ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

স্বাস্থ্যসংস্কার প্রস্তাব রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব বিএনপির, চিকিৎসায় নাগরিক কমিটি

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব বিএনপির, চিকিৎসায় নাগরিক কমিটি
ছবি: সংগৃহীত

দেশে রোগীদের রোগের তথ্য সংরক্ষণে নেই নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা। এক হাসপাতালে দেখানোর পর আরেকটিতে গেলে যাবতীয় কাগজ নিয়ে যেতে হয়। তা না হলে ওই চিকিৎসক জানতেই পারেন না আগের হাসপাতাল থেকে রোগী কী ধরনের চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন, কী কী পরীক্ষা করিয়েছেন। তা ছাড়া দুই বছর, তিন বছর কিংবা আরও আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র রোগীরা খুব একটা সংরক্ষণ করে রাখেন না। তথ্য সংরক্ষণ না থাকায় রোগের ইতিহাস জানা যায় না, বারবার পরীক্ষা করতে হয়, সময় নষ্ট হয় এবং চিকিৎসায় ভুলের ঝুঁকি বাড়ে।

ঝুঁকি এড়িয়ে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। অগ্রাধিকার দেওয়া সাতটির মধ্যে অন্যতম জাতীয় ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড (ইএইচআর) ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি। বিএনপির স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবেও এ বিষয়টি এসেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপিও স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনডিএফ, ড্যাবসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রস্তাবে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে প্রতিরোধের চেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে চিকিৎসার বিষয়টি। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রস্তাবে উপেক্ষিত পুষ্টি ও নারীস্বাস্থ্য।

কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, এই বিষয়গুলোতেও জোর দেওয়া প্রয়োজন। তারা যে প্রস্তাব পেয়েছেন, তাতে যেগুলো বাদ পড়েছে তা যুক্ত করে চলতি মাসেই একটি সুন্দর প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস শপথ গ্রহণ করেন। এরপর খাতভিত্তিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই অনুযায়ী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদকে প্রধান করে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মতামত বিবেচনা করে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী আগামীকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি ৯০ দিন পূর্ণ হবে। তবে এর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে না কমিশন। আরও হয়তো সময় চাইবে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রধান বলছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিবেদন হস্তান্তর করবেন। তবে কমিশনের কেউ কেউ মনে করছেন, মার্চের মাঝামাঝির আগে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ স্বাস্থ্য খাতের পরিসর অনেক বড়। দেশে ১৮ কোটি মানুষের সবাই স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট। তাই এই খাত সংস্কারের কাজটি বেশ সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে।

কমিশনপ্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘বহু প্রস্তাব পেয়েছি। সেগুলো গুছিয়ে লেখা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত করছি। তবে এই মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন দিয়ে দেব।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক, স্বাস্থ্য পলিসি এবং অ্যাডভোকেসি সেলের সম্পাদক ডা. তাসনিম জারার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংস্কার প্রস্তাব জমা দেয়। এই প্রস্তাবে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান তিনি।

সেগুলো হলো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সিস্টেম, একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পারিশ্রমিক, সারা দেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা (ইএইচআর) চালু করা, চিকিৎসার জন্য প্রমাণভিত্তিক জাতীয় গাইডলাইন, একটি জাতীয় বায়োব্যাংক স্থাপন ও সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সাতটি প্রস্তাবের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ও পুষ্টির বিষয় আসেনি। এখানে রোগ হওয়ার পরে চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্য অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধের কথাটা আমাদের আগে চিন্তা করা উচিত।’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাব হস্তান্তর করেছে। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খোন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রস্তাব (খসড়া) তুলে ধরেন।

বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘একটি পরিকল্লিত স্বাস্থ্যনীতির অনুপস্থিতি, চিকিৎসক-চিকিৎসা প্রার্থীর সম্পর্ক উন্নয়ন, প্রতিরোধই যে প্রতিকারের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ’ এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা।

বিএনপির প্রস্তাবে রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে প্রস্তাব দিয়েছে। স্বাস্থ্যের সামগ্রিক বিষয় চলে এসেছে ওই প্রস্তাবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তজার্তিক মানের স্বাস্থ্য পরিকাঠানো নির্মাণ করা।

