
রমজানের বাকি দেড় মাস। চাহিদা মোতাবেক পর্যাপ্ত আমদানিও হচ্ছে পণ্যটি। এদিকে সরবরাহ বাড়ায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মানভেদে কেজি প্রতি দাম কমেছে ১৩ টাকা। তবে এর সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ভোক্তারা।
দুই সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ১১২ টাকায়। বর্তমানে দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৯৯ টাকায়। মণপ্রতি হিসাবে, দুই সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ২০০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। সেই হিসাবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণ ছোলায় ৫০০ টাকা কমেছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রমজানকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি ভালো। ইতোমধ্যে ছোলা, চিনিসহ অন্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বেশ ভালো। দামও কমতির দিকে রয়েছে। তবে সেই তুলনায় বেচাবিক্রি বাড়েনি। রমজান মাস ঘনিয়ে আসছে। আশা করছি, সামনে বেচাকেনা বাড়বে।
তবে এর প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, বর্তমানে পর্যাপ্ত আমদানির পরও খুচরা ভালোমানের এক কেজি ছোলা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৩০ টাকা। অথচ এসব ছোলা ১১০ থেকে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
খুচরা পর্যায়ে অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে ছোলার দাম বর্তমানে অনেক বেড়েছে। ২০২১ সালে রমজান মাসে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। ২০২২ সালে বিক্রি হয়েছে ৭৪ থেকে ৭৫ টাকায়। ২০২৩ সালে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা এবং ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বর্তমানে রোজার আগেই খুচরা পর্যায়ে পণ্যটির দাম ঠেকেছে ১৩০ টাকায়।
চট্টগ্রাম মহানগরের উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. শোয়েবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভোক্তার সম্পর্ক পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে নয়, খুচরা দোকান থেকে কিনে খেতে হয়। কাজেই পাইকারিতে দাম কমে তো লাভ নেই, যদি খুচরায় প্রভাব না পড়ে। প্রতি বছর দেখা যায়, রমজানের সময় ঘনিয়ে এলেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। দিনশেষে ভোক্তারা অসহায়।’
অথচ কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বুকিং রেট কমে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে প্রতিটন ছোলার বুকিং রেট ছিল ৬৮০ ডলার। গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে ছোলা বুকিং রেট ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
নভেম্বরের মাঝামাঝি এসে আবার দাম কমে বুকিং রেট দাঁড়ায় ৬৭০ ডলারে।
সাধারণত প্রতিবছর রোজায় গড়ে ৭০ হাজার টন ছোলা চাহিদা থাকে। গত সাড়ে ছয় মাসে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি) চাহিদা মোতাবেক ছোলাও আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাড়ে ছয় মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) ৭০ হাজার ৩৫৮ টন ছোলা আমদানি হয়েছে।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত জুলাই মাসে ৫ হাজার ১৮৮ টন, আগস্টে ২ হাজার ২৩০ টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ১৯৭ টন, অক্টোবরে ১ হাজার ২৭১ টন ও নভেম্বরে ৩ হাজার ৮৮৫ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। তবে রমজানকে ঘিরে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ১৫ হাজার ৫৮৭ টন এবং জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিনে প্রায় ৪০ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে।
দপ্তরটির উপপরিচালক ড. মো. শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বছরের অন্য সময়ে ছোলা আমদানির গতি কম ছিল। তবে রোজাকে ঘিরে গত ডিসেম্বর ও চলতি জানুয়ারি মাসেই সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা খালাস হবে। রমজানে ছোলার সরবরাহ ভালোই থাকবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা তো বার বার বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত পাইকারের পাশাপাশি খুচরা বাজার তদারকি করা হবে না, ততক্ষণ ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ যাবেই। আমরা তো বাজার তদারকির বিষয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগই দেখছি না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কীভাবে কমবে?’