ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

পাইকারিতে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে, প্রভাব নেই খুচরায়

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৯ এএম
পাইকারিতে ভোজ্যতেলের  দাম কমেছে, প্রভাব নেই খুচরায়
চট্টগ্রামে নির্ধারিত দরে মিলছে না খোলা সয়াবিন। ছবিটি চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায় একটি খুচরা দোকান থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও দুই সপ্তাহের ব্যবধান খোলা সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি দাম কমেছে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। পর্যাপ্ত আমদানি, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কঠোর উদ্যোগ এবং দফায় দফায় অভিযানের পরও বাড়তি অর্থ আদায়ের স্বভাব বদলাতে পারেননি খুচরা ব্যবসায়ীরা।

নগরীর বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকা ৩৭ পয়সায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫১ টাকা ৯২ পয়সা। একই সময়ে পাম অয়েলের দাম ৩ টাকা ৩৮ পয়সা কমে ১৩৬ টাকা ৪৯ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মিলমালিকরা ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জেও পণ্যটির সরবরাহ আগের তুলনায় ভালো। তাই দামও নিম্নমুখী।’

এদিকে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বাড়িয়েছে। মেঘনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ট্রেডিং) নাছির উদ্দিন বলেন, ‘যথাসময়ে তেল খালাস করে পরিশোধন করা হচ্ছে। অন্য সময়ের তুলনায় এবার ভোজ্যতেল আমদানিও বেশি হয়েছে। বর্তমানে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। সরবরাহ অনেক বেশি। আমরা যথাসময়ে তেল বাজারজাত করছি।’

এদিকে পাইকারিতে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ ছাড়াও নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, নিউ মার্কেট, নাসিরাবাদ, দুই নম্বর গেট, চকবাজার ও কাজীর দেউড়ি এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানে এক, দুই ও পাঁচ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। তবে দুই ও পাঁচ লিটার ওজনের তেলের সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। প্রতি লিটার তেল ১৭৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও এলাকাভেদে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার তেল মিলছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। অপরদিকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। যদিও গত ৪ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।

এর আগে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সভায় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, রাষ্ট্রের শক্তি বেশি না ব্যবসায়ীদের শক্তি, তা তিনি দেখতে চান। এরপর চসিক মেয়র ও জেলা প্রশাসক নিজেরাই কিছুদিন বাজার তদারকি করেন। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের শক্তিতেই অটল আছেন। দফায় দফায় অভিযানেও মিলছে না সফলতা।

নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন বলেন, দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি। দোকানি ৩০ টাকা বেশি নিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে উল্টো বলেন, ‘৩৮০ টাকায় কিনলে কিনেন, না কিনলে যান।’

বাজার ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বাড়তি দাম নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। নগরের হালিশহর এলাকার আল মদিনা স্টোরের মালিক মো. নাছির দাবি করেন, ‘আগে খোলা সয়াবিন ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম তো কমে এসেছে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অভিযানে গেলেই অল্প কিছু অর্থ জরিমানা এবং সতর্ক করা হয়। এতে করে তো কখনো সফলতা আসবে না, অসাধু ব্যবসায়ীদের টনক নড়বে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ এএম
কথায় কথায় সড়ক অবরোধে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত
চাকরিচ্যুত ৪০ শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবিতে গত ৫ এপ্রিল ‘এক্সেল শিওর’ গার্মেন্টের শ্রমিকরা সিইপিজেট গেটের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: খবরের কাগজ

পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়ককে চট্টগ্রামের লাইফলাইন বলা হয়। চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), বিমানবন্দর, পোর্ট, একাধিক কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কর্মকাণ্ড এই সড়ককে ঘিরে হয়ে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত আগ্রাবাদের বাদামতলীতে এই পথ ব্যবহার করে যেতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতের শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য এই পথকে বেছে নিয়েছেন। বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবির মতো ইস্যুতে শ্রমিকরা এই সড়কে বসে পড়ছেন। এতে রপ্তানিপণ্য সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড থমকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ব্যক্তিগত-দাপ্তরিক কাজে কোথাও যেতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা চাইলে সিইপিজেডের ভেতরে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা-বিক্ষোভ করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে মূল সড়কে উঠে আসছেন। এতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২২ মার্চ বেলা ১১টার দিকে সিইপিজেডের জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে তারা এ সময় সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরদিন অন্য আরেকটি কারখানার শ্রমিকরা একই কায়দায় নিজেদের দাবি নিয়ে ইপিজেড গেটের সামনে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া এক দিন বিরতি দিয়ে ২৪ মার্চ সকাল থেকে জেএমএস গার্মেন্টের শ্রমিকরা আবারও রাস্তায় নামেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা জটিলতার কারণে জেএমএস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আগেই লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফ চলাকালে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে বিধি অনুযায়ী ২০ মার্চের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বেতন পরিশোধ না করায় ২২ মার্চ শ্রমিকরা সড়কে আন্দোলনে নামেন। এতে পতেঙ্গা-কালুরঘাট সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৫ এপ্রিল সিইপিজেডের ‘এক্সেল শিওর’ নামে একটি কারখানার ৪০ শ্রমিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকরা সকাল থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা ইপিজেড মোড়ে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পরদিন ৬ এপ্রিল সকালে জে-ডব্লিউ অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা একই জায়গায় আবারও সড়ক অবরোধ করেন। যদিও শিল্প পুলিশ, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেন। 

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘সিইপিজেডে সড়ক অবরোধের কারণে কনটেইনার জাহাজে তুলতে পারিনি। এটাকে আমাদের ভাষায় সার্টআউট বলা হয়। যত বারই সড়ক অবরোধ হয়েছে, তত বারই সার্টআউট হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আর বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চান না।’

ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে কালুরঘাট-পতেঙ্গা সড়কের দুদিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আগ্রাবাদ থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি পতেঙ্গার দিকে যেতে পারে না। অন্যদিকে পতেঙ্গা থেকে আসা যানবাহনগুলো স্টিলমিল এলাকায় আটকা পড়ে। এতে এই পথে চলাচলকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। আমদানি-রপ্তানির কনটেইনারবাহী গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। পণ্য চালানের গাড়ি সিইপিজেডে ঢুকতে বা বের হতে পারে না। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কিছু হলেই শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। কোনো দাবি থাকলে তারা ইপিজেড পরিচালককে জানাতে পারেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারেন। এভাবে সড়কে নেমে রাস্তা বন্ধের মাধ্যমে অন্য নাগরিকের জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মোটেই কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে সিইপিজেডের শ্রমিকদের কখনো সড়ক অবরোধ করতে দেখিনি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের তুলনায় চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার পরিবেশ অনেক শান্ত। কিন্তু কোনো পক্ষ এটিকে গরম করতে চাইছে। মনে হচ্ছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ শ্রমিক অসন্তোষ।’ 

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে শ্রমিকদের অন্য কেউ ব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। ইপিজেড শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কোনো মালিক পক্ষ আত্মসাৎ করতে পারে না। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কারখানা বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। কিন্তু এরপরও শ্রমিকরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সড়কে চলে যাচ্ছেন। এটা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়টি আগামীতে কঠোরভাবে দেখা হবে।’

সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
সীমিত সম্পদের বাস্তবতায় আসছে নতুন বাজেট
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নতুন অর্থবছরের বাজেট (২০২৫-২৬) হবে ব্যতিক্রমী। এবারের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকারের চেয়ে কম প্রাক্কলন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় ছোট বাজেট দিচ্ছে সরকার। সাধারণত নতুন বাজেটের আকার তার আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এবারই আকার তুলনামূলক ছোট করে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দিয়ে গেছেন। বাজেটটি এখন বাস্তবায়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। যেহেতু এবার সংসদ নেই, তাই অধ্যাদেশ জারি করে রেডিও-টিভির মাধ্যমে বাজেট দেবেন তিনি।

সূত্র জানায়, বাজেট ছোট করার প্রধানত কারণ তিনটি। প্রথমত, সম্পদের সীমাবদ্ধতা তথা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের ব্যাপক দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং তৃতীয়ত, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়া। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেটের পথে হাঁটছে।