বিগত ১৫ বছর দেশের স্বাস্থ্য খাতে পরিকল্পিত উদাসীনতা ও দুর্নীতির ব্যাপকতার মাধ্যমে অতি সাধারণ চিকিৎসার জন্যও ক্রমবর্ধমান বিদেশ গমনের প্রবণতা, দেশীয় সেবার প্রতি জনগণকে বিমুখ করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কারের অগ্রাধিকারের বিবেচনায় রাখারও প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। সুষ্ঠু তদন্ত ও পর্যালোচনার মাধ্যমে ১৫ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতির নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির প্রস্তাবে সংক্রমক এবং অসংক্রমক রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধিতে চিকিৎসা শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া, প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুলে ফাস্ট এইডের প্রয়োগিকভাবে শিক্ষা এবং পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক ফাস্ট এইড, সিপিআর ও রেসকিউ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

নাগরিক কমিটির অগ্রাধিকার দেওয়া সাতটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ের সঙ্গে বিএনপির প্রস্তাবে মিল আছে। রেফারেল সিস্টেম, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবার নিশ্চয়তা, চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে ন্যায্য অধিকার ও সুরক্ষা, ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড ব্যবস্থা চালু ও গবেষণা- এই বিষয়গুলো বিএনপি এবং নাগরিক কমিটি উভয়ের প্রস্তাবে এসেছে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, বাংলাদেশে জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অনেক রোগী সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পান না, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকে মারা যান। সে জন্য একটি আধুনিক জরুরি সেবাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক থাকবে, যাতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এখনকার মতো শুধু রোগী পরিবহনের পরিবর্তে অ্যাম্বুলেন্সেই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা শুরু হবে, যা মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে।

এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাব দিয়েছে নাগরিক কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিক কমিটি জানায়, অসুস্থ হলে অনেকেই গুগল বা সামাজিক মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ খোঁজেন, যেখানে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। এর ফলে অনেকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পান না। এই সমস্যা সমাধানে একটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত, নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। 

রোগ প্রতিরোধ, পুষ্টি এবং নারীস্বাস্থ্যের বিষয় তাদের প্রস্তাবে গুরুত্ব পেয়েছে কি না জানতে চাইলে নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘কিছু কিছু কাভার করবে। সবকিছু কাভার করতে পেরেছি এ রকম না। আমাদের চিকিৎসা খাত খুবই অগোছালো। অনেক বিষয় আছে। সে কারণে আমরা চিকিৎসার বিষয়ে জোর দিয়েছি।’

নাগরিক কমিটির সদস্য ডা. আশরাফুল আলম সুমন বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদারের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি চলে আসে। সেই বিষয়টি আমাদের প্রস্তাবে আছে।’

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য-সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নে জোর দিতে হবে। যেমন পুষ্টি বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য এগুলো লাগে। যদি স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারি আর রোগ প্রতিরোধ করতে পারি এবং নিচের দিকে এগুলোকে যদি ট্যাকল করতে পারি, তাহলে ওপরের দিকে আর যেতে হবে না। আমাদের দরকার নিচের দিকে শক্তিশালী করা।’

বিএনপি, ড্যাব, এনডিএফ, জামায়াত ও নাগরিক কমিটি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ-প্রতিকারের ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুষ্টির বিষয়টা ওইভাবে আসেনি। পুষ্টির বিষয়ে আরেকটু জোর দিতে হবে।’

নির্ধারিত ৯০ দিনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, ওষুধ, জনবল, প্রাইভেট সেক্টর, পাবলিক সেক্টর। স্বাস্থ্যের পরিসর অনেক বড়। এখনো অনলাইন সার্ভে হচ্ছে। কয়েক দিন মধ্যে হয়তো রিপোর্ট পাব। আমাদের চর এলাকায় এখনো যাওয়া হয়নি। হয়তো এই মাসের মাঝামাঝি আমরা যাব। আমরা গ্রাফটিং শুরু করেছি। কিন্তু মজবুত একটা জিনিস দিতে গেলে আরেকটু চিন্তাভাবনা করা লাগে। আমাদের কেউ কেউ বলছেন, এ মাসের মধ্যে দিতে পারব। কিন্তু আমার মনে হয় না আমরা দিতে পারব। আমি সাজেস্ট করব, কমিশনকে মার্চের মাঝামাঝি দিতে।’

