ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

পুরোনো রূপে ভোজ্যতেলের বাজার, ক্রেতার নাভিশ্বাস

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
পুরোনো রূপে ভোজ্যতেলের বাজার, ক্রেতার নাভিশ্বাস
চট্টগ্রামে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। ছবিটি চট্টগ্রাম মহানগরের খাতুনগঞ্জ-সংলগ্ন বকশিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের বাজার লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ৭ টাকা ২৩ পয়সা ও পাম অয়েলে ৮ টাকা ৬৮ পয়সা বেড়েছে। সবমিলিয়ে আবারও আগের রূপে ফিরে গেল ভোজ্যতেলের বাজার। এদিকে বাড়তি দরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 

গত ২৭ মার্চ খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৫ টাকা ৯০ পয়সা ও পাম অয়েল ১৩৫ টাকা ৫৩ পয়সায় বিক্রি হয়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ৭ টাকা ২৩ পয়সা ও পাম অয়েলে ৮ টাকা ৬৮ পয়সা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা ১৩ পয়সা ও পাম অয়েল ১৪৪ টাকা ২১ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান মাসে বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত ৩১ মার্চ এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। 

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিলমালিকদের কাছ থেকে বাড়তি দরে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল কিনে আনতে হচ্ছে। তাই পাইকারিতেও দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভোজ্যতেলের বাজার কখন স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।’ 

মিলমালিকরা তেলের দাম বাড়াতে সর্বপ্রথম গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) জানায়। পরে গত ১৩ এপ্রিল সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ১৪ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেদিন থেকে দাম কার্যকর করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। 

তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে গত ১৫ এপ্রিল। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে ১৪ টাকা বেড়ে ১৮৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলে ১২ টাকা বেড়ে ১৬৯ টাকায় বিক্রি হবে।  

এদিকে খুচরা বাজারে নির্ধারিত দামের বাইরে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। গত ৪ মার্চ দুপুরে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ দামে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেননি। 

নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘রান্নায় তেল লাগেই। না কিনেও উপায় নেই। কিন্তু এর চাহিদাকে পুঁজি করে যখন তখন দাম বাড়িয়ে দিলে আমাদের সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। হুট করেই বোতলজাত ভোজ্যতেলে ১৪ টাকা বাড়ানো হলো। কিন্তু আমাদের আয় তো নির্দিষ্ট। কাজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে এ ব্যাপারে সরকারের কড়া নজরদারি থাকা উচিত।’

গত বছরের ডিসেম্বরে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ায় গত চার মাসে (ডিসেম্বর-মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৫৩ টন, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৫২৭ টন এবং মার্চে ১ লাখ ৩৬ হাজার টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। সেগুলোই পরিশোধন করে বাড়তি দরে বিক্রি হবে বলে দাবি করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতির দিকে। অন্যদিকে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক, কর ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলোই এখন পরিশোধন করে চড়া দামে বিক্রি হবে। আমরা বলতে চাই, মিলমালিক ও ট্যারিফ কমিশন কীভাবে হিসাব করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াল, সেটা জনসমক্ষে আনা উচিত।’ 

এদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার উৎসব থামানো যাবে না বলে জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার  বিকেলে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বিবৃতি দিয়েছেন।  

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।

এমন চিত্র বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন।

তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। 

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি, কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি,  কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য
ফরিদপুরের শোভারামপুরে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্না করছেন এক গৃহিণী। ইনসেটে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। ছবি: খবরের কাগজ

কেঁচোসারের পর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সফল হয়েছেন ফরিদপুরের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন। জেলার শহরতলির কোমরপুরে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন তিনি। এখন তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ ঘনফুট গ্যাস। ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আরও ৪০টি পরিবারকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানান, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে তানিয়াকে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তানিয়া পারভীন একজন নারী উদ্যোক্তা। এর আগে তিনি ইউটিউব দেখে শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন। সেখানেও তিনি দেশের ভেতর একজন সফল উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত। এবার তিনি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। তার এই সফলতায় অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে এলাকার ৬০টি পরিবারের মাঝে দিয়েছেন বায়োগ্যাস। সরকার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা এবং নিজের ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে শুরু করেছেন এই গ্যাস প্ল্যান্ট। সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে কম দামে বায়োগ্যাস পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এদিকে তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। 

বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম জানান, প্রতি মাসে তাদের দুটি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগতো, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে সারা মাসে মাত্র ১১০০ টাকা দিয়ে সেই সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।

আরেক সুবিধাভোগী আকলিমা বেগম জানান, এই বায়োগ্যাস পাওয়াতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পরিবারে অনেক সদস্য হাওয়ায় প্রতি মাসে দুই-তিনটি সিলিন্ডার গ্যাস লাগতো। অনেক সময় কাঠখড় পুড়িয়ে রান্নার কাজ চলতো। এখন পুরো মাসে তিনি মাত্র ১১০০ টাকায় পুরো পরিবারের জ্বালানি পাচ্ছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা কে এম জাফর বলেন, ‘তানিয়া পারভীনই প্রথম এলাকায় কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এবার সরকারের সঙ্গে মিলে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস উৎপাদন। এর ফলে আমাদের এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার উপকৃত হবে।’

তানিয়ার প্ল্যান্টে কাজ করা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা বেকার ছিলাম। এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছর এখানে আমরা চার-পাঁচজন কাজ করছি। আমাদের পুরো পরিবার এখানকার কাজের ওপর নির্ভরশীল।’ 

নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছি। এখন এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বায়োগ্যাস ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৪০টি পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০ ভাগ টাকা নিজে বিনিয়োগ করেছি।’ 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীনের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ ভাগ টাকা এবং তানিয়া পারভীন নিজে ৬০ ভাগ টাকা দিয়ে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছেন। তিনি এখন ৬০টি পরিবারের মাঝে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছেন। সামনে আরও ৪০টি পরিবারের তিনি দেবেন। ব্যবহার নিরাপদ হওয়ায় বায়োগ্যাস উৎপাদনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।’

রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
রাজশাহীতে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি
গরুবোঝাই একটি ভটভটিতে সওয়ার হয়েছেন অন্তত ছয়জন মানুষ। অবৈধ এ যানটি রাজশাহী থেকে নওগাঁর দিকে যাচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

তিন চাকার অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ রাজশাহীবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর অথবা উপজেলা কিংবা গ্রামীণ সড়ক, সব খানেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ভটভটি সমান তালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধ এসব যানের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে। জেলাবাসী বলছেন, প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। 

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, কাটাখালী, শিরোইল স্টেশন, বিসিক শিল্পনগরী, পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা, চারঘাটসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে ঘুরে এসব অবৈধ যানের অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। চালকদের অধিকাংশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যানবাহনেরও নেই বৈধ কাগজ। অনেক জায়গায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের যান চালাতে দেখা গেছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, রাস্তায় যানজট সৃষ্টিসহ নানা কারণে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। 

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, গত এক বছরে রাজশাহী জেলায় ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ (রামেক) বিভিন্ন হাসপাতালে সহস্রাধিক মানুষ ভর্তি হয়েছেন। যাদের বড় একটি অংশই অনিয়ন্ত্রিত গতি ও অবৈধ যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। 

জেলাবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত নজরদারি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই এমন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংকট নিরসনে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা পালনেরও অনুরোধ জানান তারা। পাশাপাশি যথাযথ রোড-সেফটি পরিকল্পনা ও জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ারও পরামর্শ নগরবাসীর। 

নগরের শিরোইল এলাকায় কথা হয় মোখলেছুর রহমান নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছোট ও ছিমছাম নগরী হিসেবে রাজশাহী দেশব্যাপী প্রশংসিত। নগরীর পাশ দিয়ে বাস চলাচল করায় যানজটও তেমন ছিল না। তবে ইজিবাইক ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইজিবাইকের ক্ষেত্রে দুটি রং নির্ধারণ করে সকাল-বিকেল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আবার, রিকশার ক্ষেত্রে এমন নিয়ম নেই। তাই নগরবাসী যানজটে নাকাল।’ 

