ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির কেজিতে কমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ফার্ম থেকে দাম কমায় বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করায় সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। তবে আলু, ডিম, চিনি, আটার দাম বাড়েনি।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্রয়লারের কেজি ১৭০ টাকা, সোনালিও ২৭০ টাকা

খামার পর্যায়ে মুরগির দাম হঠাৎ করে কমে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে (আড়ত) দাম কমেছে। এর প্রভাবে বাজারেও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ব্রয়লার গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন ও সোনালি চিকেন হাউসের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন ধরে হঠাৎ করে মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। খামার থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হাতিরপুল বাজারের রুহুল আমিনও খবরের কাগজকে বলেন, ‘দামের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০০ ও সোনালি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। গতকাল ব্রয়লার ১৯০ ও সোনালি ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রান্তিক খামারি তথা পোলট্রিশিল্পকে ধ্বংস করতেই করপোরেটরা কয়েক দিন ধরে কম দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করছে। কারণ খামারিরা শেষ হয়ে গেলে তারা ইচ্ছামতো বাড়তি দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করবে।’ তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

ডিমেও একটু স্বস্তি দেখা গেছে। আগের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে আগের মতোই রুই, কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বৈশাখের তাপ সবজিতে

রমজানের প্রথমদিকে বেগুন, শসা, লেবুর চাহিদা বাড়তে থাকায় সেগুলোর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। ঈদ শেষে দাম কমেছে। কিন্তু যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কমেনি। শীতের সবজি শেষ হওয়ায় বাড়তি দামে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার কমে ফুলকপি ও ৪০ থেকে ৫০ টাকার কমে বাঁধাকপির পিস মেলে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলী ও হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম শেখ বলেন, ‘শীতের সবজি শেষ। গরমের সবজি উঠেছে। তার পরও অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, শসা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে লেবুর দাম কমে হালি ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ 

চড়া দামেই চাল বিক্রি 

রমজান মাস থেকেই চালের দাম বাড়তি। হাওরে বোরো ধান উঠলেও বাজারে প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই বাড়তি দামে ভালো মানের মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯৬ টাকা কেজি, রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ ও মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

দাম বাড়ায় সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের

গত ডিসেম্বরে দাম বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৭৫ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা লিটার করা হলেও বাজারে সংকট থেকে যায়। এরপর ভোজ্যতেল মিলমালিকরা বারবার দাম বাড়ার প্রস্তাব করলে সরকার গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত তেলে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা, খোলা বা লুজ তেল এবং পাম তেলে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা লিটার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর পরই বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে গেলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বেড়েছে। তবে নতুন রেটের তেল এখনো বাজারে আসেনি। আগের রেটে তেল বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজির আটা ১২০ টাকা, ছোলার কেজি ১০৫, চিনি ১২০, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আগের মতোই আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

করিডর সুবিধা দেওয়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৫ এএম
করিডর সুবিধা দেওয়ায় বিএনপিতে উদ্বেগ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মায়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে ত্রাণ-সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শর্ত সাপেক্ষে ‘মানবিক করিডর’ সুবিধা দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দলটি। সোমবার (২৮ এপিল) রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

নির্ভযোগ্য সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, করিডর সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। একদিকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় তারা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আবার করিডর সুবিধা দিলে নতুন সংকট তৈরি হবে, যা দেশের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হবে। এই সরকারের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।

সূত্র আরও জানায়, এই সরকার অনির্বাচিত সরকার, তারা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়ে এত বড় চুক্তির করার কে? করিডর চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই সরকার কোনো রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রের বিষয়ে কথা বলা তো কোনো সরকারের বিরুদ্ধে বলা নয়, এটা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়। মৌলিকভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি- বাংলাদেশের ভূখণ্ড তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভঙ্গ করেছে এই সরকার।

৬০টি শর্তে করিডর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আজ একটা খবর দেখে চিন্তিত হলাম। বাংলাদেশের যে বৈদেশিক উপদেষ্টা তৌহিদ সাহেব, তিনি বলছেন, ‘আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা একটা হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ, মানবিক একটা প্যাসেজ দিতে চাচ্ছি।’ অনেক কঠিন কথা, বোঝানো মুশকিল হচ্ছে। অর্থাৎ ওখানে (রাখাইন) যাওয়া যায় না তো, এখন আমাদের বাংলাদেশের চিটাগাং দিয়ে যাওয়া যাবে। ওখানে গিয়ে যোগাযোগ করা যাবে। এখন যোগাযোগ করার জন্য তারা এখন ওখানে হিউম্যানিটরিয়ান প্যাসেজ দিচ্ছে।”

