
রাজধানীতে মনোরম পরিবেশে পরিবার অথবা প্রিয়জন নিয়ে অনেকেই ইফতার করতে আসছেন ধানমন্ডির লেকে। কেউবা আবার চলতি পথে ইফতারের সময় হয়ে গেলে লেকের পাড়ের দোকানগুলোতে বসেই করছেন ইফতার। কারণ এখানে রোজাদাররা পাচ্ছেন তুলনামূলক কম দামে নানা রকমের বাহারি ইফতার।
লেকের পাড়ে অনেকে আবার বাসাবাড়ি থেকে রান্না করা ইফতারি নিয়ে বন্ধুবান্ধব মিলে গোল হয়ে বসে করছেন ইফতার। এর সঙ্গে যোগ করে নিচ্ছেন লেকের পাশে থাকা দোকানগুলোর বিভিন্ন রকমের জুসসহ অন্য ইফতারসামগ্রী। অনেকেই আবার এখান থেকেই বাসাবাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ইফতারের বিভিন্ন আইটেম।
রবিবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে মানুষজনের ইফতার করার এসব দৃশ্য দেখা যায়। লেকের পাশের দোকানিরা জানান, জোহরের নামাজের পর থেকে নানা রকমের ইফতার সাজানো শুরু হয় । তবে বাহারি রকমের ইফতার থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম বলে জানান তারা।
ধানমন্ডি লেকে ইফতারের আকর্ষণ রবীন্দ্র সরোবরের পাশে থাকা খাবারের দোকানগুলো। যেখানে ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে একাধিক খাবারের সমন্বয়ে ‘প্যাকেজে ইফতার’ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে এক মুঠো মুড়ি, সামান্য ছোলা, এক পিস ছোট চিকেন, এক পিস পেঁয়াজু, এক পিস বেগুনি, দুই পিস আলুর চপ, একটি সমুচা, এক পিস সবজি বল এবং এক গ্লাস শরবত। লেকে ইফতার করতে আসা রোজাদারদের প্যাকেজের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। একবার ব্যবহারযোগ্য বা ওয়ান টাইম প্লেটে এসব খাবার শোভা পাচ্ছে।
নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। বন্ধুদের জন্য ইফতারে জনপ্রতি ২০০ টাকার প্যাকেজটি নিয়েছেন তারা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই লেকের পাড়ে একবার বন্ধুরা মিলে ইফতার করার চেষ্টা করি। এখানকার পরিবেশ ভালো। আমাদের জন্য কাছে হয় এই লোকেশনটি। তাই আমরা প্রতি রমজানে একবার সবাই মিলে এখানে ইফতার করতে আসি। ইফতার শেষে এখানে গল্প-গুজব করে সময় কাটানো যায়। এই লেকে ইফতার করার এটি একটি কারণ।’
লেকের পানির ওপরে ভাসমান কয়েকটি ডিঙি রয়েছে, অনেককে আবার সেখানে বসে ইফতার করতে দেখা যায়।
ধানমন্ডি লেকের পূর্ব পাশে রয়েছে পানসী রেস্তোরাঁ। সেখানেও ইফতার পার্টি চলছে। বুকিং করার জন্য বড় সাইনবোর্ডে নম্বরসংবলিত ব্যানার টাঙানো আছে। পশ্চিম পাশে থাকা ডিঙ্গি রেস্তোরাঁয়ও একই সুযোগ রয়েছে।
ধানমন্ডি লেকের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারের আইটেমের মধ্যে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, শাকের বড়া, সবজি পাকোড়া, ডিমের চপ, চিকেন সমুচা, শিঙাড়া, শামি কাবাব, পনির সমুচা, চিকেন জালি কাবাব, চিকেন উইংস, চিকেন অনথন ও চিকেন রোল। এগুলো পিস ৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলা ও বুন্দিয়ার কেজি ২০০-২০৫ টাকা। সাধারণ জিলাপির কেজি ২০০ টাকা, চিকন জিলাপি ৪৪০ টাকা, চিকেন ফ্রাই পিস ৮০-২০০ টাকা, কাবলি বুট ৫০০ টাকা কেজি, চিকেন লেগ কাবাব ১৫০ টাকা, চিকেন কেরাম কাটলেট ১৫০ টাকা, চিকেন সাসলিক ৮০ টাকা, চিকেন ড্রামস্টিক ৭০ টাকা, স্পেশাল নান পরোটা ৩৫-৫০ টাকা, চায়নিজ সবজি প্লেট ৩০০ টাকা, সুতি কাবাবের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা, জাম্বো রোস্ট ৫০০ টাকা, চিকেন ঝাল ফ্রাই প্লেট ৩০০-৫০০ টাকা, মুরগির রোস্ট প্রতি পিস ৩২০।
এ ছাড়া খাসির চাপ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ টাকা, মোরগ পোলাও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, তেহারি হাফ ১৪০ টাকা, তেহারি ফুল ২৩০ টাকা, বিফ শিক কাবাব ২১০ টাকা, চিকেন বাট কাবাব ১৬০ টাকা, ফুল গ্রিল ৪৮০ টাকা, তেহারি ফুল ৪০০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ফুল ৪০০ টাকা, খিচুড়ি ফুল ৪০০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ফুল ৬০০ টাকা, বোরহানি হাফ লিটার ১২০ টাকা, জাফরান শরবত এক লিটার ৫০০ টাকা, মাঠা ৫০০ গ্রাম ১২০ টাকা, হালিম ছোট বাটি ১৫০ টাকা।
রবীন্দ্র সরোবরের পাশে ‘কাবাব কারিগর’ দোকানের কর্মচারী আল আমিন বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকেই এখানে বিভিন্ন রকমের ইফতারসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে ইফতার করতে আসেন অনেকেই। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার মানুষের সংখ্যা কম। বর্তমান বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেশি, তবে কাস্টমার হারানোর ভয়ে আমরা দাম তেমন একটা বাড়াইনি।’ তিনি আরও জানান, এখানে ইফতারের বিভিন্ন আইটেম পাওয়া যায়। অনেকের আগ্রহ প্যাকেজগুলোতে। এর সঙ্গে কাস্টমার চাইলে পাশের দোকানগুলো থেকে জুস বা অন্যান্য ইফতার আইটেম এনে দিতে পারছি। সবাই পছন্দমতো প্যাকেজ নিতে পারছেন। সারা দিন ব্যস্ততা না থাকলেও দুপুরের পর থেকেই এখানকার দোকানদারদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।