ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ এএম
সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিষয় বিনিময়, ভিসা সুবিধাসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৩ বছর পর ফের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। আলোচনার বিভিন্ন দিকনির্ধারণ করতে তিন দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বেলোচ। এরপর আগামী ২২ এপ্রিল তিন দিনের সফরে আসবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এই সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইসহাক দারের সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছর পর উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের দ্বার খুলছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সংলাপ হয়েছিল। এবার উভয় দেশ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সংলাপ হচ্ছে।

পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান খবরের কাগজকে জানান, ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফরকে বাণিজ্য, কূটনীতি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে দুই দেশ। তার সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার পথ খোঁজা হবে।

ইকবাল হোসেন জানান, এই সফরের এক দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী একবছরে অন্তত ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে, বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি ৬২৭ মিলিয়ন (৬২ দশমিক ৭ কোটি) ডলার থেকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করা। আর বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য খাতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। 

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আলোচনায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা যৌথ কমিশন পুনর্বহাল করতেও প্রস্তাব দিতে পারে পাকিস্তান। এই কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এ ছাড়া সফরকালে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। এর ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব নতুন মাত্রা পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর এই সংলাপ দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ৫৩ বছরের অমীমাংসিত বিষয় আছে। তবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা যদি ওই ইস্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কোনো লাভ হবে না। ওদেরও কোনো লাভ নেই। আমরা অবশ্যই আমাদের স্বার্থ রক্ষা ও উদ্ধারের চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হিসেবেই দেখতে চাই।’

এদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমানযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি ফ্লাইট শুরুর ব্যাপারে একমত হয়েছে। পাকিস্তানের ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে একটি এয়ারলাইনসকে ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। শিগগিরই এই রুটে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে বলে জানান হাইকমিশনার ইকবাল হোসেন খান। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-করাচি সরাসরি জাহাজ চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় পাকিস্তানের কোনো পণ্য বাংলাদেশে আনতে হলে তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে আনতে হতো। গত ৫ আগস্টের পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল ফের শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে করাচি থেকে দুটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। ফলে আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য হাসিনার প্রশাসনের ওপর দিল্লির তীব্র প্রভাবও ভূমিকা রাখে। অনেক ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ কোন পন্থায় হবে, সেটাও ভারত থেকে ঠিক করে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে চায় বাংলাদেশ। উভয় দেশই যেন ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশনে’ থাকে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে ঢাকা।

১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মিথ্যা তথ্যে ভোটার হয়ে ইসির হাতে ধরা খেয়েছে কিশোর মো. আরাফাত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নামাপুটিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় আরাফাত এবং প্রতিবেশী ভাই জহিরুল ইসলাম জুয়েলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট (তথ্য ব্যবস্থাপনা) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে তিনি জানান, আরাফাতের প্রকৃত জন্মসাল ২০১০, বয়স ১৫ বছর। তার বয়স ২২ বছর করতে ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে আপলোড করা হয় এবং ছবি, চোখের আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অন্য লোকের। এ বিষয়ে ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর খবরের কাগজকে জানান, ঘটনায় আটক ২ জনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় গিয়ে কাঁদতে দেখা যায় আরাফাতকে। জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, তার এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি আপলোড করা হয়েছে, যাকে তিনি চিনেন না। প্রতিবেশী ভাই জহিরুল তাকে ইসিতে ছবি পরিবর্তন করার জন্য নিয়ে এসেছেন। আরাফাতকে প্রশ্ন করা হয়, সে কীভাবে ভোটার হলো? জবাবে সে বলেছে, ‘আমার ফুপাতো বাইয়ে কইছে যে বিদ্যাশ (কাতার) নিব। আমি হেরে কইছি আইডি কার্ড করন লাগব? হেয় লগে লগে কইছে কইরা দিব।’