বৈঠকে দুজন সদস্য বলেছেন, ‘যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম থেকে রাখাইন রাজ্যে করিডর দেওয়ার বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছেন না। এটার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর ফলে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ রাখাইন রাজ্য নিয়ে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই বিদেশি শক্তির একটা পরিকল্পনা রয়েছে। ওই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার ভাবনা রয়েছে তাদের। একদিকে আমরা মায়ানমারে রোহিঙ্গা ফেরত দেব, অন্যদিকে রাখাইনে করিডর সুবিধা দেব। এটা তো হতে পারে না। করিডর ইস্যুতে শিগগিরিই সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।’

বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েল যে শুধু বোমা ফেলছে, তা-ই না? ওখানে জাতিসংঘ থেকে খাবার, ওষুধ- এসব পাঠাতে হলে জর্দান অথবা মিসর থেকে রাস্তা তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা, এটা মানবিক কারণে দরকার আছে। তবে আমাদের প্রশ্ন, আজ বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো কেন যে বাংলাদেশকে একটা মানবিক প্যাসেজ দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। আমরা আরেকটা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। বাংলাদেশে এসে কেউ এসে গোলমাল করুক, সেটিও আমরা চাই না। একে তো আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় আছি, তার ওপর মানবিক প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আলোচনা করে চুক্তিতে যাওয়া উচিত ছিল।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব ছিল এই বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা। কথা না বলে তারা (সরকার) এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে।’

এ ছাড়া বৈঠকে আগামীকাল পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ সফল করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়বস্তুও তুলে ধরা হয়।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান (ভার্চুয়ালি), নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ (ভার্চুয়ালি), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (ভার্চুয়ালি)। 

এনবিআরের নজরদারি আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০০ এএম
আয়কর নথি তলব বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এবার বড় মাপের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ নথি তলব করা হয়। একই সঙ্গে গত ছয় মাসে কোন ব্যবসায়ী কী পরিমাণ কত দামে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন তার তথ্য সংগ্রহ করছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি করা হলেও দাম বেড়েছে এমন সব পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমছেই না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছেন। এরা সিন্ডিকেট করে এ কাজ করছেন। এতে সাধারণ আয়ের মানুষ কষ্টে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে আমরা পেঁয়াজ ব্যবসায় যারা সিন্ডিকেট করছেন বলে সন্দেহ করছি, তাদের কর নথি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তাদের কর ফাঁকি খোঁজা হচ্ছে। এনবিআরের অন্যান্য গোয়েন্দা শাখা থেকেও একইভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি এসব সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। বাজারে এর সুফল পড়বে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আয়কর নথি তলব করা হয়েছে। সারা দেশের কর অঞ্চল থেকে এসব নথি ঢাকায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে আনা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা আছেন এ তালিকায়।

দীর্ঘ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ভরা মৌসুমেই বাড়ছে দাম। ঈদের আগে কেজিতে ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬৫-৭০ টাকার কমে মেলে না। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়ৎদার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে এই অজুহাতে দেশের বাজারে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন বাজারেও বাড়ছে দাম। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কাজটা করেন। বাধ্য হয়ে সরকার গত বছর খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করে। এরপর মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলে দাম কমতে থাকে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করি তাদেরও দুর্নাম হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ালে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে আশা করছি।

দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, ‘পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। বৈশাখ মাসের প্রথম থেকেই এই দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা হারুন রশিদও বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজার, নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। ভারত থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি হলেও পেঁয়াজের বাজারে চলে নৈরাজ্য। পাবনা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে থাকেন।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৬৫ টাকায়।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সূত্র মতে, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াকরণে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। তারপরও বছরে কমবেশি আমদানি করা হয় ৯ থেকে ১১ লাখ টন। পেঁয়াজের দাম গত অক্টোবরে লাগামহীন হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিতে প্রযোজ্য মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। এরপর থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ে। আবার দেশেও মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ে। এ জন্য দাম কমে। তবে হালি পেঁয়াজ উঠার পরও অধিকাংশ বাজারে কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
১৫ বছর বয়সেই ভোটার আরাফাত!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই মিথ্যা তথ্যে ভোটার হয়ে ইসির হাতে ধরা খেয়েছে কিশোর মো. আরাফাত। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নামাপুটিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় আরাফাত এবং প্রতিবেশী ভাই জহিরুল ইসলাম জুয়েলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট (তথ্য ব্যবস্থাপনা) প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে তিনি জানান, আরাফাতের প্রকৃত জন্মসাল ২০১০, বয়স ১৫ বছর। তার বয়স ২২ বছর করতে ভুয়া জন্মসনদ বানিয়ে আপলোড করা হয় এবং ছবি, চোখের আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অন্য লোকের। এ বিষয়ে ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর খবরের কাগজকে জানান, ঘটনায় আটক ২ জনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় গিয়ে কাঁদতে দেখা যায় আরাফাতকে। জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, তার এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি আপলোড করা হয়েছে, যাকে তিনি চিনেন না। প্রতিবেশী ভাই জহিরুল তাকে ইসিতে ছবি পরিবর্তন করার জন্য নিয়ে এসেছেন। আরাফাতকে প্রশ্ন করা হয়, সে কীভাবে ভোটার হলো? জবাবে সে বলেছে, ‘আমার ফুপাতো বাইয়ে কইছে যে বিদ্যাশ (কাতার) নিব। আমি হেরে কইছি আইডি কার্ড করন লাগব? হেয় লগে লগে কইছে কইরা দিব।’

আকুতি জানিয়ে আরাফাত বলে, ‘আপা, আমি তারে জোরাজুরি করি নাই। আমি এইট পর্যন্ত পড়ছি। আমার বাবাও বিদ্যাশ থাকে, সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে গিয়ে সে এখনো কাজ পায়নি। আমরা ৩ ভাই এক বোন। অভাবের সংসারে মা আমারেও বিদ্যাশ পাঠাইতে চায়। তাই অই ভাইয়ের কথায় ভোটার হওয়ার আবেদন করি। কাতার পাঠাবে বইলা ভাই আমারে ভোটার হইতে বলে। কারণ এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারুম না, বিদ্যাশে যাইতে পারুম না।’

আরাফাত জানায়, এক মাস আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদের আগেই পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিস থেকে তার ভাই ভোটার হওয়ার আবেদন করিয়ে দেন। তার আগে জহিরুল আরাফাতের ২২ বছরের ভুয়া জন্মসনদ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র বানিয়ে দেন। আরাফাতের এনআইডির আবেদন করাতে জহিরুল স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির সহায়তা নেন। এসব কাজের জন্য এ পর্যন্ত খরচ হিসেবে নেন ৯ হাজার টাকা। তবে পরে জহিরুল রকিকে ভাগের টাকা না দেওয়ায় সে আরাফাতের ছবি ও বায়োমেট্রিক না নিয়ে প্রক্সি হিসেবে অন্য লোকের এসব তথ্য ব্যবহার করে। পরে আরাফাত এনআইডিতে নিজের ছবির বদলে অন্য লোকের ছবি দেখতে পায়। 

এ ঘটনার ব্যাপারে জহিরুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আরাফাতের মায়ের কথায় তিনি এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন। দালাল নন এমন দাবি করে তিনি বলেন, পেশায় তিনি স্থানীয় ভূমি অফিসের আমিন। কৃষিকাজও করেন। আরাফাত সম্পর্কে তার বউয়ের মামাতো ভাই। বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ করতে টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকির কাজটি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে আরাফাতের ছবির বদলে এনআইডিতে অন্য লোকের ছবি বায়োমেট্রিকে আপলোড করা হয়েছে- সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জহিরুল। বিদেশে লোক পাঠাতে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তার কোনো কাজের সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তা অস্বীকার করেন জহিরুল।

আইনে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার শাস্তি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো নাগরিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি, কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলা করলে সেটা এই আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অনূর্ধ্ব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

আরাফাতের ভোটার হওয়ার বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ খবরের কাগজকে জানান, আরাফাত নামে কোনো কিশোর বা ব্যক্তির ভোটার হওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। 