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্য অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন ও দলের কাছ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে উপেক্ষিত নারীস্বাস্থ্য। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি। বাকিরা যারা আছে, তারা কেউ নারীস্বাস্থ্যের কথা বলে না। পুষ্টির কিছু বিষয় আসছে। নারীস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের সংস্কার কমিশনে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলা হচ্ছে। আমরাও প্রস্তাব রেখেছি। নারীস্বাস্থ্য বলতে আমরা সাধারণত মাতৃস্বাস্থ্য বুঝি। কিন্তু এর বাইরেও নারীদের স্বাস্থ্যের অনেক কিছু আছে। সেগুলো কিন্তু অ্যাড্রেস করা হয় না। তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। অনেক ধরনের স্পেশালাইজড হসপিটল আছে কিন্তু নারী স্বাস্থ্যের ওপর স্পেশালাইজড হাসপাতাল নেই। এটা মেয়েদের প্রয়োজন এবং অধিকার দুটিই।’

পুলিশ-জনপ্রশাসন-সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে অনেক আপত্তি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৬ এএম
পুলিশ-জনপ্রশাসন-সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে অনেক আপত্তি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের কারণে নির্বাচনের আগে সংস্কারের পক্ষে ছিল জনমতও। সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সরকারের একাধিক কমিশন এরই মধ্যে রিপোর্টও জমা দিয়েছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একাধিক সুপারিশ নিয়ে অংশীজনরা আপত্তি জানাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এত আপত্তির মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে বা বাস্তবায়ন হবে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সংস্কার কার্যক্রম অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আপত্তি আসুক আর যাই আসুক, সংস্কার হতেই হবে। সংস্কার হতে হবে বিশেষ করে এই চারটি খাতে। এই সংস্কার যদি না হয়, তাহলে দেশ টিকতে পারবে না। দেশ এখন যে অবস্থায় আছে, সংস্কার ছাড়া ভালোভাবে পরিচালনা করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ 

তিনি বলেন, ‘সংস্কার না করে নির্বাচনের মধ্যে যাওয়াটাও ঠিক হবে না। কারণ একটা নির্বাচিত সরকার আসে, তাদের তো ক্ষমতার ক্ষেত্র একটু কমে যায়। তাদের অনেককে খুশি রাখতে হয়। অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। এই সরকার তো একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছে, তারা অনেক কিছু করতে পারে। যেটা নির্বাচিত সরকার পারবে না। তাদের বাধা-নিষেধ আসবে না। নির্বাচিত সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। এই সরকারের আমলে সংস্কার হয়েই তারপর নির্বাচন করা উচিত। প্রত্যেকটা জায়গায় হাত দিতে এবং সংস্কার করতে হবে।’ 

সবার বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে জানিয়ে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান খবরের কাগজকে বলেন, সংস্কার এমন একটা জিনিস, যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। সংস্কার তো কোনো বিপ্লব না। সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া যায় না। অংশীজন, রাজনৈতিক দল ও সরকার সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যেখানে ঐকমত্য হবে, সেই সংস্কারগুলো করে ফেলতে হবে। বাকি সংস্কারগুলো সংসদ নির্বাচন হলে তখন জনগণের একটা সরকার আসবে, তাদের মাধ্যমে করা হবে। 

পুলিশ সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ১১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ১৩টি বিষয়ের ওপর। এ ছাড়া ২২টি আইনের পরিমার্জনের কথাও বলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের চাওয়া নিরপেক্ষ কমিশন বা স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন। কিন্তু এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকা বা সরাসরি প্রস্তাব না রাখায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এই কমিশনের গঠন, কার্যপদ্ধতি, আইনিভিত্তি নিয়ে আরও পর্যালোচনার মত দেয় কমিশন। বিষয়টিসহ আরও একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্যরা। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও এসব বিষয় সামনে আসে।