আকুতি জানিয়ে আরাফাত বলে, ‘আপা, আমি তারে জোরাজুরি করি নাই। আমি এইট পর্যন্ত পড়ছি। আমার বাবাও বিদ্যাশ থাকে, সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে গিয়ে সে এখনো কাজ পায়নি। আমরা ৩ ভাই এক বোন। অভাবের সংসারে মা আমারেও বিদ্যাশ পাঠাইতে চায়। তাই অই ভাইয়ের কথায় ভোটার হওয়ার আবেদন করি। কাতার পাঠাবে বইলা ভাই আমারে ভোটার হইতে বলে। কারণ এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারুম না, বিদ্যাশে যাইতে পারুম না।’

আরাফাত জানায়, এক মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদের আগেই পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিস থেকে তার ভাই ভোটার হওয়ার আবেদন করিয়ে দেন। তার আগে জহিরুল আরাফাতের ২২ বছরের ভুয়া জন্মসনদ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র বানিয়ে দেন। আরাফাতের এনআইডির আবেদন করাতে জহিরুল স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির সহায়তা নেন। এসব কাজের জন্য এ পর্যন্ত খরচ হিসেবে নেন ৯ হাজার টাকা। তবে পরে জহিরুল রকিকে ভাগের টাকা না দেওয়ায় সে আরাফাতের ছবি ও বায়োমেট্রিক না নিয়ে প্রক্সি হিসেবে অন্য লোকের এসব তথ্য ব্যবহার করে। পরে আরাফাত এনআইডিতে নিজের ছবির বদলে অন্য লোকের ছবি দেখতে পায়। 

এ ঘটনার ব্যাপারে জহিরুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আরাফাতের মায়ের কথায় তিনি এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন। দালাল নন এমন দাবি করে তিনি বলেন, পেশায় তিনি স্থানীয় ভূমি অফিসের আমিন। কৃষিকাজও করেন। আরাফাত সম্পর্কে তার বউয়ের মামাতো ভাই। বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ করতে টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির কাজটি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে আরাফাতের ছবির বদলে এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি বায়োমেট্রিকে আপলোড করা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জহিরুল। বিদেশে লোক পাঠাতে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তার কোনো কাজের সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন জহিরুল।

আইনে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার শাস্তি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো নাগরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি, কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলা করলে সেটা এই আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অনূর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আরাফাতের ভোটার হওয়ার বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ খবরের কাগজকে জানান, আরাফাত নামে কোনো কিশোর বা ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। 

আপনার অফিসের ঝাড়ুদার (রকি) এর মাধ্যমে কোনো কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নলেজে নেই। আমি জানিও না। ঢাকা অফিসে যেহেতু তথ্য চলে গেছে, সেখান থেকে নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও দায়িত্বে অবহেলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। গতকাল সোমবার তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরাফাত নামের ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি বয়স বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন অফিসে গতকাল সে তার ছবি পরিবর্তনের জন্য এলে এনআইডির তথ্য ও ছবি, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে থাকা বয়স আর সরাসরি তাকে দেখে আমাদের কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি জানায়, কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর আগেই আরাফাত ভোটার হওয়ার আবেদন করতে যায়। কিন্তু বয়স কম থাকায় কর্মকর্তা তাকে ভোটার বানানো যাবে না বলে জানান। পরে সে এক প্রতিবেশী ভাই জহিরুলের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে আবেদন করে। এ কাজ করিয়ে দিতে তার সেই ভাই দালালের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকিকে টাকা দেন। কিন্তু রকি সেই টাকা না পেয়ে অন্য লোকের ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে এনআইডির কাজ শেষ করেন।’ 

এনআইডি শাখার মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ইসিতে ছবি সংশোধন করতে আসা আরাফাতের ভোটার হওয়ার ঘটনা আমরা জানতে পারি। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অফিসে আসা দুজনের সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। আরাফাতের আবেদন এ পর্যায়ে লক করে রাখা হবে। অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের কারসাজিতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরাফাতসহ জালিয়াতিতে জড়িত তার প্রতিবেশী ভাই জহিরুল, স্থানীয় অফিসের ঝাড়ুদার এবং কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।

এমন চিত্র বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন।

তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। 

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি, কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি,  কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য
ফরিদপুরের শোভারামপুরে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্না করছেন এক গৃহিণী। ইনসেটে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। ছবি: খবরের কাগজ