আবদুল লতিফ নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন না থাকলে তো চালকরা যে যার মতো চালাবেনই। ভাড়া বেশি পাওয়া দিয়ে কথা। এখন যে কেউ ইচ্ছে করলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালক হতে পারেন। কিছু সিস্টেম চালু করা গেলে আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।’ 

পবা হাইওয়ে থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বেলপুকুর থেকে নাটোরের বেলঘরিয়া বাইপাস পর্যন্ত পবা হাইওয়ের আওতায় পড়ে। ওই এলাকায় প্রতিদিন গড়ে এক-দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর বাইরেও ছোটখাটো ধাক্কা লাগার মতো ঘটনা ঘটে। মূলত অটোরিকশা, টেম্পু, ভটভটি, নছিমন-করিমনসহ থ্রি-হুইলার গাড়ির কারণেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত।’ 

রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুখপাত্র) রফিকুল আলম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা-সম্পর্কিত মামলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬৭ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাজার এলাকায় এখন যে পরিমাণে যানজট, সেটা আগে আরও বেশি ছিল। অবৈধ রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। আমি সিটি করপোরেশন ও আরডিএকে বলেছি, তারা যেন আর নতুন করে অনুমোদন না দেয়। পাশাপাশি রিকশাগুলোকেও নির্দিষ্ট রঙের আওতায় আনার জন্য শক্তভাবে বলেছি, তারাও চেষ্টা করছেন। রিকশাগুলো দুটি কালারে হয়ে গেলে যানবাহনের পরিমাণ আরও কমে যাবে।’ 

চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটা আমাদের না। এটা সিটি করপোরেশনের দেখার বিষয়, যেহেতু তারা এত পরিমাণে গাড়ির অনুমোদন দেয়। আবার তাদের যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকত, তাহলেও একটা কথা ছিল। আমরা তাদের নিয়ে প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রোগ্রাম করছি।’ 

মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কাগজপত্রহীন রিকশা ও অটোরিকশা জব্দের নির্দেশনা দেওয়া আছে। অভিযান চলছে। পাশাপাশি চালকদের নির্ধারিত কোনো নিয়মের মধ্যে আনা যায় কি না সে বিষয়ে রাসিকের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

রাখাইনে করিডর: সতর্কতায় গুরুত্ব

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪০ পিএম
রাখাইনে করিডর: সতর্কতায় গুরুত্ব
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

মায়ানমারের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল রাখাইনে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্তসাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় স্বার্থ পরিষ্কার করার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। মানবিক বিষয়ের নামে করিডর সুবিধা দিতে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় কি না, সেটির ব্যাপারেও সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এদিকে রাজনীতিকরা বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উচিত ছিল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মানবিক সহায়তার কথা বলে যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেটিই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হয়ে আছে। তার মাঝে আবারও ‘মানবিক করিডরের’ সুযোগ দিয়ে যদি নতুন সংকট তৈরি হয়, সেটা দেশের জন্য আরও বড় ক্ষতি হবে। তাই শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডরের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিস্কারের আহ্বান জনিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শর্তসাপেক্ষে মানবিক করিডর নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রথমত, এ ব্যাপারে আমাদের কারও কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কী সেই শর্তগুলো? সেটা প্রকাশ করতে হবে, জনগণকে জানাতে হবে। কী বিষয়ে এবং কোন রুটে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমাদের (বাংলাদেশের) জাতীয় স্বার্থ কী? এ বিষয়ে আমরা যারা এসব নিয়ে কাজ করি তারাও পরিষ্কার না। তা ছাড়া মায়ানমারের এই রাখাইন কোনো সাধারণ এলাকা নয়। এখানে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সম্পৃক্ততা আছে। পাশাপাশি রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে। তাহলে এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেখানে কেন যুক্ত হবে? এটা উদ্বেগের বিষয়।’

চলতি বছরের শুরুর দিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডর’ দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই প্রেক্ষাপটে গত রবিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মায়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলছি না। সেই শর্তাবলি যদি পূরণ হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ করিডর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা, অস্ত্র নেওয়া হচ্ছে না।’

