ঢাকা ২ ফাল্গুন ১৪৩১, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১

১০ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত, ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২১ এএম
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২২ এএম
১০ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত, ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় এখনো শেষ হয়নি তদন্ত। এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরও টনক নড়েনি ঘটনার জন্য দায়ী থাকা সংশ্লিষ্টদের। ভয়ানক এ ট্র্যাজেডির পর জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রিয়জন হারানো স্বজনেরা।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেইলি রোডের ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার জন্য ভবনের কাঠামোগত ত্রুটিকে দায়ী করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ভবন নির্মাণে অগ্নিনিরাপত্তার প্রশ্নে প্রচলিত নিয়মনীতির ৯৫ শতাংশই ব্যত্যয় ঘটানো হয়। 

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) মো. আনিচুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘৪৬ জন মানুষের জীবন গেছে, এটি একটি বড় ঘটনা। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনায় আগে কোনো মামলা হয়নি। এ ধরনের মামলা আমাদের জন্য নতুন। যেমন- পুরান ঢাকার নিমতলীর ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তাই আমরা চাচ্ছি না কোনো ভুলত্রুটি নিয়ে সামনে এগোই। তদন্তে তাড়াহুড়ো করছি না, আবার যাতে কোনো গাফিলতি না হয় যেদিকেও সতর্ক রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা হওয়ায় বেশ কয়েকটি সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। সবার রিপোর্ট এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ হবে। আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও নির্ভুল তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব।’

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে অগ্নিনিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদন করলেও এতে রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমতি ছিল না। কিন্তু ভবনের বেজমেন্ট (গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান) ছাড়া সব কয়টি ফ্লোরে ছিল রেস্তোরাঁ। এ কারণে ভবনে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়নি। পুরো ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে, সিঁড়িতে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছিল। ভবনে সিঁড়িও ছিল মাত্র একটি। এমনকি বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ক্যাশ কাউন্টারের পাশেও রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনের নিচতলার ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকানের ইলেকট্রিক চুলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শর্টসার্কিট) থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে গ্যাস সিলিন্ডারের লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকায় মানুষ চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতি রয়েছে। ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। ভবন ব্যবহারের সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণসংক্রান্ত নির্দেশনাও মানেননি সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিসের সনদও ছিল না। এই ভবনে অগ্নিনিরাপত্তামূলক ৯৫ শতাংশ নিয়ম মানা হয়নি। 

তিনি বলেন, ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকানের পুরোনো কেতলি বিস্ফোরণ হয়ে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। রেস্তোরাঁগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভবনের ছাদ বন্ধ থাকায় প্রাণহানি হয়েছে বেশি। তিনি আরও বলেন, দেশে তিন লাখেরও বেশি রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে। এই খাতকে নিরাপদ রাখতে অবশ্যই নিয়ম মানতে হবে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে দুর্ঘটনা বাড়বে। নিয়ম মানলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে।

সম্প্রতি বেইলি রোডের সেই ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি অনেকটা কঙ্কালসার অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় প্রতিটি দোকানের আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা অবস্থায় পড়ে আছে। পুড়ে যাওয়া কাচ ও আসবাবের টুকরো পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে ছিল মেঝেতে। এখনো পুলিশি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ভবনটিকে। শুরু হয়নি ভবনটির সংস্কারকাজ। তবে বেইলি রোডে কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায় আগের মতোই। খোলা ছিল বেশির ভাগ শপিংমল ও শোরুম। এমনকি পিঠাঘর ও নানা রেস্তোরাঁয় রান্না ও খাবারের পসরা ছিল জমকালো। ফুটপাতেও বসেছিল ফুচকা, চটপটি, মুড়ি মাখানোর দোকান। 

সরেজমিন সেখানে গেলে কথা হয় পুড়ে যাওয়া ভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মোশাররফের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে তদন্তের কাজে ভবন দেখতে পুলিশ আসে। তারা জানিয়েছে, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। শুনেছি শিগগিরই ভবনের সংস্কারকাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, অনেক দিন হয়ে গেল, এটার কোনো সুরাহা হয়নি। 

