
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ২৪টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। এ অবস্থায় কোনো রকমে চলছে শ্রেণি-কার্যক্রম।
চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এতে বিপাকে পড়ছে সাধারণ শিশু শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. সেলিনা খাতুন জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ডেপুটেশনে (প্রেষণে) রয়েছেন। যার কারণে অফিসের কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বদলি হয়ে আসার ১৫ দিনের মধ্যে তদবির করে তিনি ডেপুটেশনে যান।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৩টির প্রধান শিক্ষক নেই, ২৪টি সহকারী শিক্ষকের পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা শিক্ষা অফিসে চারটি পদ খালি। চারজন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, অফিস সহকারী দুজনের মধ্যে একজন ও একমাত্র অফিস সহায়ক নিয়ে কোনোভাবে চলছে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিস। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সংকট থাকায় পাঁচটি ক্লাস্টারের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রমও।
এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্বে থেকে দুই দায়িত্বই পালন করছেন। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিগগিরই এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পুরো সময় উপস্থিত থাকেন না। এতে শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলার মান্দারতলা জোড়াপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমার এ বিদ্যালয়ে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। জানুয়ারি থেকে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। বর্তমানে আমি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’ বিদ্যালয় ও অফিসের কাজ দুটোই সামলাতে হচ্ছে, ফলে শ্রেণি-কার্যক্রমসহ অফিসের চাপ সামলাতে বেশ সমস্যা পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমরা প্রায় এক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এ অবস্থায় আমাদের শ্রেণি-কার্যক্রম রেখে অফিসের কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এতে শ্রেণিতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।’ এ কারণে সাধারণ শিশু শিক্ষার্থীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তারা।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহী মো. ইমরান বলেন, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১০ বছর ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টি আটকে আছে। সহকারী শিক্ষক থেকেই শূন্য পদের প্রধান শিক্ষকের পদগুলো পূরণ হবে। মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মধ্যে পদোন্নতি নিয়েও রয়েছে ঝামেলা। এ কারণে শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কণ্যাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির জানান, উপজেলার ৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। অফিসে কাজ থাকায় শিক্ষকদের ছোটাছুটি করতে হয়। এতে পাঠদানে সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, অফিস সহকারীসহ মোট চারটি পদ শূন্য থাকায় অফিসের কার্যক্রমও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এসব পদ পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি জোর দাবি জানান।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, উপজেলার ৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, ২৪টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুন গত জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ডেপুটেশনে আছেন। শিক্ষা অফিসে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, অফিস সহকারীর দুটি পদসহ চারটি পদই শূন্য রয়েছে। যার ফলে শিক্ষা-কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শূন্য পদগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। অনলাইনে বদলি প্রক্রিয়া চলছে, তবে শূন্য পদগুলো খুব তাড়াতাড়ি পূরণ হবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া অফিসের পদগুলোও শিগগিরই পূরণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সংকট থাকায় শ্রেণি-কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় পড়াশোনা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনি জটিলতা থাকায় এতদিন ওই পদগুলো পূরণ হয়নি। শিগগিরই ওই পদগুলো পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম তারিক উজ জামান বলেন, ‘উপজেলায় শিক্ষক সংকটের বিষয়ে আমি অবগত আছি। যার কারণে শিক্ষার গুণগত মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। শূন্য পদের এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিলেই সমস্যার সমাধান হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করে শ্রেণি-কার্যক্রমকে বেগমান করা হবে বলে জানান তিনি।