ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রামে আইন ভাঙার মহোৎসব, আক্রান্ত পুলিশও

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
চট্টগ্রামে আইন ভাঙার মহোৎসব, আক্রান্ত পুলিশও
চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গোলাগুলি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা কাজ করছে। তবে নাগরিক সমাজের অভিমত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে কখনো কখনো পুলিশ নিজেই হুমকি পাচ্ছে, হামলার শিকার হচ্ছে।

পুরো জেলায় যেন আইন ভাঙার উৎসব চলছে! চট্টগ্রাম মহানগর এবং বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও অস্ত্রের কারবার, বালু মহাল দখল, মাটি ও গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কারণে অপরাধ বাড়ছে। 

সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি গত ২৮ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে নগরীর বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দেন, গালাগাল করেন। এ ঘটনায় ওসি নিজে থানায় জিডি করেন। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সাজ্জাদকে ধরতে পুরষ্কার ঘোষণা করে।

এ ঘটনার পর গত এক মাসে চট্টগ্রামে পুলিশ চারবার আক্রান্ত হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চান্দগাঁও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গুনিয়ায় বেড়াতে এসে পুলিশের সাবেক এক উপপরিদর্শক ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে, একইদিন ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানাধীন বারেক বিল্ডিং মোড়ে ছুরিকাহত হন দুই পুলিশ সদস্য। সর্বশেষ আলোচিত ঘটনা ঘটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। পতেঙ্গা থানার এক পুলিশ সদস্যকে ভুয়া পুলিশ উল্লেখ করে মব সৃষ্টি করে হেনস্তা করা হয়। 

নগরীর খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লা মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে ছিনতাই, ডাকাতি হচ্ছে। এ ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর এ কে খান এলাকায় ছিনতাইকারীরা ভয় দেখিয়ে ট্রাক থেকে কয়েক বস্তা পেঁয়াজ ছিনিয়ে নেয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে তো ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়বে।’

নগরীর আকবর শাহ এলাকার বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মী সফিকুল ইসলাম মনে করেন, ‘এলাকার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। ছিনতাই, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, সরকারি প্লট দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এখানে হচ্ছে না। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো একটু স্বচ্ছল পরিবার দেখলেই ফ্যাসিবাদের দোসর বলে রাতে হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। আর পাহাড় কাটা তো এখন আরো সহজ কাজ।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে জেলা থানাগুলোতেও। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি-দখল নিয়ে রিদোয়ান ও রোকন মেম্বার গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ সময় সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেওয়া হয় সিএনজি অটোরিকশাসহ সব ধরণের যানচলাচল। পরদিন তারা ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়। সেখানকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা দিবসের কর্মসূচি বাতিল করা হয়। 

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাউজানে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গত সাড়ে ছয় মাসে সংঘর্ষ, হামলা ও গোলাগুলির অন্তত ৪০টি ঘটনা ঘটেছে। ১৫ নভেম্বর গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। হানাহানিতে লিপ্ত দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে দুজনেরই দাবি, তারা সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর এবারই প্রথম পুলিশ-প্রশাসন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একটা ভীতি এবং আতঙ্কজনক অবস্থা বিরাজ করছে। আবার তাদের ভেতরে একটা ক্ষোভ রয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে আগে যে আন্তরিকতা ছিল সেটা আদৌ তাদের আছে কি না দেখতে হবে।’

সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা আকতার বলেন, ‘অপরাধ রোধ করার জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। অনেক অপরাধী গ্রেপ্তার আছে। ছিনতাইকারি, ডাকাতসহ সব ধরনের আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রতিদিন অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ সবসময় তৎপর আছে।’ 

চট্টগ্রামের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, ‘জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কাজ করছে। রাউজানের বিষয়ে তারা বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। আশা করছেন এর সুফল জনগণ পাবেন।’

ভারতীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ: খরচ বাড়বে শিল্পের অনেক খাতে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
ভারতীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ: খরচ বাড়বে শিল্পের অনেক খাতে
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যবসায়ীদের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অনেকটা বিনা নোটিশে ভারত থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানিতে দেওয়া হয়েছে শর্ত, স্থলপথ দিয়ে আনা যাবে না, আনতে হবে বিকল্প পথে।

দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, স্থলবন্দরের পরিবর্তে বিকল্প পথে আমদানি করা হলে দেশে সুতা পৌঁছাতে সময় বেশি লাগবে। আমদানি করা এসব সুতা দিয়ে পণ্য বানিয়ে বায়ারদের বেঁধে দেওয়া সময়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। সংকটে পড়বে তৈরি পোশাকশিল্প, যা সমগ্র রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। ভারত সরকারের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পাল্টা হিসেবে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ধরে নিয়ে বলা যায়, এভাবে পাল্টাপাল্টি চলতে থাকলে দুই দেশের কারোর জন্যই ভালো হবে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, সরকার বেশ কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে সুতা আমদানি সীমিত করেছে। সরকার তো ব্যবসা করে না। ব্যবসা করে বেসরকারি খাত। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যগুলো যেসব খাতের কাঁচামাল সেই সব রপ্তানি খাত চাপে পড়বে। তাই এ সিদ্ধান্ত অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণ করা উচিত ছিল।

অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, ‘আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে সুতা উৎপাদন হলেও তা দামে ও মানে ভারতের সুতার বিকল্প কি না, তা দেখতে হবে। এর আগেও সুতা আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। আবার খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া অন্য যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেসব সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান সক্ষম কি না, তাও বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল।’

তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে ভূরাজনীতির কারণে দুই দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে দুই দেশকেই সরে থাকতে হবে। ভারত সরকারের নেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পাল্টা হিসেবে বাংলাদেশ এটা করেছে এমন কথাও অনেকে বলছেন। ভারত থেকে বাংলাদেশকে যেমন অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়, একইভাবে বাংলাদেশের রপ্তানির বড় বাজার ভারত। পাল্টাপাল্টি আক্রমণ দুই দেশের জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি ও বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। করোনার পর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ডলারসংকটে আমরা বিপর্যস্ত। কোনোমতে টিকে আছি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা, ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানিতে এমন শর্ত কীভাবে দেয় তা আমরা জানতে চাই।’

তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে অল্প পরিমাণ সুতা ও ডুপ্লেক্স বোর্ড এনে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। পানিপথে বেশি পরিমাণে কাঁচামাল আনতে হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআরের স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুপারিশে টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি রাখতে ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এনবিআর এ কাজ করেছে। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তৈরি পোশাক খাতের আরেক ব্যবসায়ী রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ এবং শর্ত দিয়ে আমদানি করা পণ্যের সমজাতীয় পণ্য রাতারাতি তো আর দেশের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব না। আবার নতুন বাজার খুঁজে এসব পণ্য আমদানি করতে তো সময় লাগবে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিনা নোটিশে সরকার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৈরি পোশাকসহ শিল্পের বিভিন্ন খাত চাপে পড়বে। বিশ্ববাণিজ্যের এমন পরিস্থিতিতে এসব শিল্প খাতে খরচ বাড়বে।’

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নতুন সভাপতি আবদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক খাতে কেবল রেডিও-টিভি, সাইকেল ও মোটরের যন্ত্রাংশ, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিকস ব্যবহৃত হয়। কোনো সময় না দিয়েই এসব পণ্য নিষিদ্ধ করায় পণ্য সংকট হবে। আগেই যারা পণ্য আমদানি করে রেখেছিলেন তাদের অনেকে সেই সব সমজাতীয় পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বেশি দামে এসব পণ্য কিনতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের জন্যই নেতিবাচক নয়।’

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সম্প্রতি ভারত থেকে সুতা, দুধ, গুঁড়া দুধ, মাছ, আলু, নিউজপ্রিন্ট, ডুপ্লেক্স বোর্ড, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব, টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিকসসহ একাধিক পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। ভারতীয় সস্তা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় স্থানীয় উৎপাদকরা দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়ছিলেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশীয় শিল্প বিশেষ করে সুতা, সিরামিক ও নির্মাণসামগ্রী খাতে আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথ সুগম হবে। এতে প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে দেশি শিল্প সক্ষম করতে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। কত দিনে সক্ষমতা তৈরি হবে, তাও ভেবে দেখা দরকার ছিল।

ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, তবে এই পরিবর্তনের ফলে কিছু পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে, যা ভোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহৃত সুতার দাম বেড়ে গেলে রপ্তানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদুপরি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যারা ভারতীয় পণ্য নির্ভর ছিলেন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা, পর্যাপ্ত ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা, শুল্ক সুবিধা এবং সহজ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৫ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম
সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট
ছবি: সংগৃহীত

ভারত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এরপর দুই দিনে পাঁচটি ট্রাক ফিরিয়ে দেয় দেশটি। এতে পণ্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে ২৭ এপ্রিল থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। প্রথম দিন কার্গো ফ্লাইট যাবে স্পেনে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এ কথা জানিয়েছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগির কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।

বাংলাদেশ কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪৬২ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত হয়ে বিশ্বের ৩৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টন পোশাক। ফলে সম্প্রতি ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় বিকল্পের সন্ধান করতে হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের।
এ অবস্থায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি সামনে আনেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েসনের (বাফা) ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে কেবল নেতিবাচকভাবে না দেখে সম্ভাবনার দিক থেকেও ভাবার সুযোগ রয়েছে। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় রপ্তানি খাতে সাময়িক সমস্যা হবে। তবে আমরা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে তা আমাদের জন্য একটি সুযোগে পরিণত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে রপ্তানি করলে পরিবহন ব্যয় কম লাগত। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ বিষয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। দেশের কার্গো সুবিধা বাড়াতে হলে খরচ কমাতে হবে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস ভালো করতে হবে এবং সময়মতো সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।’

কার্গো সুবিধা ইস্যুতে দেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশ বড় কোনো সমস্যায় পড়বে বলে মনে হয় না। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব অংশীজন, বাংলাদেশ বিমান, সিভিল এভিয়েশন, প্রাইভেট সেক্টর সবার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সমস্যা উত্তরণে কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, কিছু বাড়তি খরচের বিষয় রয়েছে। আমরা কাজ করছি, আশা করছি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।’ 

এরই অংশ হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধিদল বিমানবন্দর দুটি পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে বাড়তি অর্থ ও খরচ বাঁচবে ব্যবসায়ীদের। 

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা ও পণ্য রপ্তানির জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৭ এপ্রিল প্রথম কার্গো ফ্লাইট উড়াল দেবে সিলেট থেকে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়েও এই সুবিধা চালু হবে।

দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই এবারও এই সেবা দেবে। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কার্গো ফ্লাইটের সব সুবিধা যেন ঠিকভাবে দেওয়া যায়, তার জন্য আমরা ঢাকা থেকেও কিছু ইক্যুইপমেন্ট পাঠিয়েছি। এ ছাড়া সিলেটে তো আগে থেকে সেবা নিশ্চিত করার যন্ত্রপাতি আছেই। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন এই ফ্লাইট পরিচালিত হবে। প্রথম পর্যায়ে কেবল শুকনো পণ্য এই ফ্লাইটে পরিবহন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্টস পণ্যই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করছি।’ 

ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
ডিসেম্বর ঘিরেই ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিস

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সরকার জানালেও নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তুতি চলছে ডিসেম্বরকে ঘিরে। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ের (বিজি প্রেস) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ সংস্থাটি মনে করছে সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করতে পারলে তাদের পক্ষে যেকোনো সময়ই নির্বাচন আয়োজন করা সহজতর হবে। 

বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন উপলক্ষে ব্যালট পেপার, মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন নির্বাচনিসামগ্রী ছাপাতে ইসির প্রয়োজন হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ; যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। যথাসময়ে এসব প্রস্তুত করতে সরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাসহ ভোটের জন্য আনুষঙ্গিক ১০ ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এবারের সংসদ নির্বাচনে ইসিকে ইউএনডিপির সার্বিক সহযোগিতার পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনি সরঞ্জামের চাহিদা নিরূপণে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর এবং বিজি প্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল- নির্বাচনি কাজে ব্যবহৃত কাগজপত্র কেনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ; মুদ্রণ কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণের প্রস্তুতি; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচনের ব্যালট পেপার মুদ্রণ পরিকল্পনা; সরবরাহ না হওয়া সামগ্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিবিধ। সভার লক্ষ্য ছিল- জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যালটসহ যত ধরনের সামগ্রী লাগবে সেসব মুদ্রণে কী পরিমাণ পেপার লাগবে, বাজেট কত হতে পারে এবং কেনাকাটা থেকে মুদ্রণে কত সময় লাগতে পারে এসব যাচাই করা।

পরে সংস্থাটির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কী পরিমাণ কাগজ লাগবে, এ সংক্রান্ত বাজেটের সংস্থানের ব্যাপার এবং আগের নির্বাচনের কিছু কাগজপত্র বিজি প্রেসে রয়েছে সেগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকলে ডিসপোজালের ব্যবস্থা করা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন প্রস্তুতি যেন পিছিয়ে না থাকে সে জন্য কাজগুলো গুছিয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত পেপার প্রকিউরমেন্ট থেকে প্রিন্টিং পর্যন্ত কতটা সময় লাগতে পারে তা জানা। উনারা বলেছেন, ৩ মাস থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের শিডিউল সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তটা হবে তখন যেন আমাদের ব্যাকওয়ার্ড ক্যালকুলেশনটা থাকে।’ ইসি সচিব জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব কাজের অগ্রগতি জানতে একটি কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনি সব ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিতে যা প্রয়োজন

গত ২ মার্চ প্রকাশিত ইসির সবশেষ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। অর্থৎ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটারের জন্য ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্রচারপত্র, আচরণবিধি, ম্যানুয়্যালসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ইসিকে ছাপাতে হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে মোট ৪৩ ধরনের পেপার ছাপাতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে- ২১ ধরনের ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, ৫ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও নির্দেশিকা। 

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের বর্তমান আসন সংখ্যা ৩০০। এসব আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ব্যালট ছাপাতে কাগজ ও কালি সংগ্রহ, ফর্ম, প্যাড, ব্যানার, পোস্টার, নির্দেশিকা, রেজিস্টার, হিসাবরক্ষণ খাতা ও অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুতের প্রয়োজন রয়েছে। এসব আসনের নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি সামগ্রীর মুদ্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে এসব কাগজ কেনা/সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকসংবলিত হয়ে থাকে। এ কারণে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেপার স্বল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রণ করে মাঠ কার্যালয় সমূহে বিতরণ করতে হবে। অন্যান্য ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার, ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা ইত্যাদি সম্ভাব্য সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুদ্রণ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দুই ধরনের তারিখ দিয়েছেন। তবে আমরা প্রথমটা (ডিসেম্বর) ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ আগে প্রস্তুতি থাকলে পরে আমাদের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন করা সহজ হবে। আর এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ ও নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনা এবং মুদ্রণের যাবতীয় কাজ ভোটের আগে আগামী ৪ মাসের মধ্যেই শেষ করতে চাই। তবে যে জিনিসগুলো আমরা আগে সংগ্রহ করব তাতে কোয়ালিটিতে কোনো সমস্যা হবে কিনা- যেমন নির্বাচনে ব্যবহৃত কালি; তা শুকিয়ে যাবে কিনা সেসব বিবেচনা করে সময়কাল বিবেচনায় সংগ্রহ করা হবে।’ 