অন্যদিকে নিহতের স্বজনরা এবং প্রাণে বেঁচে ফেরা অনেকেই দাবি করছেন এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একধরনের হত্যাকাণ্ড। ঘটনার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের স্পষ্ট কারণ ও দায়ী কারা সেসব জানতে পারেননি নিহতদের স্বজনরা। ঘটনার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধেও তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও তদন্তসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে বিষয়টিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করে তদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের সুবিধামতো করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে বলেও একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে।

এ প্রসঙ্গে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বাবা শাবলুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃষ্টি আমার প্রথম সন্তান। রাতে ঘুমাতে পারি না, সারাক্ষণ সন্তানের মুখটা চোখে ভাসে। সন্তান হারানোর ব্যথা কজন বোঝে। চোখের জলে বুক ভেসে যায়। কেউ খবর নেয় না। প্রায় এক বছর হয়ে গেল, আগুন লাগার কারণ জানা গেল না। এটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তদন্ত পিছিয়ে যাচ্ছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে শাবলুল আলম বলেন, ‘আমার মেয়ের লাশ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছাড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল আমার মেয়ের নাম অভিশ্রুতি, সে হিন্দু। আমি নাকি তার বাবা না। টাকা পাওয়ার জন্য বাবা সেজেছি। যাহোক, এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ 

বেইলি রোডে এই বহুতল ভবনে সন্তানসহ আটকে পড়েছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘১০ মাস শেষ হয়েছে, এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হয়নি। এত বড় ঘটনা, এত মানুষের জীবন গেলেও এখন মনে হচ্ছে এটি সামান্য ছিল। এটাকে আমি গাফিলতিই বলব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সমস্যা হচ্ছে কোনো কিছু ঘটলে ঘটনার পর পরই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পরে আমরা তা ভুলে যাই। আমার সন্তানরা এখনো ওই ভবনের সামনে দিয়ে গেলে তাদের গা শিউরে ওঠে, আতঙ্কিত হয়।’ তিনি বলেন, নিয়ম না মেনে যারা ভবন করেছে, অগ্নিনিরাপত্তার সার্টিফিকেট নেয়নি, রেস্তোরাঁ চালিয়েছে, জরুরি নির্গমন পথ বন্ধ করে করে যারা সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রেখেছে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। এ ছাড়া সরকারি যেসব সংস্থার এসব দেখভালের দায়িত্ব ছিল তারাও তা করেননি, এদেরও বিচার হওয়া উচিত।’ 

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় মামলা করা হয়। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৭ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয়। তা ছাড়া প্রতিবেদন দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং তিতাসের কমিটিও।

নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটনে ঝুঁকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ এএম
নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটনে ঝুঁকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য
ছবি: খবরের কাগজ

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরবন। এই বনের নির্মল পরিবেশ হাতছানি দেয় পর্যটকদের। তাই শীতের শুরুতে পর্যটন স্পটগুলোতে ভিড় জমে ভ্রমণপিপাসুদের।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করছে বিভিন্ন বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন। তবে সরকারিভাবে দিবসটি পালনের দাবি জানায় তারা। তাদের দাবি, সরকারিভাবে দিবসটি উদযাপন করা হলে সুন্দরবনের প্রতি মানুষ আরও বেশি সংবেদনশীল হবে। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

খুলনা বন সংরক্ষক দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ১ লাখ ৪৭৮ জন পর্যটক। এর মধ্যে দেশি পর্যটক ৯২ হাজার ৫২৬ জন ও বিদেশি পর্যটক রয়েছেন ৫১৯ জন। এ ছাড়া তীর্থযাত্রী রয়েছেন ১১ হাজার ৩৩ জন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩ হাজার ৩৭৩ টাকা। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ৭৬ হাজার ৩৬৩ জন পর্যটক। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