অংশীজনদের আপত্তির মধ্যে সংস্কারকাজ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা উচিত। এটা তো কারও বিরুদ্ধে না। আমরা তো সবাই বলি, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করুক। পুলিশ স্বাধীন কমিশনের অধীনে কাজ করবে, এটা সরকার একটা কমিশন গঠন করে দিল। কমিশনের ভদ্রলোকেরা (সদস্যরা) ধরি মাছ না ছুঁই পানি, কিছুই করল না।’ 

পুলিশের সাবেক এই শীর্ষ ব্যক্তির মতে, এখানে দুটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন। দ্বিতীয়ত, যেসব ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে এগুলোর নিষ্পত্তি করা। 

তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো নিজ থেকে বলছে, আমি যদি ভুল করি আমার শাস্তি হওয়া উচিত। স্বাধীন শক্তিশালী ওয়াচ ডগ থাকবে। কিন্তু এগুলো তো হচ্ছে না। পুলিশকে তো যখন যে দল আসবে তাদের কথামতো চলতে হচ্ছে। সংস্কার এক সরকার করল আরেক সরকার এসে বাতিল করে দেবে। তাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে করতে হবে। একটা কমিশন হবে সেখানে সরকারি লোক থাকবে, বিরোধী দলের লোক থাকবে, নিরপেক্ষ লোক থাকবে, সিভিল সোসাইটি থাকবে, সবার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। কেউ বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।’

অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারদের মধ্যে ব্যাপক আপত্তি রয়েছে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা কমিশন প্রধানের পদত্যাগেরও দাবি জানান। উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ক্যাডার থেকে নিয়োগ, পদোন্নতিতে পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার হিসেবে না রাখাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষুব্ধ ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কার কমিশনও ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কিছু অংশ নিয়ে ইতিবাচক মতামত এলেও রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ অন্য বিষয়গুলোতে রয়েছে আপত্তি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের কথা বলছে। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকেও ভিন্ন অবস্থান রয়েছে গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে।

আর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে আপত্তির কথা লিখিতভাবে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এনআইডি কার্যক্রমের দায়িত্ব, নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কমিশন গঠনসহ অন্তত ১০টি বিষয় তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসির বক্তব্য অনুযায়ী, এসব বাস্তবায়ন হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে। আগামী ২০ মার্চ আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার। সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মতামত গ্রহণ করছে। এখনো বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জমা দেয়নি, সময় চেয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে জুলাই সনদ। বিশ্লেষকদের মতে, সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে হবে।

খুলনায় চরমপন্থিদের কিলিং, বাড়ছে উদ্বেগ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
খুলনায় চরমপন্থিদের কিলিং, বাড়ছে উদ্বেগ
প্রতীকী ছবি

খুলনায় চরমপন্থি সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন-পাল্টাখুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। চরমপন্থিদের একের পর এক টার্গেট কিলিং স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ১৯৯৪ সালে চরমপন্থি নেতা টাইগার খোকন দিয়ে শুরু হয় এ কিলিং মিশন।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে স্থানীয় ক্যাডার বড় শাহীন এ টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নামে একটি চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তোলেন খুলনা নগরীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা গাজী কামরুল ইসলাম। ওই সময় দৌলতপুরে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আকতারুজ্জামান খোকন ওরফে টাইগার খোকন পাল্টা আরেকটি চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালে দুই সংগঠনের দ্বন্দ্বে খুন হন টাইগার খোকন। এর পর থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে দ্বিধাবিভক্তি, সন্দেহ ও খুন-পাল্টাখুনের ঘটনা ঘটতে থাকে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হন চরমপন্থি গাজী কামরুলের অনুসারী শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদ। ১৯৯৬ সালে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে শীর্ষ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হলে অন্যরা আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও দুটি গ্রুপের মধ্যে হত্যা-পাল্টাহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে।