এদিকে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বিবিসিকে বলেছেন, প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের ব্যবস্থাপনা জাতিসংঘের হাতে থাকলেও এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই থাকতে হবে, যাতে করে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ নিজেই তা বন্ধ করে দিতে পারে। অন্যথায় বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে না, এমন কিছুও সেখানে ঘটে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকার নীতিগতভাবে রাজি হয়ে ভালো করেছে, কারণ যেই করিডর দিয়ে সহায়তা যাবে, সেই একই করিডর দিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়ে তাদের জন্য সেখানেই মানবিক সহায়তার কথা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে পারবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই করিডর কেন বা কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, সেটা পরিস্কার না। এখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কী এবং জাতিসংঘের স্বার্থ কী- এগুলো পরিস্কার করা দরকার। হতে পারে, কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করে জাতিসংঘ রাখাইনে কোনো মানবিক সহায়তা বা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তাহলে সেটা হতে পারে। কিন্তু করিডরের নামে সেখানে আরাকান আর্মি বা রাখাইনরা যদি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ পায়, তাহলে তো দেশের জন্য ভালো কিছু হবে না। দেখতে হবে, ওই করিডরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট দূর হবে কি না। যেখানে জাতিসংঘ নিজেই বলছে আমাদের অর্থ কমে গেছে, রোহিঙ্গাদের আর সহায়তা দিতে পারব না, সেখানে হঠাৎ মানবিক সহায়তার এই অর্থ কোথা থেকে আসছে? জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্বকারী যেসব দেশ আছে তারা এ বিষয়ে কী বলছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। দেখা গেল, এই করিডর সুবিধা দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা সংকট ও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকট আরও বাড়ল, তখন কী হবে? তাদের (জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি) লড়াইয়ের মধ্যে আমরা যাতে কোনোভাবে যুক্ত হয়ে না যাই, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। উপদেষ্টা (পররাষ্ট্র) বলেছেন, ‘এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না’, তাহলে আমরা কীভাবে জানব ওই করিডরে কী হবে? তাই সবার আগে করিডরের উদ্দেশ্য ও শর্তগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’

মায়ানমারের জান্তা সরকার তথা সামরিক নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেন। পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা নাগরিকরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করেন। বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখ বলা হচ্ছে। যদিও রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখের বেশি, যা সে সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নানা কৌশলে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন বলেও অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মায়ানমার আমাদের কখনোই ভালোভাবে নেয়নি। এখন করিডর কিসের জন্য হবে? যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে করিডর হয়, তবে ঠিক আছে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। মূলত আমাদের উদ্দেশ্য হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। মায়ানমারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হলে এই করিডরের দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন এত রোহিঙ্গা এল, তখন তো জাতিসংঘ সাপোর্ট দিতে পারেনি। পরে তারা তো এ বিষয়টি ঠেকাতেও পারেনি। তাহলে জাতিসংঘের সব কথা আমাদের কেন শুনতে হবে?’

ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা (পরররাষ্ট্র) বলছেন, ‘করিডর নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না বা বলতে পারব না’- এই বিষয়টা তো আমাদের জন্য ভালো না। যেহেতু আমরা বলছি এটা গণতান্ত্রিক সরকার এবং সব সময় জনগণকে জানিয়ে সবকিছু করতে হবে, গোপন করে কিছু করা যাবে না, তাহলে বিস্তারিত বলা যাবে না বা এই জাতীয় কথা কেন আসছে? আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত রোহিঙ্গারা যারা আমাদের দেশে ঢুকেছে, তাদের ফেরত পাঠানো।’

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, মায়ানমারে ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি হয়। এর পর থেকেই মায়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। জান্তাবিরোধী ‘থ্রি বাদারহুড অ্যালায়েন্সের’ একটি হলো ‘আরাকান আর্মি’। ২০২৩ সালের অক্টোবরে আরাকান আর্মি জোট ব্যাপক হামলা শুরু করে। চীন সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে সশস্ত্র সংগঠনটি। গত আগস্টে এই জোট উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মায়ানমারের একটি উপকূলীয় রাজ্য হলো রাখাইন। রাখাইন মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আবাসস্থল। জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে সেখানে লড়াই শুরু হয়েছিল। এর পর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একের পর এক জয় পেয়ে এখন পর্যন্ত রাখাইন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটেও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নানা রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বিলুপ্তির পথে শীতল পাটি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৫ এএম
বিলুপ্তির পথে শীতল পাটি
ক্যাপশন: চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে বৈশাখী মেলায় শীতল পাটি বিক্রি করতে বরিশাল থেকে এসেছেন গণেশ চন্দ্র দত্ত। ফাইল ফটো