তবে বন গবেষকরা বলছেন, সুন্দরবনকে রাজস্ব আয়ের উৎস ভাবলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাদের মতে, অসচেতনতা, নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন ও পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপের অভাবে বনের ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ভেঙে পড়তে পারে বনের খাদ্যশৃঙ্খল। এ ছাড়া সুন্দরবনে থেমে নেই বাঘ-হরিণ শিকার। নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় নষ্ট হচ্ছে বনের জলজ পরিবেশ। ইকো ট্যুরিজমের নামে কমার্শিয়াল ট্যুরিজম, প্লাস্টিকদূষণসহ বনে মনুষ্যসৃষ্ট ঝুঁকিও ক্রমাগত বাড়ছে।

এদিকে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবনে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় একাধিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা রয়েছে। এখানে বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আলাদা সংস্থা রয়েছে। বনের ভেতরে বিভিন্ন সংস্থা কংক্রিটের আবাসন ভবন গড়ে তুলেছে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে থাকায় শেষ পর্যন্ত কেউই সঠিকভাবে বন রক্ষায় কাজ করতে পারে না। এ কারণে বনের ইকো ট্যুরিজম ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট একক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে হবে।

তবে বন সংরক্ষক খুলনা মিহির কুমার দে জানান, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সুন্দরবন সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর বেসরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

দখলে দূষণে সংকুচিত ‘আগ্রাবাদ ডেবা’

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২১ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৯ এএম
দখলে দূষণে সংকুচিত ‘আগ্রাবাদ ডেবা’
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ডেবাটি দখল ও দূষণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছ। ছবি: মোহাম্মদ হানিফ

দখলে ও দূষণে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ‘আগ্রাবাদ ডেবা’। প্রতিদিন ভেসে উঠছে মরা মাছ। চারপাশ দখল হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। নগরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ‘আগ্রাবাদ ডেবা’ এখন দখলে-দূষণে মরণাপন্ন। ইজারা নেওয়া লোকের হাতে পড়ে ডেবাটি ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক স্থাপনা। ডেবার অনেক মূল্যবান জায়গা ইতোমধ্যে চলে গেছে বেদখলে। সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে লুটপাটের স্বর্গভূমি।

চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোক্তাদির হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগ্রাবাদ ডেবার পানিদূষণের বিষয়ে আমাদের কেউ জানাননি। খাল, নদী এবং সাগরের পানির মাত্রা নির্ণয় করার কাজ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। আগ্রাবাদ ডেবার মাছ মরার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’ 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আগ্রাবাদ ডেবার দক্ষিণ পাড়ে মরা মাছ ভেসে উঠেছে। বাঁশের খুঁটি গেড়ে দখল করা হচ্ছে ডেবার জলাশয়। দখল করার স্থানে তৈরি করা হচ্ছে সেমিপাকা ঘর। একশ্রেণির কর্মকর্তা এ ঘর ভাড়া দিচ্ছেন। চারপাশ থেকে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ডেবাতে। দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছে বাজার। চারদিকে প্রায় এক হাজারেরও বেশি পরিবার ভাড়াটিয়া বসবাস করছেন। কেউ কেউ দোকান, সেলুন, হোটেল, গোডাউন দিয়ে ব্যবসা করছেন। পূর্ব পাড়ে ও পশ্চিম পাড়ে দুটি মসজিদও রয়েছে। 

পশ্চিম পাড়ে কেয়ারটেকার খোরশেদুল আলম ও মোহাম্মদ ফারুক বসবাস করছেন। তাদের পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ইজারাদার। বর্তমানের বন্দর এলাকার বিএনপি নেতা মোহাম্মদ সেলিম দেখাশোনা করছেন এ ডেবাটি। 

