ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলোচনায় এখন ইশরাকের মেয়র পদের মেয়াদ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩০ এএম
আলোচনায় এখন ইশরাকের মেয়র পদের মেয়াদ
ইশরাক হোসেন। ফাইল ছবি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তার পদের মেয়াদ নিয়ে চলছে আলোচনা। আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এই আলোচনার মধ্যে রয়েছে, তিনি কি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পাঁচ বছর পূর্ণ মেয়াদে মেয়র থাকবেন, নাকি আগের মেয়াদ থেকে হিসাব করে বাকি কয়দিন থাকবেন? আদালতের রায়ে তাকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও সেখানে মেয়াদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এরপর তার ভক্ত-অনুসারীদের ধারণা ছিল ইসির এ-সংক্রান্ত পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

তবে গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করলেও তার মেয়াদসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাতে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাছউদ গতকাল সোমবার দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘উনি (ইশরাক) কতদিন মেয়র পদে থাকতে পারবেন বা আদৌ থাকতে পারবেন কি না, এসব বিষয়ই নির্ভর করে স্থানীয় সরকারের (মন্ত্রণালয়) ওপর। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন নির্বাচন কমিশন থেকে মেয়র ঘোষণাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিজ্ঞপ্তির ওপর একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কমিশন থেকে।’

প্রসঙ্গত, গত রবিবার ইসি থেকে দেওয়া এই সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ‌‘নৌকা প্রতীক’ এর প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের নাম প্রতিস্থাপন করে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

নির্বাচনি আদালতে এই মামলায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ)। দৈনিক খবরের কাগজকে তিনি আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-তে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে।’
তাই আমি মনে করি, তিনি শপথ নেওয়ার পর প্রথম যে সভা করবেন ওই দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়র পদে থাকবেন।”

এদিকে ইশরাক হোসেনের ভক্ত-অনুসারীরা তার বাবা এবং অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার মেয়াদ প্রসঙ্গও টেনেও প্রত্যাশার কথা বলছেন। ভক্ত-অনুসারীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা স্মরণ করছেন, ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। সেই থেকে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ বছর মেয়র ছিলেন তিনি। বিএনপি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে টানা এক দশক ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন খোকা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৩ মার্চ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ ওই মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।

আদালতের ওই রায় ঘোষণার পর থেকেই আইন-আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন সামনে আসে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে- ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে কবে শপথ নিচ্ছেন? তিনি কী আসলেই শপথ নিতে পারবেন? এ ছাড়া ওই করপোরেশনের মেয়াদ কী এখনো আছে? থাকলে আর কত দিন আছে? ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের মূলে রয়েছে, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিলের ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হচ্ছে আগামী ১৫ মে। ওই হিসেবে আগামী ১৫ মে তারিখের মধ্যে তিনি শপথ নিতে পারবেন।

শপথকে ঘিরে নানা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তখন জানতে চাইলে, আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ) দৈনিক খবরের কাগজকে বলেছিলেন, ‘আদালত তো উনাকে মেয়র ঘোষণা করেছেনই। এখন শপথের বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবেন। তা ছাড়া পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’

তবে গত রবিবার দেওয়া ইসির সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদ প্রশ্নের জবাব না মেলায় এই নিয়ে আলোচনা চলছেই।

সিফাত/

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পথনকশা নেই

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পথনকশা নেই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাংকিং খাতে ক্ষয় ঠেকানো গিয়েছে বলে দাবি করছে বর্তমান সরকার। তবে এখনো স্থিতিশীলতা ফেরেনি। এবারের বাজেটে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাজেট বক্তৃতায় তেমন কোনো পথনকশা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আস্থাহীনতার কারণে ব্যাংকে আমানত খুব বেশি বাড়ছে না। অন্যদিকে, সুদহার বাজারভিত্তিক করায় বেড়েছে ঋণের সুদহার। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদের কিনারে ব্যাংক খাত।

এমন বাস্তবতায় ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতের সংস্কার বিষয়ে তেমন কোনো কিছু উল্লেখ নেই। যা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য নেই। যা মোটেও ঠিক হয়নি। এটি খুবই হতাশাজনক।’

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোই বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে নতুন কোনো পথনকশা নেই। বাজেট বক্তৃতায় বলা উচিত ছিল, তারা চলে যাওয়ার আগে কোন কোন সংস্কার শেষ হবে। কয়টা ব্যাংককে নিষ্পত্তি করে দিয়ে যাবে।

বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এ খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, দেউলিয়াত্ব বা অস্তিত্বের জন্য হুমকি এমন সব ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো: (ক) ব্যাংকিং খাত সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তি তৈরি করতে ব্যাংকগুলোর সম্পদের ব্যাপক গুণগত পর্যালোচনা করা, (খ) নীতি ও প্রবিধানসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং (গ) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চুরি/পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

চাপ সামলানোর বাজেট

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম
চাপ সামলানোর বাজেট

অর্থনীতিতে এখন চলছে নানা সংকট। সবচেড়ে বড় সংকট মূল্যস্ফীতির চাপ। নতুন বাজেট নিয়ে দেশের জনগণের প্রত্যাশা ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। জীবনযাপনে ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা ছিল ব্যক্তিশ্রেণি আয়করে ছাড় দেবেন তিনি। ব্যবসায়ীদের আশা ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে থাকবে প্রণোদনা। কমানো হবে করপোরেট কর। কর্মসংস্থান বাড়াতে থাকবে পদক্ষেপ। প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে রপ্তানিতে কমবে কর। সঞ্চয়কারীদের জন্য থাকবে সুখবর। ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ঘোষণা আসবে সংস্কারমূলক পদক্ষেপের। 

অর্থ উপদেষ্টা সোমবার (২ জুন) যে বাজেট দিলেন তাতে নতুন অর্থবছরে এসব প্রত্যাশার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অনেক আশার কথা শোনালেও সংকট মোকাবিলার দিকনির্দেশনা নেই। বরং নানা ক্ষেত্রে কর ও ভ্যাটের বোঝা চাপিয়েছেন। কয়েক শতাধিক পণ্য আমদানিতে অগ্রিম কর বসানোর প্রস্তাব করেন। বাড়তি রাজস্ব আহরণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কহার বৃদ্ধির কথা বলেন। এসব কর প্রস্তাব কার্যকর হলে আরও চাপে পড়বেন জনগণ। কঠিন হবে জীবনযাপন। অর্থনীতিবিদরা বলেন, অর্থ উপদেষ্টার প্রত্যাশা বড়। পরিকল্পনা দুর্বল। যদিও অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, একটি যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেওয়া হয়েছে। 

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি বলেছে, এই বাজেটে মৌলিক জায়গায় গলদ রয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল খবরের কাগজকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, নতুন বাজেট ব্যয়ের দিক থেকে গতানুগতিক। আয়ের দিক থেকে সাহসী। 

অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’। ৬৪ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্যে তিনি গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। অর্থনীতিতে ঝুঁকির কথা স্বীকার করেন। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নজর না দিয়ে অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করার ওপর গুরুত্ব দেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বলেন, এই শক্তিশালী ভিত্তিই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য গতকাল বেলা ৩টায় বিটিভিতে বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে কোথা থেকে এই ব্যয় মেটানো হবে, ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে সে কথাও তুলে ধরেন। এর আগে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আগামী বাজেট অনুমোদন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অধ্যাদেশ জারি করার পর ঘোষণা করা হয় বাজেট।

যে অর্থবছরটি (২০২৪-২৫) শেষ হতে যাচ্ছে তাতে মূল বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটের আকার আগের বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম, শতকরা হারে যা ১ শতাংশ।

অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। 

প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। এ জন্য প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে। তাই এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।’
 
তারুণ্যকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এ লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’ নামে একটি নতুন উদ্যোগ চালু করা হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘দেশের যুবসমাজের শক্তি ও সম্ভাবনাকে জাতি গঠন এবং আত্মকর্মসংস্থানের দিকে পরিচালিত করার জন্য তাদের সম্পৃক্ততাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে সরকার আসন্ন অর্থবছরে দেশব্যাপী এই উৎসব আয়োজনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন। কিন্তু কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়টি পরিষ্কার করেননি তিনি। খাদ্যনিরাপত্তায় নজর দেন অর্থ উপদেষ্টা। এ জন্য সারের মজুত বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন। বিদেশ থেকে টাকা আনার বিষয়ে নজর দেন অর্থ উপদেষ্টা। বলেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে দুদক কাজ করছে। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রচলিত আইনের পুনর্গঠন ও সংশোধনের প্রস্তাব করেন। 

সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। বয়স্ক, বিধবাসহ ভাতাভোগীদের মাসিক টাকার অঙ্ক ও আওতা বাড়িয়েছেন তিনি। দুস্থদের সহায়তায় চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। এ ছাড়া রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটি যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেওয়া হয়েছে।

কর প্রস্তাব
কর আহরণ বাড়াতে দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদে কৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। একই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে করারোপ ও করছাড় দিয়ে বাড়তি রাজস্ব আহরণের কথা বলেন। আয় থাকুক আর না থাকুক, নতুন করদাতাদের জন্য ১ হাজার টাকা ধার্য করেন তিনি। কৃষিতে নজর দেন। এ খাতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন। সর্বজনীন পেনশন থেকে উদ্ভূত আয়ে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ১২টি সেবা নিতে শুধু টিআইএন জমা দিলে হবে- নতুন বাজেটে এমন বিধান করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবায় উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এই সেবা আরও সহজ হবে। 

যারা বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করেন, নতুন বাজেটে তাদের কর বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণসেবার বিপরীতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে এ খাতের খরচ বাড়বে। অনলাইন ব্যবসায় কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে এই খাতের খরচ বাড়বে। এসব কর প্রস্তাবের মাধ্যমে বাড়তি ১৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

বাজেটের আকার
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ঘোষণা দেন। এটি জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৯ হাজার কোটি টাকা আসবে এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে। 

অর্থায়ন
প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক- এ দুই উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করা হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশি ঋণ থেকে। 

জিডিপির প্রবৃদ্ধি
আগামী বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।

নিমতলী ট্র্যাজেডির ১৫ বছর: এখনো আছে স্বজন হারানোর ব্যথা

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:১৪ এএম
নিমতলী ট্র্যাজেডির ১৫ বছর: এখনো আছে স্বজন হারানোর ব্যথা
ছবি: সংগৃহীত

২০১০ সালের ৩ জুন। পুরান ঢাকার নিমতলীর ৪৩ নবাব কাটরার পাঁচতলা ভবনটি বিয়ের আয়োজনে ঝলমল করছিল। চারদিকে ছিল আনন্দ আর হই-হুল্লোড়। কিন্তু হঠাৎ এক বিস্ফোরণ, তারপরেই ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে আর্তনাদ আর কান্নার রোল শোনা যেতে থাকে। কারণ মুহূর্তে কেমিক্যালের সংস্পর্শে দ্রুতই ছড়িয়ে যায় আগুন। আগুন যখন নিভল, ততক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। যার মধ্যে ছিলেন ভবনটির মালিক গোলজার এলাহীর পরিবারেরই ১১ জন।

সেই ১১ স্বজন হারানোর ব্যথা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন গোলজারসহ বেঁচে থাকা স্বজনরা। কেবল এই পরিবারটি নয়, সেই রাতের ভয়াবহতায় যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদের স্বজনরা এখনো বুকে কষ্ট নিয়ে সময় পার করেন। আজ সেই নিমতলী ট্র্যাজেডির ১৫ বছর পূর্ণ হলো।

দিন যায়, মাস যায়, দেখতে দেখতে বছরও চলে যায়, কিন্তু স্বজনহারাদের কষ্ট যায় না। গত রবিবার নিমতলী গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা এই ভবনসহ আশপাশের যে বাড়িগুলো পুড়েছিল, তা এখনো দেখে চেনার উপায় নেই। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো মেরামতের পর রং করা হয়েছে। ওই দিন যারা দগ্ধ হয়েছিলেন, তাদের পোড়া ক্ষত শুকিয়ে গেলেও কিছুতেই সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না । এখনো তারা দুচোখের পানিতে বুক ভাসান। ওই ভবন ঘেঁষে পশ্চিম পাশে নিহত ব্যক্তিদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নিমতলী এলাকায় কর্মচঞ্চল মানুষের এখনো অনেক ব্যস্ততা। দোকানপাট ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মানুষের জটলা রয়েছে যথারীতি আগের মতোই।  

এলাকাবাসী জানান, সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখানে ৫টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছিল। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই। বাড়িগুলো মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু সেই ভয়াবহ ঘটনা এখনো তারা ভুলতে পারেননি। 

