
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তার পদের মেয়াদ নিয়ে চলছে আলোচনা। আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এই আলোচনার মধ্যে রয়েছে, তিনি কি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদে মেয়র থাকবেন, নাকি আগের মেয়াদ থেকে হিসাব করে বাকি কয়দিন থাকবেন? আদালতের রায়ে তাকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও সেখানে মেয়াদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এরপর তার ভক্ত-অনুসারীদের ধারণা ছিল ইসির এ-সংক্রান্ত পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
তবে গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করলেও তার মেয়াদসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাছউদ গতকাল সোমবার দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘উনি (ইশরাক) কতদিন মেয়র পদে থাকতে পারবেন বা আদৌ থাকতে পারবেন কি না, এসব বিষয়ই নির্ভর করে স্থানীয় সরকারের (মন্ত্রণালয়) ওপর। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন নির্বাচন কমিশন থেকে মেয়র ঘোষণাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিজ্ঞপ্তির ওপর একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কমিশন থেকে।’
প্রসঙ্গত, গত রবিবার ইসি থেকে দেওয়া এই সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ‘নৌকা প্রতীক’ এর প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নাম প্রতিস্থাপন করে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
নির্বাচনি আদালতে এই মামলায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ)। দৈনিক খবরের কাগজকে তিনি আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-তে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে।’
তাই আমি মনে করি, তিনি শপথ নেওয়ার পর প্রথম যে সভা করবেন ওই দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়র পদে থাকবেন।”
এদিকে ইশরাক হোসেনের ভক্ত-অনুসারীরা তার বাবা এবং অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার মেয়াদ প্রসঙ্গও টেনেও প্রত্যাশার কথা বলছেন। ভক্ত-অনুসারীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা স্মরণ করছেন, ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। সেই থেকে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ বছর মেয়র ছিলেন তিনি। বিএনপি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে টানা এক দশক ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন খোকা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ ওই মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।
আদালতের ওই রায় ঘোষণার পর থেকেই আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন সামনে আসে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে- ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে কবে শপথ নিচ্ছেন? তিনি কী আসলেই শপথ নিতে পারবেন? এ ছাড়া ওই করপোরেশনের মেয়াদ কী এখনো আছে? থাকলে আর কত দিন আছে? ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের মূলে রয়েছে, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিলের ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হচ্ছে আগামী ১৫ মে। ওই হিসেবে আগামী ১৫ মে তারিখের মধ্যে তিনি শপথ নিতে পারবেন।
শপথকে ঘিরে নানা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তখন জানতে চাইলে, আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ) দৈনিক খবরের কাগজকে বলেছিলেন, ‘আদালত তো উনাকে মেয়র ঘোষণা করেছেনই। এখন শপথের বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবেন। তা ছাড়া পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’
তবে গত রবিবার দেওয়া ইসির সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদ প্রশ্নের জবাব না মেলায় এই নিয়ে আলোচনা চলছেই।
সিফাত/