
প্রশস্ত সড়ক, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সবুজায়ন ও দৃষ্টিনন্দন সড়ক বিভাজকসহ নানা কারণে তিলোত্তমা নগরীর খ্যাতি পেয়েছে রাজশাহী। এ নগরে এখন বসবাসের জন্য মানুষের চাপ বাড়ছে। ফলে নগরীর সড়কগুলো দিন দিন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে ফুটপাতের ড্রেনের অধিকাংশ স্ল্যাব চুরি হতে থাকে। কোথাও আবার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় স্ল্যাবগুলো ভেঙে গেছে। এতে ব্যস্ততম নগরীতে ঢাকনাবিহীন ড্রেনগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে রাজশাহী নগরীর হাঁটার পথ এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে! এ ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনায় জন্ম নিচ্ছে মশা। এতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-জীবাণু। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ফুটপাতের মাঝখানে থাকা লোহার তৈরি স্ল্যাব চুরি হতে থাকে। মূলত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই স্ল্যাবগুলো সরিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করে থাকেন। তবে সব যে চুরি হয়েছে তা-ও নয়, ঢালাই দিয়ে তৈরি অনেক স্ল্যাব ভেঙে গেছে। আর দীর্ঘ সময়েও স্লাবগুলো মেরামত, পুনঃনির্মাণ বা পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ না থাকায় পথচারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা চান দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো ঠিক করা হোক। পাশাপাশি তারা দখলমুক্ত ফুটপাতে নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সিটি হাট থেকে তেরখাদিয়া বন্ধ গেট এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার পাশে ড্রেনের ওপরের অংশে কোনো স্ল্যাব নেই। স্থানীয়দের দাবি, ৫ আগস্টের পর এগুলো চুরি হয়ে গেছে। পরে সিটি করপোরেশন থেকে আর স্ল্যাব দেওয়া হয়নি।
নগরীর ডাবতলা এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার পাশের ড্রেনের ওপর স্ল্যাব বসিয়ে তা ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই রাস্তায় একটিও স্লাব নেই। সব ৫ আগস্টের পর চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা চাই রাস্তার স্লাবগুলো ফের দেওয়া হোক। এবার সিমেন্টের ফাঁকা স্ল্যাব দিলে চোর চুরি করতে পারবে না।’
নগরীর বিনোদপুর থেকে তালাইমারী রাস্তার পাশের কিছু জায়গায় ড্রেনের স্ল্যাবের দেখা মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হওয়ায় এই রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের চলাচলই বেশি। তাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশে ড্রেনের স্ল্যাব না থাকায় ফুটপাতের পরিবর্তে ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা।
এ ছাড়া নগরীর চিড়িয়াখানা থেকে কোর্ট পর্যন্ত রাস্তার পাশে ড্রেনের স্ল্যাব ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনকে জানানোর পরও দীর্ঘদিন ধরে তারা কোনো প্রতিকার পাননি। এদিকে, ড্রেনের ওপরে ঢাকনা না থাকায় এলাকাবাসী সেখানে অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। ফলে ময়লার দুর্গন্ধে ও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আতঙ্কে দিন কাটছে পথচারীসহ স্থানীয়দের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী কাইয়ুম আলী বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণ হওয়ার পরে ড্রেনের কাজ পৃথকভাবে করা হয়। ফলে ড্রেনের কাজ শেষে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য এর ওপর স্ল্যাবগুলো দেওয়া হয়। এতে সড়ক আরও প্রশস্ত হওয়ায় চলাচল করতে ভালোই লাগত। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ড্রেনের স্ল্যাবগুলো চুরি হয়ে গেল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও স্ল্যাব বসানো না হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে। এ ছাড়া, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে ড্রেন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। আবার, দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নতুন টেন্ডার আহ্বান করে স্ল্যাবগুলো ফের স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশের ড্রেনের স্ল্যাবগুলো চুরি হয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ফলে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরা দুর্ঘটনায় পড়ার পাশাপাশি সেখানে মশা-মাছি জন্ম নিচ্ছে। আমি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলেছি একটি তালিকা করে কত টাকা লাগবে সেই অনুসারে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে স্ল্যাবগুলো যাতে পুনঃস্থাপন করা যায় সে অনুসারে একটি টেন্ডার দিতে। আর চুরি যাতে না হয় সে জন্য আমি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি, এ সমস্যা দ্রুত নিরসন হবে।’