ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশই শীর্ষ ১০ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪০ এএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৬ পিএম
খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশই শীর্ষ ১০ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কয়েকটি ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বড় খেলাপির কাছেই আটকে রয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি মাত্র কয়েকটি ব্যাংকেই রয়েছে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ। ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৭০ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে। খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে মোট খেলাপির ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে’ এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনটি সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্যও প্রকাশ করেছে। সেখানে খেলাপি ঋণের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। এটা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে কয়েকটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ে। এটা যদি মুনাফা থেকে মেটানো না যায়, তাহলে মূলধনের ওপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ মূলধন কমে যায়। তখন ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়। খেলাপি ঋণের নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে, যা ৩০-৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৫১ শতাংশ। বাকি ৫৬টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের কম বা ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে খেলাপি ঋণের শীর্ষে ১০ ব্যাংকে রয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৭০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাকি ৫১টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৮৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ২৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, ঝুঁকি কমাতে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ তাদের মোট ঋণের ৫ শতাংশের কম থাকতে হবে। এর বেশি থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত করা হয়। এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানদণ্ডে খেলাপি ঋণের দিক থেকে ৪১ ব্যাংকই ঝুঁকিতে, বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৭টি ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮২ শতাংশই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম।

এদিকে সম্পদের গুণগত মান কমার কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে এ সম্পদ বাড়ায় এর বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (এআরএআর) বা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে কমপক্ষে ১৬টি ব্যাংক। যদিও জুন প্রান্তিক শেষে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১১টি। এতে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে এআরএআর ৭ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে অন্তত ১০ শতাংশ এআরএআর রাখতে হয়। 

এআরএআর একটি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা পরিমাপ করে, যেখানে মূলধনকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে, ব্যাংক সম্ভাব্য ক্ষতি সামাল দিতে এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক এআরএআর ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমেছে, যা জুন প্রান্তিক শেষে ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর বিপরীতে প্রভিশন বেশি রাখতে হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে এসব অ্যাসেট ব্যাংক খাতের পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেটি আদতে মূলধনকে কমিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের পাশাপাশি সম্পদও গুটিকয়েক ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর শেষে মোট সম্পদের ৩১ দশমিক ৩৯ শতাংশ শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে রয়েছে। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৪৬ দশমিক ১০ শতাংশ সম্পদ। মূলত এই কয়েকটি ব্যাংকেই গ্রাহকের আস্থা বেশি। ফলে এসব ব্যাংকে সম্পদের পরিমাণও বাড়ছে। 

আগে বছরে একবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এটি তিন মাস অন্তর প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আর্থিক খাতের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা ও এগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

ঢাকা কাস্টম হাউস ভল্টের সুরক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম
ভল্টের সুরক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ
প্রতীকী ছবি

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু জব্দের পর হিসাব রাখা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি চলছে এখনো কাগজে-কলমে। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে যে ধরনের ভল্টে জব্দ করা স্বর্ণ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যাপ্ত ও অত্যাধুনিক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দেড় বছর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউসের গুদামের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি হওয়ার পর প্রশ্নবিদ্ধ হয় ভল্টে স্বর্ণ সংরক্ষণের পুরো ব্যবস্থাপনা। এমন ঘটনার পরও ঢাকা কাস্টম হাউস থেকে এখনো নেওয়া হয়নি যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রায়ই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রী ও চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণ কাস্টম হাউসের ভল্টে হেফাজতে রাখা হয়। মাস শেষে এসব স্বর্ণ নিয়ম অনুযায়ী চলে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে। কিন্তু ভল্টের নিরাপত্তায় নেই কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ফলে চুরি হলেও তা ঠেকানো কঠিন । অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাঝেও বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া স্বর্ণের হিসেব এখনো রাখা হয় কাগজে-কলমে। এতে করে সংঘবদ্ধভাবে চাইলে জব্দ স্বর্ণের হিসেবও ‘নয়ছয়’ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার সুমন দাস খবরের কাগজকে বলেন, দেড় বছর আগে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার পর থেকে ভল্টের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি লকারের সামনে একজন গার্ড দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া লকারে অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো হয়েছে । কেউ লকারে হাত দিলে সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এখন ৫ কেজির বেশি স্বর্ণ ভল্টে রাখা হয় না। ৫ কেজির বেশি স্বর্ণ জব্দ করা হলেই তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভল্ট এখন খালি পড়ে থাকে। ফলে চুরি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।

