
নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের পোস্টারে চট্টগ্রাম নগর ছেয়ে গেছে। কোথাও আবার তাদের পক্ষে দেয়াল লেখা (চিকা) হয়েছে। রাতের আধারে কে বা কারা এসব করছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে গত ৭ মার্চ সংগঠনটির ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো নগরে কয়েক হাজার পোস্টার সাঁটানো হয়। অভিযোগ আছে, সংগঠনটির পক্ষ থেকে নগরীর একাধিক গণমাধ্যম অফিসে প্রেস রিলিজও পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পিছিয়ে নেই আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা সুযোগ বুঝে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঝটিকা মিছিল করছে। লিফলেট বিতরণ করছে। দেয়ালে চিকা মারছে। এত কিছুর পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশনে ছাত্রলীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতার গ্রেপ্তারের খবর নেই। এমনকি হিজবুত তাহরীরের কোনো নেতাকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, অভিযান চলমান রয়েছে। নজরে এলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
দেখা গেছে, নগরের দুই নম্বর গেট কবরস্থান, ক্যাফে আলী রেস্তোরাঁসহ আশপাশ এলাকার দেয়ালগুলোতে হিজবুত তাহরীরের একই ধরনের অসংখ্য পোস্টার । এ ছাড়া নিমতলা, আদালত পাড়া, নিউ মার্কেট, রেলস্টেশন, টেক্সটাইল মোড়, টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় একই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে পোস্টারগুলো সম্প্রতি লাগানো হয়েছে।
কথা হয় দুই নম্বর গেট এলাকার কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, তিন-চার দিন আগেও তারা সেখানে পোস্টারগুলো দেখেননি। একদিন সকালে এসে দোকান প্রস্তুত করার সময় বড় আকারের অনেকগুলো পোস্টার একসঙ্গে দেখতে পান। তাদের ধারণা, রাতের আধারে এগুলো সাঁটানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ মার্চ ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে ঘিরে চট্টগ্রামে কয়েক হাজার পোস্টার সাঁটায় হিজবুত তাহরীর। অবস্থা এমন যে পুরো শহরের দেওয়াগুলো পোস্টারে ছেয়ে যায়। এর আগে নগরের আদালত পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় ’৭২-এর সংবিধান এবং তার ভিত্তি’ শিরোনামে পোস্টার সাঁটানো হয়। এসব পোস্টারে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকলেও একটি ই-মেইল আইডি দেওয়া হয়।
গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রামের আসকার দিঘীর পাড়ে থাকা একাধিক গণমাধ্যম অফিসে এসে দুজন তরুণ হিজবুত তাহরীরের প্রেস রিলিজ রেখে যায়। একটি গণমাধ্যমের অফিস সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তারা কাগজটি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।’
এদিকে নগরের ১৫টি থানা এলাকার দেয়ালে ছাত্রলীগের চিকা দেখা গেছে। এ ছাড়া ১৭ মার্চ মধ্যরাতে কর্ণফুলি থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের তালতলা থেকে টাওয়ারের গোড়া পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে একাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৩০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় নগরের জিইসি মোড়ে ২০-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। সংগঠনটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ওই মিছিলের ভিডিও পোস্ট করা হয়। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি নগরের পাঠানটুলী নাজিরপুল মিডপয়েন্ট হাসপাতাল সড়কে তারা মিছিল করে। এর আগে নগরের জামালখানে দুই দফায় তাদের মিছিল করতে দেখা যায়। এভাবে ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল আর হিজবুত তাহরীর ব্যানার, পোস্টার সাঁটিয়ে ও দেয়াল লিখে কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, ‘যখন আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাম, কোনো পোস্টার বা ব্যানার হাতে নিলেই পুলিশ হাজির হতো। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হতো। আর এখন নিষিদ্ধ সংগঠন দুটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটা পুলিশের গাফিলতি ছাড়া আর কিছু না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য জুবায়েরুল আলম মানিক বলেন, ‘ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। তারা একইভাবে চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি দাবি থাকবে, তারা যেন আরও সক্রিয় হয়। পুলিশের ভূমিকায় আমরা সন্তুষ্ট নই।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান আছে। এরপরও বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জোরালোভাবে কাজ করব।’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলে আমরা মামলা নেব। এ ধরনের কাউকে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করব। কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা আমাদের নেই। বিষয়টি দেখব, ব্যবস্থা নেব।’