ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

মেঘনা গ্রুপ পাচার করেছে ৮০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০০ পিএম
মেঘনা গ্রুপ পাচার করেছে ৮০ হাজার কোটি টাকা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে। অভিযোগের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে গত ৮ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক আহসানুল কবির পলাশের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওই টিমের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত হাতে পেয়েছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা। সেই সব তথ্যের ভিত্তিতে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মোস্তফা কামাল ও তার পরিবারের সব সদস্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করতে আদালতে আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। অবশ্য গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী ও গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার এবং সন্তানদের ৩১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ৩০ দিনের জন্য ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ রাখার আদেশ চেয়ে শিগগিরই আদালতে আবেদন করবেন দুদক কর্মকর্তারা। 

দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে দুদকের একাধিক অনুসন্ধানকারী টিম কিছু দিন ধরেই কাজ করছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ অন্যতম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মেঘনা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার ১৩১ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১২৬ টাকার শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের পণ্য আমদানি করেছেন। তবে এ সময়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী ইনভয়েস মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৪৮ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৩১১ টাকা। সে হিসাবে আমদানির আড়ালে অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে গোপনে ৭৯ হাজার ৭৬২ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৫ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। 

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৩ মার্চ কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের পর গত ৮ এপ্রিল দুদক উপপরিচালক আহসানুল কবির পলাশের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর ২ সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক ও উপসহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন। 

দায়িত্ব পেয়েই অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠান। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। চলতি মাসেই সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হতে পারে। সব তথ্য হাতে পেলে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ রাখতে আদালতে আবেদন করবেন দুদক কর্মকর্তারা। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম। 

মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, বিভিন্নভাবে কর ও রাজস্ব ফাঁকি, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। গত ১৬ বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও নানাভাবে অভিযোগ উত্থাপন হলেও কোনো কর্তৃপক্ষ বা সরকারি দপ্তর তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

অর্থপাচার ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন মোস্তফা কামাল। মেঘনা নদীর জায়গা দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবৈধ দখলে নদী ভরাট করে নষ্ট করেছেন নদীর গতিপথ। বেসরকারি ৯টি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, যার বেশির ভাগই ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ অবস্থায় গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মেঘনা গ্রুপের নানাবিধ দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। 

মোস্তফা কামাল ও তার প্রতিষ্ঠান শিশুখাদ্য বেশি দামে আমদানি করে শুল্কায়নের সময় কম মূল্য দেখিয়ে একদিকে সরকারের শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে সেই টাকা পাচার করেছেন মর্মেও দুদকে একাধিক অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়, এসব দুর্নীতি ও অপকর্মের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগের কর্মীর মতো আচরণ করেছেন তিনি। সে সময় ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও বাধা সৃষ্টি করেন মোস্তফা কামাল। 

পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে গত ডিসেম্বরে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন নতুনভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে একাধিক বিশেষ অনুসন্ধানকারী টিম গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। 

২০১৩ সাল থেকে গ্রুপটির আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে আমদানি কমে যাওয়ায় সে বছর স্বাভাবিকভাবে এর পরিমাণ কমে। ২০২০ সালে এলসি ও শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের পার্থক্য ছিল ২৬৪ কোটি টাকা। অথচ এর আগের ৩ বছর এর পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে গড় শুল্কহার সাড়ে ২৯ শতাংশ। হুন্ডিতে দায় শোধ করায় ৩ থেকে ৫ শতাংশ বেশি খরচ হয় আমদানিকারকের। ফলে সাড়ে ২৯ শতাংশ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির পেছনে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ খরচ হলেও রাষ্ট্রকে একটি বড় অঙ্কের টাকা ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৬০ থেকে ৭০টি নৌযান ও প্রায় ১২০০ মোটরযানের বিপরীতে বিমা পলিসি বাধ্যতামূলক থাকলেও পলিসির ৩০০ কোটি টাকা মোস্তফা কামাল আত্মসাৎ করেন। ব্যাংক কমিশনের ৬৩৮ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকা এবং বীমা পলিসির বিপরীতে ৪ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটির ২৫ কোটি ৫২ লাখ ৪১ হাজার ৩০৫ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে মেঘনা গ্রুপ। ভ্যাট হিসেবে ব্যাংক কমিশনের ১৫ শতাংশ টাকা পাওয়ার কথা রাষ্ট্রের। ভ্যাটের অন্তত ৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৪ টাকা লোপাট করেছে গ্রুপটি। রাষ্ট্রের ভ্যাট ও স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ৪০৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে।

ঋণ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ৯টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া, মোস্তফা কামালসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ। এসব সম্পদের অধিকাংশনই তাদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। 

মোস্তফা কামাল মেঘনা গ্রুপের পাশাপাশি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিরও চেয়ারম্যান। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন মো. জাকারিয়া ও তার ভাই এম এফ কামাল। পরে পরিচালক হন তাদের বোন বিউটি আক্তার ও বিউটির স্বামী মোস্তফা কামাল। ২০০০ সাল পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটি ব্যবসা কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করলেও পরে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।

 

