ঢাকা ১৩ চৈত্র ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১

আবার আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ পিএম
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
আবার আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এখন সংবিধান সংস্কার কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কারণ ওই অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। কিন্তু এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতেই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত জানিয়েছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বিএনপি মনে করে, সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে ফ্লোর ক্রসিং-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। তবে আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দলের বিপক্ষে এমপিরা ভোট দিতে পারবেন না। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার ৬ নম্বর দফায়ও একই প্রস্তাব আছে। এসব বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। 

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা- এই চারটি বিষয় সংরক্ষিত রেখে বাকি বিষয়গুলোতে সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতার প্রস্তাব দিয়েছি। দলের বিপক্ষেও তারা সমালোচনা করতে পারবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি, এই উপমহাদেশের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, সেখানে দলের পক্ষে ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না রাখলে সরকারের স্থিতিশীলতা রাখা কঠিন হবে এবং অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তবে আমরা সময় নিয়ে পর্যায়ক্রমে ভবিষ্যতে উন্নীত হতে পারব।’ 

জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সংবিধানের ৬৭ ও ৭০ অনুচ্ছেদের ফ্লোর ক্রসিং বর্তমানে বন্ধ করা উচিত হবে না। এটি সংসদীয় সরকারব্যবস্থা স্থিতিশীল করতে যুক্ত করা হয়েছিল। এটি আরও দুই মেয়াদ পর্যন্ত রাখতে চান তারা। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার হয়, তাহলে এমপিদের বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে, তখন অনুচ্ছেদ ৭০ পুনর্বিবেচনা করা যাবে। 

দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনে আমরা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। এখন তারা কোনটা গ্রহণ করবেন বা যোগ-বিয়োগ করবেন, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করলেও সমস্যা, আবার রাখলেও নানা সমস্যা। তাই যুক্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। তাই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলছি না। যা আছে তা থাকবে, কিন্তু ব্যবহার সম্পর্কে কিছু নিয়মনীতি করা যেতে পারে।’ 

বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না। অথবা সংসদের কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাইলে তিনি উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’ অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট লিখিত সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল বা সংস্কার চেয়েছে। তবে জামায়াত আরও দুই টার্ম সময় নেওয়ার কথা বলেছে। 

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের জন্য আমরা ভারতের পার্লামেন্টের একটা নিয়ম অনুসরণ করতে পারি। সেখানে নিয়মটা হলো, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মতামত জানাতে চাইলে দলের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের একমত হতে হবে। তার মানে কোনো দলের সদস্যসংখ্যা যদি ৩০ জন হন, তবে তার মধ্যে ১০ জনকে একসঙ্গে দ্বিমত হতে হবে। ভারতে নিয়ম হলো, এই দ্বিমত পোষণ করা সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এই পদ্ধতিটা আমাদের দেশেও চালু করতে হবে। এটা করতে পারলে তখন যাকে-তাকে দলে নিয়ে আসা বন্ধ হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকার গঠন, বাজেট অনুমোদন ও অনাস্থা প্রস্তাব শুধু এই তিনটি ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ৭০ অনুচ্ছেদ বন্ধ হলে সংসদ সদস্যরা কিছুটা স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তবে এর সুযোগ নিয়ে সরকারি দলকে ভাঙার চিন্তা করা কিন্তু সহজ হবে না। ধরা যাক, জাতীয় সংসদে একটা সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৫১ জন সদস্য লাগবে। এখন তাদের মধ্যে ৫১ জন সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এসে দ্বিমত পোষণ করবেন, এটা চিন্তা করা কঠিন।’

অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধনের বিষয়ে যা বলছে অন্য দলগুলাে
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার বা সংশোধন চেয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। দলগুলো বলছে, অর্থবিল, বাজেট পাস, অনাস্থা ভোট ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করবেন।