সূত্র জানায়, সম্পদ কমিটির বৈঠকে গতকাল সচিবালয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠেকে বাজেটের আকার ছোট করার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সেই পরামর্শ অনুয়ায়ী বাজেট তৈরির নির্দেশ দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ভার্চুয়াল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। এর আগে জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই খরচের জায়গাটাও কম হবে। বাস্তবতার আলোকে নতুন বাজেট সাজানো হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই। বাজেট বড় হলেই যে ভালো হবে তা নয়। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিত করা। তা হলেই বাজেটের সুফল সবাই পাবেন।

সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনীতির অবস্থা যে ভালো নয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে জিডিপি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে ধরা হয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সংশোধিত প্রবৃদ্ধিও অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা আভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে হবে।

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ। তবে আশার আলো হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে। বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে।

বাষির্ক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির আকার এবার অনেক ছোট করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূলত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প পরিহার করা এবং মেগা প্রকল্প না নেওয়ায় নতুন এডিপির আকার ছোট হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআর থেকে বলা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা প্রাক্কলনের জন্য। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুবই নাজুক। চলতি অর্থবছরের আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বছরের বেশির ভাগ সময় পার হলেও রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি এনবিআর। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত।

সম্পদের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে কথা আইএমএফও জানে। সে জন্য সংস্থাটি আগামী বাজেট ছোট করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা নতুন বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকা নিচে রাখার প্রস্তাব করেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করেছে সরকার। ফলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটের মূল দুটি অংশ উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। সূত্র জানায়, এবার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁটের প্রায় পুরোটাই কমেছে উন্নয়ন অংশে। যার পরিমাণ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে।

নতুন বাজেটের আকার ছোট করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণসহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট করে তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না। অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আসন্ন অর্থবছরের জন্য ছোট বাজেটের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে অন্যতম নিম্ন, যা সরকারের আর্থিক সক্ষমতা সীমিত করে রাখে। তিনি বলেন, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে কিছু আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে বাজেটের আকার কমানো, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ এবং বাজেট ঘাটতি হ্রাস করা অন্যতম।

দ্বিতীয়ত, সরকার আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এটি অর্জনে সরকারকে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে।

আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিষয় বিনিময়, ভিসা সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৩ বছর পর ফের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। আলোচনার বিভিন্ন দিকনির্ধারণ করতে তিন দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বেলোচ। এরপর আগামী ২২ এপ্রিল তিন দিনের সফরে আসবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছর পর উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের দ্বার খুলছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সংলাপ হয়েছিল। এবার উভয় দেশ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সংলাপ হচ্ছে।

পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান খবরের কাগজকে জানান, ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফরকে বাণিজ্য, কূটনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে দুই দেশ। তার সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথ খোঁজা হবে।

ইকবাল হোসেন জানান, এই সফরের এক দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী একবছরে অন্তত ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি ৬২৭ মিলিয়ন (৬২ দশমিক ৭ কোটি) ডলার থেকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করা। আর বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। 

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা যৌথ কমিশন পুনর্বহাল করতেও প্রস্তাব দিতে পারে পাকিস্তান। এই কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এ ছাড়া সফরকালে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। এর ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব নতুন মাত্রা পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ৫৩ বছরের অমীমাংসিত বিষয় আছে। তবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা যদি ওই ইস্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। ওদেরও কোনো লাভ নেই। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্ধারের চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হিসেবেই দেখতে চাই।’

এদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমানযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি ফ্লাইট শুরুর ব্যাপারে একমত হয়েছে। পাকিস্তানের ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে একটি এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। শিগগিরই এই রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে বলে জানান হাইকমিশনার ইকবাল হোসেন খান। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-করাচি সরাসরি জাহাজ চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় পাকিস্তানের কোনো পণ্য বাংলাদেশে আনতে হলে তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আনতে হতো। গত ৫ আগস্টের পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল ফের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে করাচি থেকে দুটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। ফলে আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য হাসিনার প্রশাসনের ওপর দিল্লির তীব্র প্রভাবও ভূমিকা রাখে। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ কোন পন্থায় হবে, সেটাও ভারত থেকে ঠিক করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে চায় বাংলাদেশ। উভয় দেশই যেন ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশনে’ থাকে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে ঢাকা।

‘উই অল আর শেখ হাসিনাস মেন’ লিখেও সচিব পদে!