আলোচনায় এখন ইশরাকের মেয়র পদের মেয়াদ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩০ এএম
আলোচনায় এখন ইশরাকের মেয়র পদের মেয়াদ
ইশরাক হোসেন। ফাইল ছবি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তার পদের মেয়াদ নিয়ে চলছে আলোচনা। আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এই আলোচনার মধ্যে রয়েছে, তিনি কি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদে মেয়র থাকবেন, নাকি আগের মেয়াদ থেকে হিসাব করে বাকি কয়দিন থাকবেন? আদালতের রায়ে তাকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও সেখানে মেয়াদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এরপর তার ভক্ত-অনুসারীদের ধারণা ছিল ইসির এ-সংক্রান্ত পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

তবে গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করলেও তার মেয়াদসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাতে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাছউদ গতকাল সোমবার দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘উনি (ইশরাক) কতদিন মেয়র পদে থাকতে পারবেন বা আদৌ থাকতে পারবেন কি না, এসব বিষয়ই নির্ভর করে স্থানীয় সরকারের (মন্ত্রণালয়) ওপর। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন নির্বাচন কমিশন থেকে মেয়র ঘোষণাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিজ্ঞপ্তির ওপর একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কমিশন থেকে।’

প্রসঙ্গত, গত রবিবার ইসি থেকে দেওয়া এই সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ‌‘নৌকা প্রতীক’ এর প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নাম প্রতিস্থাপন করে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

নির্বাচনি আদালতে এই মামলায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ)। দৈনিক খবরের কাগজকে তিনি আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-তে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে।’
তাই আমি মনে করি, তিনি শপথ নেওয়ার পর প্রথম যে সভা করবেন ওই দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়র পদে থাকবেন।”

এদিকে ইশরাক হোসেনের ভক্ত-অনুসারীরা তার বাবা এবং অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার মেয়াদ প্রসঙ্গও টেনেও প্রত্যাশার কথা বলছেন। ভক্ত-অনুসারীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা স্মরণ করছেন, ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। সেই থেকে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ বছর মেয়র ছিলেন তিনি। বিএনপি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে টানা এক দশক ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন খোকা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ ওই মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।

আদালতের ওই রায় ঘোষণার পর থেকেই আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন সামনে আসে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে- ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে কবে শপথ নিচ্ছেন? তিনি কী আসলেই শপথ নিতে পারবেন? এ ছাড়া ওই করপোরেশনের মেয়াদ কী এখনো আছে? থাকলে আর কত দিন আছে? ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের মূলে রয়েছে, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিলের ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হচ্ছে আগামী ১৫ মে। ওই হিসেবে আগামী ১৫ মে তারিখের মধ্যে তিনি শপথ নিতে পারবেন।

শপথকে ঘিরে নানা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তখন জানতে চাইলে, আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ) দৈনিক খবরের কাগজকে বলেছিলেন, ‘আদালত তো উনাকে মেয়র ঘোষণা করেছেনই। এখন শপথের বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবেন। তা ছাড়া পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’

তবে গত রবিবার দেওয়া ইসির সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদ প্রশ্নের জবাব না মেলায় এই নিয়ে আলোচনা চলছেই।

সিফাত/

সিলেটে শত বছর পর টিলাবান্ধব প্রকল্প

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
সিলেটে শত বছর পর টিলাবান্ধব প্রকল্প
সিলেটের বাইশটিলা এলাকায় স্থপতি চিহ্নিত ‘নিঃসঙ্গ টিলাটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এই রূপে দেখা যাবে। ইনসেটে চলমান প্রকল্পের কাজ। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেট নগরীর উত্তর-পূর্ব এলাকাজুড়ে টিলার বিরাট বেষ্টনী। পরিবেশবাদীদের চোখে এগুলো প্রাকৃতিক ঢাল। প্রকৃতির সেই ঢাল এখন আর আগের মতো নেই। নগরায়ণের প্রভাব ও সরকারি প্রকল্পের অবকাঠামোয় কাটা পড়ছে টিলা। তবে এ প্রবণতার বিপরীত চিত্র ছিল শত বছর আগে। শতাব্দীর প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ টিলাগড় এলাকায় স্থানান্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল টিলা রক্ষা করে। টিলার চূড়ায় বা টিলার ঢালে বিভিন্ন স্থাপনা স্থাপনে ছিল টিলাবান্ধব প্রকল্প। 

প্রায় ১০০ বছর পর টিলা রক্ষা করে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে চলেছে সিলেট নগরীর বিমানবন্দরের পাশে বাইশটিলা এলাকায়। প্রকল্প প্রস্তাব থেকে শুরু করে নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে টিলা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ায় সিলেট জেলা পরিষদের এ প্রকল্পটি টিলাবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সিলেট অঞ্চলে টিলাবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নের ইতিহাস নেই বললেই চলে। তথ্য তালাশে জানা গেছে, এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৯২ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩০ বছর পর ১৯২১ সালে কলেজটি সিলেট শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে টিলাগড় এলাকার ‘থ্যাকারে টিলা’ নামক স্থানে স্থানান্তর হয়। স্থানীয় ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ১৭ শতকের শেষভাগে যখন ব্রিটিশ সরকার সিলেট প্রশাসনিক কার্যক্রম তথা কালেক্টরেট সাজায়, তখন টিলাভূমি বেছে নেওয়া হয়েছিল। সিলেটের প্রথম কালেক্টরেট (ডিসি) উইলিয়াম ম্যাইকপিস থ্যাকার তার দাপ্তরিক ভবন নির্মাণ করেছিলেন টিলার চূড়ায়। বর্তমানে এমসি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত সেই টিলাটি অবিকল থাকায় নাম হয়েছে ‘থ্যাকারের টিলা’।

এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের ১২৪ একর জায়গার পুরোটা টিলাভূমি। প্রথম অবকাঠোমো নির্মাণ হয় ১৯২১ সালে। নির্মাণরীতিতে সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নের স্থাপনা স্থাপন করার মূলে ছিল টিলা রক্ষা করা। মূল ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস। নির্মাণ শেষে ১৯২৫ সালে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রীড।
 
শত বছর আগে সরকারিভাবে টিলাবান্ধব সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও পরবর্তী সময়ে তা আর অনুসরণ হয়নি। টিলাগড় এলাকা থেকে শুরু করে সিলেট নগরীর উত্তর-পূর্ব-পশ্চিমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি দুগ্ধ খামার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনে অর্ধশত টিলা কাটা হয়েছে বলে প্রকল্পের নথিতেই উল্লেখ রয়েছে। বাইশটিলায় বাস্তবায়নাধীন সিলেট জেলা পরিষদের প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিলা কেটে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রবণতার মধ্যে জেলা পরিষদের প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে একটি টিলাবান্ধব প্রকল্পের দৃষ্টান্ত। যার পুরোটা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দৃশ্যমান হবে।

বাইশটিলার অবস্থান সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া। নিরিবিলি পরিবেশ ও প্রকৃতি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। সবুজ-পাহাড়-টিলা আর হাওর-বিলের জলরাশি সেখানকার প্রাকৃতিক আকর্ষণ। বাইশটিলার লালবাগ দক্ষিণপাড়ায় সিলেট জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গা ‘ন্যাচারাল পার্ক’ প্রস্তাবিত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

জেলা পরিষদ জানায়, বাইশটিলায় জেলা পরিষদের মোট ৫৬ একর জায়গা রয়েছে। এ জায়গার একটি অংশ বিমানবন্দরের রানওয়ের সংরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর সম্প্রসারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পাঁচটি টিলা ও একটি জলাশয় মিলিয়ে মোট ৪০ একর জায়গা রয়েছে। ন্যাচারাল পার্ক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে সেখানকার প্রকৃতিকে প্রাকৃতিক রাখতে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রকল্প হিসেবে কাজটি শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ খবরের কাগজকে বলেন, প্রকৃতিকে প্রকৃত রেখেই প্রকল্পের কাজ চলছে। বাস্তবায়নের পর গোটা বাইশটিলা এলাকা নতুনরূপে দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। 

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টিলার চূড়ায় ওপেন কটেজের পাশাপাশি ওয়াশরুম, লেকের ওয়াকওয়ে, ঘাট ও সৌন্দর্যকরণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থপতির স্থাপত্য ভাবনা হলো একটি টিলার চূড়ায় অবস্থান করে যাবতীয় সব কাজ সম্পন্ন করারে সুযোগ থাকা। যেমনটি হয়েছিল ১৭ শতকের শেষভাগে থ্যাকারের টিলায়। এর প্রায় ২০০ বছরের মাথায় তা অনুসরণ করে এমসি কলেজের অবকাঠামো নির্মাণে সরকারি কাজে প্রচলন হয়েছিল সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নের স্থাপত্য নির্মাণ। যার ধারাবাহিকতায় সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য সরকারি স্থাপনা হয়েছে সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নে।

পুরো প্রকল্পের নকশা করেছেন স্থপতি রাজন দাশ। টিলাকে অবিকল রেখে স্থাপনা নির্মাণের চ্যালেঞ্জ জয়ে টিলাভূমিতে এই স্থপতির প্রথম স্থাপত্যকর্ম রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি তার নকশায় স্থাপিত। তবে সেই টিলার পুরোটা সুরক্ষা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়জোড়ে। 

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের নাম বাইশটিলা ন্যাচারাল পার্ক। প্রকৃতিকে নষ্ট না করার প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্নে স্থপতির নকশা প্রণয়নের সময় পুরো এলাকা জরিপ করা হয়েছে। এখানকার টিলাগুলোর মধ্যে একটি টিলা আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন)। স্থপতির চোখে এটি ‘নিঃসঙ্গ টিলা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। টিলার চূড়ায় স্থাপনা স্থাপন করা হবে। টিলাটির চারপাশে রয়েছে জলাশয়। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে হাঁটুজল থাকে। জলাশয়ের গভীরতা বাড়িয়ে ছোট ছোট নৌকা চলাচলের সুযোগ তৈরি করা হবে, যা টিলায় যাতায়াতে সরাসরি পথ-সংযোগ প্রাকৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করবে। এতে এয়ারপোর্টসংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। প্রধান সড়কের দিকে একটি পারাপারের ঘাট বা বোট-ইয়ার্ড থাকবে। যেখান থেকে টিলাসংলগ্ন ঘাটে নৌকা ভিড়বে এবং টিলার ভাঁজে ভাঁজে থাকা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে হবে। টিলার গায়ে বসার ছাউনিও থাকবে।