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। কোনো দল সরকার গঠন করার পর সেই দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়ে বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়গুলো আলাদা করে অনুচ্ছেদ ৭০-এ লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেকোনো বিল পাসের ক্ষেত্রে এমপিদের তাদের বিবেক অনুসারে পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার রাইটস থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’ 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে সবার দিক বিবেচনা করে এখন সংশোধন চাইছি। যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তাহলে তারা যদি অর্থবিলের বিরোধী, সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে সংসদে দল টিকিয়ে রাখা কষ্ট হবে। টাকা দিয়ে কেনাবেচা খেলার সুযোগ তৈরি হবে। মূলত এসব কয়েকটি ধারা বাদে বাকিগুলোতে স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’ 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ নয়, সংবিধানে এই দেশ, জাতি, ইসলাম ও মানবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক যেসব ধারা রয়েছে তা সংশোধন করা উচিত বলে মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, ’৭২-এর সংবিধান ভারতের চাপানো সংবিধান। এ সংবিধানে ভারতের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদ রয়েছে। ভারতের সংবিধানের হুবহু মূলনীতিগুলো সংবিধানে কেন আসবে? ফলে সংবিধানে এই জাতি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় রয়েছে। সেগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা যেন তাদের মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা পান সেই প্রত্যাশাই আমরা করি। ৭০ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বাতিল নয়, কয়েকটি ধারার সংশোধন করা যেতে পারে।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা সংশোধনের কথা বলেছি। দুই-তিনটি ধারা বাদে বাকি বিষয়ে সংসদ সদস্যদের অপছন্দ হলে বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন এমন বিধানের প্রস্তাব দিয়েছি। এতে সংসদে সবাই স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’ 

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের খবরে কাগজকে বলেন, ‘অর্থবিল ও অনাস্থা ভোট বাদে যেকোনো বিষয় সংসদ সদস্যরা যাতে স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারেন সেই সুপারিশ করেছি।’ 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল নয়, এটা রিভিউ করা দরকার। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সময়োপযোগী সংশোধন করা জরুরি। হুবহু এক রাখা প্রয়োজন মনে করছি না। তবে সংসদ সদস্যদের অধিকার যেন খর্ব না হয়। কিন্তু আবার কিছু জায়গায় দল ও দেশের নিরাপত্তার বিষয়টাও রাখতে হবে।’ 

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ বাদ দিলে দলের ওপর নেতার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। দলের এমপিরা নেতার নির্দেশ মানবেন না। এটাকে হয়তো কিছুটা সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে।’

সোনার বাজারে খরা: বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:১২ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
সোনার বাজারে খরা: বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ
রাজধানী বায়তুল মোকাররমে স্বর্ণের দোকানে অলংকার দেখছেন এক ক্রেতা। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের বাজারে সোনার ভরি দেড় লাখ টাকার ওপরে। দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে সোনার গয়না বা স্বর্ণালঙ্কারের দাম। দাম বাড়ায় ক্রেতাদের একটি বড় অংশের কাছে সোনার গয়না বানানো যেন এখন দুঃস্বপ্ন। আর জুয়েলার্স ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জে আছেন। এবার ঈদবাজারেও সোনার গয়নাপ্রেমীদের তেমন একটা দেখা নেই। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণালংকার বিক্রি প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে। 

গত সোমবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, নিউ মার্কেট ও বসুন্ধরা সিটিসহ কয়েকটি স্বর্ণের মার্কেট ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। 

এসব মার্কেটে দেখা যায়, সোনার দোকানগুলো তো আলোকসজ্জা ও গয়নার কমতি নেই। বাহারি গয়না সাজানো আছে। তবে বেশির ভাগ দোকানে ক্রেতা হাতে গোনা। অধিকাংশ ক্রেতা দাম শুনেই চলে যান। 

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে ছেলের বিয়ের জন্য সোনার গয়না কিনতে এসেছিলেন মরিয়ম বেগম। আলাপকালে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোনার যে দাম, তাতে কেনা কঠিন। দুই জোড়া বালা কিনব। ছেলের বিয়ে, তাই বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে।’ ওই নারী আরও জানান, কয়েক বছর আগেও হাতে টাকা হলেই শখের সোনার গয়না কিনতেন তিনি। তবে এখন দাম বাড়ায় তা সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।