এদিকে ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর এলাকায় আবারও চরমপন্থিরা সংগঠিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে মাথা চাড়া দেয় তাদের পুরোনো বিভেদ। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরে আসেন শীর্ষ চরমপন্থি টাইগার খোকনের সহযোগী শাহীনুল হক শাহীন ওরফে বড় শাহীন। অন্যদিকে কারামুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসেন দুই চরমপন্থি নেতা রিফুজি মঈন ও আসলাম ওরফে ট্যারা আসলাম। তাদের সহযোগীরা এলাকায় ফিরে রীতিমতো ত্ৰাস সৃষ্টি করে। 

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে চরমপন্থি ক্যাডার বড় শাহীনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি চরমপন্থি নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদ হত্যা মামলার ২০ আসামির একজন। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু। তিনিও হুজি শহিদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন মুজগুন্নী এলাকায় জুলকার নাঈম মুন্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনিও একই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। 

আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর তথ্যমতে, শুরুর দিকে গাজী কামরুল ইসলামের অনুসারী ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু ও হুজি শহিদ। দৌলতপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টাইগার খোকনের অন্যতম ক্যাডার ছিলেন বড় শাহীন। ১৯৯৬ সালে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর ২০১৩ সালে তিনি জামিনে মুক্ত হন। গাজী কামরুলের অনুসারী হুজি শহিদ হত্যা মামলার প্রতিশোধ নিতে ভাড়াটে খুনিরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। হুজি শহিদ হত্যার ২০ আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত জুলকার নাঈম মুন্না, গোলাম রব্বানী টিপু ও বড় শাহীন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন। এর মধ্যে গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেন যে তারা হুজি শহীদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাল্টা খুন করেছেন। তবে গত শনিবার রাতে শাহীন হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

এ বিষয়ে খুলনা থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, শাহীনের মাথায় গুলির দুটি চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

বড় শাহীন হত্যায় গ্রেপ্তার নেই

খুলনায় চরমপন্থি নেতা শেখ শাহীনুল হক শাহীন ওরফে বড় শাহীনকে হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। নিহতের মা রাহিমা বেগম খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে জানা গেছে। তবে ছেলের মৃত্যুর সংবাদে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় মামলার এজাহার দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

খুলনা সদর থানা ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, কারা এবং কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, রাতের বেলায় পরিচিত কেউ তাকে ওই স্থানে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে। বড় শাহীন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন বলে মনে করা হচ্ছে। এ হত্যার ঘটনাটি প্রতিশোধমূলক কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পাইকারিতে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে, প্রভাব নেই খুচরায়

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৯ এএম
পাইকারিতে ভোজ্যতেলের  দাম কমেছে, প্রভাব নেই খুচরায়
চট্টগ্রামে নির্ধারিত দরে মিলছে না খোলা সয়াবিন। ছবিটি চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায় একটি খুচরা দোকান থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও দুই সপ্তাহের ব্যবধান খোলা সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি দাম কমেছে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। পর্যাপ্ত আমদানি, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কঠোর উদ্যোগ এবং দফায় দফায় অভিযানের পরও বাড়তি অর্থ আদায়ের স্বভাব বদলাতে পারেননি খুচরা ব্যবসায়ীরা।

নগরীর বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকা ৩৭ পয়সায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫১ টাকা ৯২ পয়সা। একই সময়ে পাম অয়েলের দাম ৩ টাকা ৩৮ পয়সা কমে ১৩৬ টাকা ৪৯ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মিলমালিকরা ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জেও পণ্যটির সরবরাহ আগের তুলনায় ভালো। তাই দামও নিম্নমুখী।’

এদিকে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়িয়েছে। মেঘনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ট্রেডিং) নাছির উদ্দিন বলেন, ‘যথাসময়ে তেল খালাস করে পরিশোধন করা হচ্ছে। অন্য সময়ের তুলনায় এবার ভোজ্যতেল আমদানিও বেশি হয়েছে। বর্তমানে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। সরবরাহ অনেক বেশি। আমরা যথাসময়ে তেল বাজারজাত করছি।’