তাদের দাবি, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ঘটনার পর সরকার ও প্রশাসনের লোক তৎপর হলেও এখন আর কেউ দেখতে আসে না তাদের সমস্যা।

নবাব কাটরার ‘দিনসাবেরা’ নামে ওই পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল বা রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২৪ জন। খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলার সময় সেই ভয়ংকার দিনের স্মৃতিচারণা করছিলেন ভবনমালিক গোলজার। পরিবারের ১১ সদস্য হারানোর ব্যথা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। 

গোলজার বলেন, ‘আমার স্ত্রী, দুই সন্তান, মেজো ও ছোট ভাইয়ের পরিবারের ৬ জন এবং আমার মা ও চাচি আগুনে পুড়ে মারা যান। ১৫ বছর আগের সেই দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ওই দিন আমাদের বাসার এক ভাড়াটের একটি বিয়ের আয়োজন ছিল। বিয়ের রান্না হচ্ছিল বাসার নিচে। ওই দিন আমি ও আমার মেজো ভাই মোহাম্মদ দিদার বাসার বাইরে ছিলাম। দুই ছেলের কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করতে বাজারে গিয়েছিলাম। হঠাৎ খবর পাই বাড়িতে আগুন লেগেছে। দৌড়ে বাড়ির সামনে এসে দেখি পুরো বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ভেতরে যারা আটকা পড়েছিলেন, তাদের আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিল। সেই কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে ওঠে, অসুস্থ বোধ করি। সেদিন যেন ছিল লাশের মিছিল, চারদিকে পোড়া  লাশের গন্ধ। ভেতরে ধোঁয়ায় আটকা পড়ে আমার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ১১ জন মারা যায়।’ বলতেই দুচোখ ভিজে আসে হাজি গোলজার এলাহীর।  

গোলজার বলেন, ‘আমার যমজ দুই সন্তান ইমতিয়াজ গোলজার ও ইসতিয়াক গোলজার এবং স্ত্রী ইয়াসমিনের অনেক স্মৃতি। ১৯৯২ সালে দুই সন্তান একসঙ্গে জন্মেছিল। ওরা দুই ভাই মায়ের রান্না খুব পছন্দ করত। মায়ের হাতের তৈরি কাচ্চি ও পায়েস তাদের খুব পছন্দের ছিল। এ ছাড়া বাইরে ফাস্টফুড খেতে তারা খুব পছন্দ করত। বাইরে খেতে খুব এনজয় করত।’ বলতে বলতে চোখ মোছেন গোলজার। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তাদের কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না। প্রতিবছরই ওই দিনটি এলে কষ্ট আরও বাড়ে। বেঁচে থাকলে ছেলে দুটি আজ কত বড় হতো। বাবা হয়ে কাঁধে সন্তানের লাশ বহন করতে হয়েছে, এর চেয়ে বড় কষ্ট পৃথিবীতে আর কী হতে পারে?’

গোলজার জানান, পোড়া বাড়ি মেরামতের জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। প্রতিবছরই এই দিনে মিলাদ মাহফিল, কবর জিয়ারত ও তবারকের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় তিনি পরিবারের নিহত সদস্যদের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।

গোলজারের পাঁচতলা ভবনের বিপরীত পাশেই রয়েছে একটি ইলেকট্রিক দোকান। এখানকার ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাড়িগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। বিদ্যুতের তার এত ঘনভাবে লাগানো যে অনেক জায়গায় জটলা বেধে থাকে। যেকোনো সময় শর্টসার্কিট হতে পারে। এ ছাড়া একটু বৃষ্টিতেই এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। এসব দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’  

প্রতিবছর আজকের এই দিনে নিমতলীবাসী কাঁদেন। স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়।

প্রকাশ্যে বিচার: নুরেমবার্গ থেকে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:৪০ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১০:৫২ এএম
প্রকাশ্যে বিচার: নুরেমবার্গ থেকে বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়া রবিবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এই বিচারকাজ দেশে এবং সারা বিশ্বকে দেখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালের শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এইভাবে কোনো দেশের কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের বিচার প্রক্রিয়া প্রকাশ্যে সম্প্রচারের দৃষ্টান্ত আগে বিশ্বের কোথাও দেখা যায়নি। তবে ইতিহাসখ্যাত জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে প্রায় ২০০ জন জার্মান যুদ্ধাপরাধীর বিচার অনেকটা প্রকাশ্যে হয়েছিল। আধুনিক কালে পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে টেলিভিশনে সরাসরি বিচার সম্প্রচারের তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই প্রথম বলে টেলিভিশনে শেখ হাসিনার বিচারিক কার্যক্রমের সম্প্রচারও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে যেসব সাবেক সরকারপ্রধানের বিচার হয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ শাদের প্রেসিডেন্ট হিসেন হাবরে, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির, মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, চিলির প্রেসিডেন্ট অগুস্তো পিনোশে, ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী পলপট প্রমুখ। 

এদের মধ্যে ওমর আল-বশিরের বিচার হয়েছিল জাতিসংঘের অধীন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্টে (আইসিসি)। আন্তর্জাতিক আদালত প্রথমে তার বিরুদ্ধে পশ্চিম সুদানের দারফুরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে গণহত্যার অভিযোগে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু জাতিসংঘ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আন্তর্জাতিক আদালত তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা বন্ধ করে দেয়। 

আফ্রিকার শাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেন হাবরের বিচার হয় সেনেগালে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অন্য দেশে গঠিত আদালতে সাজা পান। পরে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। 

আরব বসন্তের ঝোড়ো আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যার অভিযোগে মিসরের একটা নিম্ন আদালতে তার আজীবন কারাবাসের সাজা হয়। পরে পুনর্বিচারে তিনি মুক্তি পান। 

চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট অগুস্তো পিনোশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের। বিচার চলাকালে তার মৃত্যু হয়। ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল পটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের। 

এসব সাবেক সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের বিচার জনসমক্ষে হয়নি। তাদের বিচার হয়েছে মূলত লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে মানবতার বিরুদ্ধে বা গণহত্যার বিরুদ্ধে সমকালীন পৃথিবীতে যে বিচারটি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে সেটি হচ্ছে জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে সিরিজ বিচার। এই বিচারটি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ছিল না, তবু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হিসেবে সুপরিচিত। 

আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে ২০০ জার্মান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ দর্শক উপস্থিত থাকতেন। সাংবাদিকদের রেকর্ডসংখ্যক উপস্থিতি ছিল, ২৩টি দেশের ৩২৫ জন সাংবাদিক এই বিচারের সময় উপস্থিত থেকেছেন। পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ইংরেজি, ফরাসি ও রুশ ভাষায় অনুবাদ করে সাংবাদিকদের হাতে দেওয়া হতো। প্রকাশ্য বিচারের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এই নুরেনবার্গ বিচার প্রক্রিয়াটি। 

যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে টেড বান্ডি, উইলিয়াম কেনেডি স্মিথ এবং ও. জে. সিম্পসনের বিচার প্রক্রিয়াও টেলিভিশনে দেখেছেন বিশ্ববাসী। যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে বেন অলিভারের বিচারও সম্প্রচারিত হয়েছে টেলিভিশনে। ইসরায়েলে ১৯৬১ সালে নাৎসি যুদ্ধাপরাধী আইখম্যানের বিচারও টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ব্রাজিলের সুপ্রিম ফেডারেল কোর্ট ও সুপিরিয়র ইলেকটোরাল আদালতে অনুষ্ঠিত সব বিচার ২০০২ সালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছিল। ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর থেকে প্রায় ৭ হাজার মামলার বিচার প্রক্রিয়া ভিডিও টেপ করে সম্প্রচার করা হয়েছিল। আধুনিক কালে টেলিভিশনে সরাসরি বিচার প্রক্রিয়া সম্প্রচারের ইতিহাস তাই নতুন নয়, তবে বাংলাদেশে নতুন।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম সেই নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই প্রথম এই ধরনের বিচার প্রক্রিয়াটি কোর্ট থেকে সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এর আগে এরকম কখনও ঘটেনি। বিচারের স্বচ্ছতার জন্য এই সম্প্রচার বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে দেশবাসী আদালতে কীভাবে বিচারটি হচ্ছে সেটা দেখার সুযোগ পাচ্ছে। 

চ্যালেঞ্জ-বাস্তবতার বাজেট আজ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:১৫ এএম
চ্যালেঞ্জ-বাস্তবতার বাজেট আজ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতি, ভতুর্কিসহ নানামুখী চাপে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে অর্থ উপদেষ্টাকে। দেশে একদিকে চলছে রাজনৈতিক সংকট, অন্যদিকে অর্থনীতির দুরবস্থা- এমন কঠিন বাস্তবতায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