বায়তুল মোকাররমে আমিন জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী লিটন কুমার খবরের কাগজকে বলেন, এখন ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকায়। সোনার দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় নতুন অলংকার বেচাকেনাও কমে গেছে। 

তিনি বলেন, ‘অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ সোনার গয়না কিনছেন না। কয়েক বছর আগেও বিয়ে কিংবা জন্মদিনের উপহার হিসেবে সোনার আংটি, কানের দুল কিংবা চেন দিলেও এখন নগদ অর্থ দেন বেশির ভাগ মানুষ। দাম বেড়ে যাওয়ার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে পারছেন না তারা। এর প্রভাব পড়ছে সোনার ব্যবসায়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। এই ব্যবসায় টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

এ বিষয়ে ঢাকা নিউ মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আদনান জানান, ‘দিনে দু-তিনজন, আবার এমনও হয় সারা দিনে ক্রেতার দেখাও মেলে না। দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় মধ্যবিত্তরা এখন স্বর্ণালংকার কিনতে পারছেন না। ফলে একটি বড় অংশের ক্রেতা হারিয়েছি আমরা। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অলংকার তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।’ 

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সোনার দাম কয়েক দফা বেড়েছে। ফলে জুয়েলারি শিল্প ধাক্কা খেয়েছে। এখন বেশির ভাগ মানুষের হাতে টাকা নেই। আর যাদের হাতে টাকা আছে, তারাও সোনা না কিনে ব্যাংকে অর্থ জমিয়ে রাখছেন।

সোনার বাজার মন্দার বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সহসভাপতি মাসুদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে সোনার দাম বেড়েছে। কিন্তু এ দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তো আগের মতোই রয়েছে। ফলে অনেকেই সোনা কেনা বাদ দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ সোনার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তারা টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করছেন।

এদিকে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা ডিপোজিট করছে, ফলে সাপ্লাই চেইনে ঘাটতি পড়ে গেছে। সব মিলিয়ে সোনার বাজার মন্দা। দেশে সোনার বাজারে বিক্রি ৮০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া অন্যতম কারণ। দেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। মানুষের কাছে টাকা নেই। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সোনার বাজারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড মার্কেটের যে চিত্র আমরা পেয়েছি তাতে দেখা যায়, ইন্ডিয়া ২৫ শতাংশ, দুবাইয়ে ২০ শতাংশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সোনার অলংকারের বিক্রি কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশে।’ 

করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি জরুরি। এ ছাড়া আমাদের ভ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি। ভ্যাট কমাতে হবে। এ ছাড়া আমদানির বিষয়টি যদি সহজ করা হয়, তবে আশা করি সোনার ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। 

মিরপুরে বেচাকেনা জমেছে ফুটপাত মার্কেটে

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৭ এএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
মিরপুরে বেচাকেনা জমেছে ফুটপাত মার্কেটে
মিরপুরে মোহাম্মদীয়া মার্কেটে স্বল্প আয়ের মানুষের কেনাকাটা। ছবি: খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদুল ফিতর ঘিরে রাজধানীর মিরপুর এলাকার ফুটপাত, বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। কারণ ঈদের দিন পরিবারের সবার পরনে নতুন জামা আর তাদের মুখের হাসি কে না দেখতে চায়? এ জন্য দিনে কিংবা রাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর প্রতিটি শপিং জোন। পছন্দের পোশাকটি কিনতে ক্রেতারা ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে। তবে দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশ বিক্রেতারা।

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার শাহ আলী মার্কেটে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা, সপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করছিলেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদে আমি প্রতিবছরই পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কিনি, এবারও কিনছি। শুধু নিজের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয়, গরিব আত্মীয়-স্বজনের জন্যও কিনছি। কারণ পরের ঈদে কোরবানি দিতে হয়। এবার ১৫ রমজানের পর থেকে আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা করছি। লক্ষ্য সাধ্যের মধ্যে ঈদ উপহার দিয়ে সবাইকে খুশি করা।’

ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশন সড়কের ফুটপাতে অবস্থিত হোপ মার্কেটেও। প্রতিদিন দুপুরের পর বাহারি নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানদাররা। এসব দোকানে সুঁই-সুতা, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়, দামেও সস্তা। ফুটপাতের হোপ মার্কেটে শপিং করতে আসা রিয়া ও নিশা নামে দুই বোনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রমজানের শুরুতেই অনলাইন থেকে থ্রি-পিস কিনে বানাতে দিয়েছেন। এখন জামার সঙ্গে মিলিয়ে জুতা, গয়নাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছেন। আশপাশের অনেক শপিংমল থাকার পরও এই মার্কেটে কেন- এমন প্রশ্নে রিয়া বলেন, ‘আমাদের বাসা মিরপুর-২ নম্বর এলাকায়। পরিবার মধ্যবিত্ত। এখানে (হোপ মার্কেটে) নিয়মিতই আসা হয়। অনেক ধরনের পণ্য পাওয়া যায়, যাচাই করে কিনতে পারি। অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এসব দোকানের পোশাকসহ সব জিনিস মোটামুটি সস্তায় কেনা যায়।’

মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে শুরু করে ওয়াসার মোড় এবং আইডিয়াল গার্লস স্কুলের গলি পর্যন্ত বিস্তৃত এই হোপ মার্কেট; যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত কেনাকাটার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। পণ্যের দাম ও বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিশু-নারীদের পোশাক বিক্রেতা রমিজ উদ্দিন বলেন- ‘আপা, আমাদের দোকান তো ফুটপাতে। দোকান ভাড়া দিতে হয় না। কোনো কর্মচারী না রাখায় তাদের বেতনও দিতে হয় না। আমাদের এসব দোকানে শুধু ঈদ নয় সারা বছরই কমবেশি বেচা-বিক্রি থাকে। লাভ করি কম, ধরনভেদে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। বেশি বিক্রিই আমাদের লক্ষ্য। তবে ঈদের আগে গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি কম।’ অথচ এই এলাকার অন্য বড় মার্কেটগুলোর চিত্র কিন্তু পুরো আলাদা।

মিরপুর-১১ নম্বর এলাকার নান্নু মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর ক্রেতা এসেছেন। ছেলেদের পোশাকের জন্য এই মার্কেট বেশ জনপ্রিয়। সাধ্যের মধ্যে ভালো পোশাক পেতে নান্নুতে ভিড় করেন ক্রেতারা। সেখানে কথা হয় কচুক্ষেত এলাকার বাসিন্দা আসমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই ছেলের জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনতে আসছি। কারণ এই মার্কেটে অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের জামাও মোটামুটি কম দামে পাওয়া যায়। ঈদ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ও এখানে বাচ্চাদের জামা কিনি।’ এই মার্কেটে ভালো মানের টি-শার্টের দাম ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা। শার্ট ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, হাফহাতা শার্ট ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, ফরমাল প্যান্ট ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, জিনসের প্যান্ট ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ট্রাউজার ৩০০ টাকা এবং ব্লেজার পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকায়।