সেকালে থ্যাকারের টিলা থেকে এ কালের বাইশটিলার ‘নিঃসঙ্গ টিলা’ নিয়ে স্থপতি রাজন দাশ তার স্থাপত্যকর্মের বাস্তবায়ন যেন দিব্য চোখে দেখছিলেন। ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট সম্পর্কে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকৃতির লীলাখেলা প্রাকৃতিকভাবে দেখতে আমরা নিঃসঙ্গ টিলার নিঃসঙ্গতা চিরতরে ঘোচাতে চাই। প্রথম ধাপের কাজ শেষে টিলার ঢালে ঋতুভিত্তিক গাছগাছালি রোপণ করা হবে। আলাদা করে চিহ্নিত করা থাকবে বর্ষার গাছ, বসন্তের গাছ। এর মধ্যে এমনও ভাবনার বাস্তবায়ন চিন্তা রয়েছে যে, বছরের ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম সাজে সজ্জিত হবে এলাকা। যাতে একেক ঋতুতে প্রকৃতির একেক সাজ দেখা যায়।’ 

এদিকে টিলাবান্ধব প্রকল্পটি নিয়ে পরিবেশবাদীরা কী ভাবছেন? জানতে চাইলে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালনের সময় বলেছি যে, সিলেট অঞ্চলের টিলাভূমি নিঃশেষ হচ্ছে প্রশাসনিক ব্যর্থতায়। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে এ রকম একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। সেখানে আগে প্রকৃতি রক্ষায় এলিয়েন বৃক্ষ (বিদেশি গাছ) লাগিয়ে বনায়নের নামে সবুজের ক্ষতি করা হয়েছে। সেই সব অপসারণ দরকার। প্রকল্পটির পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে সুন্দর একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। পাশাপাশি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে টিলা রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।’ 

হজ কার্যক্রম শুরু আজ থেকে

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
হজ কার্যক্রম শুরু আজ থেকে
কাবা ঘরে তাওয়াফ করছেন হাজিরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনার হজ ক্যাম্পে আবার প্রাণচঞ্চলতা ফিরেছে। বছর ঘুরে আবার সরব হজক্যাম্প। প্রতিবছর হজে যাওয়ার আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হজযাত্রীরা এই ক্যাম্পে ওঠেন। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ধরতে কয়েক দিন আগেই ক্যাম্পে আসতে শুরু করেছেন দূর-দূরান্তের হজযাত্রীরা। আগামীকাল ২৯ এপ্রিল শুরু হচ্ছে হজের প্রথম ফ্লাইট। এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) হজক্যাম্পে এ বছরের হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। 

নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হচ্ছে হজযাত্রীদের। তবে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন তারা ফ্লাইট নিশ্চিত করতে কয়েক দিন আগে থেকেই ক্যাম্পে আসতে শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকেই হজক্যাম্প মুখর হতে শুরু করেছে হজযাত্রীদের পদচারণে।

গতকাল রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা হজক্যাম্প  ঘুরে দেখা যায়, ফ্লাইটের দুই দিন বাকি থাকায় এবং ক্যাম্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হওয়ায় এখনো খুব একটা ভিড় নেই হজক্যাম্পে। তাই আগত হজযাত্রীদের কাউকেই ক্যাম্পের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। গত কয়েক বছরের মতো এবারও হজযাত্রী ছাড়া কাউকে হজক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট করছেন। কেউবা আবার বাইরে যাচ্ছেন খাওয়া-দাওয়া করতে এবং শেষ সময়ের কেনাকাটা সারতে। 

কুষ্টিয়া থেকে আসা নাজমা আক্তার স্বামীর সঙ্গে এবার হজ করতে যাচ্ছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের ফ্লাইট আগামীকাল রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। তাই আমরা দুদিন আগে চলে এলাম। ক্যাম্পের পরিবেশ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানের পরিবেশ অনেকটা পরিচ্ছন্ন দেখছি। চারপাশ পরিচ্ছন্ন না থাকলে এখানে মশার উৎপাত বেশি থাকে।’ নারীদের থাকার জায়গা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ বেশ ভালো। আর খুব বেশি ভিড় নেই তাই ভালোই আছি।’

দিনাজপুর থেকে এসেছেন মো. মোসলেম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি ভোরেই পৌঁছেছি হজক্যাম্পে। আমার ফ্লাইট ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।’ ক্যাম্পে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি খবরের কাগজকে বললেন, ক্যাম্পের ডরমেটরিতে আমরা অনেকে একসঙ্গে থাকছি। খাবার জন্য ক্যাম্পের মধ্যে ক্যানটিন আছে। তবে আমি আজ অন্যদের সঙ্গে বাইরে খাব। সঙ্গে কিছু জিনিস কেনাকাটা করতে হবে।’ এখানে থাকা-খাওয়ার তেমন সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে একসঙ্গে থাকলেও বাথরুম ও গোসলখানার সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো পরিচ্ছন্ন। তাই সেখানেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। 

হজক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, হজযাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতায় নিয়োজিত আছে অনেক স্কাউট সদস্য। ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার থেকেই তাদের তৎপর উপস্থিতি দেখা যায়। গেটে আইডি কার্ড চেক করে ক্যাম্পে হজযাত্রীদের প্রবেশ করিয়ে কে কোনদিকে যাবেন তাও দেখিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। 

