
চাহিদা বাড়ায় চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও কাটারি আতপ চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার সঙ্গে ধানের মজুত বাড়ায় এসব চালের দাম বেড়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলী পাইকারি চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, চাহিদা থাকায় জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও কাটারি আতপ জাতের চাল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল কিনতে আসা ক্রেতাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৭৬ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে নাজিরশাইল কেজিপ্রতি ৭৮ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা। তা ছাড়া প্রতি কেজি কাটারি আতপ ৭৬ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল দাম ঠেকেছে ৮৬ টাকা।
এ ছাড়া পাইকারিতে আগের দরে প্রতি কেজি মিনিকেট সেদ্ধ চাল ৫৯ টাকা, মিনিকেট আতপ চাল ৬৯ টাকা, পাইজাম সেদ্ধ চাল ৫৮ টাকা, বেতি আতপ ৫৯ টাকা, মোটা সেদ্ধ চাল ৪৮ টাকা ও পাইজাম আতপ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) এই তিন জাতের চালে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৪ হাজার ১০০ টাকা, নাজিরশাইলে ৫০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৪০০ টাকা ও কাটারি আতপে ৫০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে চিকন ধানগুলো ব্যাপকহারে মজুত করা হয়েছে। সেখানে একটা শক্ত সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা ধানের দাম বাড়াচ্ছে। তাই আমাদের এখানে দামে প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা চাল থাকায় এই তিন জাতের চাল ছাড়া অন্য চালগুলোর দাম বাড়েনি। অন্যথায় সেগুলোর দামও বাড়ত।’
এদিকে পাইকারিতে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। বর্তমানে খুচরায় প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৯২ টাকা, জিরাশাইল ৮৮ টাকা ও কাটারি আতপ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি স্বর্ণা সেদ্ধ ৭০ টাকা, পাইজাম আতপ ৭৫ টাকা, মিনিকেট আতপ ৭৫ টাকা ও মিনিকেট সেদ্ধ ৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি করার পরও চালের দাম কেন বাড়ল? তাহলে আর আমদানি করে কী লাভ হলো? মূল কথা হলো, সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। তারা নানা অজুহাতে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আমরা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর হবে না।’
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ভারত, মায়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৫ টন চাল আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ‘এমভি টানিস ড্রিম’ নামক জাহাজে ভারত থেকে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সেদ্ধ চাল এসেছে। অন্যদিকে ভারতের কাকিনাড়া বন্দর থেকে গত ১১ জানুয়ারি রাতে ‘এমভি এসডিআর ইউভার্স’ নামে জাহাজে ২৬ হাজার ৯৩৫ টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। তা ছাড়া গত ২৯ জানুয়ারি ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি হয় ৩৭ হাজার টন চাল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পানামা পতাকাবাহী ‘এইচটি ইউনিট’ নামক জাহাজে আসে ১১ হাজার টন চাল। গত ৮ মার্চ ভারত থেকে ‘এমভি পিএইচইউ টিএইচএএনএইচ ৩৬’ নামক জাহাজে ৬ হাজার টন এবং গত ১৩ মার্চ ভারত ও মায়ানমার থেকে আসে ৩৮ হাজার ৮০০ টন চাল আসে। পাশাপাশি মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েও চাল আমদানি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আসছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত চালও রয়েছে। কাজেই এখন তো চালের দাম বাড়ার কথা নয়। একটি অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’