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৫ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম
‘উই অল আর শেখ হাসিনাস মেন’ লিখেও সচিব পদে!
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। ছবি: সংগৃহীত

তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে ‘WE ALL ARE SHEIKH HASINA’S MEN’  লেখাসংবলিত স্টিকার সংযুক্ত ছিল। ঠিক যেন সেই আল-জাজিরার খবরের শিরোনামের মতোই। এমন কোনো অনৈতিক সুবিধা নেই, যা তিনি গত সরকারের সময়ে নেননি। পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকও। তার পরও শক্ত খুঁটির জোরে তিনি বহাল তবিয়তে বসে আছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী এই সচিবের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন থেকে ফেসবুকে তার প্রোফাইল পিকচার সম্পর্কে জানা গেছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সেই প্রোফাইল পিকচার তিনি সরিয়ে ফেলেন। এখন তিনি ভোল পাল্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক সাজার চেষ্টা করছেন। আর এ কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী সচিব নাজমুল আহসান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনেও প্রভাবশালী।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত সরকারের সময়ে দলীয় পরিচয়ে সচিব পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন অঢেল অর্থবিত্ত ও সম্পত্তির মালিক। এমন অভিযোগ থাকার পরও আলোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সূত্রের দাবি, ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহযোগী ও সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একাধিকবার ব্যবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ নিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

অত্যন্ত করিৎকর্মা এই কর্মকর্তা গত সরকারের আমলে (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদোন্নতি ও নিয়োগ পেয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সংসদসদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ‘সচিব’ পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন প্রশাসনের ১৩তম ব্যাচের এই সরকারি কর্মকর্তা।

পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগ মতাদর্শের উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার সততা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

জানা গেছে, এই কর্মকর্তা এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে এবং বিদ্যুৎ বিভাগে উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে কাজ করেছেন। 

অভিযোগ আছে, নাজমুল আহসান বিদ্যুৎ বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় নসরুল হামিদ বিপু ও ড. আহমদ কায়কাউস (তৎকালীন সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ) কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারি কোষাগার থেকে ২ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছিলেন। তিনিও ওই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন।

এ ছাড়া পেট্রোবাংলায় পরিচালক (প্রশাসন) ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় (২০২১, ২০২২, ২০২৩ সাল) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত দুর্বল ব্যাংকগুলোতে অর্থসংকট দেখা দেয়। এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা ও তার অধীন ১৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সালমান এফ রহমানের আইএফআইসি ব্যাংকসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠিত দুর্বল ব্যাংকে জামানত রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থ জামানত রাখার বিনিময়ে বর্তমান পানি সম্পদ সচিব শতকরা শূন্য দশমিক ৫ ভাগ হারে কমিশন গ্রহণ করেন।

তা ছাড়া পেট্রোবাংলায় দায়িত্ব পালনকালে ভোলা ও সুন্দরবন গ্যাসফিল্ডের প্রাকৃতিক গ্যাস, পাইপলাইনের পরিবর্তে সড়ক ও নৌপথে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড নামে এক কোম্পানির সঙ্গে এই দুই গ্যাসফিল্ডের প্রাকৃতিক গ্যাস ঢাকায় সরবরাহের লক্ষ্যে একটি বিতর্কিত চুক্তিও করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান পানি সচিবের উদ্যোগে ওই চুক্তির ড্রাফট করা হয়েছিল। এখানেও নিজের জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন নিশ্চিত করেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারি মালিকানাধীন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) উচ্চমূল্যে পাথর উত্তোলনের এক বিতর্কিত চুক্তি নবায়ন করে নাজমুল আহসান (পরিচালক প্রশাসন ও চেয়ারম্যান (পেট্রোবাংলা) ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে উচ্চমূল্যে পাথর উত্তোলনের চুক্তি করায় বর্তমানে সরকারি কোম্পানি লাভের পরিবর্তে বিক্রয়শূন্য ও দেউলিয়া হয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে আছে।

পাশাপাশি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান থাকাকালে নতুন কূপ খনন ও পুরাতন গ্যাসকূপ সংস্কার না করে এলএনজি আমদানির মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট তৈরি হয়।

