ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে গরুর খামার, অভিযুক্তের শুনানি আজ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে গরুর খামার, অভিযুক্তের শুনানি আজ
চট্টগ্রামের পশ্চিম খুলশির কাঁঠালতলা এলাকায় পাহাড় কেটে গরুর খামার বানানোর কাজ চলছে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের পশ্চিম খুলশী এলাকায় পাহাড় কেটে গরুর খামার তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় জালালাবাদ কাঁঠালতলা এলাকার প্রভাবশালী একটি চক্র সেখানে এ কাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চক্রটি এরই মধ্যে রাতের আঁধারে বড় একটি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে। উপড়ে ফেলেছে কয়েকশ গাছ।

অভিযোগ উঠেছে, মহানগর যুবদলের সাবেক এক নেতার সহযোগিতায় আরফান নামে বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মী অন্যের জমি দখল করে এ কাজ করছেন। জমির প্রকৃত মালিকও কিছু করতে পারছেন না। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরে আসায় সংস্থাটির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) অভিযুক্তদের শুনানির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসে হাজির থাকার কথা রয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম খুলশীর জালালাবাদের কাঁঠালবাগান ওরফে বরইবাগানের একটি উঁচু পাহাড় কাটা হয়েছে। এলাকাটির চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা। ভেতরে পুরোনো একটি টিনশেড বাড়ি। বাড়ির সামনের অংশ ফাঁকা, অন্যদিকে পাহাড়। সেই পাহাড় কেটেই বড় আকারের খামার গড়ে তোলার কাজ চলছে। সেখানে কাঠ, বাঁশের স্তূপ ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী দেখা যায়। কয়েকজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন।

খামারের অন্যপ্রান্তে সড়কের পাশে পাহাড় কেটে মাটি সরানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সামনের অংশ কেটে সমতল করে দোকান তোলা হচ্ছে। দেয়াল দিয়ে আলাদা প্লট ভাগ করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপর পর্যন্ত এসব দোকানের দেয়াল উঠে গেছে। তবে দোকানগুলো এখনো সম্পন্ন হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাতের বেলায় পাহাড় কাটা হয়। দিনে খামারের কাজ চলে। যেখানে খামার বানানো হচ্ছে সেটি মূলত একটি বসত বাড়ি। সেখানে সবসময় নিরাপত্তা কর্মীরা থাকেন। কোনো গৃহস্থকে থাকতে দেখা যায় না। বাড়িটির আশপাশের জায়গাগুলো সরকারি।’ 

গত ২২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পাহাড়-টিলা কেটে অবৈধভাবে খামার বানানো হচ্ছে। অভিযুক্ত আরফানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দিতে তাকে ২৯ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসে হাজির হতে হবে। যদিও আরফানের দাবি, তিনি এমন কোনো নোটিশ পাননি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একই এলাকার মো. আলম ও জসিম উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তিকে পাহাড় কাটার দায়ে নোটিশ দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। 

এদিকে যাদের জায়গা দখল করে খামার বানানো হচ্ছে, তারা কেউ নিজেদের জমিতে যেতে পারছেন না। একাধিক ব্যক্তির মালিকানায় থাকা ওই জমির অন্যতম অংশীদার আশরাফুল আহসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আবেদন করি। এরপর সেখান থেকে কাট্টলী সার্কেলের এসি ল্যান্ডকে নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু চার মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের জায়গায় যেতে পারছি না। মহানগর যুবদলের সাবেক নেতা আমান উল্লাহর সহযোগিতায় জায়গা দখল করে নেওয়া হয়েছে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক যুবদল নেতা আমান উল্লাহ বলেছেন, ‘আমার রাজনৈতিক দূরদর্শী চিন্তা রয়েছে। এসব বিতর্কিত কাজে জড়িত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। মূলত আমাদের দলের কিছু ছেলে সেখানে কাজে বাধা দেয়। তখন আরফান আমার সহযোগিতা চাইলে আমি ছেলেদের বিরক্ত করতে নিষেধ করি। এরপর তারা চলে যায়। এটাই আমার সম্পৃক্ততা, অন্য কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ 

তিনি দাবি করেন, ‘জায়গাগুলো সরকারি পাহাড়। নানা সময় মেহের আলী, মুজিবসহ স্থানীয় কয়েকজনের সিন্ডিকেট জায়গাগুলো দখল সত্ত্বে বিক্রি করত। দফায় দফায় মালিকানা পরিবর্তন হয়, ঝামেলা হয়।’ 

এদিকে পাহাড় কেটে খামার গড়ে তোলার প্রসঙ্গে মো. আরফান বলেন, ‘পাহাড় কাটার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারও জায়গা দখল করিনি। জায়গাগুলো আমি মেহের আলী নামে একজনের কাছ থেকে খামার করতে লিজ নিয়েছি। আমান ভাইও জানিয়েছেন সব ডকুমেন্ট ঠিক আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো নোটিশ আমি পাইনি।’