ভল্টে চুরি ঠেকাতে কোনো ডিজিটাল যন্ত্র রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কিছু নেই। প্রতিদিন জব্দ করা স্বর্ণের হিসাবে রাখা হয়। মাস শেষে তা নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে চলে যায়।

ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও দুবাইভিত্তিক একটি চক্র গড়ে উঠেছে। বিমানের যাত্রীরা স্বর্ণ আনেন। যাত্রীদের আনা স্বর্ণের মধ্যে পরিমাণ বেশি থাকা ও শুল্ক পরিশোধ না করার কারণে প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি স্বর্ণ জব্দ করে কাস্টম হাউসের ভল্টে রাখা হয়। এই জব্দ করা স্বর্ণ জমা রাখার হিসাব রাখা হয় কাগজে-কলমে (ম্যানুয়ালি)। ফলে নয়ছয়ের সুযোগ থেকে যায়। স্বর্ণের পরিমাণ কম-বেশি লেখার সুযোগ থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল-আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (ডিএম) সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বর্ণ চুরি ঠেকানো সম্ভব নয়। দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণের চোরাচালান ধরতে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে স্বর্ণ আসল-নকল, পরিমাপ, কত ক্যারেট- এসব শনাক্ত করা হয়। তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে ডিএম সফটওয়্যার চালু রয়েছে। তবে ভারতের কাছ থেকে নেওয়া এই সফটওয়্যারে বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে। এই সফটওয়্যারের আপডেট ভার্সন চালু করতে হবে। এ জন্য কাজ চলছে।

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাস্টম হাউস যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বর্ণ জমা না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু করার থাকে না। আমরা কখনো বলব না যে, কখন কোথায় কত স্বর্ণ ধরা পড়েছে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। স্বর্ণ জব্দের পর তারা তা নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কাছে নিয়ে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। জব্দ করা স্বর্ণ নিয়ে আসার পর হেফাজতের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভল্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। ভল্টে টাকা, স্বর্ণ, দলিল ও জরুরি কাগজপত্র যাই থাকুক, ব্যাংকে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। প্রত্যেকটা জিনিসের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বিমাবন্দরের কাস্টম হাউসের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার প্রেক্ষাপটে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয় তাদের নিজেদেরই বোঝা উচিত। আমার বাসায় চুরি হওয়ার পর অবশ্যই আমি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। কাউকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। তারা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করবে। তাদের প্রয়োজনে তারা পদক্ষেপ নেবে।’

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উমর ফারুক এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, এত বড় একটা চুরির ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও কোনো জোরালো নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ধরে নিতে হবে কোনো অশুভ চক্র এটির সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করেছে।

ভল্টের নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার করার ওপর জোর দেন অধ্যাপক ড. উমর ফারুক। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার ছাড়া ভল্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। এ ছাড়া চুরি ঠেকাতে সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি।

উন্নত দেশের ভল্টের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত দেশে ভল্টের নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। চুরি হলে এসব ডিভাইস সংকেতের মাধ্যমে দায়িত্বরতদের অবগত করে। ফলে সহজে চুরি ঠেকানো যায়। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখলে চুরি ঠেকানো সহজ হবে।

পুষ্টি নিয়ে সংস্কার কমিশনে ১০ প্রস্তাব

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৫ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
পুষ্টি নিয়ে সংস্কার কমিশনে ১০ প্রস্তাব
ছবি: সংগৃহীত

