ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২০ পিএম
আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন
মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে অনেক জলাশয়। ছবি : খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হওয়ার আগেই একবার পাহাড়ি ঢলে বেঁকে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে রেলওয়ে কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের ঘুম ভাঙেনি। সাতকানিয়া এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে ইটভাটার জন্য মাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে বিশালাকারের অনেক জলাশয়। এতে রেললাইনটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে রেললাইনের মাটি সরে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে রেললাইন রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশও উপেক্ষা করা হচ্ছে।

সাতকানিয়া উপজেলার ৭৩টি ইটভাটার মধ্যে অনেকগুলো অবৈধ। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা সবাই মাটি কাটার বিরুদ্ধে। তবুও দেদার কাটা হচ্ছে মাটি। কেউ কেউ মাটির চাহিদা মেটাতে কোপ দিচ্ছে পাহাড়েও। 

সরেজমিন পরিদর্শন
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মৌলভীর দোকান থেকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের আঁধার মানিক দরগাহ লাগোয়া কেরানিহাট লেভেলক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের তিন ফসলি কৃষিজমির মাঠ এখন বিশালাকৃতির জলাশয়। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখাল, পাঠানিপুল ও আঁধার মানিক দরগার পশ্চিমে ঢেমশা এলাকায় দেখা গেছে, মাটি খননের ফলে সৃষ্ট জলাশয় থেকে পুনরায় মাটি কাটার জন্য পাম্প বসিয়ে জলাশয় থেকে পানি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এলাকার হাজারও গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ না করে মিটারবিহীন পানির পাম্প বসিয়ে বিশাল জলাশয় সেঁচে মাটিখেকোদের পুনরায় মাটি কাটার উপযোগী করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দোহাজারী বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে। 

তবে দোহাজারী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জলাশয়গুলো থেকে মাছ ধরার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, শুকিয়ে মাটি কাটার জন্য নয়। 

জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে 
উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঢেমশা বারি সিকদার পাড়ার কৃষক আবু জাহের সিকদার বলেন, ব্রিটিশ আমলের আগে থেকে আমাদের বাপ-দাদারা রেলওয়ের অধিগ্রহণ করা জমি ও পাশের জায়গায় চাষাবাদ করে পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতেন। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার পাঁচ কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে। তখন ভয়ে জায়গায় যেতে পারিনি। এখনো একইভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। 

একই চিত্র তুলে ধরেছেন, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু সৈয়দ। তিনি বলেন, রেললাইন সংলগ্ন তার মালিকানাধীন কৃষিজমির মাটি রাতের অন্ধকারে কেটে নিয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। প্রশাসনকে পাত্তা না দিয়ে অবিক্রীত জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে গেছে। প্রথম দিকে মহাসড়কের দক্ষিণ পাশের জমির মাটি কেটে জলাশয়ে পরিণত করেছে। বর্তমানে উত্তর পাশের কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে অভিযোগ করেছেন কালিয়াইশ ইউনিয়নের রসুলাবাদ এলাকার মো. ওসমানসহ আরও অনেকে।
ঝুঁকিতে পড়ছে রেললাইন

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু করার আগে পাহাড়ি ঢলে বেঁকে যায়। তবে লাইনের গোড়ায় মাটি থাকায় পুরো লাইন বিধ্বস্ত হয়নি। সেই ঘটনাকে সতর্ক বার্তা হিসেবে গ্রহণ না করে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন এবং রেলওয়ে। প্রতিরাতে ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইনের প্রায় কাছাকাছি দুই পাশে গভীর করে কৃষিজমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েরও কোনো মাথাব্যথা নেই। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, রেললাইন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা হবে, রেললাইনের কতদূর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

কাটা হচ্ছে পাহাড়ও
সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের চনখোলা গ্রামের চূড়ামণি এলাকায় খাজা থ্রি নামের একটি ইটভাটা দিনদুপুরে পাহাড় কেটে সে ওই মাটি দিয়ে ইট তৈরি করছে। এ ছাড়াও চূড়ামণি গ্রামের বেশির ভাগ ইটভাটায় ইট তৈরিতে পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করছে।