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্তকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শুনানি হলে বিস্তারিত বলতে পারব।’ 

প্রকাশ্যে বিচার: নুরেমবার্গ থেকে বাংলাদেশ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:৪০ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১০:৫২ এএম
প্রকাশ্যে বিচার: নুরেমবার্গ থেকে বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়া রবিবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এই বিচারকাজ দেশে এবং সারা বিশ্বকে দেখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালের শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। এইভাবে কোনো দেশের কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের বিচার প্রক্রিয়া প্রকাশ্যে সম্প্রচারের দৃষ্টান্ত আগে বিশ্বের কোথাও দেখা যায়নি। তবে ইতিহাসখ্যাত জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে প্রায় ২০০ জন জার্মান যুদ্ধাপরাধীর বিচার অনেকটা প্রকাশ্যে হয়েছিল। আধুনিক কালে পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে টেলিভিশনে সরাসরি বিচার সম্প্রচারের তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এই প্রথম বলে টেলিভিশনে শেখ হাসিনার বিচারিক কার্যক্রমের সম্প্রচারও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরকম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে যেসব সাবেক সরকারপ্রধানের বিচার হয়েছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ শাদের প্রেসিডেন্ট হিসেন হাবরে, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির, মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, চিলির প্রেসিডেন্ট অগুস্তো পিনোশে, ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী পলপট প্রমুখ। 

এদের মধ্যে ওমর আল-বশিরের বিচার হয়েছিল জাতিসংঘের অধীন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্টে (আইসিসি)। আন্তর্জাতিক আদালত প্রথমে তার বিরুদ্ধে পশ্চিম সুদানের দারফুরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে গণহত্যার অভিযোগে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু জাতিসংঘ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আন্তর্জাতিক আদালত তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা বন্ধ করে দেয়। 

আফ্রিকার শাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেন হাবরের বিচার হয় সেনেগালে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অন্য দেশে গঠিত আদালতে সাজা পান। পরে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। 

আরব বসন্তের ঝোড়ো আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হত্যার অভিযোগে মিসরের একটা নিম্ন আদালতে তার আজীবন কারাবাসের সাজা হয়। পরে পুনর্বিচারে তিনি মুক্তি পান। 

চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট অগুস্তো পিনোশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের। বিচার চলাকালে তার মৃত্যু হয়। ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল পটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের। 

এসব সাবেক সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের বিচার জনসমক্ষে হয়নি। তাদের বিচার হয়েছে মূলত লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে মানবতার বিরুদ্ধে বা গণহত্যার বিরুদ্ধে সমকালীন পৃথিবীতে যে বিচারটি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে সেটি হচ্ছে জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে সিরিজ বিচার। এই বিচারটি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ছিল না, তবু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হিসেবে সুপরিচিত। 

আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনালে ২০০ জার্মান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ দর্শক উপস্থিত থাকতেন। সাংবাদিকদের রেকর্ডসংখ্যক উপস্থিতি ছিল, ২৩টি দেশের ৩২৫ জন সাংবাদিক এই বিচারের সময় উপস্থিত থেকেছেন। পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ইংরেজি, ফরাসি ও রুশ ভাষায় অনুবাদ করে সাংবাদিকদের হাতে দেওয়া হতো। প্রকাশ্য বিচারের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এই নুরেনবার্গ বিচার প্রক্রিয়াটি। 

যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে টেড বান্ডি, উইলিয়াম কেনেডি স্মিথ এবং ও. জে. সিম্পসনের বিচার প্রক্রিয়াও টেলিভিশনে দেখেছেন বিশ্ববাসী। যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে বেন অলিভারের বিচারও সম্প্রচারিত হয়েছে টেলিভিশনে। ইসরায়েলে ১৯৬১ সালে নাৎসি যুদ্ধাপরাধী আইখম্যানের বিচারও টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ব্রাজিলের সুপ্রিম ফেডারেল কোর্ট ও সুপিরিয়র ইলেকটোরাল আদালতে অনুষ্ঠিত সব বিচার ২০০২ সালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছিল। ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর থেকে প্রায় ৭ হাজার মামলার বিচার প্রক্রিয়া ভিডিও টেপ করে সম্প্রচার করা হয়েছিল। আধুনিক কালে টেলিভিশনে সরাসরি বিচার প্রক্রিয়া সম্প্রচারের ইতিহাস তাই নতুন নয়, তবে বাংলাদেশে নতুন।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম সেই নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই প্রথম এই ধরনের বিচার প্রক্রিয়াটি কোর্ট থেকে সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এর আগে এরকম কখনও ঘটেনি। বিচারের স্বচ্ছতার জন্য এই সম্প্রচার বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে দেশবাসী আদালতে কীভাবে বিচারটি হচ্ছে সেটা দেখার সুযোগ পাচ্ছে। 

