার পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশে রনির চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাদের। তাই ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা চান রনির বাবা এনামুল হোসেন।
এনামুল হোসেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের দৈত্যরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজধানীর একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করতেন। এদিকে রনিও রাজধানীর অন্য একটি কনস্ট্রাকশন সাইট দেখাশোনার কাজ করতেন। তার স্ত্রীর নাম শান্তা ইসলাম। ফাহাদ ইসলাম (১) নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে। দুই ভাইবোন ও মা-বাবাসহ ছয় সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম ছিলেন রনি ও তার বাবা।
রনির পরিবার জানায়, গত ৫ আগস্ট সকালে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেয় রনি। বেলা ১১টার দিকে তাদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় রনি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই তিনি জ্ঞান হারান। আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুলশান-২-এর ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত অবধি অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা গুলি বের করতে ব্যর্থ হন। এ সময় তার পরিবার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করে। ওই দিন রাতেই তাকে ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৮ দিন চিকিৎসা নেন রনি। এ সময় হাসপাতালের প্রায় ১২ লাখ টাকার বিলের কথা শুনে তার পরিবারের সদস্যরা হতভম্ব হয়ে যান। পরে এক সমন্বয়কের মাধ্যমে শুধু ওষুধের বিল পরিশোধ করে ছাড় পান তারা। পপুলারের ওষুধের বিল ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে রনির পরিবারকে আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ধার ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হয়। এরপর সমন্বয়কদের মাধ্যমে তাকে প্রথমে সাভার সিআরপি হাসপাতালে ও পরে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইবনে সিনায় ২ মাস ৭ দিন তার চিকিৎসা চলে। ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় সাড়ে তিন মাস চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে গেলেও রনির শরীরের একটি অংশ এখন বিকল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হাঁটাচলা করতে তার কষ্ট হচ্ছে। আর শরীরে বয়ে বেড়ানো বুলেটের যন্ত্রণায় তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না।
রনির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় থাকাকালে সমন্বয়করা রনির বিস্তারিত তথ্য নিলেও তিনি কোনো সরকারি সহযোগিতা পাননি। তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন।
এনামুল হোসেন বলেন, ‘গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে খরচ করেছি। এখন আমি নিঃস্ব। এখন আমি বেকার। অভাবের সংসারে এখন দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এ অবস্থায় ছেলেটার চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার অনুরোধ, সরকার যেন ছেলেটার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।’
রনির মা নাজমা বেগম বলেন, ‘নাতিটার জন্য দুধ কেনা, দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জুটবে কি না এ চিন্তায় থাকি। আর রাত পোহালেই কিস্তির টাকার জন্য এনজিওর লোকজন বাড়িতে এসে বসে থাকেন। গ্রামের মানুষ ভাবে, আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। অথচ রাতে যে খাব ঘরে সে চালও নেই।’
রনির স্ত্রী শান্তা ইসলাম বলেন,‘আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচ মাস হলো। যন্ত্রণায় তিনি সারাক্ষণ ছটফট করেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, তারা যেন আমার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। যাতে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আহত রনির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তার বিষয়ে খবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা সম্ভব, করব।’ সূত্র: বাসস।