দেশে লাখ লাখ মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগছেন। উল্লেখযোগ্য়সংখ্যক শিশু খর্বকায় এবং কৃশকায়। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশ খর্বকায়। এদের বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম। একই বয়সের ১১ শতাংশ শিশু কৃশকায় অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম। আবার শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকের অতিরিক্ত ওজন। যার কারণে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরনের রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে এসব ঘটলেও সব ক্ষেত্রে পুষ্টির বিষয়টি অবহেলিত।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, পুষ্টি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সঠিক ধারণা খুবই কম, বেশির ভাগ মানুষই জানেন না কী খাবেন, কী খাবেন না কিংবা ওজন-উচ্চতা অনুযায়ী আমাদের দৈনিক কত ক্যালোরি খাবার খাওয়া উচিত। খাদ্য ও বিভিন্ন রোগের মধ্যে জটিল সম্পর্কগুলো সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা তো আরও পরের বিষয়। এই বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিলে রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু স্বাস্থ্য সংস্কারে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেগুলোয় পুষ্টির বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে পুষ্টি গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে পুষ্টিবিদদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গত ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে শহিদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী পুষ্টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের সমন্বয়ক ডা. মো. ফজলে রাব্বি খান ‘বলেন, ওই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে মোট ১০টি বিষয় উঠে আসে। সেগুলো প্রস্তাব আকারে সংস্কার কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রস্তাবটি হচ্ছে- সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিতে মূল স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে পুষ্টিব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করা; প্রয়োজনে এই বিষয়ের অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করে একজন পরিচালক নিয়োগ করে দায়িত্ব দেওয়া।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে- সবাইকে স্বাস্থ্যকর খাবার, সঠিক ক্যালোরি পরিমাপ, জাঙ্ক ফুডের প্রভাব এবং খাদ্য ও রোগের মধ্যে জটিল সম্পর্কে সম্য়ক ধারণা প্রদানে সব পক্ষের সমন্বয়ে একটা দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকরী উদ্য়োগ নেওয়া। এ ধরনের পুষ্টি কর্মসূচিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা / সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা যেতে পারে।

তৃতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে, পুষ্টির সঙ্গে জড়িত বর্তমান ও ভবিষ্য়ৎ উদীয়মান পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য-পুষ্টি শিক্ষাবিদদের জন্য আধুনিক পুষ্টির হালনাগাদ ও সমন্বিত জ্ঞান, পুষ্টি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং স্থানীয় খাদ্য-পুষ্টি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের পুষ্টি খাতকে আরও প্রাণবন্ত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের স্নাতক পর্যায়ে পাঠ্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। পাঠ্যক্রমে পুষ্টির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অন্য সাতটি প্রস্তাব হচ্ছে- ১.পুষ্টিবিদদের পেশাদার মান বৃদ্ধি ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং নৈতিক অনুশীলনের ব্যবস্থা করে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের (জাতীয় লাইসেন্সিং এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা) মাধ্যমে নিবন্ধনের/ স্বীকৃতির দ্রুত ব্যবস্থা করা। নিশ্চিত করতে হবে, শুধু যোগ্য/স্বীকৃত ব্যক্তিরাই যেন পুষ্টি পরিষেবা প্রদান করেন এবং সব পরিষেবার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

২. পুষ্টিবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ ও পুষ্টি শিক্ষাবিদদের জন্য পেশাদারত্ব বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি কাঠামোগত কর্মজীবনের পথ বা ধাপ দৃশ্যমান করা।

৩.স্বাস্থ্যকর খাবার ও জাঙ্ক ফুড সংস্কৃতির বিস্তার রোধে শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং খাদ্য় বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। এ জন্য স্কুল পাঠ্যক্রমে বয়স অনুযায়ী পুষ্টিবিষয়ক লেখা/প্রবন্ধ/গল্প অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিশুকে দৈনিক একবার হলেও সঠিক পুষ্টিমানের আদর্শ খাদ্য সরবরাহ করা ও সুপরিকল্পিত উপায়ে জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপনের ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণ করা।

৪.প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, জেলা হাসপাতালে এবং সম্ভব হলে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুষ্টিবিদ/স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদদের পদ সৃষ্টির জন্য সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কম ওজনের/অতি ওজনের/ স্থূল ব্যক্তিদের এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন সাপেক্ষে পুষ্টিবিদের কাছে রেফার করার জন্য চিকিৎসকদের উসাহিত করা।