স্থানীয় মোহাম্মদ মনু খবরের কাগজকে বলেন, ‘চার পাশে ঘর, দোকান নির্মাণ করে বন্দর ও রেলওয়ের কর্মীরা ভাড়া দিচ্ছেন। ভাড়াটিয়ারা ময়লা-আবর্জনা ডেবায় ফেলছেন। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর সাধারণ লোকজন এ ডেবার মাছ লুট করেছেন। প্রায় কয়েক দিন ধরে মাছ ধরেছি এ ডেবা থেকে। টনে টনে মাছ নিয়ে গেছেন স্থানীয়রা।’ 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে ২৭ দশমিক ৪ একর আয়তনের বৃহৎ এই জলাশয়ের পাড়সহ একটি বড় অংশ দখল হয়ে গেছে। পাড় ছাড়া এর জলাধার রয়েছে প্রায় ২০ একর। এর মধ্যে ১৬ একর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিএস খতিয়ানভুক্ত।

২০১৯ সালের ৬ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দনের নেতৃত্বে একটি টিম সেই এলাকায় অভিযান চালায়। ওই অভিযানে জলাশয়টি দখল হওয়ার প্রমাণ পায় দুদক। তবে শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। 

স্থানীয়রা জানান, বিশাল এই জলাশয়টি অবহেলায়-অযত্নে একদিকে দখলবাজি আর অন্যদিকে দূষণের হুমকিতে পড়েছে। রেলওয়ে মৎস্য চাষের নামে এটি নিয়মিত ইজারা দিয়ে আসছে। অথচ এই বিশাল দৃষ্টিনন্দন জলাশয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঠিক রেখে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে একে বেড়ানোর নির্মল জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যেত। এর পাড়ে সবুজ উদ্যান আর নিরিবিলি হাঁটার পথ তৈরি করা গেলে জলাশয়টির চেহারাই পাল্টে যেত।

জানা গেছে, একসময় রেল ও বন্দর অভিন্ন সংস্থা ছিল। ১৯৬০ সালে এই দুটি সংস্থা পৃথক হওয়ার সময় চট্টগ্রাম প্রাণকেন্দ্রে ‘আগ্রাবাদ ডেবার’ পশ্চিমপাড়সহ জলাশয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ের জায়গা রেলওয়ে ভোগ করবে, এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০ একর জায়গার জলাশয় ১৬ একর কাগজপত্রে বন্দরের হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেটি দখলে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শুরু থেকে তারাই সেটি ইজারা দিয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বসবাসের জন্য এ ডেবার পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বেশ কিছু স্থাপনা। বর্তমানে সেগুলোও এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। সন্ধ্যা নামলেই ডেবার পাড়ে বসে ফেনসিডিলসহ মাদকের আসর।

সূত্র জানায়, আগ্রাবাদ ডেবা ৬০ বছর ধরে রেলওয়ের দখলে হলেও ভোগদখলে সেভাবে নেই, ইজারা নিয়ে পুরো ডেবাটিই অন্য লোকের দখলে থাকছে যুগের পর যুগ। আগ্রাবাদ ডেবার দখল ছাড়ার জন্য রেলওয়েকে দফায় দফায় চিঠি দিলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ইজারাদারের দখলে থাকা জলাশয় নিয়ে মামলা থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি তারা হস্তান্তর করতে পারছে না। ওদিকে সেই মামলা চলছে কয়েক যুগ ধরে।

রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘প্রায় ২০ একরের ডেবাটি দীর্ঘদিন ধরেই ইজারা দিয়ে আসছে রেলওয়ে। এই ধারাবাহিকতায় ৫ বছর মেয়াদি ও ৩ বছর মেয়াদি ইজারা নিয়ে থাকে। এখন ইজারার মেয়াদ শেষ হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশপাশের জায়গাগুলো রেলওয়ে কর্মচারীদের আবাসিক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ 