এদিকে পাইকারিতে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ ছাড়াও নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, নিউ মার্কেট, নাসিরাবাদ, দুই নম্বর গেট, চকবাজার ও কাজীর দেউড়ি এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানে এক, দুই ও পাঁচ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। তবে দুই ও পাঁচ লিটার ওজনের তেলের সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। প্রতি লিটার তেল ১৭৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও এলাকাভেদে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার তেল মিলছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। অপরদিকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। যদিও গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।

এর আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি না ব্যবসায়ীদের শক্তি, তা তিনি দেখতে চান। এরপর চসিক মেয়র ও জেলা প্রশাসক নিজেরাই কিছুদিন বাজার তদারকি করেন। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের শক্তিতেই অটল আছেন। দফায় দফায় অভিযানেও মিলছে না সফলতা।

নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন বলেন, দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি। দোকানি ৩০ টাকা বেশি নিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে উল্টো বলেন, ‘৩৮০ টাকায় কিনলে কিনেন, না কিনলে যান।’

বাজার ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। নগরের হালিশহর এলাকার আল মদিনা স্টোরের মালিক মো. নাছির দাবি করেন, ‘আগে খোলা সয়াবিন ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম তো কমে এসেছে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অভিযানে গেলেই অল্প কিছু অর্থ জরিমানা এবং সতর্ক করা হয়। এতে করে তো কখনো সফলতা আসবে না, অসাধু ব্যবসায়ীদের টনক নড়বে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

ডিসেম্বরে ভোট নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৫ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৩ এএম
ডিসেম্বরে ভোট নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে বিএনপিতে নতুন করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। দলটি মনে করছে, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারসংশ্লিষ্টদের মতামত এক জায়গায় স্থির থাকছে না। তারা ডিসেম্বর, মার্চ ও জুন- এই তিন সময়কে সামনে এনে একেকজন একেক সময় একেক কথা বলছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও তার বক্তব্যে কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলছেন না। ফলে ডিসেম্বরে আদৌ ভোট হবে কি না, তা নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

সবশেষ গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাতে খুব বেশি সময় নেই, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এর দুই দিন আগেই গত শুক্রবার ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ এখানে ছয় মাস নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সামনে রেখে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে বিএনপিতে নতুন করে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ দুই বক্তব্যে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন বিএনপি নেতারা। ডিসেম্বর বা জুনে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে সরকারের ভেতর থেকেই নির্বাচন বিলম্বিত করারও চেষ্টা হচ্ছে বলে তাদের কেউ কেউ মনে করেন। তারা বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন করতে কত দিন সময় লাগবে সরকারের সে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা উচিত, তা না হলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনগণের দূরত্ব বাড়তে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা তার কথা রাখবেন এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড।’ অর্থাৎ যদি কোনো জাজমেন্ট দিতে দেরি হয়, তাহলে বুঝতে হবে জজ সঠিক রায় দেবেন না। রায় যদি সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন তাহলে বুঝতে হবে, এটা সঠিক রায়। আর যদি রায় না দেন তাহলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। যদি সঠিক সময়ে নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশ ও জনগণ আরও সংকট পড়বে। জনগণের কপালে দুর্ভোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছিলেন, অল্প সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে, আর আরেকটু বেশি সংস্কার করে নির্বাচন চাইলে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এরপর একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে তার সরকার। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) জানিয়েছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়ে কমিশনের কাজ এগোচ্ছে। সবশেষ গত ১০ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর সময়সীমা পার করতে চায় না ইসি। অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে চায় ইসি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রধান উপদেষ্টার একেক সময়ে একেক বক্তব্যে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

পাশাপাশি ওই বক্তব্যের পরে রাজনৈতিক মহলেও নতুন করে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে, নির্বাচন আদৌ এ বছরের ডিসেম্বরে হবে কি না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবকে কোনো কথা বলা মানে এর তাৎপর্য অনেক বেশি। তারা সন্দেহ করছেন, ডিসেম্বরে ভোট না দেওয়ার বিষয়ে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ থাকতে পারে। তাই নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ স্পষ্ট করতে পারছেন না প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন ঠেলতে ঠেলতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কেউ কেউ। আর পরিস্থিতি এমন হলে আগামী দেড় থেকে দুই বছরে অনেক ঘটনায় দেশের রাজনীতির মাঠে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ এবং ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা উপহার পায়। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ দল ভোট বর্জন করেছিল। পরবর্তী সময়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। এরপর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুধু একবারই বিশেষ কারণে জুনে ভোট হয়েছে। জুন-জুলাই মাসে বর্ষা ও গরমের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির কম।