৫.দেশের মানুষের পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে একটি নিজস্ব ও গ্রহণযোগ্য তথ্যভান্ডার তৈরি করা, যাতে মহামারি সংক্রান্ত তথ্য অন্বেষণ করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক নকশার ওপর ভিত্তি করে যথাযথ গবেষণা করা যায় এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল দ্বারা কৌশলগত নীতি গ্রহণ করা যায়।

৬.সাধারণ খাদ্য আউটলেটে প্রতিটি খাদ্য আইটেমের ক্যালোরি ও মান এবং অন্যান্য পুষ্টির তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। খাদ্য বিপণন প্রবিধানের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময়, স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলোকে প্রচার করা, পুষ্টি-সংবেদনশীল সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রয়োগ করা এবং স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিক্ষা জুড়ে আন্তক্ষেত্রীয় সমন্বয় জোরদার করা।

৭.সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তৈরি উপরোক্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে গৃহীত নানা কর্মসূচি নিরীক্ষণ এবং পরিমাপ করার জন্য একটি পুষ্টি তত্ত্বাবধান সংস্থা স্থাপন করে কার্যকর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বর্তমান সময়ে স্বল্প ওজন যেমন সমস্যা, তেমনি স্থূলতা কিংবা মুটিয়ে যাওয়াও সমস্যা। অন্যদিকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট কমে যাওয়া- এটা এখন আরও বড় সমস্যা। যথাযথ পুষ্টিজ্ঞান না থাকাই এর কারণ। তিনি পুষ্টিবিদদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির কথাও বলেন। প্রয়োজনে এর জন্য আলাদা কাউন্সিল তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

ব্যাংকঋণ নিচ্ছে সরকার আবার বাড়ছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৫ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
আবার বাড়ছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকারের ব্যাংকঋণের নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় আবার বাড়ছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার। অর্থাৎ সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোর জোগান কমে যাচ্ছে। এতে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে আবার ১২ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের সুদের হার বেড়েছে ১০১ থেকে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের ব্যাংকঋণ বাড়ছে, অন্যদিকে রাজস্ব ঘাটতিও কমানো যাচ্ছে না। ফলে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও বাড়ছে। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ায় পর্যায়ক্রমে ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগও কমবে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও খুব দুর্বল। যা বর্তমানে তলানিতে নেমে গেছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগে আরও স্থবিরতা দেখা দেবে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে যে হারে ঋণ নিচ্ছে, তাতে সুদহার না বাড়িয়ে উপায় নেই। সবশেষ ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার হয়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যেখানে ব্যক্তি খাতে ঋণ বিতরণ করে গড়ে ১২ বা ১৩ শতাংশ সুদহার পায় ব্যাংকগুলো। তাহলে ব্যাংকগুলো কেন ঝুঁকি নিয়ে ব্যক্তি খাতে ঋণ দেবে? তিনি বলেন, সরকার রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ঘাটতি কমাতে পারছে না। বিদেশি সহায়তাও কাঙ্ক্ষিত হারে আসছে না। এ অবস্থায় সরকারের সামনে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বিশেষ করে ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে বিকল্প কোনো উপায় নেই। তবে ভালো দিক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি টাকা ছাপিয়ে তা আর বাজারে দিচ্ছে না। এটা করলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমে যাবে। 

সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোতে অর্থের জোগান বেশি থাকায় ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ট্রেজারি বিলের সুদহার অনেকটাই কমে ১০ শতাংশে নেমেছিল। তবে পরের মাস এপ্রিলে তা আবার বেড়ে গেছে। সবশেষ গত সোমবারের নিলামে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মার্চে যা ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে সুদহার কমেছে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট। এদিন ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক মাস আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সে হিসাবে সুদহার কমেছে ১০১ বেসিস পয়েন্ট। এপ্রিলে এসে ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সুদহার কমেছে ১১৫ বেসিস পয়েন্ট।