নান্নু মার্কেটের অদূরেই রয়েছে শিশু ও নারীদের নানা পোশাকের সম্ভারে সাজানো মোহাম্মদীয়া মার্কেট ও দেলোয়ার মার্কেট। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে সেলাই ছাড়া জমকালো কাজের থ্রি-পিস। এ ছাড়া হাজার টাকায় লেহেঙ্গা, ফ্রক, টপ, প্যান্ট, শাড়ি ও শিশুদের ফ্যাশনেবল নানা পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদীয়া মার্কেটে শাড়ি কিনতে এসেছেন মিতা। তিনি জানান, পছন্দসই শাড়ি কম দামে কিনতে এই মার্কেটে এসেছেন। আর দেলোয়ার মার্কেটে পাওয়া যায় আড়ংয়ের মানের গজ কাপড়। এ ছাড়া রয়েছে দেশীয় কাপড়ে তৈরি মেয়েদের ওয়ান পিস। সরেজমিনে দেখা যায়, অল্প কিছু দোকান। অথচ রুচিসম্পন্ন ক্রেতার ভিড়ে ঠাসা। শুধু খুচরা ক্রেতাই নন, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও এখান থেকে কাপড় নিয়ে পোশাক তৈরি করে বিক্রি করেন। কারণ দেলোয়ার মার্কেটে মাত্র ৭০ থেকে ১০০ টাকায় গজ কাপড় কিনে বানানো যায় পছন্দের পোশাক। এ ছাড়া এই মার্কেটগুলোর আশপাশ ও অলিগলির দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে পোশাক ফিটিংয়ের দোকান। এসব দোকানে মার্কেট থেকে কেনা পছন্দের পোশাক ফিটিং করে নিতে পারেন বিক্রেতারা।

এ ছাড়া মিরপুর-২ নম্বর রাস্তার দুইপাশজুড়ে চন্দ্রবিন্দু, নবরূপ, স্বেতজ, দ্বেসজ, রিচম্যান, দর্জিবাড়ি, নোঙর, ম্যানলি, প্রথমা দেশীয় ব্র্যান্ড, এফএস স্কয়ার, ১ নম্বর সনি সিনেমা হল মোড়ের মিরপুর নিউ মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, মিরপুর শপিং সেন্টার কমপ্লেক্স, রূপায়ণ ও লতিফ শপিং সেন্টার ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর। সবখানে একই চিত্র। এসব বিপণিকেন্দ্রে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলছে জমজমাট বেচাকেনা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির অনীহা!

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫০ এএম
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির অনীহা!
ছবি: সংগৃহীত

মায়ানমারের জান্তা সরকারের ব্যাপক নির্যাতনের মুখে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ। কারণ, গত ৭ বছরে এই সংকটের সমাধান তো দূরের কথা, উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। এরই মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে নতুন করে আরও কয়েকটি চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন মায়ানমারের যে রাখাইন রাজ্যে করার চেষ্টা চলছে, সেই রাখাইনের সার্বিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সেখানে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির (এএ) দীর্ঘ সংঘাতে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা। সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কর্মসংস্থানও নেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ নেই বলে জানিয়েছে খোদ জাতিসংঘ। ফলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়, রাখাইনে জান্তা সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ যোগ দিয়ে আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে আরাকান আর্মির মধ্যে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমানাসহ রাখাইন রাজ্য এখন আরাকান আর্মির দখলে। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ওয়াং ম্রা নাইং-এর সঙ্গে দুই দফা ফোনে কথা বলেছেন। সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন সমীকরণ নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু জান্তা সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করায় প্রত্যাবাসনে অনীহা রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২৫ সালে এসে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নয়, বরং রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা এখনো তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রাখাইন থেকে নতুন করে এখনো রোহিঙ্গারা প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরাকান আর্মি কতটা আগ্রহী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা অর্ধেক কমে গেছে। কারণ, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আসা মোট বিদেশি অনুদানের ৫৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সেই অনুদান বন্ধ করে দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তাও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে জাতিসংঘ। এতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মানবিক সংকটসহ এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর কতটা কাজে আসবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ বিষয়ে মায়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরাকান আর্মি জানিয়েছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারকে তারা স্বীকৃতি দেয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আরাকান আর্মির মনোভাব অনেকটা অনুকূলে থাকলেও আলোচনার জন্য সে সুযোগগুলো বাংলাদেশ হাতছাড়া করেছে। কারণ, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা যুবক জান্তা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং এতে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়। এই ঘটনায় আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের প্রতি নাখোশ রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব, যদি রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলাসহ আরাকান আর্মির পাশে থেকে সেখানে কিছু দৃশ্যমান সহায়তা করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আরাকান আর্মি যেহেতু বাইরের স্বীকৃতির চেয়ে অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের জন্য লড়ছে, সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর কাছ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এ মুহূর্তে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। তাই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা বাংলাদেশের প্রস্তাব কতটা বিবেচনা করবে, তা নিয়ে ভালোভাবে হোমওয়ার্ক করা প্রয়োজন। এতে দেশের ভেতর কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে যেমন ঐকমত্য সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন, তেমনি বাইরের শক্তির সঙ্গে আলোচনা ও দেনদরবারে দক্ষতা দেখানোর এটাই সময়। তবে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ-মায়ানমারের পুরো সীমান্তে এখন আরাকান আর্মির অবস্থান।