চ্যালেঞ্জ-বাস্তবতার বাজেট আজ

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:১৫ এএম
চ্যালেঞ্জ-বাস্তবতার বাজেট আজ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতি, ভতুর্কিসহ নানামুখী চাপে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে অর্থ উপদেষ্টাকে। দেশে একদিকে চলছে রাজনৈতিক সংকট, অন্যদিকে অর্থনীতির দুরবস্থা- এমন কঠিন বাস্তবতায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

আজ সোমবার নতুন অর্থবছরের বাজেট দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। এটা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ৩টায় বাজেট বক্তৃতা শুরু করবেন অর্থ উপদেষ্টা। তার বক্তৃতা বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এর আগে দুপুর ১২টায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অধ্যাদেশ জারি করে এই বাজেট উপস্থাপনের অনুমোদন দেবেন। 

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ দুই অর্থবছরেই টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

অর্থ উপদেষ্টার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই হবে অর্থ উপদেষ্টার বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগে খরা চলছে। বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে তাকে। এ ছাড়া গতিহীন অর্থনীতিকে সচল করতে মনোযোগ দিতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এবারের বাজেট হবে ব্যতিক্রম। আগের বছরের তুলনায় ছোট হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অর্থাৎ আয় বুঝে ব্যয় করে বাজেট সাজানো হচ্ছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করা হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। এটি হবে বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য। এই বাজেটে কথামালার কোনো ফুলঝুরি থাকবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। 

 বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজেটের আকারের চেয়ে ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অন্য ক্ষেত্রেও সরকারের আয় বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বৈদেশিক ঋণ-সহায়তার অবস্থাও ততটা ভালো নয়। কাজেই এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি একটা বড় বাজেট প্রণয়ন করে, তাহলে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে। শুধু বাজেট করলেই হবে না, অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, এখন বড় বাজেট করার মতো বাস্তবতা নেই।’ 

বাজেটের আকার

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এটি জিডিপির প্রায় ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত প্রাপ্তি থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১৯ হাজার কোটি টাকা আসবে এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিকভাবে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক- এই দুই উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করা হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশি ঋণ থেকে। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক থেকে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকা। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। 

যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কর প্রস্তাবসহ বেশ কিছু পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এসব পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট দেওয়া, যার সুফল সবাই পাবেন। 

গরিবরা যাতে কিছুটা স্বস্তি পান সে জন্য নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এ জন্য বয়স্ক ও বিধবাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির আওতা ও ভাতা বাড়াচ্ছেন তিনি। আওতা বাড়ছে আরও ১০ লাখ এবং ভাতা বাড়ছে বাড়তি ৫০ থেকে ১০০ টাকা। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবভিত্তিক করতে বাজেট আরও দরিদ্রবান্ধব করা হচ্ছে। গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সহায়তা করা হবে। এ জন্য নতুন বাজেটে ৫৯৩ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা থাকছে। সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে নজর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য থাকছে ২১০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ। দুস্থ মানুষকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা আরও পাঁচ লাখ বাড়ানো ঘোষণা আসছে। 

কর প্রস্তাব

বাজেটে কিছু ক্ষেত্রে করছাড় আবার কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক- এই তিন খাত থেকে ‘বাড়তি’ শুল্ক আদায় করা হবে। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে, তাতে মূল বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

আগামী বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে করদাতারা যাতে আগাম হিসাব করে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন, সে জন্য ২০২৬-২৭ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমানের চেয়ে ২৫ হাজার টাকা ছাড় দিয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। 

বেসরকারি খাতের জন্য করপোরেট কর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কমালে বিনিয়োগ বাড়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে করপোরেট করহার কম। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে এই হার অত্যন্ত বেশি। বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তারা এই করহার কমানোর দাবি জানালেও এবারের বাজেটে তা বাড়ছে না। বরং করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকছে। 

পুঁজিবাজার চাঙা করতে কিছু সুখবর দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এখন ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার লেনদেনের ওপর কর হার (টার্নওভার কর) শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নতুন বাজেটে এই হার কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের ঘোষণা আসছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। 
বর্তমানে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি লাভ হোক আর লোকসান হোক ওই প্রতিষ্ঠানকে বছর শেষে মোট লেনদেনের ওপর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এই কর এবার বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।

জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচায় নিবন্ধন ফি ও করহার কমতে পারে। কিছু খাতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের শর্ত শিথিল হতে পারে। যেমন নির্মাণ সংস্থা, জোগানদার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের রিটার্ন দাখিলের মেয়াদ প্রতি মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করার প্রস্তাব থাকছে। ছয় মাসের মধ্যে আগাম কর সমন্বয় করা যাবে- এমন বিধানের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা এখন আছে ৪ মাস। অনলাইনে পণ্য বিক্রি কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় শুল্ক কাঠামো যৌক্তিক করা হচ্ছে। 