কেঁচোসারের পর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সফল হয়েছেন ফরিদপুরের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন। জেলার শহরতলির কোমরপুরে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন তিনি। এখন তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ ঘনফুট গ্যাস। ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আরও ৪০টি পরিবারকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানান, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে তানিয়াকে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তানিয়া পারভীন একজন নারী উদ্যোক্তা। এর আগে তিনি ইউটিউব দেখে শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন। সেখানেও তিনি দেশের ভেতর একজন সফল উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত। এবার তিনি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। তার এই সফলতায় অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে এলাকার ৬০টি পরিবারের মাঝে দিয়েছেন বায়োগ্যাস। সরকার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা এবং নিজের ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে শুরু করেছেন এই গ্যাস প্ল্যান্ট। সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে কম দামে বায়োগ্যাস পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এদিকে তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। 

বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম জানান, প্রতি মাসে তাদের দুটি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগতো, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে সারা মাসে মাত্র ১১০০ টাকা দিয়ে সেই সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।

আরেক সুবিধাভোগী আকলিমা বেগম জানান, এই বায়োগ্যাস পাওয়াতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পরিবারে অনেক সদস্য হাওয়ায় প্রতি মাসে দুই-তিনটি সিলিন্ডার গ্যাস লাগতো। অনেক সময় কাঠখড় পুড়িয়ে রান্নার কাজ চলতো। এখন পুরো মাসে তিনি মাত্র ১১০০ টাকায় পুরো পরিবারের জ্বালানি পাচ্ছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা কে এম জাফর বলেন, ‘তানিয়া পারভীনই প্রথম এলাকায় কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এবার সরকারের সঙ্গে মিলে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস উৎপাদন। এর ফলে আমাদের এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার উপকৃত হবে।’

তানিয়ার প্ল্যান্টে কাজ করা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা বেকার ছিলাম। এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছর এখানে আমরা চার-পাঁচজন কাজ করছি। আমাদের পুরো পরিবার এখানকার কাজের ওপর নির্ভরশীল।’ 

নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছি। এখন এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বায়োগ্যাস ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৪০টি পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০ ভাগ টাকা নিজে বিনিয়োগ করেছি।’ 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীনের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ ভাগ টাকা এবং তানিয়া পারভীন নিজে ৬০ ভাগ টাকা দিয়ে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছেন। তিনি এখন ৬০টি পরিবারের মাঝে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছেন। সামনে আরও ৪০টি পরিবারের তিনি দেবেন। ব্যবহার নিরাপদ হওয়ায় বায়োগ্যাস উৎপাদনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।’

রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি
গরুবোঝাই একটি ভটভটিতে সওয়ার হয়েছেন অন্তত ছয়জন মানুষ। অবৈধ এ যানটি রাজশাহী থেকে নওগাঁর দিকে যাচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

তিন চাকার অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ রাজশাহীবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর অথবা উপজেলা কিংবা গ্রামীণ সড়ক, সব খানেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ভটভটি সমান তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধ এসব যানের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে। জেলাবাসী বলছেন, প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। 

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, কাটাখালী, শিরোইল স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা, চারঘাটসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে ঘুরে এসব অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। চালকদের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যানবাহনেরও নেই বৈধ কাগজ। অনেক জায়গায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের যান চালাতে দেখা গেছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রাস্তায় যানজট সৃষ্টিসহ নানা কারণে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। 

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, গত এক বছরে রাজশাহী জেলায় ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ (রামেক) বিভিন্ন হাসপাতালে সহস্রাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। যাদের বড় একটি অংশই অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। 

জেলাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকট নিরসনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালনেরও অনুরোধ জানান তারা। পাশাপাশি যথাযথ রোড-সেফটি পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ারও পরামর্শ নগরবাসীর। 

নগরের শিরোইল এলাকায় কথা হয় মোখলেছুর রহমান নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোট ও ছিমছাম নগরী হিসেবে রাজশাহী দেশব্যাপী প্রশংসিত। নগরীর পাশ দিয়ে বাস চলাচল করায় যানজটও তেমন ছিল না। তবে ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইজিবাইকের ক্ষেত্রে দুটি রং নির্ধারণ করে সকাল-বিকেল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আবার, রিকশার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই। তাই নগরবাসী যানজটে নাকাল।’ 