এবারের হজ কার্যক্রম সম্পর্কে হজ অফিসের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি হওয়ায় এবার আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা বেশি। আমরা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করছি। প্রতিবছর ক্যাম্পে হজযাত্রীরা মশার উপদ্রবে কষ্ট করেন। এবার যেন এমন না হয়, সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। ওয়াশরুমগুলোর ব্যাপারেও আমরা তৎপর আছি। সেগুলো যেন পরিচ্ছন্ন থাকে সে জন্য আমরা নজর দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের কিছু ইনোভেশন করেছি। যেমন- এবার একটি অ্যাপ চালু করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে, হঠাৎ কোথাও অসুস্থ হয়ে গেলে তারা একটি ক্লিকেই তাদের লোকেশন জানিয়ে দিতে পারবেন। এতে তাদের আমরা দ্রুত সাহায্য করতে পারব। এ ছাড়া সুলভ মুল্যে রোমিং সিম দেওয়া হচ্ছে। এতে হজযাত্রীরা কানেকটেড থাকতে পারবেন এবং একটি ডেবিট কার্ডও দেওয়া হচ্ছে।’ 

সোমবার এ বছরের হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্যক্রম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও থাকবেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন।’

হজক্যাম্পের ভেতরে হজযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত আছেন অনেক পুলিশ সদস্যও। খোলা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম। হজযাত্রীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট জোনের অফিসার ইনচার্জ তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘এবার হজ কার্যক্রমের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে হজ ক্যাম্পকে ঘিরে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্যাম্পসহ বিমানবন্দর ঘিরে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে থানাকেন্দ্রিক। আমাদের ৩০০-এর বেশি পুলিশ সদস্য এবার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।’ 

হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ১০০ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ ও বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী এবং ৬৫ শতাংশ পুরুষ রয়েছেন। পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মোট হজযাত্রীর ৮০ শতাংশের ভিসা হয়েছে। এ ছাড়া হজ ব্যবস্থাপনার জন্য এ বছর সরকারি ১১২ ও বেসরকারি গাইড থাকবেন ১ হাজার ৭৪৩ জন। ৭০ মোয়াল্লেম হজযাত্রীদের সার্বিক সহযোগিতায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হজক্যাম্প থেকে রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ওই সময় পর্যন্ত ক্যাম্পে রিপোর্ট করেছেন ১৫৫৬ জন।

হজ ফ্লাইট

২০২৫ সালের পবিত্র হজ ফ্লাইট শুরু আগামী ২৯ এপ্রিল। ওই দিন ৪১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। হজের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। 

হজযাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশসহ তিনটি এয়ারলাইনস এবার কাজ করবে। ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে ৩১ মে হজের শেষ ফ্লাইট সৌদি আরব যাবে। ফিরতি ফ্লাইট ১০ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ১০ জুলাই। যাত্রী পরিবহনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ১১৮, সাউদিয়া ৮০ ও নাস এয়ারলাইনসের ৩৪ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এ ছাড়া বিমান ১০৮টি, সাউদিয়া ৭৯টি ও ফ্লাই নাস ৩৪টি ফিরতি ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ বিমান জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টায় এবার বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট উড়বে। এবার আমরা আমাদের নিজস্ব এয়ারক্রাফটে যাত্রী পরিবহন করছি। মোট ৪টি এয়ারক্রাফট ব্যবহার করছি। এবার প্রায় ৪৪ হাজার হজযাত্রী বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে।   

সড়কে সবাই যেন রাজা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
সড়কে সবাই যেন রাজা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

রাজধানীর সড়কগুলো যেন মগের মল্লুক। কিসের ট্রাফিক আইন? আর কিসের সিগন্যাল? সড়কে সবাই যেন রাজা। কারণ ট্রাফিক আইন থাকলেও সেটি তোয়াক্কা করছেন না অধিকাংশ চালক-আরোহী; এমনকি পথচারীরাও। বেশির ভাগ সড়কের মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থা ধরে রাখতে হচ্ছে লাঠি-বাঁশি কিংবা হাত উঁচিয়ে। কোথাও আবার সিগন্যাল কার্যকর করতে সড়কের মুখে দড়ি বা রশি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখতে হচ্ছে। সেখানেও পারলে সেই ব্যারিকেড ভেঙে ছুটে চলতে চান একশ্রেণির চালক। সিগন্যালে একটু অপেক্ষা করতে হলেই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন তারা। বাগবিতণ্ডা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে।

অন্যদিকে বিজয় সরণির মোড়, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগসহ প্রায় সব কটি ভিআইপি রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পথচারীরা কোনো নিয়মনীতির ধার ধারছেন না। রাস্তার চতুর্দিক থেকে তারা ছোটাছুটি করে রাস্তা পার হচ্ছেন। পুলিশ, ট্রাফিক, দায়িত্ব পালনরত ছাত্র কারও কথার তোয়াক্কা করছেন না তারা। ফলে কোনো যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এর ফলে প্রচণ্ড জট লেগে যাচ্ছে এসব সড়কে। 

