
এক মাসের ব্যবধানে বিদেশি আট ধরনের ফলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে আনারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ, চায়না কেনু কমলার দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ, মালটার বেড়েছে ২০ শতাংশ, নাশপাতির বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, আঙুরের বেড়েছে ২০ শতাংশ ও আপেলের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। এসব ফলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
জানা গেছে, গত মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি ফলের দাম বেড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ফলের দোকানে আনার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়, এক মাস আগে যার দাম ছিল ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া চায়না কমলা এক মাস আগে বিক্রি হতো ২৫০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, মালটা ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা, কেনু ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, আপেল ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা, নাশপাতি ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা, কালো আঙুর ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবুজ আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
ফল ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর বা ভ্যাট বাড়ানোর খবরেই বাজারে ফলের দাম বেড়েছে। তবে শুল্ককর কমানোর জন্য চট্টগ্রামের ফলমন্ডিতে আন্দোলন করেছেন ফল ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধন করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা ফল খালাস না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিল। ১০ শতাংশ বৃদ্ধির এ ঘোষণার সঙ্গে বাজারের প্রত্যেকটি বিদেশি ফলের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে আপেল, কমলা, আঙুর, আনার, মালটা, কেনু কমলা, নাশপাতি, আলুবোখারার মতো বিদেশি ফল।
জানা গেছে, দেশে আপেল, কমলা, মালটা, আঙুর, আনার ও নাশপতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব ফল বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিসর, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা সৈয়দ মুনিরুল হক জানিয়েছেন, বিদেশি ফলের আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় আমদানিকারকরা আন্দোলন শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফলের চালান খালাস করেননি গত কয়েক দিন ধরে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে।
চট্টগ্রাম ষোলশহর কর্ণফুলী মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, পাইকারিতে প্রত্যেক ফলের কার্টনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে আমরাও খুচরায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ফলের দাম বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে কিছু কিছু দেশি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন বড়ই, আনারস, পেয়ারা। তাই বিদেশি ফলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবটা মানুষের মধ্যে পড়ছে না। কিন্তু বিদেশি ফল ধনীরা ছাড়া কেউ খেতে পারবেন না। যে হারে দাম বেড়েছে আগামী রমজানের ইফতারে আপেল, কমলা, আনার, আঙুর ও মালটার দেখা হয়তো মিলবে না।
চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক মোহাম্মদ জুনায়েদুল হক জানিয়েছেন, চীনের লাল আপেল ২০ কেজির কার্টন এক মাস আগে ৪ হাজার বিক্রি হয়েছিল, এখন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, একই ভাবে ১৫ কেজির মালটা ৫০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়, ১০ কেজি কার্টনের কমলা ৫০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার টাকা, লাল আঙুর ৭ কেজির কার্টন ৭ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান আপেল ২০ কেজির কার্টন ৫ হাজার ২০০ টাকা, আফ্রিকান আপেল ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আনারের মানভেদে ১৭ কেজির কার্টন ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফল আমদানিকারক তৌহিদুল আলম বলেছেন, আমদানি পর্যায়ে শুল্ককর বৃদ্ধির ফলে বাজারে ফলের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বিদেশি ফল আর কেউ খাবেন না। এতে আমদানিও কমে যাবে। শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব সবার ওপর পড়বে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ফল আমদানির ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে শুল্ককর আরও কমাতে হবে।
তিনি জানান, এর আগে আমদানিকারক ও ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন। আমদানি ফলের চালান খালাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বর্ধিত শুল্ক বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা আন্দোলন শিথিল করেছেন।
সিফাত/