ঢাকা ৪ ফাল্গুন ১৪৩১, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১

ভ‍্যাট ইস‍্যুতে চাপে এনবিআর

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৫ এএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
ভ‍্যাট ইস‍্যুতে চাপে এনবিআর

বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না এলে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এমন ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কয়েকটি পণ্য ও সেবা খাতের ওপর থেকে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হজযাত্রীদের টিকিটের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক কমানোর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে

বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার এনবিআরে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আবেদনে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার আঘাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। করোনা কমার পর অর্থনীতি কিছুটা ঘরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ডলারের মূল্য বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় এলসি খোলা। অতীব প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে। 

এসআরও জারি না করেই কিছু পণ্যের ভ্যাট কমানোর ঘোষণা

পোশাক ও মিষ্টির ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নন-এসি হোটেলের ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এটি আগে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভ্যাট হবে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে হজযাত্রীদের হজ পালনের ব্যয় কমাতে হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। ইন্টারনেট-মোবাইল ও ওষুধের কাঁচামালের ওপর বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কও কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) বেলাল হোসেন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অধ্যাদেশ জারি করে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখছি। তারা ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোন খাতে কতটা কমানো সম্ভব, সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে এটাও ঠিক যে একসময় সব খাতে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয়ে ভ্যাট কমানোর প্রতিশ্রুতি আমরা তাদের দিয়েছি। পরে এসআরও জারি করা হবে।’ 

অর্থ মন্ত্রণালয়ে এনবিআরের পাঠানো চিঠি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তিনি জানান, কিছু পণ্য ও সেবার ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে কে কী বলছেন বা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবিতে ব্যবসায়ীরা অনড়

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে পারেনি এনবিআর। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মিষ্টান্ন খাতের কয়েক শ ব্যবসায়ী ভ্যাট কমানোর দাবিতে অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা জানিয়ে দেন, ভ্যাট কমানো না হলে ঘরে ফিরবেন না। ব্যবসায়ীদের এমন অবস্থানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এনবিআর এসআরও জারি না করেই সংশ্লিষ্ট খাতের ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই হোটেল, রেস্তোরাঁর ব্যবসা চাপে আছে। এর মধ্যে রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করে আরও বিপদে ফেলা হয়েছিল। ভ্যাট কমানোর দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছিলাম। ভ্যাট না কমালে আমরা ঘরে ফিরে যেতাম না। এনবিআর আমাদের দাবি মেনে ভ্যাট কমানোর কথা জানিয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘৭০ শতাংশ রেস্তোরাঁ এখনো ভ্যাটের আওতার বাইরে। তাদের না ধরে আমরা যারা ভ্যাট দিয়ে থাকি তাদের ওপর আরও চাপ বাড়ানো হয়েছিল। এসব না করে প্রশাসনের ব্যয় কমিয়ে ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিয়ে সরকার আয় বাড়াতে পারে। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো দেশের জনগণের ওপর ইচ্ছামতো করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হতে পারে না।’

নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার যে নীতি নিচ্ছে তা বাস্তবায়িত হলে আমরা কোথায় যাব? গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা চিন্তা করা উচিত। ব্যবসায়ী মানেই যেন অপরাধী। সবাই চুষে খেতে চায়।’ 

তিনি বলেন, ‘আসলে সব সরকারের চরিত্রই এক। গত সরকার বলেছিল গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আজকে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছি যে প্রান্তিক কৃষকের আম, টমেটো, আনারস, কলা, পেয়ারা ও কলার পাল্প পণ্যগুলোর ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক চাষিরা। এখন যদি ভ্যাট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তবে অনেকেই এসব পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকবেন। সরকারকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশে অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ৫ টাকার একটি বিস্কুট আর তৈরি করা সম্ভব হবে না। বিস্কুটের দাম বেড়ে যাবে। তাহলে ব্যবসা করব কীভাবে? ভ্যাট আর সম্পূরক শুল্ক না কমালে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।’ 

অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য

ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের আয় বাড়ানোর অনেক পথ আছে। সরকারকে সেসব পথ খুঁজে নিতে হবে। তা না করে ইচ্ছামতো ভ্যাট আর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হলো, যা ব্যবসায়ে খরচ বাড়িয়ে দিল। এতে শিল্পে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।’

আরেক রাজস্ব খাতের বিশ্লেষক এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্পের খরচ বাড়ানো হলো। এসব খাতে খরচ বাড়লে বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাকেও দাম বেশি দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারলে রাজস্ব পরিশোধ করবেন কীভাবে?’