আবদুল লতিফ নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন না থাকলে তো চালকরা যে যার মতো চালাবেনই। ভাড়া বেশি পাওয়া দিয়ে কথা। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালক হতে পারেন। কিছু সিস্টেম চালু করা গেলে আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।’ 

পবা হাইওয়ে থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বেলপুকুর থেকে নাটোরের বেলঘরিয়া বাইপাস পর্যন্ত পবা হাইওয়ের আওতায় পড়ে। ওই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে এক-দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর বাইরেও ছোটখাটো ধাক্কা লাগার মতো ঘটনা ঘটে। মূলত অটোরিকশা, টেম্পু, ভটভটি, নছিমন-করিমনসহ থ্রি-হুইলার গাড়ির কারণেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত।’ 

রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুখপাত্র) রফিকুল আলম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা-সম্পর্কিত মামলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাজার এলাকায় এখন যে পরিমাণে যানজট, সেটা আগে আরও বেশি ছিল। অবৈধ রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। আমি সিটি করপোরেশন ও আরডিএকে বলেছি, তারা যেন আর নতুন করে অনুমোদন না দেয়। পাশাপাশি রিকশাগুলোকেও নির্দিষ্ট রঙের আওতায় আনার জন্য শক্তভাবে বলেছি, তারাও চেষ্টা করছেন। রিকশাগুলো দুটি কালারে হয়ে গেলে যানবাহনের পরিমাণ আরও কমে যাবে।’ 

চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটা আমাদের না। এটা সিটি করপোরেশনের দেখার বিষয়, যেহেতু তারা এত পরিমাণে গাড়ির অনুমোদন দেয়। আবার তাদের যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকত, তাহলেও একটা কথা ছিল। আমরা তাদের নিয়ে প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রোগ্রাম করছি।’ 

মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কাগজপত্রহীন রিকশা ও অটোরিকশা জব্দের নির্দেশনা দেওয়া আছে। অভিযান চলছে। পাশাপাশি চালকদের নির্ধারিত কোনো নিয়মের মধ্যে আনা যায় কি না সে বিষয়ে রাসিকের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

রাখাইনে করিডর: সতর্কতায় গুরুত্ব

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
রাখাইনে করিডর: সতর্কতায় গুরুত্ব
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

মায়ানমারের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল রাখাইনে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় স্বার্থ পরিষ্কার করার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। মানবিক বিষয়ের নামে করিডর সুবিধা দিতে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় কি না, সেটির ব্যাপারেও সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এদিকে রাজনীতিকরা বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মানবিক সহায়তার কথা বলে যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেটিই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হয়ে আছে। তার মাঝে আবারও ‘মানবিক করিডরের’ সুযোগ দিয়ে যদি নতুন সংকট তৈরি হয়, সেটা দেশের জন্য আরও বড় ক্ষতি হবে। তাই শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডরের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিস্কারের আহ্বান জনিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শর্তসাপেক্ষে মানবিক করিডর নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রথমত, এ ব্যাপারে আমাদের কারও কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কী সেই শর্তগুলো? সেটা প্রকাশ করতে হবে, জনগণকে জানাতে হবে। কী বিষয়ে এবং কোন রুটে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমাদের (বাংলাদেশের) জাতীয় স্বার্থ কী? এ বিষয়ে আমরা যারা এসব নিয়ে কাজ করি তারাও পরিষ্কার না। তা ছাড়া মায়ানমারের এই রাখাইন কোনো সাধারণ এলাকা নয়। এখানে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সম্পৃক্ততা আছে। পাশাপাশি রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে। তাহলে এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেখানে কেন যুক্ত হবে? এটা উদ্বেগের বিষয়।’

চলতি বছরের শুরুর দিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই প্রেক্ষাপটে গত রবিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মায়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলছি না। সেই শর্তাবলি যদি পূরণ হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা, অস্ত্র নেওয়া হচ্ছে না।’

