
এবারের জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনে তিন শতাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ডিসিরা তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থানের আলোকে সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জানতে চাইতে পারেন ডিসিরা। মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন থাকবে, সে বিষয়েও এ সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে। কেপিআই স্থাপনা সুস্পষ্টকরণের জন্যও ডিসিরা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।
এবার কোনো রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে যে কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনা হবে সেগুলো হলো সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবনকে কেপিআই স্থাপনা ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন তৈরির ক্ষমতা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর, কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলক বডি ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করা, ডিসিদের অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আনসার নিয়োগসংক্রান্ত প্রস্তাব।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। ওই দিন সকালে তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ডিসি সম্মেলনের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজের কোনো অধিবেশন নেই।
সম্মেলন উদ্বোধনের পর চা বিরতি শেষে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। ওই অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা টাইগার গেটে ডিসিদের সঙ্গে নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেবেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর বিষয়ে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাব ও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম দিন উন্মুক্ত আলোচনায় ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে সরকারের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ কথা জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিসিরা অধিবেশনের অবশিষ্ট অধিবেশনগুলোর জন্য বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওসমানী মিলনায়তনে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য উপস্থিত হবেন। এখানে বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগসংক্রান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর তৃতীয় পর্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডিসিরা সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। অধিবেশনের সময় এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন।
মাঠ প্রশাসন সরকারের নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করে থাকেন। এ জন্য প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে সরকার। এ বছর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাই ডিসি সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। মাঠপর্যায়ে সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারক হিসেবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা কাজ করে থাকেন। তাই ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়সহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
রাজনৈতিক সরকার নয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবারের ডিসি সম্মেলনের পরিবেশ কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে রাজনৈতিক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনে ডিসি সম্মেলন ঘিরে আলাদা কিছু মনে হচ্ছে না। তবে এই সরকার দায়িত্ব নিয়ে যেহেতু রাষ্ট্রের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনায় বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে বলে অনুমান করছি। যেহেতু সংস্কারের দিকে সরকারের বিশেষ কিছু মনোযোগ আছে এবং সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাবগুলোও আসছে, তাই সেই বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা আসতে পারে। এর বাইরে আর কিছু মনে হচ্ছে না আমার।’