মাটি কাটছে সেই পুরোনো সিন্ডিকেট
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় দলীয় পদবি ও নামধারী অনেকেই কৃষিজমির টপ সয়েল কাটার কাজে জড়িত ছিল। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল অন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থক। সে সময় তারা নিজেদের আড়ালে রাখতেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের আমলে আড়ালে থাকারাই এখন সামনে চলে এসেছেন। আর ওই সময় যারা সামনে ছিলেন তারা আড়ালে চলে গেছেন। 

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সম্প্রতি সাতকানিয়া থানায় যোগদান করেছি। কোথাও কৃষিজমির মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।’ 

উপেক্ষিত আদালতের নির্দেশ 
সাতকানিয়ায় কৃষিজমির টপসয়েল কাটায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং কেটে নেওয়া মাটি ৩০ দিনের মধ্যে ভরাটের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশের ৯ মাস পার হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মুনাফ সাতকানিয়ায় ইটভাটা মালিকদের জোরপূর্বক মাটি কাটা বন্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে (১৯ মার্চ) হাইকোর্ট রুল দিয়ে ইটভাটার মাটিকাটার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশের পরও সংশ্লিষ্ট কৃষিজমির টপসয়েল কাটা অব্যাহত থাকার বিষয়টি একই বছরের (২২ এপ্রিল) বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর আদালতের নজরে আনেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাতকানিয়া থানার ওসিকে (২৩ এপ্রিল) দুপুরে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হতে তলব করেন। একই বছরের (২৩ এপ্রিল) চার কর্মকর্তা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। পরে দায়ীদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির উপরিভাগের কাটা মাটি (টপসয়েল) ৩০ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পলিমাটি এনে ভরাট ও ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন থেকে কত দূরে সাতকানিয়ায় মাটি কাটা হচ্ছে এবং এতে করে রেললাইন হুমকির মুখে পড়ে কি না, তা-ও অনুসন্ধান করে রিপোর্টে উল্লেখ করতে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়। আদালতের নির্দেশের দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মাটিখেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভরাট করা হয়নি খনন করা কৃষিজমিগুলোও। বরং নতুন করে কিছু এলাকায় মাটি কাটা হচ্ছে। সে সময় যেসব কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট ভার্চুয়ালি তলব করেন, তাদের মধ্যে এখনো চট্টগ্রামে আছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের পর যারা মাটি কেটেছিল সে সময় তাৎক্ষণিক তাদের দিয়ে অধিকাংশ জলাশয় ভরাট করে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ বর্ষা চলে আসায় বাকিগুলো আর ভরাট করা সম্ভব হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনটি তার হাতে আসেনি। রেললাইন ঘেঁষে খনন করা বিশালাকারের জলাশয়গুলো ভরাটের বিষয়ে এ বছর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, উচ্চ আদালত নতুন করে আর কোনো নির্দেশ দেয়নি।’ 

তবে তিনি জানান, মাটি কাটার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস গত ৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাসের বেশি সময়ে ১০টি খননযন্ত্র জব্দ এবং সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং এক ব্যক্তিকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মাটিতে বাড়ছে লবণ ও সালফারের পরিমাণ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া, ছদাহা, কাঞ্চনা, নলুয়া, মাদার্শা ও ধর্মপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে টপসয়েল কাটার ফলে দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহানী ও পাঠানিপুল এলাকা সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশের এক সময়ের তিন ফসলি জমি বিশালাকৃতির জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব কৃষিজমি থেকে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে মাটি খনন করা হয়েছে বলে জমির মালিকরা জানান। যে কারণে কৃষিজমির উর্বরাশক্তি ধ্বংস হচ্ছে। জমিতে বাড়ছে লবণ ও সালফারের আধিক্য। একই সঙ্গে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাকযোগে মাটি পরিবহনের সময় সড়কে মাটি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা।

সাতকানিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, সাধারণত জমির উপরিভাগের মাটিতে জৈব পদার্থ, বিভিন্ন দ্রবণীয় লবণ ও সালফার থাকে। এই উপরিভাগের মাটি কেটে ফেললে নিচের লেয়ারে লবণ ও সালফারের আধিক্য বৃদ্ধি পায়। এতে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে ওই মাটিতে আর ফসল হয় না। জমির জৈব উপাদান হ্রাস পেলে তা ফিরিয়ে আনতে ১৮ থেকে ২০ বছর সময় লাগে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখে থাকে। মাটি কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে বলে জানান তিনি। তবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো অভিযান চোখে পড়েনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 

ইটভাটা মালিক সমিতির বক্তব্য
সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দিন মাটি কাটার কথা অস্বীকার করে বলেন, গত বছরের জমানো মাটি দিয়েই তারা এ বছর ইট তৈরি করছেন। ইটভাটা মালিকরা কখনো মাটি কাটেন না। অতীতে রাজনৈতিক প্রতিপত্তিসম্পন্ন কিছু মাটি ব্যবসায়ী ছিল। তারাই মূলত মাটি কেটেছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রেললাইনের পাশে খনন করা জলাশয় ভরাটের বিষয়ে তিনি বলেন, কোথাও মাটি নেই। তবে সাতকানিয়ায় এখন প্রতিবছর বন্যা হচ্ছে। প্রতিবারের বন্যায় ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পলি পড়ছে। এভাবে চললে জলাশয়গুলো ভরাট হতে বেশি দিন লাগবে না। তিনি দাবি করেন, রেললাইন হওয়ার আগেই সেখান থেকে মাটি কাটা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ তারা শুনেছেন। মাটি না কাটলে উপজেলা প্রশাসন এক্সক্যাভেটর এবং ডাম্প ট্রাক জব্দ ও ইটভাটা মালিককে জরিমানা কীভাবে করল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন ইটভাটা থেকে এক্সক্যাভেটর জব্দ ও জরিমানা করেছেন। যেটা ন্যায়সঙ্গত না হলেও প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা প্রতিবাদ করছেন না। 

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থান
সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট চট্টগ্রাম-১৪ ও চট্টগ্রাম ১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমসহ এই এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের সবাই চান কৃষিজমির টপসয়েল কাটা বন্ধ হোক। তবুও চলছে মাটি কাটার উৎসব।

সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৫ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম
সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট
ছবি: সংগৃহীত

ভারত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এরপর দুই দিনে পাঁচটি ট্রাক ফিরিয়ে দেয় দেশটি। এতে পণ্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে ২৭ এপ্রিল থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। প্রথম দিন কার্গো ফ্লাইট যাবে স্পেনে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এ কথা জানিয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগির কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।

বাংলাদেশ কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪৬২ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত হয়ে বিশ্বের ৩৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টন পোশাক। ফলে সম্প্রতি ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় বিকল্পের সন্ধান করতে হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের।
এ অবস্থায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি সামনে আনেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েসনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে কেবল নেতিবাচকভাবে না দেখে সম্ভাবনার দিক থেকেও ভাবার সুযোগ রয়েছে। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি খাতে সাময়িক সমস্যা হবে। তবে আমরা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে তা আমাদের জন্য একটি সুযোগে পরিণত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে রপ্তানি করলে পরিবহন ব্যয় কম লাগত। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ বিষয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দেশের কার্গো সুবিধা বাড়াতে হলে খরচ কমাতে হবে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস ভালো করতে হবে এবং সময়মতো সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।’

কার্গো সুবিধা ইস্যুতে দেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশ বড় কোনো সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব অংশীজন, বাংলাদেশ বিমান, সিভিল এভিয়েশন, প্রাইভেট সেক্টর সবার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সমস্যা উত্তরণে কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, কিছু বাড়তি খরচের বিষয় রয়েছে। আমরা কাজ করছি, আশা করছি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’ 