তাই জুন-জুলাইয়ে আগামী নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, গরম ও বর্ষার মধ্যে ভোটাররা ভোট দিতে উৎসাহ বোধ করেন না। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থাকে। তাই শীতের সময়টিতে নির্বাচনের জন্য সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এসব দিক বিবেচনা করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে তা পরবর্তী বছরের অক্টোবরের আগে সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেকে।

নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব দৃশ্যমান রয়েছে। এ প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মনোভাব আবার সরকারের কাছাকাছি। এ কারণে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সরকার ও ছাত্রদের মধ্যে সখ্য দেখছে বিএনপি। নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতার কারণেই বিএনপিতে সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে, সরকার আদৌ নির্বাচন দেবে কি না? এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে চাপে রাখতে এপ্রিলে মাঠের আন্দোলনে যেতে পারে বিএনপি।

জানা গেছে, ঈদের পর এই ইস্যুতে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগামী জুন-জুলাই নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময়। সংস্কার-সংস্কার করে নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়োজন নেই। কিছু সংস্কার হয়েছে, বাকিগুলো করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক।’ তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) ডিসেম্বরের কথা বলেছেন, আবার বেশি সংস্কারের জন্য পরের বছরের জুনের কথা বলেছেন। তবে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্বাচন চায়। যদি কারও কথায় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়, তাহলে দেশের ক্ষতি হবে। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার আসবে না। আবার যদি এই সরকারের মধ্যে ফ্যাসিস্ট আচরণ জন্ম নেয় তাহলে জনগণ আশাহত হয়ে পড়বে। সে জন্য দ্রুত নির্বাচন দেওয়া জরুরি বলে মনে করি।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খবরের কাগজকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে কোন বছরের কোন মাসের কত তারিখে নির্বাচন হবে- তার রোডম্যাপ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। কিন্তু এখনো দেয়নি। ফলে সরকারের নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, একটি সরকার ক্ষমতা ছাড়লে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই বিতর্ক করছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলম্ব করলে সরকারের জন্য বিপজ্জনক। দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত বলে মনে করছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এই সংশয়ের মূলে রয়েছে নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এবং এনসিপি নেতাদের নানা কথাবার্তা। বিএনপি মনে করছে, সরকার ও ছাত্ররা নির্বাচন হোক এটা চাইছেন না। বিশেষ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারসহ কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচনের বিপক্ষে। ছাত্রনেতারা ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন। এ জন্য তারা বৃহৎ সংস্কারের কথা তুলে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। 

পুঁজিবাজার থেকে ২৪ কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৩ এএম
পুঁজিবাজার থেকে ২৪ কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

পুঁজিবাজার থেকে পরিকল্পিতভাবে বিশাল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে বেশ কিছু কোম্পানি এখন নিজেদের অস্তিত্বকে সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তারা বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এসব কোম্পানি বর্তমানে নিজেদের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে গেছে।

গত সাত বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৫৬টি কোম্পানি। সব কটি কোম্পানি মিলে পুঁজিবাজার থেকে তুলে নিয়েছে ৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে এখন ২৪টি কোম্পানি জেড ও বি ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। এই কোম্পানিগুলো (২৪টি) পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ উত্তোলন করেছে। তারপরও কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।

২০১৯ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আইপিও ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড। ঢাকা ইপিজেডের এই কোম্পানিটি এখন অস্তিত্বসংকটে। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন আইপিও ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটি এখন লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এটিও এখন জেড ক্যাটাগরিতে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পূর্বশর্ত আগের তিন বছর ধারাবাহিক মুনাফা অর্জন। লভ্যাংশ অর্জন করা একটি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে থাকে আরও ভালো ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনুত্তীর্ণ কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে আইপিও ছেড়ে অর্থ উত্তোলন করেছে।

তারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনরা পরিকল্পিতভাবে কোম্পানি গঠন করে অথবা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে গঠন করিয়ে অর্থ উত্তোলনের নামে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ লুটপাট করেছেন। প্রভাবশালীরা ক্ষমতার বলয় ব্যবহার করে মনগড়া আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। ফলে সেই ক্ষতই এখন পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।    

বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ১১ বছর ব্যবসা করে ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ব্যাংকঋণ পরিশোধসহ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা বলে কোম্পানিটি উত্তোলন করে ১৯ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় কোম্পানিটির একটি শেয়ারের জন্য ৩৭ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেছিলেন। বিনিয়োগকারীদের সেই আগ্রহে ছাই ঢেলে ২০২৪ সালে কোম্পানিটি নেমে আসে জেড ক্যাটাগরিতে। পুঁজিবাজারের ভাষায় এটি এখন দুর্বল খাতের কোম্পানি। 

২০১৯ সালে ৯টি কোম্পানি আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই সময়ে ৯টি কোম্পানি মিলে পুঁজিবাজার থেকে নিয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬টি কোম্পানি এখন জেড ক্যাটাগরিতে। যারা সম্মিলিতভাবে পুঁজিবাজার থেকে নিয়েছে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এই ছয়টির মধ্যে আবার দুটি এখন একেবারেই বন্ধ। 

সম্প্রতি আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বলছেন, ‘২০১৩ ও ২০১৪ সালে যেসব বিমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে টাকা লুটপাট করা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা আর তালিকাভুক্ত হতে না পেরে গ্রাহকের টাকা মেরে দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের কোম্পানি নিউ লাইন ক্লোদিং লিমিটেড ২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত হয়ে নিয়ে গেছে ৩০ কোটি টাকা। কোম্পানিটি যখন তালিকাভুক্ত হয়, তখন এর একটি শেয়ারের জন্য ২৮ জন আবেদন করেছিলেন। সেই কোম্পানি এখন জেড ক্যাটাগরিতে। ২০২১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কোনো আর্থিক প্রতিবেদনই প্রকাশ করছে না। 

২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড উত্তোলন করেছে ৩০ কোটি টাকা। তিন বছরের মাথায় কোম্পানিটি লভ্যাংশ দেওয়া কমিয়ে দেয়। ২০২৪ সালে মাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডও ২০২১ সালে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করেছে ১৫০ কোটি টাকা। তালিকাভুক্তির ৩ বছরে মুনাফার বদলে ক্রমাগত লোকসানের মুখে কোম্পানিটি এখন লেনদেন হচ্ছে জেড ক্যাটাগরিতে। 

তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ও বছরে ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে সেগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত। ৫ শতাংশের বেশি এবং ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং নিয়মিত লভ্যাংশ দিচ্ছে না, আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না এমন কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত। 

পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে পারে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এর জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করা যায়, এক. কোম্পানির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি ও বিএসইসির যথাযথ তদারকির অভাব।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে।’
আবু আহমেদ বলেন, ‘কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে কোম্পানিগুলো কী করেছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।’

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে যে টাকা উত্তোলন করে তার ৭০ শতাংশই ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যয় করে থাকে, যা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটায়। তবে উৎপাদনে ইতিবাচক কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। এই ধারা বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আসার জন্য বিগত তিন বছর ধারাবাহিকভাবে মুনাফায় থাকতে হয়, কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানি দুর্বল হয়ে যায়, নয়তো বন্ধ হয়ে যায়। বিগত সময়ে এমন যতগুলো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে বন্ধ হয়েছে বা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, যে সময় যে কমিশন ছিল তারাই এসব কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছে। আইনগতভাবে এসব কোম্পানির বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা বিএসইসির আছে। বিগত সময়ে এমন অনেক কোম্পানির বোর্ড পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে কোনো কাজই হয়নি। 

তিনি বলেন, নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশন খুবই সচেতন। বিগত সময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারাই তালিকাভুক্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।