
সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির কেজিতে কমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ফার্ম থেকে দাম কমায় বাজারে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করায় সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। তবে আলু, ডিম, চিনি, আটার দাম বাড়েনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্রয়লারের কেজি ১৭০ টাকা, সোনালিও ২৭০ টাকা
খামার পর্যায়ে মুরগির দাম হঠাৎ করে কমে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে (আড়ত) দাম কমেছে। এর প্রভাবে বাজারেও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ব্রয়লার গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন ও সোনালি চিকেন হাউসের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন ধরে হঠাৎ করে মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। খামার থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি। ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৮০ ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হাতিরপুল বাজারের রুহুল আমিনও খবরের কাগজকে বলেন, ‘দামের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। আগের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২০০ ও সোনালি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। গতকাল ব্রয়লার ১৯০ ও সোনালি ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রান্তিক খামারি তথা পোলট্রিশিল্পকে ধ্বংস করতেই করপোরেটরা কয়েক দিন ধরে কম দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করছে। কারণ খামারিরা শেষ হয়ে গেলে তারা ইচ্ছামতো বাড়তি দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করবে।’ তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ডিমেও একটু স্বস্তি দেখা গেছে। আগের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে আগের মতোই রুই, কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বৈশাখের তাপ সবজিতে
রমজানের প্রথমদিকে বেগুন, শসা, লেবুর চাহিদা বাড়তে থাকায় সেগুলোর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। ঈদ শেষে দাম কমেছে। কিন্তু যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কমেনি। শীতের সবজি শেষ হওয়ায় বাড়তি দামে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার কমে ফুলকপি ও ৪০ থেকে ৫০ টাকার কমে বাঁধাকপির পিস মেলে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলী ও হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম শেখ বলেন, ‘শীতের সবজি শেষ। গরমের সবজি উঠেছে। তার পরও অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেগুন ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, শসা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে লেবুর দাম কমে হালি ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
চড়া দামেই চাল বিক্রি
রমজান মাস থেকেই চালের দাম বাড়তি। হাওরে বোরো ধান উঠলেও বাজারে প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই বাড়তি দামে ভালো মানের মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯৬ টাকা কেজি, রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ ও মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ায় সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিন তেলের
গত ডিসেম্বরে দাম বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৭৫ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা লিটার করা হলেও বাজারে সংকট থেকে যায়। এরপর ভোজ্যতেল মিলমালিকরা বারবার দাম বাড়ার প্রস্তাব করলে সরকার গত ১৫ এপ্রিল বোতলজাত তেলে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা, খোলা বা লুজ তেল এবং পাম তেলে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা লিটার বিক্রির ঘোষণা দেয়। এর পরই বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে গেলে খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বেড়েছে। তবে নতুন রেটের তেল এখনো বাজারে আসেনি। আগের রেটে তেল বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজির আটা ১২০ টাকা, ছোলার কেজি ১০৫, চিনি ১২০, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আগের মতোই আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।