
রমজানে চালের বিক্রি কমে গেছে। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে। তার পরও সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৮৬ টাকায় উঠেছে। আর সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেটের দাম ৬ টাকা বেড়ে ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। বোরো ধান না উঠলে চালের দাম কমবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে ১৬টি রোজা চলে গেলেও কমেনি খেজুর, বেগুন, শসা, লেবুর দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে খোলাটা পাওয়া যায় না। সোনালি মুরগির দাম কমে কেজি ২৬০ টাকায় নেমেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা হাজি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মাঈনুদ্দিন মানিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে, ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। মঞ্জুর, এরফান, ডায়মন্ড ও সাগরের দাম বেশি। ৮৬ টাকার কমে মিলছে না। তবে একটু কম দামে রহমান, আহমেদের মিনিকেট ৭৩ থেকে ৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আটাশ চালের তুলনায় একটু ভালো। পাশের পাইকারি চাল বিক্রেতা জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আমির হোসেনও একই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে সাগর, মঞ্জুর, ডায়মন্ড সবাই দাম বাড়িয়েছে। তাদের চাল ৮৪ টাকা কেজি। সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের দামও বাড়তি, ৮২ টাকা কেজি। মিলে বাড়ানো হচ্ছে দাম। আপনারা লিখে কী করবেন। তারা বলেন, ঈদের পর নতুন বোরো ধান না উঠলে কমবে না দাম। প্রচুর চাল আমদানি হলেও কাজে লাগছে না।’
পাইকারির প্রভাবে খুচরা পর্যায়েও বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। একই বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা, আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়ালসহ অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, ‘রমজানে আগের চেয়ে চাল বিক্রি কমে গেছে। তার পরও মিল থেকে বাড়ছে দাম। আমাদেরও বাড়তি দামে মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে এটা কম ছিল। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সৈকত রাইস স্টোরের মো. সৈকত আলীসহ টাউন হল বাজার, হাতিরপুল বাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, ‘ধান শেষ। এ জন্য বাড়ছে চালের দাম। মঞ্জুর, এরফান, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা এবং সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট চাল ৯৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মোজ্জামেল চালের দাম সবচেয়ে বেশি কেন জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে ব্যবস্থাপক মো. আলী আশরাফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্য কোম্পানির চেয়ে আমাদের চাল অবশ্যই গুণে-মানে ভালো। এ জন্য দাম বেশি। যতই দিন যাচ্ছে, ধানের দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে ৪ হাজার ২০০ টাকায় চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে। সেটা আজ (সোমবার) ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কারণ ধানই কেনা হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা মণ। বোরো না উঠলে কমবে না দাম।’
এখনো সেঞ্চুরির ওপর বেগুন শসা লেবু
রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। গতকাল ১৬তম রমজানেও এসব পণ্যের দাম কমেনি। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৮০, লেবুর হালি ৪০ থেকে ৭০, বড় লেবু ৮০ থেকে ১০০ টাকা। হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ তবে কারওয়ান বাজারে এসব সবজি কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কমেছে সোনালি মুরগির দাম
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, শুরুতে বেশি থাকলেও রমজানে হোটেল বন্ধ থাকায় সোনালি মুরগির চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য দাম কমছে। ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ২৬০, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজনও ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় নেমেছে।