গ্রামবাংলার শত বছরের ঐহিত্য শীতল পাটি। গরমের দিনে ঘুমাতে আরাম বলে এই পাটিকে শীতল পাটি নামে সবাই চেনেন। যুগ যুগ ধরে শীতল পাটির কদরও আলাদা। তবে কালক্রমেই এই শীতল পাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্তরা এখন পেশা পাল্টে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং প্লাস্টিক ও মেশিনে তৈরি পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি আজ বিলুপ্তির মুখে।

জানা গেছে, বরিশাল, ভোলা, সিলেট ও সিরাজগঞ্জের কিছু কিছু গ্রামে পাটিপল্লি আছে। সেখানে কেউ বুনন করেন, কেউ চাঁচেন আবার কেউ রং করেন। মূলত পুরুষরা বেতগাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। আর নারীরা পাটি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। বর্ষায় বেতগাছ লাগানো হয়। বরিশালে ধানি জমিতে আর সিলেটে পাহাড়ে পাটি গাছের চাষ হয়। যারা পাটি বানান তাদের একেকজনকে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। তিনজন যদি একটি পাটিতে কাজ করেন তাহলে একেকটি মাঝারি আকারের পাটিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি খরচ পড়ে। আর বড় আকারের পাটিতে খরচ পড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

এবার জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসর বসে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে। এ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও লালদীঘির চারপাশের সড়কে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। এ মেলাতে গণেশ চন্দ্র দত্ত শীতল পাটি বিক্রি করতে আসেন। তিনি জানান, এ বছরই তার শেষ বিক্রি। জব্বারের বলীখেলায় তিনি আর শীতল পাটি বিক্রি করতে আসবেন না। এবার তার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পালা। 

কারণ জানতে চাইলে গণেশ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি লোকসানে আছেন কুটির শিল্পের শিল্পীরা। বরিশাল থেকে এখানে আসতে ৭ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া লেগেছে। দ্বিতীয় দিনেও আমি ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারিনি, যা বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে হোটেলে থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য খরচও উঠবে না। গত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শীতল পাটি আর বিক্রি করব না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পাটি বানানোর খরচ তুলতে অনেক কষ্ট হয়। মানুষ এখন আধুনিক প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বেশি কেনেন। শীতল পাটি বানাতে খরচ বেশি, তাই দামও বেশি। মানুষ বেশি দাম দিয়ে এখন আর পাটি কেনেন না। তারা শুধু দেখেন, আর চলে যান। আমরা ২৫ জন বরিশাল থেকে এসেছি শীতল পাটি বিক্রি করতে। সবারই ব্যবসার একই অবস্থা।’ 

সিলেটের বালাগঞ্জের শীতল পাটি বিখ্যাত। এ অঞ্চলের শীতল পাটির কদর সবচেয়ে বেশি। পাটি বিক্রেতা কালাচান দাশ বলেন, ‘আমরা বেতগাছ সারা বছর চাষ করি। তিন বছর পর একবার বেত তোলা হয়। বেত প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে গরম পানিতে সেদ্ধ করা হয়। পরে চেঁচে চিকন করে পাটি বানাতে হয়। পাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র, মানুষ, রাজহাঁস, গরু, ছাগল, মোরগ ও পালকিসহ নানা রকম চিত্র তুলে ধরা হয়। আমার কাছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দামের পাটি রয়েছে।’

আরেক শীতল পাটি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘ভোলার বিভিন্ন গ্রামে শীতল পাটি বানানো হয়। তবে পাটির কারিগরা আর্থিকভাবে ভালো নেই। এখন অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে একসময় হারিয়ে যাবে বাংলার এই ঐতিহ্য।’