২০১৪ সালে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন দমনে বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন এই কর্মকর্তা। ডিসি হিসেবে ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পুরস্কার হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন এই কর্মকর্তা, এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তা ছাড়া ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও ডিসির নির্দেশে ফল ঘোষণায় গড়িমসি করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে বিএনপি সমর্থকদের ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের ফলে রাতে ফল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সাতক্ষীরার ডিসি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেকের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি যৌথবাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হত্যার ঘটনায় এই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান খবরের কাগজকে বলেন, এসব নিয়ে আলাপ করার কিছু নেই। কোনো অভিযোগ থাকলে আমার অথরিটি আছে, তারা জানে এই বিষয়ে।

বৈশাখে বেচাবিক্রি ছিল একেবারেই কম

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম
বৈশাখে বেচাবিক্রি ছিল একেবারেই কম
ছবি : খবরের কাগজ

‘কয়দিন আগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে কেবল দোকান খোলা হয়েছে। টুকটাক কাস্টমার আসছেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিক্রি হবে কি না, সেই শঙ্কায় বৈশাখী পোশাক ওঠানো হয়নি।’ এভাবেই মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের অঞ্জন’স আউটলেটের ম্যানেজার মানিক মিয়া পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বেচাকেনা সম্পর্কে তার অভিমত প্রকাশ করেন। এই চিত্র শুধু টোকিও স্কয়ার শপিংমলের নয়, রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটিসহ অধিকাংশ বাজারে শাড়ি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক, কসমেটিকসের দোকানে এই চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছিলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নেই। একশ্রেণির মানুষ এবারের ঈদে একেবারে কেনাকাটা করেননি। তাই ঈদে বেচাবিক্রি কম হয়েছে। এ অবস্থায় বৈশাখী পোশাক ওঠালে লোকসান হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ৩০০ পিস মাল ওঠালে ১০০ পিসও বিক্রি হবে না। তাই বৈশাখীর কোনো পণ্য ওঠানো হয়নি। 

বিগত বছরগুলোতে বৈশাখের আনন্দকে উপভোগ করতে রাজধানীতে ব্যাপক কেনাকাটা হয়েছে। বাচ্চাদের পোশাক, পুরুষদের পাঞ্জাবি, নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিসসহ সাজগোজ করার জন্য কসমেটিকসের দোকানেও কেনাকাটার হিড়িক পড়ে। কিন্তু এবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেশে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়ে। ঈদের ছুটির পর দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। তবে আজ বৈশাখকে বরণ করতে উৎসবে মেতে উঠতে কেনাকাটায় ফেরেননি ক্রেতারা। বিক্রেতাদেরও বৈশাখী পোশাক বিক্রি করতে দেখা যায়নি। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কোনো কোনো বিক্রেতা রঙিন বৈশাখী পোশাকে দোকান সাজালেও ক্রেতার সমাগম খুব একটা হয়নি।

বৈশাখের বেচাবিক্রি জানতে গত দুই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে যান এই প্রতিবেদক। এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের লামিয়া নামের শোরুমের বিক্রয়কর্মী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর কেবল দোকান খোলা হয়েছে। টুকটাক কাস্টমার আসছেন। কিন্তু কারখানা খোলা হয়নি। তাই বৈশাখী পোশাক দোকানে ওঠানো হয়নি। এই মার্কেটের বিক্রমপুর ফেব্রিকসের বিক্রয়কর্মী শহিদুল ইসলামও বলেন, ‘ঈদের বিক্রির পর কেবল দোকান খোলা হয়েছে। কিন্তু বৈশাখী থ্রি-পিস রাখা হয়নি। এ জন্য বিক্রিও নেই। এই মার্কেটের নিচতলায় খোকন কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘ঈদের পর দোকান খোলা হয়েছে। এক দিন পরই বৈশাখ শুরু। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে।’ একই তথ্য জানান পাশের দোকানদার আলম কসমেটিকসের মো. আলম। তিনি বলেন, ‘বাজারে বৈশাখের ছিটেফোঁটা নেই। ঈদের পর কাস্টমার নেই।’