ট্রেজারি বিল হচ্ছে একটি স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্র, যা সরকার জারি করে। সাধারণত এগুলো এক বছর বা এর কম মেয়াদি হয়ে থাকে। নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবেও ট্রেজারি বিল পরিচিত। কারণ এর ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। আর ট্রেজারি বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র। এটির বিপরীতে বিনিয়োগ থেকে সরকার অর্থ নিয়ে থাকে। এটির মেয়াদ হয় ২ থেকে ২০ বছর। ট্রেজারি বিল ও বন্ড সাধারণত যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি কিনতে পারেন। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার নির্ধারণ করা হয় ব্যাংকগুলোর কাছে কী পরিমাণে তারল্য রয়েছে সেটির ওপর ভিত্তি করে। সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য জোগান বেশি থাকলে সুদের হার কমে। আর চাহিদার তুলনায় তারল্য জোগান কম থাকলে সুদের হার বাড়ে।

ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, মাঝখানে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল। এখন তা আবার বাড়ছে। ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের চাহিদা বাড়ার কারণেই মূলত ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ পাওয়া নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর ফলেও ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সামনে সরকারের আরও বেশি ব্যাংকঋণ দরকার হবে। সে কারণে ব্যাংকগুলো নিলামে উচ্চ সুদ চাচ্ছে। মূলত এ কারণেই ট্রেজারি বিলের সুদের হার কমে তা আবার বাড়া শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কমার কথা বললেও এখন তা কিছুটা বেড়ে গেল। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ খাতে সুদ কমার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলোর নিশ্চিত মুনাফা অর্জনের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। সুদহার কমায় এ খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো আর উচ্চ হারে মুনাফা পাবে না। গভর্নরের এই বক্তব্যের প্রায় এক মাস পর আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বেড়ে গেছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী খবরের কাগজকে বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কমাতে গভর্নর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের মূল্যস্ফীতি এখনো খুব বেশি কমছে না। আবার রেপোতেও একটু কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ছে। এ ছাড়া আমানতের প্রবৃদ্ধিও খুব বেশি বাড়ছে না। তারপরও ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দিচ্ছে। এ কারণেই মূলত ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার বাড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি যদি কমে ৭ শতাংশে নেমে আসে, তাহলে আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কমে যাবে। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে আলোচ্য সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস দূষণকারীদের কর বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০২ পিএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
দূষণকারীদের কর বাড়াতে হবে
প্রতীকী ছবি

‘গাছ নাই তো আমার ওষুধও নাই।’ প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল খায়ের অভিনীত এক বিজ্ঞাপনচিত্রের এই সংলাপ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হরহামেশাই ভেসে আসে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে গুগল ওয়েদারে যখন তাপমাত্রা দেখায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর উপলব্ধি দেখায় ৪২ বা ৪৩ ডিগ্রি- তখন ওই বিজ্ঞাপনের সংলাপ সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া মানুষের পোস্টে খুব দেখা যায়।

গত শতাব্দীর শেষের দিকে সম্প্রচার হতো বিজ্ঞাপনটি। বন অধিদপ্তরের সরকারি সেই বিজ্ঞাপনের সংলাপগুলো ছিল এমন, ‘আমি আর আপনাগোর কবিরাজ নাই। আপনারা চাইলেও আমি আর ওষুধ দিতে পারুম না। প্রশ্ন করতে পারেন কেন? উত্তর একটাই। সাপ্লাই শেষ! গাছ নাই তো আমার ওষুধও নাই। লাকড়ি বানায়া চুলায় দিছি, খাট-পালঙ্ক বানায়া শুইয়া রইছি, ট্যাকার দরকার পড়ছে গাছ কাটছি, যা কাইটা ফালাইসি তা কি পূরণ করছি? বাপ-দাদার লাগানো গাছ কাটছি। নিজেগো সন্তানের জন্য কী রাখছি? অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি ধীরে ধীরে শেষ হইতাছে। চোখ ভইরা সবুজ দেখি না। ভবিষ্যতে কেমনে দম লইবেন?’