ছাত্রদের নতুন দল: অস্বস্তি নিয়েই আত্মপ্রকাশ হচ্ছে

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম
ছাত্রদের নতুন দল: অস্বস্তি নিয়েই আত্মপ্রকাশ হচ্ছে

নতুন দল গঠনের আগেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। সদস্যসচিব পদ নিয়ে মূলত মতবিরোধ তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ্যে। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। নতুন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার হতে পারে ২০০ জনের। এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭৫ জনের নাম। গতকাল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে সভা হলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব খবরের কাগজকে বলেন, নতুন দল গঠনে বিভিন্ন কোরামের লোকজন রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি, সাংবাদিকসহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া লোকজন রয়েছেন। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। কমিটির আকার ২০০ বা ৩০০ জন হতে পারে। 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপরই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির লক্ষ্যে দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা। উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিয়ে নাহিদ ইসলাম নিজের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ঐক্য ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয় লিয়াজোঁ কমিটি। পরে গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই ব্যানারে ডান ও বামপন্থি অনেকেই যোগ দেন, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে তারা জনগণের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করেন। এখন চলছে গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ। 

তবে দলের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। আন্দোলনের মুখ হিসেবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক রাখার পক্ষে একমত সবাই। তবে সদস্যসচিব পদ নিয়ে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন। এই পদে বর্তমান নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত উঠে আসছে। এ নিয়ে করা হচ্ছে জরিপও। গত শনিবার রাত থেকেই আখতার হোসেনকে মাইনাস করা হচ্ছে বলে ফেসবুকে সরব হন তার অনুসারীরা। আবার আন্দোলনে ভূমিকা এবং সাংগঠনিকভাবে অংশগ্রহণ বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে তার অনুসারীরা।

যদিও এ নিয়ে নাগরিক কমিটির কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেননি। তবে সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের সদস্যসচিব নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকালের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে আলোচনাও করা হয়নি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে পোস্ট করার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করা হয়। 

জানা যায়, আখতার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁস নিয়ে অনশন করে আলোচনায় আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। এরপর আলাদা হয়ে গঠন করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, যার আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। জুলাই আন্দোলন চলাকালে টিএসসি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

সাবেক শিবিরের নেতা-কর্মীদের অভিমত, নতুন দলের প্রধান হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন হলে এটা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কমিটি হবে। কারণ তারা দুজনই সংগঠনটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছিলেন। ১৭ জুলাইয়ের পর ক্যাম্পাস বন্ধ হলে যাত্রাবাড়ী, চানখাঁরপুলে আন্দোলন পরিচালনায় শিবিরের আলী আহসান জোনায়েদ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলে পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে ঢাবি শিবিরের নেতা-কর্মীরা ভূমিকা রাখেন। এসব বিবেচনায় সদস্যসচিব পদে তারা নিজেদের কাউকে চাইছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নাগরিক কমিটিতে যুক্ত আছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীরাও। তারা নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান। অনেকে আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে নেতৃত্বে রাখার পক্ষে। এছাড়া নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদকে শীর্ষ পদগুলোতে রাখার কথা বলছেন অনেকেই।

তবে সদস্যসচিব নিয়ে মতবিরোধ নিরসন না হলে তাদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বর্তমানে নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৮৮ জন। গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন ১১০ জনের মতো। অনুপস্থিত থাকা নেতারা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আলাদাভাবে একটা সভা করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। ব্যাপক মতবিরোধ হলে তারা আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন বলে জানা গেছে।

নতুন দল গঠন নিয়ে শুরুতেই এ ধরনের মতবিরোধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন অন্য রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ছবি: সংগৃহীত

মায়ানমার সরকারের গণহত্যা নির্যাতনে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একটি কার্যকর উপায় খুঁজতে আগামী মার্চেই ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং সংকট সমাধানের একটি রূপরেখা তৈরির বিষয়ে সম্যক ধারণা নেবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে

সূত্র জানায়, মহাসচিবের এই সফরকে সফল করতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ তিনিও যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এর পরপরই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে বাংলাদেশে আসবেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি তিনিও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত আর কয়েকটি প্রতিনিধিদলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে

সূত্র আরও জানায়, মায়ানমার সরকারের গণহত্যা অত্যাচারে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটিসেফ জোনপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন চান নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাবও দেন গত জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাব জাতিসংঘ অধিবেশনে পাসও হয়

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়ে একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রদূত . খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন এর আগে তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি সফল আয়োজন করতে . খলিলুর রহমান কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এই সম্মেলন থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র খবরের কাগজকে জানান ইতোমধ্যে এই সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে কাতারের দোহা বা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরকে প্রাথমিকভাবে ভাবা হচ্ছে

মায়ানমারের রাখাইনে একটিসেফ জোনপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন . খলিলুর রহমান রাখাইন এখন মায়ানমার জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকায়সেফ জোনপ্রতিষ্ঠা অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা কারণ রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ এখন জাতিগোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে যদিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরাকান আর্মির সমর্থন ছিল এরপরও আরাকান আর্মিকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ করে দেওয়ার শর্তে রোহিঙ্গাদের জন্যসেফ জোনপ্রতিষ্ঠা করা জাতিসংঘের জন্য সহজ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে জাতিসংঘের মহাসচিবের ঢাকা সফর নিশ্চিত হয়েছে, তবে দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছে ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে বৈঠক করবেন এ ছাড়া তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যাবেন সেখানে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান, রোহিঙ্গা নেতা নিরাপত্তাসহ দায়িত্বে থাকা পক্ষের মতামত জানবেন জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সব পক্ষের মতামত নেবেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপের জন্য আহ্বান জানান এ ছাড়া অধিবেশনের পাশাপাশি মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈঠক করেন সময় প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা নিরাপত্তা এবং অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি বলেন, ‘আমরা এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছি তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তা সত্ত্বেও একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবেশগত ব্যয়ের ক্ষেত্রে এত বেশি খরচ হয়ে চলেছে এগুলো আমাদের জন্য প্রথাগত অপ্রথাগত নিরাপত্তাঝুঁকি আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্পষ্টতই বাংলাদেশ তার ধৈর্যসীমায় পৌঁছেছে

উল্লেখ্য, মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে চীনের মধ্যস্থতায় মায়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সাত বছরে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান সরকার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয় গত দুই মাসে এই উদ্যোগ অনেক এগিয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার সূত্র জানায়

সিফাত/

বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৫ এএম
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০ এএম
বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ
এক মাসের ব্যবধানে বিদেশি আট ধরনের ফলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ছবি: সংগৃহীত

এক মাসের ব্যবধানে বিদেশি আট ধরনের ফলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ এর মধ্যে আনারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, চায়না কেনু কমলার দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ, মালটার বেড়েছে ২০ শতাংশ, নাশপাতির বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আঙুরের বেড়েছে ২০ শতাংশ আপেলের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ এসব ফলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে

জানা গেছে, গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি ফলের দাম বেড়ে গেছে সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফলের দোকানে আনার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়, এক মাস আগে যার দাম ছিল ৪৫০ টাকা ছাড়া চায়না কমলা এক মাস আগে বিক্রি হতো ২৫০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, মালটা ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা, কেনু ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, আপেল ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা, কালো আঙুর ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সবুজ আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়

ফল ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়ানোর খবরেই বাজারে ফলের দাম বেড়েছে তবে শুল্ককর কমানোর জন্য চট্টগ্রামের ফলমন্ডিতে আন্দোলন করেছেন ফল ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা ফল খালাস না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিল ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে বাজারের প্রত্যেকটি বিদেশি ফলের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে আপেল, কমলা, আঙুর, আনার, মালটা, কেনু কমলা, নাশপাতি, আলুবোখারার মতো বিদেশি ফল

জানা গেছে, দেশে আপেল, কমলা, মালটা, আঙুর, আনার নাশপতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এসব ফল বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিসর, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসে

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা সৈয়দ মুনিরুল হক জানিয়েছেন, বিদেশি ফলের আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় আমদানিকারকরা আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফলের চালান খালাস করেননি গত কয়েক দিন ধরে এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে

চট্টগ্রাম ষোলশহর কর্ণফুলী মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, পাইকারিতে প্রত্যেক ফলের কার্টনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে ফলে আমরাও খুচরায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ফলের দাম বেড়ে গেছে

চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে কিছু কিছু দেশি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যেমন বড়ই, আনারস, পেয়ারা তাই বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবটা মানুষের মধ্যে পড়ছে না কিন্তু বিদেশি ফল ধনীরা ছাড়া কেউ খেতে পারবেন না যে হারে দাম বেড়েছে আগামী রমজানের ইফতারে আপেল, কমলা, আনার, আঙুর মালটার দেখা হয়তো মিলবে না

চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ী আমদানিকারক মোহাম্মদ জুনায়েদুল হক জানিয়েছেন, চীনের লাল আপেল ২০ কেজির কার্টন এক মাস আগে হাজার বিক্রি হয়েছিল, এখন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, একই ভাবে ১৫ কেজির মালটা ৫০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে হাজার ২০০ টাকায়, ১০ কেজি কার্টনের কমলা ৫০০ টাকা বেড়ে হাজার টাকা, লাল আঙুর কেজির কার্টন টাকা বেড়ে হাজার ৩০০ টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান আপেল ২০ কেজির কার্টন হাজার ২০০ টাকা, আফ্রিকান আপেল হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এদিকে আনারের মানভেদে ১৭ কেজির কার্টন ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে

চট্টগ্রামের ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফল আমদানিকারক তৌহিদুল আলম বলেছেন, আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর বৃদ্ধির ফলে বাজারে ফলের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বিদেশি ফল আর কেউ খাবেন না এতে আমদানিও কমে যাবে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব সবার ওপর পড়বে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে সরকারের কাছে আমাদের দাবি ফল আমদানির ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে শুল্ককর আরও কমাতে হবে

তিনি জানান, এর আগে আমদানিকারক ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন আমদানি ফলের চালান খালাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর মধ্যে এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্ধিত শুল্ক বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তাই ব্যবসায়ীরা আন্দোলন শিথিল করেছেন

সিফাত/

আবার আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ পিএম
আবার আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এখন সংবিধান সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কারণ ওই অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। কিন্তু এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত জানিয়েছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বিএনপি মনে করে, সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে ফ্লোর ক্রসিং-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। তবে আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দলের বিপক্ষে এমপিরা ভোট দিতে পারবেন না। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার ৬ নম্বর দফায়ও একই প্রস্তাব আছে। এসব বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা- এই চারটি বিষয় সংরক্ষিত রেখে বাকি বিষয়গুলোতে সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতার প্রস্তাব দিয়েছি। দলের বিপক্ষেও তারা সমালোচনা করতে পারবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, এই উপমহাদেশের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, সেখানে দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না রাখলে সরকারের স্থিতিশীলতা রাখা কঠিন হবে এবং অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তবে আমরা সময় নিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবিষ্যতে উন্নীত হতে পারব।’ 

জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সংবিধানের ৬৭ ও ৭০ অনুচ্ছেদের ফ্লোর ক্রসিং বর্তমানে বন্ধ করা উচিত হবে না। এটি সংসদীয় সরকারব্যবস্থা স্থিতিশীল করতে যুক্ত করা হয়েছিল। এটি আরও দুই মেয়াদ পর্যন্ত রাখতে চান তারা। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার হয়, তাহলে এমপিদের বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে, তখন অনুচ্ছেদ ৭০ পুনর্বিবেচনা করা যাবে। 

দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনে আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। এখন তারা কোনটা গ্রহণ করবেন বা যোগ-বিয়োগ করবেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করলেও সমস্যা, আবার রাখলেও নানা সমস্যা। তাই যুক্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। তাই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলছি না। যা আছে তা থাকবে, কিন্তু ব্যবহার সম্পর্কে কিছু নিয়মনীতি করা যেতে পারে।’ 

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না। অথবা সংসদের কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাইলে তিনি উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’ অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট লিখিত সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল বা সংস্কার চেয়েছে। তবে জামায়াত আরও দুই টার্ম সময় নেওয়ার কথা বলেছে। 