তাজমহল রোডের বিভিন্ন শপিংমলেও দেখা গেছে কাস্টমারের খরা। ফড়িংয়ের বিক্রয়কর্মী মো. দিদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে সবার জন্য রুচিশীল পোশাক রয়েছে। কিন্তু বৈশাখী কালেকশন নেই।’ ধানমন্ডির সানরাইজ প্লাজাসহ অন্যান্য দোকানেও দেখা গেছে বৈশাখের কোনো বেচাবিক্রি নেই। 

এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটেও দেখা গেছে একই চিত্র। বৈশাখের বেচাবিক্রি নেই। এলিফ্যান্ট রোডে খাদি মিউজিয়ামের বিক্রয়কর্মী মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের কাছে ছোট-বড় হরেক রকমের পাঞ্জাবি রয়েছে। কিন্তু এবার ঈদে বেচাবিক্রি কম হওয়ায় বৈশাখের পাঞ্জাবি ওঠাইনি। লোকসান করে ব্যবসা করা যায় না। অল্প সময়ের ব্যবধানে সব বিক্রি হবে না।’ অন্য দোকানেও দেখা গেছে বৈশাখের পাঞ্জাবি নেই।

নিউ মার্কেটের মোখলেস গার্মেন্টের বিক্রয়কর্মী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘ঈদের পর বিক্রি সাধারণত কমই হয়। তবে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিক্রি বাড়েনি। বৈশাখের আইটেম রাখিনি। কারণ কিছুদিন আগেই ঈদ গেল। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের বেবী শাড়িজ স্টোরের সেলিম মিয়া বলেন, ঈদের পর সপ্তাহ হয়নি দোকান খুলেছি। সেগুলোই বিক্রি করছি। কাস্টমার আসছেন টুকটাক। কিন্তু বৈশাখের শাড়ি রাখিনি।’ এসআর ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী পুতুল মিয়াও বলেন, ‘বাচ্চাদের ভালো ভালো কালেকশন আছে। ঈদের পর বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু বাচ্চাদের বৈশাখী পোশাক নেই। কারণ দেখা যাবে ৩০০ পিস আনলে ১০০ পিস বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো থেকে যাবে। সেই ভয়ে ওঠাইনি বাচ্চাদের পোশাক।’

এদিকে হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজাতেও দেখা গেছে বৈশাখের কোনো বেচাবিক্রি নেই। এ ব্যাপারে বিশ্বরঙের বিক্রয়কর্মী জামিল হোসেন বলেন, ‘কয়দিন আগে ঈদ গেছে। তাই বৈশাখ এলেও কোনো মাল ওঠানো হয়নি। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস যা আছে আগের। সেগুলোই বিক্রি হচ্ছে।’ এই মার্কেটের মনেরেখ শাড়িজের বিক্রয়কর্মী মো. মামুনও বলেন, হরেক রকমের শাড়ি রয়েছে। কিন্তু বৈশাখী শাড়ি রাখা হয়নি। এই মার্কেটের সারা ফ্যাশনের বাপ্পি রহমানও বলেন, ‘রমজানেই বেচাবিক্রি কম হয়েছে। এ জন্য বৈশাখের মাল আনিনি। যা বিক্রি হচ্ছে আগেরগুলো।’ প্রত্যাশা কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী মো. রনিও বলেন, ঈদের পর বিক্রি টুকটাক হচ্ছে। তবে বৈশাখের কোনো বেচাবিক্রি হচ্ছে না।’ 

বসুন্ধরা শপিংমলেও দেখা গেছে এই চিত্র। ঈদের বেচাবিক্রি কম হওয়ায় নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানে কোনো বৈশাখী পোশাক ওঠানো হয়নি। 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি এবং শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক হারুন অর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমজনতার কাছে টাকা নেই। তাই রমজান মাসের ঈদে বেচাবিক্রি কম হয়েছে। এ ছাড়া কয়দিন আগে ঈদ হয়েছে। মাস শেষ না হলেও অনেকে অগ্রিম বেতন নিয়ে খরচ করেছেন। ফলে বৈশাখ এলেও উৎসবে কেনাকাটা করতে পারছেন না। এ ছাড়া যাদের কাছে টাকা ছিল তারা অনেকেই বাজারে আসেন না। অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে-আতঙ্কে আছেন। অনেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রাণের উৎসবে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেননি। এ জন্য খুচরা বিক্রেতারা দোকানে বৈশাখী পণ্য ওঠাতে পারেননি।’