এরই অংশ হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধিদল বিমানবন্দর দুটি পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে বাড়তি অর্থ ও খরচ বাঁচবে ব্যবসায়ীদের। 

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা ও পণ্য রপ্তানির জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ এপ্রিল প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড়াল দেবে সিলেট থেকে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়েও এই সুবিধা চালু হবে।

দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই এবারও এই সেবা দেবে। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কার্গো ফ্লাইটের সব সুবিধা যেন ঠিকভাবে দেওয়া যায়, তার জন্য আমরা ঢাকা থেকেও কিছু ইক্যুইপমেন্ট পাঠিয়েছি। এ ছাড়া সিলেটে তো আগে থেকে সেবা নিশ্চিত করার যন্ত্রপাতি আছেই। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন এই ফ্লাইট পরিচালিত হবে। প্রথম পর্যায়ে কেবল শুকনো পণ্য এই ফ্লাইটে পরিবহন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্টস পণ্যই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করছি।’ 

ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিস

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সরকার জানালেও নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তুতি চলছে ডিসেম্বরকে ঘিরে। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ের (বিজি প্রেস) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ সংস্থাটি মনে করছে সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করতে পারলে তাদের পক্ষে যেকোনো সময়ই নির্বাচন আয়োজন করা সহজতর হবে। 

বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন উপলক্ষে ব্যালট পেপার, মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন নির্বাচনিসামগ্রী ছাপাতে ইসির প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ; যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। যথাসময়ে এসব প্রস্তুত করতে সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাসহ ভোটের জন্য আনুষঙ্গিক ১০ ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এবারের সংসদ নির্বাচনে ইসিকে ইউএনডিপির সার্বিক সহযোগিতার পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বিজি প্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল- নির্বাচনি কাজে ব্যবহৃত কাগজপত্র কেনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; মুদ্রণ কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণের প্রস্তুতি; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণ পরিকল্পনা; সরবরাহ না হওয়া সামগ্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিবিধ। সভার লক্ষ্য ছিল- জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যালটসহ যত ধরনের সামগ্রী লাগবে সেসব মুদ্রণে কী পরিমাণ পেপার লাগবে, বাজেট কত হতে পারে এবং কেনাকাটা থেকে মুদ্রণে কত সময় লাগতে পারে এসব যাচাই করা।

পরে সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কী পরিমাণ কাগজ লাগবে, এ সংক্রান্ত বাজেটের সংস্থানের ব্যাপার এবং আগের নির্বাচনের কিছু কাগজপত্র বিজি প্রেসে রয়েছে সেগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকলে ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে জন্য কাজগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত পেপার প্রকিউরমেন্ট থেকে প্রিন্টিং পর্যন্ত কতটা সময় লাগতে পারে তা জানা। উনারা বলেছেন, ৩ মাস থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের শিডিউল সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটা হবে তখন যেন আমাদের ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশনটা থাকে।’ ইসি সচিব জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব কাজের অগ্রগতি জানতে একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনি সব ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিতে যা প্রয়োজন

গত ২ মার্চ প্রকাশিত ইসির সবশেষ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। অর্থৎ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্রচারপত্র, আচরণবিধি, ম্যানুয়্যালসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ইসিকে ছাপাতে হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে মোট ৪৩ ধরনের পেপার ছাপাতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে- ২১ ধরনের ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, ৫ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা। 