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের জন্য আমরা ভারতের পার্লামেন্টের একটা নিয়ম অনুসরণ করতে পারি। সেখানে নিয়মটা হলো, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মতামত জানাতে চাইলে দলের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের একমত হতে হবে। তার মানে কোনো দলের সদস্যসংখ্যা যদি ৩০ জন হন, তবে তার মধ্যে ১০ জনকে একসঙ্গে দ্বিমত হতে হবে। ভারতে নিয়ম হলো, এই দ্বিমত পোষণ করা সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এই পদ্ধতিটা আমাদের দেশেও চালু করতে হবে। এটা করতে পারলে তখন যাকে-তাকে দলে নিয়ে আসা বন্ধ হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকার গঠন, বাজেট অনুমোদন ও অনাস্থা প্রস্তাব শুধু এই তিনটি ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ৭০ অনুচ্ছেদ বন্ধ হলে সংসদ সদস্যরা কিছুটা স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তবে এর সুযোগ নিয়ে সরকারি দলকে ভাঙার চিন্তা করা কিন্তু সহজ হবে না। ধরা যাক, জাতীয় সংসদে একটা সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৫১ জন সদস্য লাগবে। এখন তাদের মধ্যে ৫১ জন সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এসে দ্বিমত পোষণ করবেন, এটা চিন্তা করা কঠিন।’

অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধনের বিষয়ে যা বলছে অন্য দলগুলাে
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার বা সংশোধন চেয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। দলগুলো বলছে, অর্থবিল, বাজেট পাস, অনাস্থা ভোট ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করবেন।

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। কোনো দল সরকার গঠন করার পর সেই দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়ে বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলো আলাদা করে অনুচ্ছেদ ৭০-এ লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেকোনো বিল পাসের ক্ষেত্রে এমপিদের তাদের বিবেক অনুসারে পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার রাইটস থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’ 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে সবার দিক বিবেচনা করে এখন সংশোধন চাইছি। যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তাহলে তারা যদি অর্থবিলের বিরোধী, সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে সংসদে দল টিকিয়ে রাখা কষ্ট হবে। টাকা দিয়ে কেনাবেচা খেলার সুযোগ তৈরি হবে। মূলত এসব কয়েকটি ধারা বাদে বাকিগুলোতে স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’ 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ নয়, সংবিধানে এই দেশ, জাতি, ইসলাম ও মানবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক যেসব ধারা রয়েছে তা সংশোধন করা উচিত বলে মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, ’৭২-এর সংবিধান ভারতের চাপানো সংবিধান। এ সংবিধানে ভারতের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদ রয়েছে। ভারতের সংবিধানের হুবহু মূলনীতিগুলো সংবিধানে কেন আসবে? ফলে সংবিধানে এই জাতি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় রয়েছে। সেগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যেন তাদের মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা পান সেই প্রত্যাশাই আমরা করি। ৭০ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বাতিল নয়, কয়েকটি ধারার সংশোধন করা যেতে পারে।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সংশোধনের কথা বলেছি। দুই-তিনটি ধারা বাদে বাকি বিষয়ে সংসদ সদস্যদের অপছন্দ হলে বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন এমন বিধানের প্রস্তাব দিয়েছি। এতে সংসদে সবাই স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’ 

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের খবরে কাগজকে বলেন, ‘অর্থবিল ও অনাস্থা ভোট বাদে যেকোনো বিষয় সংসদ সদস্যরা যাতে স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন সেই সুপারিশ করেছি।’ 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল নয়, এটা রিভিউ করা দরকার। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সময়োপযোগী সংশোধন করা জরুরি। হুবহু এক রাখা প্রয়োজন মনে করছি না। তবে সংসদ সদস্যদের অধিকার যেন খর্ব না হয়। কিন্তু আবার কিছু জায়গায় দল ও দেশের নিরাপত্তার বিষয়টাও রাখতে হবে।’ 

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ বাদ দিলে দলের ওপর নেতার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। দলের এমপিরা নেতার নির্দেশ মানবেন না। এটাকে হয়তো কিছুটা সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে।’

স্বাস্থ্যসংস্কার প্রস্তাব রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব বিএনপির, চিকিৎসায় নাগরিক কমিটি

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব বিএনপির, চিকিৎসায় নাগরিক কমিটি
ছবি: সংগৃহীত

