
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গঠিত কমিটির প্রতিবেদন সংস্থাটির জন্য এখন বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরের ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধনের মেয়াদ বৃদ্ধি ও রাজস্ব সমন্বয় করতে দরপত্র আহ্বানের আগে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
সংস্থাটির আইন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক ও নগরপরিকল্পনাবিদকে সদস্যসচিব করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রেড ম্যাক্স নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা চসিকের কাছে পাবে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা! বার্ষিক কর ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৫ বছরের চূড়ান্ত হিসাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি চসিকের কাছে এই টাকা পাবে। চসিক স্থান বুঝিয়ে দিতে না পারা কিংবা দখল দিতে না পারার কারণে অথবা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি আয় বঞ্চিত হয়েছে বলে কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
জানা গেছে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে পৃথক দুটি চুক্তিতে ট্রেড ম্যাক্স নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে চট্টগ্রাম শহরের চারটি ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দেয় চসিক। এর মধ্যে রয়েছে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, কদমতলী ও দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সে সময় পাঁচ বছরের চুক্তি করা হলেও করোনা মহামারির কারণে চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করায়, অর্থ পরিশোধের দায় চসিকের কাঁধে চাপে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যবর্ধনে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেনের প্রথম উদ্যোগটির ওপর উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেন।
নগরের পৃথক চারটি ফ্লাইওভারকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনে ট্রেড ম্যাক্সের সঙ্গে ২০১৯ ও ২০২০ সালে পৃথক দুটি চুক্তি করে চসিক। আনুষ্ঠানিকভাবে এ চুক্তি বাতিল না করে ফ্লাইওভারগুলোসহ শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনে গত মাসে দরপত্র আহ্বান করে চসিক। বিষয়টিকে ‘আইনবহির্ভূত’ দাবি করে উচ্চ আদালতে রিট করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। আদালত তা আমলে নিয়ে দরপত্রে উল্লেখ থাকা ফ্লাইওভারে নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে চসিককে এক মাসের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট সিটি করপোরেশন গঠিত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন খাতে ট্রেড ম্যাক্সের আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে ৫ বছরে ট্রেড ম্যাক্সের কাছে চসিকের পাওনা দেখনো হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ চসিকের পাওনা দেখানো হয় দেড় কোটি টাকা। সব পাওনা বাদ দেয়ার পরও চসিকের কাছে ট্রেড ম্যাক্সের পাওনা দেখানো হয় ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
ট্রেড ম্যাক্সের স্বত্বাধিকারী হেলাল আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাকে দিয়ে চুক্তির বাইরেও অনেক কাজ করিয়েছে চসিক। সড়কদ্বীপ মেরামত, নতুন গ্রিল স্থাপন, ফ্লাইওভারের ওপরের অংশ রং করা, প্লাম্বিং এর কাজ, গ্রিল রং করা, ফ্লাইওভারের ছোটখাটো মেরামত কাজ করানো হয়েছে। এ ছাড়া বার বার বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছে। সে তারগুলো আমরা কিনে লাগিয়েছি। এ ছাড়া বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সড়কদ্বীপ প্রায় দুই ফুট উঁচু করেছি।
তিনি বলেন, ‘চুক্তির মধ্যে থাকা কিছু কাজ আমরা করতে পারেনি। তার কারণ ছিল সিটি করপোরেশন আমাদেরকে জায়গা বুঝিয়ে দেয়নি। ১০টি পাবলিক টয়লেট করার কথা থাকলেও একটি করতে পেরেছি। জায়গা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে ১০৬টি হকার শেডও করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘‘তাদের (ট্রেড ম্যাক্সের) আয়ের বড় একটি উৎস ধরা ছিল ‘পে পার্কিং’। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের ওপরের অংশও আয়ের আরেকটি বড় উৎস ছিল। যার কোনোটাই তারা বুঝে পাননি। কারণ শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে চারটি ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধন, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিলের খরচ চালানো সম্ভব নয়। যেকারণে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।’’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে আমাদের সঙ্গে চসিকের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ (চসিক) উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছে। তাই আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’
এ বিষয়ে চসিক মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদের আমলে করা চুক্তিগুলো বাতিল করা হচ্ছে। কারণ ওই সময় করপোরেশনের স্বার্থবিরোধী চুক্তি হয়েছিল। আদালত যদি স্থগিতাদেশ দিয়ে থাকেন তার জন্য চসিকের আইন কর্মকর্তা এবং আইনজীবী আছেন।