দিন দিন সত্যি হয়ে ওঠা সেই সংলাপগুলো থেকে মানুষ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেও গ্রীষ্মের পর বর্ষায় গাছ লাগানোর মৌসুমে আর তা তেমনটা মনে রাখে না। বরং সরকারিভাবে এমনকি খোদ রাজধানীতেও রাতের আঁধারে কয়েক শ গাছ কেটে সাবাড় করার সংবাদ আসে গণমাধ্যমে।

একইভাবে রাজধানীতে নর্দমাসহ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা বিশেষ করে পলিথিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের নগর ও শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। প্রধান শহরগুলোর যেখানে-সেখানে স্তূপ করা ময়লা আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে দিনভর উঠতে থাকে ধোঁয়া। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনেও এ চিত্র অহরহ দেখা যায়।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই আজ ২২ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ধরিত্রী দিবস পালন করছে বাংলাদেশ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে দৈনিক খবরের কাগজের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ বা যেকোনো দূষণই বলুন, এসবের জন্য দায়ী কিন্তু ধনীরাই। যদিও তারা তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ তারা প্রাইভেট কারে চলেন, উন্নতমানের বাসায় থাকেন, ভালোমানের চিকিৎসা পান। কিন্তু বেশি ভুক্তভোগী হন প্রান্তিক গরিব মানুষ। তারা ধুলাময় রাস্তায় শব্দদূষণের মধ্যেই চলাফেরা করেন। এদিকে ন্যূনতম চিকিৎসাও পান না। তাই পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করে তা প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।’

তিনি বলেন, আবার বৈশ্বিক দূষণে বাংলাদেশের ভূমিকা অতি সামান্য। কিন্তু ভুগতে হয় বেশি এ দেশের মানুষকেই। বিষয়টি যথাযথ হিসাব করে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে সেভাবে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।

‘যথাযথ হিসাব’ প্রশ্নে এই অধ্যাপক বলেন, বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে যত অকালমৃত্যু হয়, তার অর্ধেকই পরিবেশ দূষণের কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের কাছে তো এর হিসাব নেই। দূষণের কারণে লাং ইনফেকশন হয়ে বা হার্টের সমস্যা হয়ে কেউ মারা গেলে তার ডেথ সার্টিফিকেটে তো তা লেখা থাকে না। এই হিসাবগুলোও আমাদের ক্ষতির হিসেবে এনে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে হবে এবং এর ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে।

দেশে বা বিশেষ করে রাজধানী শহরে যত দূষণ হাঁটতে চলতেই দেখা যায়, সে তুলনায় পরিবেশ আদালতে মামলা হয় খুব কমই। 

অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফওজুল আজিম দীর্ঘদিন পরিবেশ আদালতের বিচারক ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফৌজদারি অপরাধের মতো পরিবেশ আইনে অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ থানায় বা আদালতে সরাসরি মামলা করতে পারেন না। আগে অভিযোগ নিয়ে যেতে হয় অধিদপ্তরে। সেখানে সুরক্ষা না পেলে আদালতে যাওয়া যায়। এই যে এতটা আইনি প্রক্রিয়া মেনে আদালতে যেতে হয়, সে জন্যও অনেকে প্রতিকার চাওয়ার কথা ভাবলেও আর এগোন না।

তিনি বলেন, তাই সরাসরি যেন মামলা করতে পারেন তেমন ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রয়োজনে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের ব্যবস্থা রাখা যায় আইনে, যাতে সরাসরি মামলা করার সুযোগ নিয়ে কেউ কাউকে হেনস্তা করতে না পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ পরিবেশবিষয়ক জনস্বার্থ মামলার জন্যও পরিচিত। তিনি বলেন, ‘পরিবেশবিষয়ক মামলা নিয়ে আগে আমরা আদালতে যেমন পরিত্রাণ পেতাম, এখন তা কমে যাচ্ছে। এটি আশঙ্কার বিষয়।’

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উভয়সংকটে ইসি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উভয়সংকটে ইসি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৬ জুনের মধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা করলেও তা মানতে রাজি নয় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশ কিছু দল। 

দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা নানামুখী চাপেও রেখেছেন। 

অন্যদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের দাবি, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে এই কমিশনের নির্বাচন আয়োজন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথাও বলেছেন তারা। গত ২০ এপ্রিল রবিবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আগে ইসিকে সব ধরনের নির্বাচনি তৎপরতা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। 