দেশে রোগীদের রোগের তথ্য সংরক্ষণে নেই নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা। এক হাসপাতালে দেখানোর পর আরেকটিতে গেলে যাবতীয় কাগজ নিয়ে যেতে হয়। তা না হলে ওই চিকিৎসক জানতেই পারেন না আগের হাসপাতাল থেকে রোগী কী ধরনের চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন, কী কী পরীক্ষা করিয়েছেন। তা ছাড়া দুই বছর, তিন বছর কিংবা আরও আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র রোগীরা খুব একটা সংরক্ষণ করে রাখেন না। তথ্য সংরক্ষণ না থাকায় রোগের ইতিহাস জানা যায় না, বারবার পরীক্ষা করতে হয়, সময় নষ্ট হয় এবং চিকিৎসায় ভুলের ঝুঁকি বাড়ে।

ঝুঁকি এড়িয়ে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অগ্রাধিকার দেওয়া সাতটির মধ্যে অন্যতম জাতীয় ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড (ইএইচআর) ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি। বিএনপির স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবেও এ বিষয়টি এসেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপিও স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনডিএফ, ড্যাবসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রস্তাবে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে প্রতিরোধের চেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে চিকিৎসার বিষয়টি। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রস্তাবে উপেক্ষিত পুষ্টি ও নারীস্বাস্থ্য।

কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, এই বিষয়গুলোতেও জোর দেওয়া প্রয়োজন। তারা যে প্রস্তাব পেয়েছেন, তাতে যেগুলো বাদ পড়েছে তা যুক্ত করে চলতি মাসেই একটি সুন্দর প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস শপথ গ্রহণ করেন। এরপর খাতভিত্তিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই অনুযায়ী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদকে প্রধান করে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী আগামীকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি ৯০ দিন পূর্ণ হবে। তবে এর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে না কমিশন। আরও হয়তো সময় চাইবে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান বলছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিবেদন হস্তান্তর করবেন। তবে কমিশনের কেউ কেউ মনে করছেন, মার্চের মাঝামাঝির আগে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ স্বাস্থ্য খাতের পরিসর অনেক বড়। দেশে ১৮ কোটি মানুষের সবাই স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট। তাই এই খাত সংস্কারের কাজটি বেশ সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।

কমিশনপ্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘বহু প্রস্তাব পেয়েছি। সেগুলো গুছিয়ে লেখা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করছি। তবে এই মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন দিয়ে দেব।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক, স্বাস্থ্য পলিসি এবং অ্যাডভোকেসি সেলের সম্পাদক ডা. তাসনিম জারার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয়। এই প্রস্তাবে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান তিনি।

সেগুলো হলো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সিস্টেম, একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পারিশ্রমিক, সারা দেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা (ইএইচআর) চালু করা, চিকিৎসার জন্য প্রমাণভিত্তিক জাতীয় গাইডলাইন, একটি জাতীয় বায়োব্যাংক স্থাপন ও সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সাতটি প্রস্তাবের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ও পুষ্টির বিষয় আসেনি। এখানে রোগ হওয়ার পরে চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্য অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধের কথাটা আমাদের আগে চিন্তা করা উচিত।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাব হস্তান্তর করেছে। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খোন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রস্তাব (খসড়া) তুলে ধরেন।

বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি পরিকল্লিত স্বাস্থ্যনীতির অনুপস্থিতি, চিকিৎসক-চিকিৎসা প্রার্থীর সম্পর্ক উন্নয়ন, প্রতিরোধই যে প্রতিকারের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ’ এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।

বিএনপির প্রস্তাবে রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে প্রস্তাব দিয়েছে। স্বাস্থ্যের সামগ্রিক বিষয় চলে এসেছে ওই প্রস্তাবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তজার্তিক মানের স্বাস্থ্য পরিকাঠানো নির্মাণ করা।

বিগত ১৫ বছর দেশের স্বাস্থ্য খাতে পরিকল্পিত উদাসীনতা ও দুর্নীতির ব্যাপকতার মাধ্যমে অতি সাধারণ চিকিৎসার জন্যও ক্রমবর্ধমান বিদেশ গমনের প্রবণতা, দেশীয় সেবার প্রতি জনগণকে বিমুখ করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কারের অগ্রাধিকারের বিবেচনায় রাখারও প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। সুষ্ঠু তদন্ত ও পর্যালোচনার মাধ্যমে ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতির নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির প্রস্তাবে সংক্রমক এবং অসংক্রমক রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধিতে চিকিৎসা শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া, প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুলে ফাস্ট এইডের প্রয়োগিকভাবে শিক্ষা এবং পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক ফাস্ট এইড, সিপিআর ও রেসকিউ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