কে এম আলী নেওয়াজ আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য আমাদের ১০ প্রকার সরঞ্জাম প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে- ৩ প্রকার বস্তা, ৩ প্রকার সিল, ব্যালটবাক্সের জন্য লক ও গালা। এই ৮ ধরনের সরঞ্জাম এদেশের বিভিন্ন মার্কেট থেকে কেনা হয়। তবে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড- এ দুটি সরঞ্জাম আমাদের বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এবার দেশীয় ধরনের ভোটের সরঞ্জাম কেনায় ইসির বাজেট প্রায় ৯ কোটি টাকা। লোকাল মার্কেটের এসব আইটেম কেনার জন্য গত ১০ এপ্রিল টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আর অমোচনীয় কালি ও স্টাম্পপ্যাড ইমপোর্ট করতে খরচ হতো প্রায় ৩০ কোটি টাকা; যা এবার ইউএনডিপি আমাদের ইমপোর্ট করে এনে দেবে। এতে আমাদের প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর ভোটার তালিকা কার্যক্রমের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে সহায়তা পাওয়া গেছে। তবে আমাদের মেইন টাকা পয়সাটা লাগবে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ট্রেনিং, ল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য ফুয়েলসহ অনেক খাতে। এ ছাড়া ট্রেনিং সেন্টার, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট ও অন্যান্য কার্যক্রম যেগুলো আছে সেগুলোতে আমাদের টাকা বেশি লাগবে। সেসব ক্ষেত্রেও আমরা ইউএনডিপির সহায়তা পাব আশা করছি। 

এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির নির্বাচনি ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর জাতীয় ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসির এই বাজেট ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৪৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার সে সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংযুক্ত করা সম্ভব হলে এবার ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে হতে পারে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। 

বিজি প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনে (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) ২ লাখ ৩০ হাজার রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনের আগে এ পর্যায়ে কিনতে হবে ১ লাখ ৭০ হাজার রিম কাগজ। এ জন্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৩ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি কাগজগুলো বিজি প্রেসের কাছে সংরক্ষিত। এর আগে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন উপলক্ষে ২০২৩ সালে কেনা হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ রিম কাগজ।

কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ এএম
কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত
চাকরিচ্যুত ৪০ শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল ‘এক্সেল শিওর’ গার্মেন্টের শ্রমিকরা সিইপিজেট গেটের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: খবরের কাগজ

পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়ককে চট্টগ্রামের লাইফলাইন বলা হয়। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), বিমানবন্দর, পোর্ট, একাধিক কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কর্মকাণ্ড এই সড়ককে ঘিরে হয়ে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদের বাদামতলীতে এই পথ ব্যবহার করে যেতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য এই পথকে বেছে নিয়েছেন। বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবির মতো ইস্যুতে শ্রমিকরা এই সড়কে বসে পড়ছেন। এতে রপ্তানিপণ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড থমকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ব্যক্তিগত-দাপ্তরিক কাজে কোথাও যেতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা চাইলে সিইপিজেডের ভেতরে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা-বিক্ষোভ করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে মূল সড়কে উঠে আসছেন। এতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে সিইপিজেডের জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা এ সময় সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরদিন অন্য আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা একই কায়দায় নিজেদের দাবি নিয়ে ইপিজেড গেটের সামনে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া এক দিন বিরতি দিয়ে ২৪ মার্চ সকাল থেকে জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা আবারও রাস্তায় নামেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা জটিলতার কারণে জেএমএস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগেই লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ চলাকালে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে বিধি অনুযায়ী ২০ মার্চের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেতন পরিশোধ না করায় ২২ মার্চ শ্রমিকরা সড়কে আন্দোলনে নামেন। এতে পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৫ এপ্রিল সিইপিজেডের ‘এক্সেল শিওর’ নামে একটি কারখানার ৪০ শ্রমিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা সকাল থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা ইপিজেড মোড়ে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পরদিন ৬ এপ্রিল সকালে জে-ডব্লিউ অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা একই জায়গায় আবারও সড়ক অবরোধ করেন। যদিও শিল্প পুলিশ, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেন। 

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘সিইপিজেডে সড়ক অবরোধের কারণে কনটেইনার জাহাজে তুলতে পারিনি। এটাকে আমাদের ভাষায় সার্টআউট বলা হয়। যত বারই সড়ক অবরোধ হয়েছে, তত বারই সার্টআউট হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আর বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চান না।’