ঈদযাত্রায় ‘টোলপ্লাজা’ শঙ্কা

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
ঈদযাত্রায় ‘টোলপ্লাজা’ শঙ্কা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু টোলপ্লাজা। ছবি: খবরের কাগজ

এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে টহল দল। আগে সেসব স্থানে যানজট হতো, সেসব এলাকা চিহ্নিত করে বসানো হয়েছে রোড ডিভাইডার। এ সড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকায় যানজট না থাকলেও মেঘনা টোলপ্লাজায় যানবাহন আটকে থাকলে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহনচালকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এর ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 

মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, মোগরাপাড়া ও মেঘনা ব্রিজের টোলপ্লাজা পর্যন্ত যানজট এড়াতে শতাধিক পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এসব এলাকায় ইউর্টান, ইউলুপসহ আলাদা লেন নির্মাণ করায় আগে যেখানে যানজট হতো এবার সে আশঙ্কা নেই। এমনকি রোড ডিভাইডার বসানো হওয়ায় যানবাহন দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে। একই সঙ্গে মেঘনা টোলপ্লাজায় যানজট এড়াতে তদারকি বাড়িয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত বছরও এ সড়কে যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে রাজধানী ছাড়তে পারছেন যাত্রীরা। তবে মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে এখনো স্ট্যান্ড থাকায় সেখানে দিয়ে যান চলাচল বিঘ্ন হতে পারে। তা ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ দুটি মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত থাকা মদনপুর-গাজীপুর এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের যানবাহনের চাপে প্রায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। পুরো সড়কের মধ্যে চলাচল করছে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহন। এমনকি উল্টোপথেও এসব যানবাহন দিন-রাত চালিয়ে যাচ্ছেন চালকরা। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। 

গত রবিবার সকালে মেঘনা টোলপ্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো টোল আদায় কাউন্টারের সঙ্গে নতুন করে আরও ছয়টি কাউন্টার বসানো হয়েছে। এতে প্রতি মিনিটে ৩০-৩২টি গাড়ি পারাপার হচ্ছে। তবে ঈদের তিন দিন আগে থেকে এই সড়কের ওপর যাত্রীদের চাপ দ্বিগুণ হওয়ায় বেড়ে যাবে যানবাহনের সংখ্যাও। সে সময় একই পরিমাণ গাড়ি টোলপ্লাজা দিয়ে পারাপার হলে টোল দেওয়ার অপেক্ষায় আটকে পড়তে পারে যাত্রীবাহী যানবাহনসহ পণ্যবাহী গাড়িগুলো। এতে যানজটের আশঙ্কা থেকেই যায়। 

মেঘনাঘাট টোলপ্লাজার কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আলিম খবরের কাগজকে বলেন, পুরোনো ছয়টি কাউন্টার চালু আছে। তার সঙ্গে নতুন করে আরও ছয়টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে টোলপ্লাজার প্রত্যেকটি কাউন্টার সচল থাকবে। যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো যাতে সহজেই তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারবে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আগে এখানে যানজট হলেও এবার শঙ্কা কম। তবে পণ্যবাহী যানবাহন একই সময় আসা-যাওয়া করলে কাউন্টারগুলোতে চাপ বেড়ে যাবে। এতে করে যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে উল্লেখ্ করেন তিনি। 
মোগরাপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামগামী একটি বাস কাউন্টারের পরিচালক মাসুম জানান, প্রতিবছর থেকে এবার বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি। যদি মহাসড়কের ব্যবস্থাপনা বর্তমান অবস্থার মতো চলে, তাহলে যানজটের আশঙ্কা কম থাকবে বলে আশা করা যায়। অন্যথায় যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে। 

কাঁচপুর এলাকায় খাগড়াছড়িগামী টিকিট বিক্রয়কারী সোহাগ হোসেন বলেন, ‘প্রচুর যাত্রী থাকায় আমরা টিকিট বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছি। মহাসড়কগুলোতে এখনো তেমন যানজট নেই। কিন্তু মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজায় যদি বিলম্ভ হয়, তাহলে ঈদের আগে যাত্রীদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে ভোগান্তি পোহাতে হবে।’ 

এ পথের নিয়মিত যাত্রী সোনারগাঁয়ের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে গেলেই মেঘনা টোলপ্লাজা থেকে যানজট দেখা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে মোগরাপাড়া এলাকা ছাড়িয়ে কেওডালা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। যদি ১ ঘণ্টার মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক করা না যায়, তাহলে এখানে কয়েক হাজার গাড়ি আটকে পড়ে। এ ছাড়া মেঘনা সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে গেলে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এতে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে যেমন সময় ব্যয় হয়, তেমনি সড়কে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’ 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সোনারগাঁয়ের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, এ সড়কের কয়েকটি এলাকায় এখনো স্ট্যান্ড রয়েছে। কাঁচপুর, মদনপুর ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় লোকাল বাসের স্ট্যান্ড থাকায় সার্ভিস লেনে যানবাহন আটকে পড়ে। সড়কে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলে। পাশাপাশি মহাসড়কটি ঘিরে মদনপুর মোড় ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সড়কের পাশে বহু অবৈধ স্থাপনা ও ছোট যানবাহনের স্ট্যান্ড থাকায় প্রায়ই যানজট লেগে যায়। তবে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি এড়াতে হলে এসব বিষয়ে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ বলেন, গতবারের চেয়ে এবার মহাসড়কে আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকার পাশাপাশি টহল দল থাকছে। এমনকি দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় দ্রুত যেতে অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে যেকোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা কোনো সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত সরানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় ও মদনপুর অংশে দুটি রেকার রাখা হয়েছে। যানজট এড়িয়ে মানুষকে তাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো সংস্কারকাজ চলমান না থাকায় যাত্রীরা সহজেই তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারবেন। তবে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা না থাকলে আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করলে যানজটের কোনো শঙ্কাই থাকবে না।

ঈদের কেনাকাটা মিরপুরের বেনারসিপল্লি প্রায় ক্রেতাশূন্য

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
মিরপুরের বেনারসিপল্লি প্রায় ক্রেতাশূন্য
ছবি : খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে চলছে জমজমাট কেনাকাটা।

সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর ২টায় রাজধানীর মিরপুরের বেনারসিপল্লিতে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন এক চিত্র। ঈদের বাকি আর মাত্র কটা দিন। অথচ বেনারসিপল্লির বেশির ভাগ অলিগলিতেই সুনসান নীরবতা। ক্রেতাসংকটে অলস সময় কাটাচ্ছেন অধিকাংশ দোকানের কর্মচারীরা। মূল্যহ্রাসের অফার দিয়েও ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারছেন না দোকানিরা। অন্যদিকে ক্রেতাসংকটের বাজারেও শাড়ির বেশি দামের অভিযোগ ক্রেতাদের। 

মিরপুর বেনারসিপল্লি দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুরের বেনারসিপল্লিতে ছোট-বড় মিলিয়ে দোকান রয়েছে ১২৭টি। ঈদ মৌসুমের কেনাকাটায় এবার বিগত ৪০ বছরের মধ্যে কম বিক্রির রেকর্ড হয়েছে। বিক্রি নেমে এসেছে মাত্র ৫-১০ শতাংশে, যা গত বছরের তুলনায় এমনকি করোনার সময়ের চেয়েও কম। এমন পরিস্থিতিতে এই পল্লির অন্তত ২০-২৫টি দোকান বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন অনেক কর্মচারী। 

তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ডেপুটি ম্যানেজার ফারুক রাজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আপা কী বলব। ক্রেতাই পাচ্ছি না এবার। ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ভয়ে অনেকেই কেনাকাটা করছেন না। বিক্রি বলার মতো নয়। এমন পরিস্থিতি বিগত কোনো ঈদে হয়নি। গতকাল সারা দিনে ১ হাজার ২০০ টাকার মাত্র একটি শাড়ি বিক্রি হয়েছে। কর্মচারীদের ইফতার বাবদ খরচ হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া দোকানের শাটার খুললেই প্রতিদিন গড় খরচ আছে অন্তত ১০ হাজার টাকা। এই দোকানে একসময় (২ বছর আগে) ২৬ জন কর্মচারী ছিল, কমতে কমতে বর্তমানে কর্মচারী মাত্র ৫ জন।’ উল্লেখ্য, তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী কলিমউদ্দিন মিরপুর বেনারসিপল্লি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি।

 ঢাকা বেনারসি কুটিরের এক বিক্রেতা জানান, গেল ৫ বছর ধরেই তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এবারের ঈদের এ পর্যন্ত ৫ শতাংশ পণ্যও তারা বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের মালিক জানিয়েছেন ঈদের পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবেন। 

স্টার অ্যান্ড স্টাইলস শাড়িঘরের বিক্রেতা মো. আদিল বলেন, ‘মেট্রো স্টেশনের কাজ চলাকালীন এমনকি করোনার সময়ও এমন খারাপ পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম না। বিক্রি ভালোই হতো। বিগত ছয় মাসে বিগত ৪০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। বিক্রি নেমেছে ৯২ শতাংশ। দোকানে প্রতিদিনের খরচই ওঠানো যাচ্ছে না। মাসে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২-৩ লাখ টাকা।’

ঈদ উপলক্ষে বেনারসিপল্লির বেশ কিছু দোকানে ক্রেতাদের জন্য ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যহ্রাসের অফার চলছে। মনময়ূরী নামে এমন এক দোকানের বিক্রেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘আপা ডিসকাউন্ট দেওয়ার পরও ক্রেতা পাচ্ছি না। মানুষ মার্কেটে এবার আসছেই না। যারা আসছেন তাদের অনেকেই দেখে চলে যাচ্ছেন। এখন শাড়ির চেয়ে থ্রি-পিস ও হিজাবের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। অনেক মা-খালাও এখন শাড়ি পড়তে চান না।’ 

কচুক্ষেত এলাকা থেকে শাড়ি কিনতে আসা মাহমুদা বেগম বললেন, ‘এখন শাড়ি খুব কম পরি। ঈদের পর আমার ছোট বোনের বিয়ে উপলক্ষে কিছু গিফটের শাড়ি কিনেছি।’
  
রূপ মোহিনী গ্যালারির স্বত্বাধিকারী মো. আজিজুল হক সুমন বলেন, ‘আগে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতার আনাগোনা থাকত। কিন্তু এবার ঈদ ঘনিয়ে এলেও ১০ শতাংশ বিক্রি করতে পারিনি। এবার ক্রেতাদের ভারত যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হওয়ায় ভেবেছিলাম  ঈদে বিক্রি ভালো হবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি।’ 

এ বিষয়ে দিয়া শাড়িজের ম্যানেজার মো. সজীব চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের দোকানে রমজানের প্রথম এক সপ্তাহে একটি শাড়িও বিক্রি হয়নি। আর এ পর্যন্ত বিক্রির হার ১০ শতাংশও হয়নি।’ কারণ জানতে চাইলে বিক্রি কমে যাওয়ার পেছনে তিনি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অর্থনৈতিক সংকট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে দায়ী করেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঈদের পর মিটিং করে পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে বলে জানান মিরপুর বেনারসিপল্লি দোকান মালিক সমিতির নেতারা।