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিশ্লেষকরাও বলছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসিকে সরকারি রোডম্যাপের ওপর নির্ভর করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে তাদের উচিত নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া। এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের রোডম্যাপ অনুযায়ী ইসিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। 

সুজন সম্পাদক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, সরকার এবং ইসির মধ্যে সমন্বয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

একই কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আবদুল আলীম বলেন, অযথা বিতর্কে না জড়িয়ে ইসির অপেক্ষা করা উচিত।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন, ‘আগেও বলেছি, আবারও বলছি- এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে বলে আশা করছি।’ 

একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত সময়ে নির্বাচনের তাগিদ। অন্যদিকে সরকারপ্রধানের এমন ঘোষণার পর সংসদ নির্বাচনের পথে সময় ডিসেম্বরকে মাথায় রেখে অগ্রাধিকারমূলক সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে নির্বাচন কমিশন। সে লক্ষ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের আদলে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে খসড়া তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। 

গত ৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “ভোটের প্রাথমিক কাজ শেষ করে জুন-জুলাইয়ে ‘কর্মপরিকল্পনা বা অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা করা হবে ইন্‌শাআল্লাহ।”

এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা এবং ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগেই সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির এমন তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির নেতারা। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি। গত রবিবার দল নিবন্ধনের সময়সীমা ৯০ দিন বাড়ানোসহ জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে এনসিপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে ইসির নির্বাচনি কর্মতৎপরতার সমালোচনা করেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘সরকারি রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতা সন্দেহজনক। আর ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এই কমিশন (ইসি) থাকবে, না পুনর্গঠন হবে।’

ইসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এনসিপির এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। যোগাযোগ করা হলেও ইসির পক্ষ থেকে গতকাল এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও দেশের চলমান পরিস্থিতিতে তারা নিজের ইচ্ছামতো নির্বাচন করতে পারবে না- এটাই বাস্তবতা। সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ আসবে এটাও স্বাভাবিক। তবে এবারের নির্বাচন কবে, কীভাবে হবে- সে সিদ্ধান্ত তারা নিজেরা নিতে পারবেন না। এসব বিষয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী এই সংস্থাকে ঐকমত্য কমিশন থেকে চূড়ান্ত হওয়া সংস্কারের পরামর্শ এবং সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’ 

তবে আগের মতো সংসদ ও সংবিধান বহাল থাকলে ইসিকে নির্বাচন আয়োজনের সুনির্দিষ্ট সময় নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না।

তিনি বলেন, ‘চলমান প্রেক্ষাপটে ইসির উচিত হবে এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কথা  বলা এবং নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে  আইনগত কিছু সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে সংস্কার কমিশনের। এই নির্বাচনের আগেই সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, আর হলেও তা কীভাবে সম্ভব, সেসব বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ দেশের ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসছে। সেসব পরামর্শ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করে আগের পদ্ধতিতেই নির্বাচন হলে- আগামী সংসদ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কাজেই আমি মনে করি নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো তো নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনের দাবি করবেই। দলগুলো হলো রাজনৈতিক শক্তি আর সরকার হলো নীতিনির্ধারক। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের। আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে সরকার ও ইসির মধ্যে সমন্বয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ।’

সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীমের মতে, ‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এবারের বাস্তবতা ভিন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। জাতির প্রত্যাশিত এসব সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের উচিত ইসির সঙ্গে সমন্বয় রাখা, যেটা আমরা দেখছি না। দল নিবন্ধনের বিষয়ে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়ন না হলে তো এর প্রায়োগিক ফল পাওয়া যাবে না। সরকারের উচিত ইসিকে এমন বার্তা দেওয়া যে, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তে ন্যূনতম যে কটি বিষয়ে সংস্কারের সিদ্ধান্ত আসবে সেগুলো বাস্তবায়নের পর আপনারা নির্বাচন আয়োজনের কাজ শুরু করুন। নির্বাচন কমিশনের উচিত অযথা বিতর্কে না জড়িয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা।’