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে কালুরঘাট-পতেঙ্গা সড়কের দুদিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আগ্রাবাদ থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি পতেঙ্গার দিকে যেতে পারে না। অন্যদিকে পতেঙ্গা থেকে আসা যানবাহনগুলো স্টিলমিল এলাকায় আটকা পড়ে। এতে এই পথে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। আমদানি-রপ্তানির কনটেইনারবাহী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। পণ্য চালানের গাড়ি সিইপিজেডে ঢুকতে বা বের হতে পারে না। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কিছু হলেই শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। কোনো দাবি থাকলে তারা ইপিজেড পরিচালককে জানাতে পারেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারেন। এভাবে সড়কে নেমে রাস্তা বন্ধের মাধ্যমে অন্য নাগরিকের জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে সিইপিজেডের শ্রমিকদের কখনো সড়ক অবরোধ করতে দেখিনি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের তুলনায় চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার পরিবেশ অনেক শান্ত। কিন্তু কোনো পক্ষ এটিকে গরম করতে চাইছে। মনে হচ্ছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ শ্রমিক অসন্তোষ।’ 

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে শ্রমিকদের অন্য কেউ ব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। ইপিজেড শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কোনো মালিক পক্ষ আত্মসাৎ করতে পারে না। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কারখানা বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। কিন্তু এরপরও শ্রমিকরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সড়কে চলে যাচ্ছেন। এটা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়টি আগামীতে কঠোরভাবে দেখা হবে।’

সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নতুন অর্থবছরের বাজেট (২০২৫-২৬) হবে ব্যতিক্রমী। এবারের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকারের চেয়ে কম প্রাক্কলন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় ছোট বাজেট দিচ্ছে সরকার। সাধারণত নতুন বাজেটের আকার তার আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবারই আকার তুলনামূলক ছোট করে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দিয়ে গেছেন। বাজেটটি এখন বাস্তবায়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যেহেতু এবার সংসদ নেই, তাই অধ্যাদেশ জারি করে রেডিও-টিভির মাধ্যমে বাজেট দেবেন তিনি।

সূত্র জানায়, বাজেট ছোট করার প্রধানত কারণ তিনটি। প্রথমত, সম্পদের সীমাবদ্ধতা তথা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের ব্যাপক দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং তৃতীয়ত, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়া। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেটের পথে হাঁটছে।

সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটির বৈঠকে গতকাল সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠেকে বাজেটের আকার ছোট করার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সেই পরামর্শ অনুয়ায়ী বাজেট তৈরির নির্দেশ দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। এর আগে জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই খরচের জায়গাটাও কম হবে। বাস্তবতার আলোকে নতুন বাজেট সাজানো হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই। বাজেট বড় হলেই যে ভালো হবে তা নয়। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিত করা। তা হলেই বাজেটের সুফল সবাই পাবেন।

সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনীতির অবস্থা যে ভালো নয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে জিডিপি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে ধরা হয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সংশোধিত প্রবৃদ্ধিও অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা আভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে হবে।

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ। তবে আশার আলো হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে।

বাষির্ক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার এবার অনেক ছোট করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূলত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প পরিহার করা এবং মেগা প্রকল্প না নেওয়ায় নতুন এডিপির আকার ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআর থেকে বলা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা প্রাক্কলনের জন্য। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুবই নাজুক। চলতি অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বছরের বেশির ভাগ সময় পার হলেও রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি এনবিআর। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত।

সম্পদের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে কথা আইএমএফও জানে। সে জন্য সংস্থাটি আগামী বাজেট ছোট করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা নতুন বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা নিচে রাখার প্রস্তাব করেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করেছে সরকার। ফলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের মূল দুটি অংশ উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। সূত্র জানায়, এবার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁটের প্রায় পুরোটাই কমেছে উন্নয়ন অংশে। যার পরিমাণ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে।

নতুন বাজেটের আকার ছোট করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণসহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট করে তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না। অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ছোট বাজেটের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে অন্যতম নিম্ন, যা সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত করে রাখে। তিনি বলেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে কিছু আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে বাজেটের আকার কমানো, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা অন্যতম।

দ্বিতীয়ত, সরকার আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এটি অর্জনে সরকারকে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে।