
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বিমান ভাড়া কমানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় বিমানের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে বিমান ভাড়া কমার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে অভ্যন্তরীণ রুটে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই দাম ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দুটি অধ্যাদেশে উড়োজাহাজের টিকিটসহ প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর ও ভ্যাট বাড়ানোর অধ্যাদেশ জারির পরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে এবং তা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়ে গেছে। এ অধ্যাদেশ জারি করে ওই সব পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এসব খাতে আগে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট ধরা হয়েছিল।
এনবিআর সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছর ব্যাংক খাতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিমান টিকিটে গত কয়েক বছর ধরে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। ব্যাংক খাতে আর্থিক নিরাপত্তার প্রত্যাশায় ও বাধ্য হয়ে মানুষ টাকা রাখে। তার ওপর প্রায় সব হিসাবধারীকে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে এনবিআর। শুধু বাড়ানো নয়, কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য এনবিআরের প্রতিবেদনে ‘দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৪’ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নভোএয়ারের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান মেজ-বাহ-উল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে আগে যেখানে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতি টিকিটে এটি ৫০০ টাকা ছিল, এখন তা ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এতে ক্রেতাদের ওপর প্রভাব পড়বে। কারণ এমনিতেই ভাড়া বেশি হওয়ার একটা চাপ আমাদের ওপর রয়েছে।’
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণত আমরা এই ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়গুলোকে অর্থবছরের শুরুতে দেখে থাকি। তখন সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা করি। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এভাবে শুল্ক আরোপ করায় বিমান ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণ তো বুঝবে না এটা আমরা বাড়াচ্ছি না। এটা সরকারের শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাড়ছে। সুতরাং এতে এয়ারলাইনসগুলোকেই যাত্রীরা দোষ দেবে। অথচ খুব সাধারণভাবে যদি বলি, ধরা যাক ভারতের কলকাতায় যাওয়ার একটি বিমান টিকিটের দাম ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে প্রায় ৯ হাজার টাকার ট্যাক্সই আছে। এটার সঙ্গে এখন আরও ৫০০ টাকা যোগ হয়ে গেল। অর্থাৎ ভাড়া হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা, সেখানে ৯ হাজার ৫০০ টাকা ট্যাক্স। সুতরাং এয়ারলাইনস পাচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে এখানে এয়ারলাইনস আসলে তেমন বেশি কিছু পাচ্ছে না। টিকিটের বড় অংশই ট্যাক্সে চলে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেমিট্যান্স চাচ্ছি, রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলছি। এয়ারলাইনসগুলো তাই তাদের জন্য যতটা সম্ভব কম টিকিট প্রাইস দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। কিন্তু একের পর এক নানা ধরনের ট্যাক্সের কারণে টিকিটের দাম কেবল বেড়েই যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটা খুব সাংঘর্ষিক একটা বিষয় হয়ে গেল। কারণ একদিকে কয়েক দিন আগেই সরকার টিকিটের দাম কমাতে বললেন, আবার এখন নতুন করে শুল্ক আরোপ করছেন। বড় বিষয় হলো, বিমানে যাতায়াত এখন আর কোনো বিলাসী বিষয় নয়। এটি এখন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। ফলে এটির ভাড়া সেভাবেই নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন।’