খবরের কাগজের অপরাধ বিভাগের একাধিক প্রতিবেদক গত এক সপ্তাহে রাজধানীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবস্থান করে দেখেছেন- অধিকাংশ সড়কে ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে প্রধান সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য এখন ট্রাফিকের সব যেন আইন বা শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। গাড়িচালক, রিকশাচালক, পথচারী- প্রায় সবাইকেই ট্রাফিক আইন বা নিয়ম ভেঙে চলতে দেখা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার, বেপরোয়া গতিতে চলাচল, সংকেত (ইন্ডিকেটর) না দিয়ে লেন পরিবর্তন, অহেতুক হর্ন বাজানো, যত্রতত্র রাস্তায় যানবাহন দাঁড়ানো, সড়কের মাঝে গণপরিবহনে যাত্রী তোলা-নামানো, আঁকা-বাঁকাভাবে বা বিশৃঙ্খলভাবে সড়কে গণপরিবহন দাঁড়ানো, ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাত ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা, উল্টোপথে গাড়ি চলাচলসহ অসংখ্য বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। 

বিজয় সরণিতে ঝুঁকিপূর্ণ পারপার 

গত শনিবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর বিজয় সরণি সিগন্যালে অবস্থানকালে দেখা যায়, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যানবাহনের ভিড়ে একজন ব্যক্তি তার দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখনো কোনো সিগন্যাল পড়েনি। তাদের পাশ দিয়েই দ্রুতগতিতে দুটি মোটরসাইকেল চলে যায়। পেছনে সারি সারি গাড়ি হর্ন দিচ্ছিল, আর থেমে থেমে চলছিল। পেছন দিয়ে দ্রুতগতিতে অটোরিকশা যাচ্ছিল। এতে তিনি দু-একবার আতঙ্কে থমকে দাঁড়ান। পরে হাতের ইশারা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি পার হন। 

পরে ওই পথচারী ব্যক্তি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাই দ্রুত রাস্তা পার হয়ে রিকশা নিয়ে বাসায় যেতে এই ঝুঁকি নিয়েছিলাম। রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়েও গাড়ি উঠে আছে, পথচারী পার হওয়ার জায়গা নেই। তাই গাড়ির সামনে দিয়েই পার হচ্ছিলাম। কিন্তু এটা ঠিক হয়নি। পার হতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, কতটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছি।’ 

এ সময় বিজয় সরণি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সার্জেন্ট কাজল কুমার বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘সবার প্রথমে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না এলে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকরী ফলাফল আসবে না। সবাই যদি সচেতন হন, দুর্ঘটনার হার অনেক কমে যাবে।’ 

কারওয়ান বাজার-গ্রিন রোড সিগন্যালে বাইক ও রিকশার ভোঁ দৌড় 

গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীদের ব্যাপক বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। এখানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা একদিকে আটকালে আরেক দিক দিয়ে সবাই নিয়ম ভেঙে চলতে থাকে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে কারওয়ান বাজারের অদূরে গ্রিন রোড সিগন্যালেও দেখা যায় প্রায় অভিন্ন চিত্র। এখানে মোড়ের চারদিকেই তখন যানবাহনের বেশ চাপ। এ সময় কারওয়ান বাজারের দিক থেকে পান্থপথমুখী অংশে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল (অনুপ) শৃঙ্খলা রক্ষায় মোড়ের আরও কিছুটা আগেই গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সামনের দিকে থাকা কিছু মোটরসাইকেল এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার যেন তর সইছিল না। চাকা ঘুরিয়ে একটু একটু করে একপর্যায়ে মোড়ের একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাইক ও রিকশাগুলো। এর মাঝে ওই কনস্টেবল হাত উঠিয়ে তাদের আর না এগোতে নিষেধ করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উল্টো দিকের অন্য একটি সিগন্যাল ছেড়ে দিতেই সামনে থাকা দুটি বাইক ও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভোঁ দৌড় দিয়ে ছুটতে থাকে। ঠিক এমন সময় পেছনের দিক থেকে আরেকটি বাইক এগোনোর চেষ্টা করলে ওই মোটরসাইকেলকে (ঢাকা মেট্রো হ ৫৯-৫৩৪০) সামনে থেকে হাত দিয়ে জোর করে আটকে রাখেন ট্রাফিক কনস্টেবল অনুপ। এই নিয়ে ওই বাইকচালক ও আরোহীর সঙ্গে দায়িত্বরত ওই পুলিশ সদস্যের খানিকটা বাগবিতন্ডাও হয়। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও রিকশা সিগন্যাল অমান্য করে মোড় পার হয়ে চলে যায়। 

উত্তরায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট 

শনিবার দুপুর সোয়া ১টায় উত্তরা হাউস বিল্ডিং সিগন্যালে চারদিক থেকেই যানবাহন ও পথচারীর চাপ দেখা যায়। আব্দুল্লাহপুর থেকে মহাখালীগামী সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল পরিস্থান পরিবহন ও রাইদা পরিবহনের দুটি বাস। এতে পেছনে থাকা গাড়িগুলো আটকে যানজটে পড়েছিল। তার মাঝে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো সড়কে অর্ধেক অংশ দখল করে এলোপাতাড়ি ছুটছিল। পাশে সড়কের খানিকটা দখলে রেখেছিল রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলগুলো। এলোমেলোভাবে পার হচ্ছিলেন পথচারীরা। 