নাগরিক কমিটির অগ্রাধিকার দেওয়া সাতটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ের সঙ্গে বিএনপির প্রস্তাবে মিল আছে। রেফারেল সিস্টেম, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবার নিশ্চয়তা, চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে ন্যায্য অধিকার ও সুরক্ষা, ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড ব্যবস্থা চালু ও গবেষণা- এই বিষয়গুলো বিএনপি এবং নাগরিক কমিটি উভয়ের প্রস্তাবে এসেছে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, বাংলাদেশে জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অনেক রোগী সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পান না, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকে মারা যান। সে জন্য একটি আধুনিক জরুরি সেবাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক থাকবে, যাতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এখনকার মতো শুধু রোগী পরিবহনের পরিবর্তে অ্যাম্বুলেন্সেই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা শুরু হবে, যা মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে।

এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাব দিয়েছে নাগরিক কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিক কমিটি জানায়, অসুস্থ হলে অনেকেই গুগল বা সামাজিক মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ খোঁজেন, যেখানে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। এর ফলে অনেকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পান না। এই সমস্যা সমাধানে একটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত, নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। 

রোগ প্রতিরোধ, পুষ্টি এবং নারীস্বাস্থ্যের বিষয় তাদের প্রস্তাবে গুরুত্ব পেয়েছে কি না জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘কিছু কিছু কাভার করবে। সবকিছু কাভার করতে পেরেছি এ রকম না। আমাদের চিকিৎসা খাত খুবই অগোছালো। অনেক বিষয় আছে। সে কারণে আমরা চিকিৎসার বিষয়ে জোর দিয়েছি।’

নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. আশরাফুল আলম সুমন বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদারের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি চলে আসে। সেই বিষয়টি আমাদের প্রস্তাবে আছে।’

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য-সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে জোর দিতে হবে। যেমন পুষ্টি বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য এগুলো লাগে। যদি স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারি আর রোগ প্রতিরোধ করতে পারি এবং নিচের দিকে এগুলোকে যদি ট্যাকল করতে পারি, তাহলে ওপরের দিকে আর যেতে হবে না। আমাদের দরকার নিচের দিকে শক্তিশালী করা।’

বিএনপি, ড্যাব, এনডিএফ, জামায়াত ও নাগরিক কমিটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ-প্রতিকারের ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুষ্টির বিষয়টা ওইভাবে আসেনি। পুষ্টির বিষয়ে আরেকটু জোর দিতে হবে।’

নির্ধারিত ৯০ দিনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, ওষুধ, জনবল, প্রাইভেট সেক্টর, পাবলিক সেক্টর। স্বাস্থ্যের পরিসর অনেক বড়। এখনো অনলাইন সার্ভে হচ্ছে। কয়েক দিন মধ্যে হয়তো রিপোর্ট পাব। আমাদের চর এলাকায় এখনো যাওয়া হয়নি। হয়তো এই মাসের মাঝামাঝি আমরা যাব। আমরা গ্রাফটিং শুরু করেছি। কিন্তু মজবুত একটা জিনিস দিতে গেলে আরেকটু চিন্তাভাবনা করা লাগে। আমাদের কেউ কেউ বলছেন, এ মাসের মধ্যে দিতে পারব। কিন্তু আমার মনে হয় না আমরা দিতে পারব। আমি সাজেস্ট করব, কমিশনকে মার্চের মাঝামাঝি দিতে।’

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্য অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন ও দলের কাছ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে উপেক্ষিত নারীস্বাস্থ্য। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি। বাকিরা যারা আছে, তারা কেউ নারীস্বাস্থ্যের কথা বলে না। পুষ্টির কিছু বিষয় আসছে। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের সংস্কার কমিশনে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলা হচ্ছে। আমরাও প্রস্তাব রেখেছি। নারীস্বাস্থ্য বলতে আমরা সাধারণত মাতৃস্বাস্থ্য বুঝি। কিন্তু এর বাইরেও নারীদের স্বাস্থ্যের অনেক কিছু আছে। সেগুলো কিন্তু অ্যাড্রেস করা হয় না। তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। অনেক ধরনের স্পেশালাইজড হসপিটল আছে কিন্তু নারী স্বাস্থ্যের ওপর স্পেশালাইজড হাসপাতাল নেই। এটা মেয়েদের প্রয়োজন এবং অধিকার দুটিই।’