আজ সোমবার নতুন অর্থবছরের বাজেট দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। এটা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ৩টায় বাজেট বক্তৃতা শুরু করবেন অর্থ উপদেষ্টা। তার বক্তৃতা বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এর আগে দুপুর ১২টায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অধ্যাদেশ জারি করে এই বাজেট উপস্থাপনের অনুমোদন দেবেন। 

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ দুই অর্থবছরেই টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

অর্থ উপদেষ্টার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই হবে অর্থ উপদেষ্টার বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগে খরা চলছে। বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে তাকে। এ ছাড়া গতিহীন অর্থনীতিকে সচল করতে মনোযোগ দিতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এবারের বাজেট হবে ব্যতিক্রম। আগের বছরের তুলনায় ছোট হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অর্থাৎ আয় বুঝে ব্যয় করে বাজেট সাজানো হচ্ছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করা হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। এটি হবে বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য। এই বাজেটে কথামালার কোনো ফুলঝুরি থাকবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। 

 বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণ-সহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট প্রণয়ন করে, তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না, অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’ 

বাজেটের আকার

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এটি জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৯ হাজার কোটি টাকা আসবে এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক- এই দুই উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করা হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশি ঋণ থেকে। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকা। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। 

যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কর প্রস্তাবসহ বেশ কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এসব পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট দেওয়া, যার সুফল সবাই পাবেন। 

গরিবরা যাতে কিছুটা স্বস্তি পান সে জন্য নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এ জন্য বয়স্ক ও বিধবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির আওতা ও ভাতা বাড়াচ্ছেন তিনি। আওতা বাড়ছে আরও ১০ লাখ এবং ভাতা বাড়ছে বাড়তি ৫০ থেকে ১০০ টাকা। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবভিত্তিক করতে বাজেট আরও দরিদ্রবান্ধব করা হচ্ছে। গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সহায়তা করা হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে ৫৯৩ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা থাকছে। সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে নজর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য থাকছে ২১০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ। দুস্থ মানুষকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা আরও পাঁচ লাখ বাড়ানো ঘোষণা আসছে। 

কর প্রস্তাব

বাজেটে কিছু ক্ষেত্রে করছাড় আবার কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক- এই তিন খাত থেকে ‘বাড়তি’ শুল্ক আদায় করা হবে। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে মূল বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

আগামী বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে করদাতারা যাতে আগাম হিসাব করে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন, সে জন্য ২০২৬-২৭ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমানের চেয়ে ২৫ হাজার টাকা ছাড় দিয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। 

বেসরকারি খাতের জন্য করপোরেট কর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কমালে বিনিয়োগ বাড়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে করপোরেট করহার কম। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে এই হার অত্যন্ত বেশি। বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তারা এই করহার কমানোর দাবি জানালেও এবারের বাজেটে তা বাড়ছে না। বরং করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকছে। 

পুঁজিবাজার চাঙা করতে কিছু সুখবর দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এখন ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার লেনদেনের ওপর কর হার (টার্নওভার কর) শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নতুন বাজেটে এই হার কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের ঘোষণা আসছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। 
বর্তমানে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি লাভ হোক আর লোকসান হোক ওই প্রতিষ্ঠানকে বছর শেষে মোট লেনদেনের ওপর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এই কর এবার বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।

জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচায় নিবন্ধন ফি ও করহার কমতে পারে। কিছু খাতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের শর্ত শিথিল হতে পারে। যেমন নির্মাণ সংস্থা, জোগানদার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের রিটার্ন দাখিলের মেয়াদ প্রতি মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করার প্রস্তাব থাকছে। ছয় মাসের মধ্যে আগাম কর সমন্বয় করা যাবে- এমন বিধানের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা এখন আছে ৪ মাস। অনলাইনে পণ্য বিক্রি কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় শুল্ক কাঠামো যৌক্তিক করা হচ্ছে। 

ব্যাংকে জমা টাকায় শুল্কছাড়

বাজেটে আবগারি শুল্ক বসানোর সীমা বাড়তে পারে। বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আবগারি শুল্ক আরোপের স্তরও পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।