ওই দিন দুপুরে টঙ্গী-উত্তরা ফ্লাইওভার থেকে যানবাহনগুলো নেমে এই সিগন্যালে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। কারণ সামনের দিকে নানা ধরনের যানবাহনের জটলা। সড়কে চলন্ত বাস থামিয়েও পথচারীরা দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। যদিও সেখানে ফুটওভার ব্রিজ ছিল, তবুও পথচারীদের সেটিতে উঠতে অনীহা দেখা গেছে। মূল সড়ক থেকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল অ্যাভিনিউ সড়কের প্রায় পুরোটি ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে ছিল। আজমপুর থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে জসীমউদ্‌দীন মোড়। সেখানেও রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল দেখা যায়। উত্তরা থেকে বিমানবন্দন সিগন্যাল পর্যন্ত দেখা যায় প্রায় অভিন্ন চিত্র।

এ সময় আজমপুর ট্রাফিক বক্সের দায়িত্বরত সার্জেন্ট এস এম নকীব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এরা কোনো আইন মানতে চায় না। প্রতিদিন অনিয়মের কারণে এই বাহনটি ডাম্পিং করা হচ্ছে, তার পরও শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না।’ 

মিরপুরের সড়কগুলোতে উল্টোপথে চলাচল 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুর-১২ নম্বর (পল্লবী) মোড় থেকে মিরপুর-১১ নম্বর হয়ে সোজা ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়কেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বেপরোয়া চলাচল করছে। এই সড়কের উভয় পাশে উল্টোপথেও চলছিল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। সড়কের মোড়ে মোড়ে জটলা করে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের। এই সড়কে গণপরিবহনগুলোও কাউন্টার ছাড়াই যত্রতত্র যাত্রী ওঠাচ্ছিল ও নামাচ্ছিল। এ ছাড়া মোটরসাইকেলচালকরাও যে যার মতো সড়কে চলাচল করছিলেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর-১০ নম্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত সার্জেন্ট আনিচুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। সবাই কমবেশি আইন মানছেন, কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা বেপরোয়া চলাচল করছেন।’
ফার্মগেটে রাস্তা-ফুটপাত যানবাহনের দখলে 

রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেট-খামারবাড়ি মোড়েও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উল্টোপথে চলছিল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, পথচারীসহ প্রায় সবাই। কয়েকটি পয়েন্টে দেখা গেছে, পথচারী পারপারের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন। এসব এলাকার সড়কগুলোর ফুটপাতজুড়ে দোকান বসতে দেখা যায়। ফার্মগেটে মোড়ের আগে রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে জটলা করে রাখা হয় লেগুনা, ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে ফার্মগেট-খামারবাড়ি পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশার বেশ চলাচল। যার বেশির ভাগ আবার উল্টোপথেই চলছিল। মূল সড়কে বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরও অনেকটা যেন নির্বিকারভাবে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় এসব পয়েন্টে।

শ্যামলীর শিশুমেলার সামনে সড়কে পথচারীরা নেমেই ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও শিশুমেলার মুখে বিড়ম্বনায় পড়েন। শাওন নামে এক পথচারী খবরের কাগজকে বলেন, ফুটপাতজুড়ে দোকান আর রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা। হাঁটার জায়গা নেই। পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনার দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ কী বলছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে মিরপুরে পথচারীদের জন্য সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সহায়তা পেলে এসব সিগন্যাল বাতি পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব পয়েন্টে বসানো হবে। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিং বাইকারদের বিশৃঙ্খলা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো মূল সড়কে চলাচলের জন্য চালক ও যাত্রী উভয়ের সমান দোষ। এ ছাড়া পথচারীদের জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের প্রবণতা খুব কম। এ জন্য ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান 

গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ দিনে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এই সময়ে মোট ২৫ হাজার ৩০৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন হাজার ১০১টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১ হাজার ৩২৭টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১২৯টি গাড়ি ডাম্পিং এবং ৫৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৫ এএম
দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

দুবাইয়ে ১২৯ বাংলাদেশির ৮৪৭টি সম্পদের (প্রপার্টি) খোঁজ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব সম্পদের মধ্যে আলিশান ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট, বাড়ি, দোকান, বাণিজ্যিক স্থাপনা, অফিস আছে। এসব সম্পদের মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে হিসাব কষা হয়েছে। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে এসব সম্পদ কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর একযোগে তদন্ত করছে। গত আট মাস তদন্তের পর এসব ব্যক্তির নাম ও তাদের সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ তালিকায় আরও ব্যক্তি ও তাদের সম্পদের হিসাব যোগ হবে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এনবিআর থেকে এসব ব্যক্তি ও তাদের সম্পদের তালিকা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতি এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে অর্জিত অর্থ দেশে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এফসিএমএ খবরের কাগজকে বলেন, অর্থ পাচার করে বিদেশে অর্থ জমানো, সম্পদ করার দিন শেষ হতে চলেছে। অতীতে এসব অপরাধ করে পার পাওয়া গেলেও বর্তমান সরকারের সময় তা পার পাওয়া যাবে না। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তদন্ত চলছে। অর্থ পাচারকারীদের ধরতে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করছে।