আপনার অফিসের ঝাড়ুদার (রকি) এর মাধ্যমে কোনো কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নলেজে নেই। আমি জানিও না। ঢাকা অফিসে যেহেতু তথ্য চলে গেছে, সেখান থেকে নির্দেশ পেলে সে অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভোটার ও এনআইডি কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের প্রতারণা ও দায়িত্বে অবহেলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। গতকাল সোমবার তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরাফাত নামের ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটি বয়স বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্যে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন অফিসে গতকাল সে তার ছবি পরিবর্তনের জন্য এলে এনআইডির তথ্য ও ছবি, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে থাকা বয়স আর সরাসরি তাকে দেখে আমাদের কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি জানায়, কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর আগেই আরাফাত ভোটার হওয়ার আবেদন করতে যায়। কিন্তু বয়স কম থাকায় কর্মকর্তা তাকে ভোটার বানানো যাবে না বলে জানান। পরে সে এক প্রতিবেশী ভাই জহিরুলের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে আবেদন করে। এ কাজ করিয়ে দিতে তার সেই ভাই দালালের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন অফিসের ঝাড়ুদার রকিকে টাকা দেন। কিন্তু রকি সেই টাকা না পেয়ে অন্য লোকের ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে এনআইডির কাজ শেষ করেন।’ 

এনআইডি শাখার মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ইসিতে ছবি সংশোধন করতে আসা আরাফাতের ভোটার হওয়ার ঘটনা আমরা জানতে পারি। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অফিসে আসা দুজনের সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। আরাফাতের আবেদন এ পর্যায়ে লক করে রাখা হবে। অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের কারসাজিতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরাফাতসহ জালিয়াতিতে জড়িত তার প্রতিবেশী ভাই জহিরুল, স্থানীয় অফিসের ঝাড়ুদার এবং কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট যেন ভূতের বাড়ি
ছবি : খবরের কাগজ

গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ। ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।

এমন চিত্র বাগেরহাটের সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী এতিম ও দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল। এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন।

তারা জানান, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই। ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। 

প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।

এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর। তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি, কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
স্বল্প দামে মিলছে জ্বালানি,  কমছে সিলিন্ডার গ্যাসের দৌরাত্ম্য
ফরিদপুরের শোভারামপুরে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্না করছেন এক গৃহিণী। ইনসেটে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। ছবি: খবরের কাগজ

কেঁচোসারের পর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সফল হয়েছেন ফরিদপুরের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন। জেলার শহরতলির কোমরপুরে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করেছেন তিনি। এখন তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ১০০ ঘনফুট গ্যাস। ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আরও ৪০টি পরিবারকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানান, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে তানিয়াকে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তানিয়া পারভীন একজন নারী উদ্যোক্তা। এর আগে তিনি ইউটিউব দেখে শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন। সেখানেও তিনি দেশের ভেতর একজন সফল উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত। এবার তিনি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। তার এই সফলতায় অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে এলাকার ৬০টি পরিবারের মাঝে দিয়েছেন বায়োগ্যাস। সরকার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা এবং নিজের ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে শুরু করেছেন এই গ্যাস প্ল্যান্ট। সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে কম দামে বায়োগ্যাস পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এদিকে তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। 

বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম জানান, প্রতি মাসে তাদের দুটি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগতো, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে সারা মাসে মাত্র ১১০০ টাকা দিয়ে সেই সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।

আরেক সুবিধাভোগী আকলিমা বেগম জানান, এই বায়োগ্যাস পাওয়াতে তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পরিবারে অনেক সদস্য হাওয়ায় প্রতি মাসে দুই-তিনটি সিলিন্ডার গ্যাস লাগতো। অনেক সময় কাঠখড় পুড়িয়ে রান্নার কাজ চলতো। এখন পুরো মাসে তিনি মাত্র ১১০০ টাকায় পুরো পরিবারের জ্বালানি পাচ্ছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা কে এম জাফর বলেন, ‘তানিয়া পারভীনই প্রথম এলাকায় কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এবার সরকারের সঙ্গে মিলে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস উৎপাদন। এর ফলে আমাদের এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার উপকৃত হবে।’

তানিয়ার প্ল্যান্টে কাজ করা কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা বেকার ছিলাম। এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছর এখানে আমরা চার-পাঁচজন কাজ করছি। আমাদের পুরো পরিবার এখানকার কাজের ওপর নির্ভরশীল।’ 

নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছি। এখন এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বায়োগ্যাস ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৪০টি পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে আমাকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০ ভাগ টাকা নিজে বিনিয়োগ করেছি।’ 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীনের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ ভাগ টাকা এবং তানিয়া পারভীন নিজে ৬০ ভাগ টাকা দিয়ে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট শুরু করেছেন। তিনি এখন ৬০টি পরিবারের মাঝে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছেন। সামনে আরও ৪০টি পরিবারের তিনি দেবেন। ব্যবহার নিরাপদ হওয়ায় বায়োগ্যাস উৎপাদনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।’