
খুলনায় চরমপন্থি সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন-পাল্টাখুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। চরমপন্থিদের একের পর এক টার্গেট কিলিং স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ১৯৯৪ সালে চরমপন্থি নেতা টাইগার খোকন দিয়ে শুরু হয় এ কিলিং মিশন।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে স্থানীয় ক্যাডার বড় শাহীন এ টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের দিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নামে একটি চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তোলেন খুলনা নগরীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা গাজী কামরুল ইসলাম। ওই সময় দৌলতপুরে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আকতারুজ্জামান খোকন ওরফে টাইগার খোকন পাল্টা আরেকটি চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালে দুই সংগঠনের দ্বন্দ্বে খুন হন টাইগার খোকন। এর পর থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে দ্বিধাবিভক্তি, সন্দেহ ও খুন-পাল্টাখুনের ঘটনা ঘটতে থাকে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হন চরমপন্থি গাজী কামরুলের অনুসারী শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদ। ১৯৯৬ সালে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে শীর্ষ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হলে অন্যরা আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও দুটি গ্রুপের মধ্যে হত্যা-পাল্টাহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে।
এদিকে ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর এলাকায় আবারও চরমপন্থিরা সংগঠিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে মাথা চাড়া দেয় তাদের পুরোনো বিভেদ। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর এলাকায় ফিরে আসেন শীর্ষ চরমপন্থি টাইগার খোকনের সহযোগী শাহীনুল হক শাহীন ওরফে বড় শাহীন। অন্যদিকে কারামুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসেন দুই চরমপন্থি নেতা রিফুজি মঈন ও আসলাম ওরফে ট্যারা আসলাম। তাদের সহযোগীরা এলাকায় ফিরে রীতিমতো ত্ৰাস সৃষ্টি করে।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে চরমপন্থি ক্যাডার বড় শাহীনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি চরমপন্থি নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহিদ হত্যা মামলার ২০ আসামির একজন। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু। তিনিও হুজি শহিদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন মুজগুন্নী এলাকায় জুলকার নাঈম মুন্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনিও একই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর তথ্যমতে, শুরুর দিকে গাজী কামরুল ইসলামের অনুসারী ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু ও হুজি শহিদ। দৌলতপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টাইগার খোকনের অন্যতম ক্যাডার ছিলেন বড় শাহীন। ১৯৯৬ সালে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে গাজী কামরুল আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় ১৭ বছর কারাভোগের পর ২০১৩ সালে তিনি জামিনে মুক্ত হন। গাজী কামরুলের অনুসারী হুজি শহিদ হত্যা মামলার প্রতিশোধ নিতে ভাড়াটে খুনিরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। হুজি শহিদ হত্যার ২০ আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত জুলকার নাঈম মুন্না, গোলাম রব্বানী টিপু ও বড় শাহীন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন। এর মধ্যে গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেন যে তারা হুজি শহীদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাল্টা খুন করেছেন। তবে গত শনিবার রাতে শাহীন হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে খুলনা থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, শাহীনের মাথায় গুলির দুটি চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
বড় শাহীন হত্যায় গ্রেপ্তার নেই
খুলনায় চরমপন্থি নেতা শেখ শাহীনুল হক শাহীন ওরফে বড় শাহীনকে হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। নিহতের মা রাহিমা বেগম খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে জানা গেছে। তবে ছেলের মৃত্যুর সংবাদে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় মামলার এজাহার দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
খুলনা সদর থানা ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, কারা এবং কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, রাতের বেলায় পরিচিত কেউ তাকে ওই স্থানে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে। বড় শাহীন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হন বলে মনে করা হচ্ছে। এ হত্যার ঘটনাটি প্রতিশোধমূলক কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।