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অর্থ পাচারকারীর মধ্যে সাবেক সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সবচেয়ে বেশি ১৩৬টি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট, ভিলা, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এসবের মূল্য ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে হিসাব কষা হয়েছে। 

এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আশিকুর রহমান লস্করের ৩০টি ফ্ল্যাট, আজিজ আল কায়সারের ১৪টি ফ্ল্যাট, হাসান মাহমুদ ও চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের চারটি করে ফ্ল্যাট, আবু ইউসূফ এমডি আবদুল্লাহর ছয়টি ফ্ল্যাট, আহমাদ ইমরান চৌধুরীর ১০টি ফ্ল্যাট, মিজানুর রহমানের চারটি ফ্ল্যাট, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর পাঁচটি ফ্ল্যাট, আঞ্জুমান আরা সাইদির পাঁচটি ফ্ল্যাট, আনোয়ারা বেগমের চারটি ফ্ল্যাট, ফারহানা মোনের চারটি ফ্ল্যাট, ফারজানা চৌধুরীর সাতটি, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও হাজি মোস্তফা ভূঁইয়ার যৌথ নামে ১০টি, এইচ বি এম ইকবালের এক নামে আটটি ফ্ল্যাট এবং এ কে এম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যৌথ নামে আরও আটটি ফ্ল্যাট আছে, আবদুল মজিদ আল মো. মকবুলের নামে ১০টি ফ্ল্যাট, মির্জা সায়মা মাহমুদের নামে ১০টি ফ্ল্যাট, কাজী মো. ওসমানের ১২টি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খালিদ হেকমত আল ওবাইদির নামে ১৩টি ভিলা, ইফতেখার রানার নামে দুটি ভিলা ও দুটি বাণিজ্যিক স্থাপনা, এম সাজ্জাদ আলমের নামে আটটি ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট, হাসান রেজা মাইদুল ইসলামের নামে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট, হুমায়রা সেলিম ও সেলিমুল হক এশার নামে যৌথভাবে বুর্জ খলিফায় চারটি ফ্ল্যাট, মনোজ কান্তি পালের নামেও বুর্জ খলিফায় ১৪টি, আরমান হোসেনের নামে আটটি দোকান ও দু্টি অফিস, মো. সালমানের ১১টি ভিলা, মো. সাইফুল আলমের নামে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট, মো. ইদরিস শাকুরের নামে ১৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, ছয়টি ভিলা ও একটি হোটেল, মোস্তফিজুর রহমানের নামে ২০টি ফ্ল্যাট, ১৩টি ভিলা ও ১১টি বাড়ি, নজরুল ইসলাম আনু মিয়ার আটটি ভিলা, রুবাইত লস্করের ৩৮ প্রপার্টির খোঁজ পাওয়া গেছে; এর মধ্যে ফ্ল্যাট, ভিলা ও বাড়ির খোঁজও পাওয়া গেছে। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, এসব ব্যক্তি বেশির ভাগ অর্থ হুন্ডিতে পাচার করেছেন। অনেকে আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে মিথ্যা তথ্য দিয়েও পাচার করেছেন। নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে (হিসাব) অর্থ জমা না রেখে অন্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ সময়ে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) থেকে বেশির ভাগ অর্থ তুলে নিয়েছেন, যা হুন্ডিতে পাচার করে দিয়েছেন। বিগত সরকারের সময়ে গত ১৫-১৬ বছর বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব অর্থের প্রায় সবটা পাচার করে দিয়েছেন।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব ব্যক্তির দেশেও প্রচুর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের বেশির ভাগই বেনামে করা। অভিযোগ আছে, এসব ব্যক্তি দুবাই ছাড়াও অন্যান্য দেশেও সম্পদ করেছেন। তবে দুবাইয়ে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, এ পর্যন্ত বিগত সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এক হাজারের বেশি ব্যক্তির অর্থ পাচারের তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ব্যক্তি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এদের আয়ের বৈধ উৎস না থাকায় অর্থ পাচার করেছেন। এদের অনেকে পাচার করা অর্থের চেয়ে অনেক কম পরিমাণ দেশে রেখেছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন বাড়তে থাকে, তখন অনেকে নিজের অ্যাকাউন্টে যা ছিল তার প্রায় সবটা তুলে পাচার করে দিয়েছেন। এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) ফ্রিজ (হিসাব জব্দ) করলেও ফাঁকি দেওয়া করের সমান টাকা পাওয়া যায়নি। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থার (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, বিগত সরকারের এসব ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তাদের অবৈধ ও বৈধ সব অর্থ পাচার করে দিয়েছেন। পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে যে দেশে পাচার হয়েছে, সে দেশে এসব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে ওই দেশে ল’ফার্ম নিয়োগ দিয়ে আইনি পথে পাচারের অর্থ আদায় করতে হবে। বিদেশের সম্পদের দলিল জোগাড় করে বিক্রি করে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। তবে সরকার জোর দিয়ে কাজ করলে পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। 

অন্যদিকে ৪৫৯ বাংলাদেশির অর্থ পাচার করে গোল্ডেন ভিসায় দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে ৭০ জনকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।