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের বর্তমান আসন সংখ্যা ৩০০। এসব আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ব্যালট ছাপাতে কাগজ ও কালি সংগ্রহ, ফর্ম, প্যাড, ব্যানার, পোস্টার, নির্দেশিকা, রেজিস্টার, হিসাবরক্ষণ খাতা ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুতের প্রয়োজন রয়েছে। এসব আসনের নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি সামগ্রীর মুদ্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে এসব কাগজ কেনা/সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকসংবলিত হয়ে থাকে। এ কারণে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেপার স্বল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রণ করে মাঠ কার্যালয় সমূহে বিতরণ করতে হবে। অন্যান্য ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার, ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা ইত্যাদি সম্ভাব্য সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুদ্রণ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দুই ধরনের তারিখ দিয়েছেন। তবে আমরা প্রথমটা (ডিসেম্বর) ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ আগে প্রস্তুতি থাকলে পরে আমাদের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন করা সহজ হবে। আর এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ও নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনা এবং মুদ্রণের যাবতীয় কাজ ভোটের আগে আগামী ৪ মাসের মধ্যেই শেষ করতে চাই। তবে যে জিনিসগুলো আমরা আগে সংগ্রহ করব তাতে কোয়ালিটিতে কোনো সমস্যা হবে কিনা- যেমন নির্বাচনে ব্যবহৃত কালি; তা শুকিয়ে যাবে কিনা সেসব বিবেচনা করে সময়কাল বিবেচনায় সংগ্রহ করা হবে।’ 

কে এম আলী নেওয়াজ আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য আমাদের ১০ প্রকার সরঞ্জাম প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে- ৩ প্রকার বস্তা, ৩ প্রকার সিল, ব্যালটবাক্সের জন্য লক ও গালা। এই ৮ ধরনের সরঞ্জাম এদেশের বিভিন্ন মার্কেট থেকে কেনা হয়। তবে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড- এ দুটি সরঞ্জাম আমাদের বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এবার দেশীয় ধরনের ভোটের সরঞ্জাম কেনায় ইসির বাজেট প্রায় ৯ কোটি টাকা। লোকাল মার্কেটের এসব আইটেম কেনার জন্য গত ১০ এপ্রিল টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আর অমোচনীয় কালি ও স্টাম্পপ্যাড ইমপোর্ট করতে খরচ হতো প্রায় ৩০ কোটি টাকা; যা এবার ইউএনডিপি আমাদের ইমপোর্ট করে এনে দেবে। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর ভোটার তালিকা কার্যক্রমের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে সহায়তা পাওয়া গেছে। তবে আমাদের মেইন টাকা পয়সাটা লাগবে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ট্রেনিং, ল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য ফুয়েলসহ অনেক খাতে। এ ছাড়া ট্রেনিং সেন্টার, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ও অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো আছে সেগুলোতে আমাদের টাকা বেশি লাগবে। সেসব ক্ষেত্রেও আমরা ইউএনডিপির সহায়তা পাব আশা করছি। 

এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির নির্বাচনি ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর জাতীয় ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসির এই বাজেট ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৪৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার সে সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংযুক্ত করা সম্ভব হলে এবার ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে হতে পারে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। 

বিজি প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনে (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) ২ লাখ ৩০ হাজার রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনের আগে এ পর্যায়ে কিনতে হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ। এ জন্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৩ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি কাগজগুলো বিজি প্রেসের কাছে সংরক্ষিত। এর আগে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন উপলক্ষে ২০২৩ সালে কেনা হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ রিম কাগজ।

কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ এএম
কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত
চাকরিচ্যুত ৪০ শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল ‘এক্সেল শিওর’ গার্মেন্টের শ্রমিকরা সিইপিজেট গেটের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: খবরের কাগজ

পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়ককে চট্টগ্রামের লাইফলাইন বলা হয়। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), বিমানবন্দর, পোর্ট, একাধিক কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কর্মকাণ্ড এই সড়ককে ঘিরে হয়ে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদের বাদামতলীতে এই পথ ব্যবহার করে যেতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য এই পথকে বেছে নিয়েছেন। বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবির মতো ইস্যুতে শ্রমিকরা এই সড়কে বসে পড়ছেন। এতে রপ্তানিপণ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড থমকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ব্যক্তিগত-দাপ্তরিক কাজে কোথাও যেতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা চাইলে সিইপিজেডের ভেতরে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা-বিক্ষোভ করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে মূল সড়কে উঠে আসছেন। এতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে সিইপিজেডের জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা এ সময় সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরদিন অন্য আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা একই কায়দায় নিজেদের দাবি নিয়ে ইপিজেড গেটের সামনে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া এক দিন বিরতি দিয়ে ২৪ মার্চ সকাল থেকে জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা আবারও রাস্তায় নামেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা জটিলতার কারণে জেএমএস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগেই লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ চলাকালে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে বিধি অনুযায়ী ২০ মার্চের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেতন পরিশোধ না করায় ২২ মার্চ শ্রমিকরা সড়কে আন্দোলনে নামেন। এতে পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৫ এপ্রিল সিইপিজেডের ‘এক্সেল শিওর’ নামে একটি কারখানার ৪০ শ্রমিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা সকাল থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা ইপিজেড মোড়ে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পরদিন ৬ এপ্রিল সকালে জে-ডব্লিউ অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা একই জায়গায় আবারও সড়ক অবরোধ করেন। যদিও শিল্প পুলিশ, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেন। 

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘সিইপিজেডে সড়ক অবরোধের কারণে কনটেইনার জাহাজে তুলতে পারিনি। এটাকে আমাদের ভাষায় সার্টআউট বলা হয়। যত বারই সড়ক অবরোধ হয়েছে, তত বারই সার্টআউট হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আর বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চান না।’

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে কালুরঘাট-পতেঙ্গা সড়কের দুদিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আগ্রাবাদ থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি পতেঙ্গার দিকে যেতে পারে না। অন্যদিকে পতেঙ্গা থেকে আসা যানবাহনগুলো স্টিলমিল এলাকায় আটকা পড়ে। এতে এই পথে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। আমদানি-রপ্তানির কনটেইনারবাহী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। পণ্য চালানের গাড়ি সিইপিজেডে ঢুকতে বা বের হতে পারে না। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কিছু হলেই শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। কোনো দাবি থাকলে তারা ইপিজেড পরিচালককে জানাতে পারেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারেন। এভাবে সড়কে নেমে রাস্তা বন্ধের মাধ্যমে অন্য নাগরিকের জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে সিইপিজেডের শ্রমিকদের কখনো সড়ক অবরোধ করতে দেখিনি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের তুলনায় চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার পরিবেশ অনেক শান্ত। কিন্তু কোনো পক্ষ এটিকে গরম করতে চাইছে। মনে হচ্ছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ শ্রমিক অসন্তোষ।’ 

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে শ্রমিকদের অন্য কেউ ব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। ইপিজেড শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কোনো মালিক পক্ষ আত্মসাৎ করতে পারে না। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কারখানা বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। কিন্তু এরপরও শ্রমিকরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সড়কে চলে যাচ্ছেন। এটা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়টি আগামীতে কঠোরভাবে দেখা হবে।’

সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নতুন অর্থবছরের বাজেট (২০২৫-২৬) হবে ব্যতিক্রমী। এবারের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকারের চেয়ে কম প্রাক্কলন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় ছোট বাজেট দিচ্ছে সরকার। সাধারণত নতুন বাজেটের আকার তার আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবারই আকার তুলনামূলক ছোট করে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দিয়ে গেছেন। বাজেটটি এখন বাস্তবায়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যেহেতু এবার সংসদ নেই, তাই অধ্যাদেশ জারি করে রেডিও-টিভির মাধ্যমে বাজেট দেবেন তিনি।

সূত্র জানায়, বাজেট ছোট করার প্রধানত কারণ তিনটি। প্রথমত, সম্পদের সীমাবদ্ধতা তথা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের ব্যাপক দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং তৃতীয়ত, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়া। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেটের পথে হাঁটছে।

সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটির বৈঠকে গতকাল সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠেকে বাজেটের আকার ছোট করার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সেই পরামর্শ অনুয়ায়ী বাজেট তৈরির নির্দেশ দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। এর আগে জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই খরচের জায়গাটাও কম হবে। বাস্তবতার আলোকে নতুন বাজেট সাজানো হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই। বাজেট বড় হলেই যে ভালো হবে তা নয়। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিত করা। তা হলেই বাজেটের সুফল সবাই পাবেন।

সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনীতির অবস্থা যে ভালো নয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে জিডিপি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে ধরা হয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সংশোধিত প্রবৃদ্ধিও অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা আভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে হবে।

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ। তবে আশার আলো হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে।

বাষির্ক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার এবার অনেক ছোট করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূলত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প পরিহার করা এবং মেগা প্রকল্প না নেওয়ায় নতুন এডিপির আকার ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআর থেকে বলা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা প্রাক্কলনের জন্য। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুবই নাজুক। চলতি অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বছরের বেশির ভাগ সময় পার হলেও রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি এনবিআর। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত।

সম্পদের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে কথা আইএমএফও জানে। সে জন্য সংস্থাটি আগামী বাজেট ছোট করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা নতুন বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা নিচে রাখার প্রস্তাব করেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করেছে সরকার। ফলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের মূল দুটি অংশ উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। সূত্র জানায়, এবার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁটের প্রায় পুরোটাই কমেছে উন্নয়ন অংশে। যার পরিমাণ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে।

নতুন বাজেটের আকার ছোট করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণসহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট করে তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না। অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ছোট বাজেটের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে অন্যতম নিম্ন, যা সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত করে রাখে। তিনি বলেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে কিছু আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে বাজেটের আকার কমানো, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা অন্যতম।

দ্বিতীয়ত, সরকার আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এটি অর্জনে সরকারকে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে।

আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিষয় বিনিময়, ভিসা সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৩ বছর পর ফের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। আলোচনার বিভিন্ন দিকনির্ধারণ করতে তিন দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বেলোচ। এরপর আগামী ২২ এপ্রিল তিন দিনের সফরে আসবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছর পর উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের দ্বার খুলছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সংলাপ হয়েছিল। এবার উভয় দেশ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সংলাপ হচ্ছে।

পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান খবরের কাগজকে জানান, ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফরকে বাণিজ্য, কূটনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে দুই দেশ। তার সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথ খোঁজা হবে।

ইকবাল হোসেন জানান, এই সফরের এক দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী একবছরে অন্তত ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি ৬২৭ মিলিয়ন (৬২ দশমিক ৭ কোটি) ডলার থেকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করা। আর বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। 

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা যৌথ কমিশন পুনর্বহাল করতেও প্রস্তাব দিতে পারে পাকিস্তান। এই কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এ ছাড়া সফরকালে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। এর ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব নতুন মাত্রা পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ৫৩ বছরের অমীমাংসিত বিষয় আছে। তবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা যদি ওই ইস্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। ওদেরও কোনো লাভ নেই। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্ধারের চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হিসেবেই দেখতে চাই।’

এদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমানযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি ফ্লাইট শুরুর ব্যাপারে একমত হয়েছে। পাকিস্তানের ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে একটি এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। শিগগিরই এই রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে বলে জানান হাইকমিশনার ইকবাল হোসেন খান। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-করাচি সরাসরি জাহাজ চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় পাকিস্তানের কোনো পণ্য বাংলাদেশে আনতে হলে তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আনতে হতো। গত ৫ আগস্টের পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল ফের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে করাচি থেকে দুটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। ফলে আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য হাসিনার প্রশাসনের ওপর দিল্লির তীব্র প্রভাবও ভূমিকা রাখে। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ কোন পন্থায় হবে, সেটাও ভারত থেকে ঠিক করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে চায় বাংলাদেশ। উভয় দেশই যেন ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশনে’ থাকে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে ঢাকা।