এদিকে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের ব্যবস্থাপনা জাতিসংঘের হাতে থাকলেও এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই থাকতে হবে, যাতে করে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ নিজেই তা বন্ধ করে দিতে পারে। অন্যথায় বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে না, এমন কিছুও সেখানে ঘটে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকার নীতিগতভাবে রাজি হয়ে ভালো করেছে, কারণ যেই করিডর দিয়ে সহায়তা যাবে, সেই একই করিডর দিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়ে তাদের জন্য সেখানেই মানবিক সহায়তার কথা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে পারবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই করিডর কেন বা কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, সেটা পরিস্কার না। এখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কী এবং জাতিসংঘের স্বার্থ কী- এগুলো পরিস্কার করা দরকার। হতে পারে, কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করে জাতিসংঘ রাখাইনে কোনো মানবিক সহায়তা বা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তাহলে সেটা হতে পারে। কিন্তু করিডরের নামে সেখানে আরাকান আর্মি বা রাখাইনরা যদি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ পায়, তাহলে তো দেশের জন্য ভালো কিছু হবে না। দেখতে হবে, ওই করিডরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট দূর হবে কি না। যেখানে জাতিসংঘ নিজেই বলছে আমাদের অর্থ কমে গেছে, রোহিঙ্গাদের আর সহায়তা দিতে পারব না, সেখানে হঠাৎ মানবিক সহায়তার এই অর্থ কোথা থেকে আসছে? জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্বকারী যেসব দেশ আছে তারা এ বিষয়ে কী বলছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। দেখা গেল, এই করিডর সুবিধা দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা সংকট ও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকট আরও বাড়ল, তখন কী হবে? তাদের (জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি) লড়াইয়ের মধ্যে আমরা যাতে কোনোভাবে যুক্ত হয়ে না যাই, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। উপদেষ্টা (পররাষ্ট্র) বলেছেন, ‘এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না’, তাহলে আমরা কীভাবে জানব ওই করিডরে কী হবে? তাই সবার আগে করিডরের উদ্দেশ্য ও শর্তগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’

মায়ানমারের জান্তা সরকার তথা সামরিক নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেন। পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা নাগরিকরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করেন। বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখ বলা হচ্ছে। যদিও রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখের বেশি, যা সে সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নানা কৌশলে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মায়ানমার আমাদের কখনোই ভালোভাবে নেয়নি। এখন করিডর কিসের জন্য হবে? যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে করিডর হয়, তবে ঠিক আছে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। মূলত আমাদের উদ্দেশ্য হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। মায়ানমারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হলে এই করিডরের দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন এত রোহিঙ্গা এল, তখন তো জাতিসংঘ সাপোর্ট দিতে পারেনি। পরে তারা তো এ বিষয়টি ঠেকাতেও পারেনি। তাহলে জাতিসংঘের সব কথা আমাদের কেন শুনতে হবে?’

ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা (পরররাষ্ট্র) বলছেন, ‘করিডর নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না বা বলতে পারব না’- এই বিষয়টা তো আমাদের জন্য ভালো না। যেহেতু আমরা বলছি এটা গণতান্ত্রিক সরকার এবং সব সময় জনগণকে জানিয়ে সবকিছু করতে হবে, গোপন করে কিছু করা যাবে না, তাহলে বিস্তারিত বলা যাবে না বা এই জাতীয় কথা কেন আসছে? আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত রোহিঙ্গারা যারা আমাদের দেশে ঢুকেছে, তাদের ফেরত পাঠানো।’

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, মায়ানমারে ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি হয়। এর পর থেকেই মায়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। জান্তাবিরোধী ‘থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ একটি হলো ‘আরাকান আর্মি’। ২০২৩ সালের অক্টোবরে আরাকান আর্মি জোট ব্যাপক হামলা শুরু করে। চীন সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে সশস্ত্র সংগঠনটি। গত আগস্টে এই জোট উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মায়ানমারের একটি উপকূলীয় রাজ্য হলো রাখাইন। রাখাইন মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবাসস্থল। জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে সেখানে লড়াই শুরু হয়েছিল। এর পর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একের পর এক জয় পেয়ে এখন পর্যন্ত রাখাইন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নানা রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।