
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একদল দুর্বৃত্তের আকস্মিক হামলার শিকার ব্যবসায়ী নেতা এহতেশামুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তবে কেন এমন নৃশংসভাবে তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তা নিয়ে নানা সম্ভাব্য কারণ জানা গেছে। এহতেশামুল হককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার নেপথ্যে সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়া, মার্কেটের কমিটির নির্বাচন অথবা রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ১০ জানুয়ারি রাতে চাপাতি হাতে ৮-১০ জনের সন্ত্রাসী দল এলিফ্যান্ট রোডে আকস্মিকভাবে ব্যবসায়ী নেতা এহতেশামুল হককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এই কোপানোর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়।
স্বজনরা জানিয়েছেন, চাপাতির কোপে তার এক পা ও হাত মারাত্মক জখম হয়েছে। আজ সোমবার তার অস্ত্রোপচার করা হবে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
হামলার শিকার এহতেশামুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তিনি মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত শুক্রবার রাতে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে মাস্ক পরা ৮-১০ জন দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় ফেলে যায় তাকে। এ সময় ওই কমিটির সভাপতি ওয়াহিদুল হাসান দিপুও হামলার শিকার হন।
এহতেশামুল ছোট ভাই ইফতেখার খবরের কাগজকে বলেন, আমার ভাইয়ের (এহতেশামুল) অবস্থা ভালো না। তার দুই পা ও এক হাতে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আজ সোমবার সকালে অস্ত্রোপচার করা হবে।
কী কারণে কারা হামলা করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা অনেক দিন ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণ তো আছে। তবে কারা হামলা করেছে সে বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। কারণ হামলাকারীরা মাস্ক পরা ছিল। তাই সিসিটিভিতে কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।’
হামলার শিকার ওয়াহিদুল হাসান দিপু নিউ মার্কেট থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। হামলার সময় তিনি গাড়িতে থাকায় শুধু পায়ে আঘাত পেয়েছেন। ওয়াহিদুল হাসানের অভিযোগ, গত ২২ ডিসেম্বর ইমন গ্রুপের লোকজন এহতেশামুল হক ও তার কাছে চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির একজন সদস্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি তার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে এজাহারভুক্ত আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে এসে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করতে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। ভিকটিম এহতেশামুল হক ও মো. ওয়াহিদুল হাসান মার্কেটের অন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই চাঁদাবাজি ও হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা আসামিদের তীব্র রোষানলে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে তাদের ওপর হামলা করা হয়।
এদিকে ব্যবসায়ী এহতেশামুলকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন করেন বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোডের ব্যবসায়ীরা।
মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, কয়েক দিন ধরে ইমন গ্রুপের লোকজন সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদা না দেওয়ায় একজন ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখমের ঘটনার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিন উদ্দিন বলেন, এহতেশামুলকে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে গেছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু দুর্বৃত্তরা পুলিশ যাওয়ার আগেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আসিফুল হক আসিফ ওরফে ঝন্টু (৩২) ও মো. কাউসার মৃধা (২৪)। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের নতুন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানকে খবরের কাগজকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ইমন গ্রুপের লোকজন চাঁদার জন্য হামলা চালিয়েছেন বলে মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করেছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সঙ্গে ইমন গ্রুপের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।