এদিকে আগ্রাবাদ ডেবার মালিকানা নিয়ে ৫৬ বছর ধরে বিরোধ চলছে চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে। এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় একাধিকবার বৈঠকে বসলেও আজও কোনো সমাধানে আসেনি। তাই ২০০৬ সালে বিরোধ নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘১৯৬০ সালের ৩০ জুন নবগঠিত দ্য চিটাগাং পোর্ট ট্রাস্টকে ৪৭০ একর জমি হস্তান্তর করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে গেজেটভুক্ত হয়। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ বিএস খতিয়ানভুক্ত করে বছর বছর ওই জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছে। এখানে ভুলবশত বন্দরের নামে রেকর্ড হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

একসময় চট্টগ্রাম বন্দর এবং রেলওয়ে একসঙ্গে ছিল। নাম ছিল চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯০৮ সালে নগরীর গোসাইলডাঙ্গা মৌজায় চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সময় প্রয়োজন হয় লাখ লাখ টন মাটি। তৎকালীন চিটাগাং পোর্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে জাহাজে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বর্তমান আগ্রাবাদ ডেবা খনন করা হয়। এই জলাশয় থেকে পানি সরবরাহ করা হতো জাহাজ, রেল ও আবাসিক এলাকায়। পরবর্তী সময় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলে ডেবা থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

ইলেকট্রিক বাস নামানোর তোড়জোড়

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
ইলেকট্রিক বাস নামানোর তোড়জোড়
ছবি: সংগৃহীত

পরিবহন খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে রাজধানীর বায়ুর গুণগত মান ব্যবস্থাপনা (একিউএম) ও আরামদায়ক গণপরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশের সড়কে ইলেকট্রিক বাস আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট (বিসিএপি) প্রকল্পের আওতায় এই বাসগুলো সড়কে নামাতে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ডিটিসিএ ভবনে এই প্রকল্প নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ডিটিসিএ, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়াও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে দেবে ২০০ মিলিয়ন ডলার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ডিটিসিএ পাবে ১৫০ মিলিয়ন এবং বিআরটিএ পাবে ৫০ মিলিয়ন ডলার। ডিটিসিএ তার অংশে সিটি বাস সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ইলেকট্রিক বাসের প্রবর্তন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কারিগরি সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইনগত সংস্কার ও নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন, বৈদ্যুতিক বাসের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা (ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম) এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কারিগরি সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ প্রকল্পটি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করে টেকসই নগর পরিবহনকে উৎসাহিত করতে কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নগরে যানজটও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে এ প্রকল্পটি ২০৩০ সালের ৩০ জুন শেষ হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো, ঢাকা শহরে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাস পরিচালনা মডেলের মাধ্যমে গণপরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়ন। এই প্রকল্পে সিটি বাস সার্ভিস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি ২০০-২৫০টি ইলেকট্রিক বাস কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই বাসগুলোর জন্য নতুন ১০টি বাস ডিপো স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবে।

ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ‘ইলেকট্রিক বাসগুলো পরিচালনা করতে নতুন কোম্পানি গঠন করা যেতে পারে অথবা সরকার নিজস্ব উদ্যোগেও এসব বাস পরিচালনা করতে পারে। বাসগুলো দূরপাল্লায় নাকি স্বল্পপাল্লায় পরিচালনা করা হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি।’

পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. শামছুল হক খবরের কাগজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইলেকট্রিক বাস আনার এই প্রকল্পে প্রথমে নজর দিতে হবে অবকাঠামো খাতে। ইলেকট্রিক বাসগুলো কোথায় চার্জ দেওয়া হবে, চার্জিং স্টেশনগুলো কোথায়-কীভাবে নির্মাণ করা হবে- এগুলো পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারের গণপরিবহন খাতসংক্রান্ত নানা প্রকল্প পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তারা কেনাকাটায় যত মনযোগী, রক্ষণাবেক্ষণে নন।’

একটি ইলেকট্রিক বাস তৈরি করতে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে, যা ডিজেলচালিত বাসের প্রায় পাঁচ গুণ। অর্থনৈতিক মন্দায় দেশে সবগুলো খাত যখন ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করছে, তখন সরকার কেন বিপুল ব্যয়ে এই ইলেকট্রিক বাস কিনতে যাবে- এমন প্রশ্ন করা হয় অধ্যাপক শামছুল হককে। তিনি বলেন, ‘এই বাসগুলো কিনতে বিপুল ব্যয় হলেও এগুলো পরিচালনায় ব্যয় কিন্তু অনেক কমে যাবে। রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এই বাসগুলোর আয়ুষ্কালও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে গণপরিবহন খাতের জন্যই সেটি লাভজনক প্রকল্প হতে পারে।’

২০২৩ সালে ‘এক্সিলারেটিং দ্য ট্রানজিশন টু ইলেকট্রিক মোবিলিটি ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় বিআরটিসির বহরে ১০০টি ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আয় বাড়াতে আন্তর্জাতিক রুটে বরিশাল-কলকাতা, চট্টগ্রাম-কলকাতা, ঢাকা-গ্যাংটক (সিকিম)-দার্জিলিং, ঢাকা-নেপাল বাস সার্ভিস চালুর কথাও ভেবেছিল বিআরটিসি। প্রথমে ভারতীয় লাইন ক্রেডিট (এলওসি) ও পরে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছিল। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ভারতের ঋণপ্রাপ্তি এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের স্থলে এখন অন্য একটি ঋণদাতা দেশ খুঁজছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কোরিয়ান ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া যাবে। আমরা আশা করছি ১০০টি ইলেকট্রিক বাস আমাদের বহরে যুক্ত করতে পারব।’ বাসগুলো দূরপাল্লার নাকি স্বল্পপাল্লার রুটে পরিচালনা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের অনেক রুটে বিআরটিসির বাসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। রুট বিবেচনা করে সেখানে ইলেকট্রিক বাস পরিচালনা করা হবে।’

ডিসি সম্মেলন ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি, আলোচনায় থাকবে ৩ শতাধিক প্রস্তাব

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ এএম
ডিসি সম্মেলন ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি, আলোচনায় থাকবে ৩ শতাধিক প্রস্তাব
জেলা প্রশাসক সম্মেলন

এবারের জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনে তিন শতাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ডিসিরা তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থানের আলোকে সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জানতে চাইতে পারেন ডিসিরা। মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন থাকবে, সে বিষয়েও এ সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে। কেপিআই স্থাপনা সুস্পষ্টকরণের জন্যও ডিসিরা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।

এবার কোনো রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে যে কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনা হবে সেগুলো হলো সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবনকে কেপিআই স্থাপনা ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন তৈরির ক্ষমতা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর, কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলক বডি ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করা, ডিসিদের অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আনসার নিয়োগসংক্রান্ত প্রস্তাব।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। ওই দিন সকালে তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

ডিসি সম্মেলনের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজের কোনো অধিবেশন নেই। 

সম্মেলন উদ্বোধনের পর চা বিরতি শেষে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। ওই অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা টাইগার গেটে ডিসিদের সঙ্গে নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেবেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর বিষয়ে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাব ও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম দিন উন্মুক্ত আলোচনায় ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে সরকারের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ কথা জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিসিরা অধিবেশনের অবশিষ্ট অধিবেশনগুলোর জন্য বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওসমানী মিলনায়তনে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য উপস্থিত হবেন। এখানে বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগসংক্রান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর তৃতীয় পর্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডিসিরা সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। অধিবেশনের সময় এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন। 

মাঠ প্রশাসন সরকারের নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করে থাকেন। এ জন্য প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে সরকার। এ বছর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাই ডিসি সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। মাঠপর্যায়ে সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারক হিসেবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা কাজ করে থাকেন। তাই ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়সহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক সরকার নয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবারের ডিসি সম্মেলনের পরিবেশ কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে রাজনৈতিক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনে ডিসি সম্মেলন ঘিরে আলাদা কিছু মনে হচ্ছে না। তবে এই সরকার দায়িত্ব নিয়ে যেহেতু রাষ্ট্রের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনায় বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে বলে অনুমান করছি। যেহেতু সংস্কারের দিকে সরকারের বিশেষ কিছু মনোযোগ আছে এবং সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাবগুলোও আসছে, তাই সেই বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা আসতে পারে। এর বাইরে আর কিছু মনে হচ্ছে না আমার।’

চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলা পাইরেটেড বইয়ের দৌরাত্ম্য, বিপাকে প্রকৃত প্রকাশকরা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
পাইরেটেড বইয়ের দৌরাত্ম্য, বিপাকে প্রকৃত প্রকাশকরা
চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা। ছবি: খবরের কাগজ

একদিকে কাগজের দাম এবং ছাপা খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে মেলায় পাইরেসি বইয়ের আধিপত্য। দুইয়ে মিলে চরম বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলায় স্টল নেওয়া প্রকৃত প্রকাশকরা। পাইরেসি বই মূল দামের অর্ধেকেরও বেশি কমিশনে বিক্রি হচ্ছে, যা মেলায় অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। 

মেলায় ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মেলায় সাধারণত ইংরেজি বই এবং বিদেশি লেখকের বইগুলোর পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক নামি-দামি লেখকের বই অনেক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ প্রকাশকদের এখানেই আপত্তি। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের বইয়ের ক্রেতা। তা ছাড়া প্রখ্যাত লেখকদের বইয়ের অনুবাদও পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রকাশকদের অভিযোগ, মেলায় এসে যখন কেউ কম দামে বড় একটি পাইরেসি বই কেনার সুযোগ পান, তখন অন্য বইগুলো তার কাছে বেশি দামি মনে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্য বই না কিনে ক্রেতারা ফিরে যান।  

‘শিশু প্রকাশ’র স্বত্বাধিকারী আরিফ রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, মেলায় বেশ কিছু পাইরেসি বই আছে। কিছু আছে বই বিক্রেতা। তারা প্রকাশক নন। তারা কোনো বই প্রকাশ করেন না। কিন্তু তারা প্রকাশকদের স্বকীয়তাকে খর্ব করছেন। পাইরেসি বই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে পারেন। কারণ পাইরেসি বই বিক্রি করে লেখককে কোনো রয়েলিটি দিতে হয় না। এটা একজন প্রকাশকের পক্ষে কোনোভাবেই এত বেশি কমিশন দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ একজন প্রকাশককে বইয়ের ছাপার খরচের পাশাপাশি লেখকের রয়েলিটি দিতে হয়।

অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় বইয়ের ছাপা খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বইমেলায় পাইরেসি বই রোধ করা যায়নি।

তিনি জানান, অভিভাবকরা মেলা থেকে কম দামে পাইরেসি বই কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু ওই বইয়ের মানটা যাচাই করে দেখছেন না। পাইরেসি বা নকল সংস্করণে অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি থাকে। এটা একজন সচেতন পাঠকই ধরতে পারেন। শিশুদের যদি সেই ধরনের বই কিনে দেওয়া হয়, তাদের কাছে ভুল ভ্রান্তি ধরা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা ভুলটাই শিখবে।’

‘হরিৎপত্র’ প্রকাশনার নূর উদ্দিনেরও অভিযোগ প্রায় একই রকম। তিনি বলেন, ‘পাইরেসি রোধ করতে না পারলে প্রকৃত প্রকাশকদের লোকসান গুনতে হবে। এ বিষয়ে আয়োজকদের তৎপর হওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে মেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন হাসান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘বইমেলায় পাইরেসি বই বিক্রির কোনো অভিযোগ এখনো কমিটি পায়নি। এখন থেকে তারা নিজেরাও কোনো স্টলে পাইরেসি বই আছে কিনা খোঁজ নেবেন উল্লেখ করে জানান, তারাও চান প্রকৃত প্রকাশকরাই টিকে থাকুক।