ব্যাংকে জমা টাকায় শুল্কছাড়

বাজেটে আবগারি শুল্ক বসানোর সীমা বাড়তে পারে। বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আবগারি শুল্ক আরোপের স্তরও পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।

চট্টগ্রামে ভবনের নিচতলা হয়ে পড়ছে পরিত্যক্ত

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
চট্টগ্রামে ভবনের নিচতলা হয়ে পড়ছে পরিত্যক্ত
ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহর এশিয়ান হাউজিং আবাসিক এলাকায় ২০ বছর আগে ভবন নির্মাণ করেছেন সোলায়মান। এই সময়ের ব্যবধানে এ আবাসিকে যত ভবন নির্মিত হয়েছে প্রতিটির প্লিন্থ লেভেল একটি থেকে অন্যটি অনেক উঁচু। বাড়ির সামনের সড়কটি সংস্কার করায় সেটিও বাড়ি থেকে উঁচু হয়ে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে এখন তার বাড়ির নিচতলা সড়ক থেকে প্রায় দেড় ফুট নিচে। বৃষ্টি পড়লেই নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়। যে কারণে সেখানে কোনো ভাড়াটিয়া থাকেন না।

সোলায়মান আক্ষেপ করে বলেন, ‘সারা জীবনের আয় দিয়ে শখের বাড়ি বানিয়েছি। এখন না পারছি ভাঙতে, না পারছি উঁচু করতে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উচিত ছিল মাটি ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের লেভেল কত উঁচুতে করতে হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া। তাদের অদূরদর্শীতার কারণে আজ আমার মতো অনেক ভবনমালিক বিপদে পড়েছেন।’

এই চিত্র শুধু এশিয়ান হাউজিংয়ের নয়, পুরো চট্টগ্রাম শহরের একই অবস্থা। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে যারা বাড়ি নির্মাণ করেছেন অল্প বৃষ্টিতেই তাদের বাড়ির নিচতলায় পানি ওঠে যায়। বলতে গেলে শহরের নিচু এলাকার বেশির ভাগ ভবনের নিচতলা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
কোনো ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর আগে জমি যে অবস্থায় থাকে তাকে বলা হয় গ্রাউন্ড লেভেল। নির্মাণকাজ শুরু করার পর গ্রাউন্ড লেভেল থেকে গ্রেট বিম দিয়ে উঁচু করে যে গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণ করা হয় সেটিকে বলা হয় প্লিন্থ লেভেল। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সময় ভূমির গ্রাউন্ড লেভেল থেকে ভবনটির প্লিন্থ লেভেল (ভবনের নিচের যে অংশটি মাটির ওপর থাকে এবং যেখান থেকে ঘরের দেয়াল ওঠা শুরু হয়) কত উঁচুতে হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় না। সিডিএ বলছে বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ আইনে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে তারা এ বিষয়ে নজর দিতে পারছে না। সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় একই এলাকায় পাশাপাশি দুই ভবনের প্লিন্থ লেভেল ভিন্ন। এতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। 

অন্যদিকে, সরকারি সংস্থাগুলোও তাদের ইচ্ছেমতো সড়ক উঁচু করছে। সড়কের সঙ্গে উঁচু হয়ে যাচ্ছে ড্রেনগুলোও। এতে সড়কের দুই পাশের ভবনের নিচতলা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। ক্রমান্বয়ে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে এসব ভবন। 

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘চট্টগ্রামে স্থাপনার প্লিন্থ লেভেল নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। অনেক ভবন গ্রাউন্ড লেভেল থেকে অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ভবনের আসা-যাওয়ার জন্য সড়কের সঙ্গে স্লোপ মেলাতে গিয়ে ফুটপাত এবং সড়ক দখল করছে। যে কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।’ 

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘কোনো পরিকল্পিত শহরের প্রতিটি বাড়ির প্লিন্থ লেভেল এক থাকে। সড়কের লেভেল এবং ভবনের লেভেল কত হবে, তা সিডিএকেই ঠিক করে দিতে হবে। স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদনের সময় বিষয়টি উল্লেখ থাকার কথা। ভবনের লেভেল এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিএর পরিদর্শক রয়েছেন। অনুমোদিত স্থাপনা নকশানুযায়ী যথাযথভাবে নির্মাণ না করলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।’

সরকারি সংস্থাগুলোও অদক্ষতার কথা উল্লেখ করে ড. রাশিদুল হাসান বলেন, ‘আগ্রাবাদ এক্সেস রোড উঁচু করায় সড়কের দুই পাশের অনেক বাড়ি নিচু হয়ে গেছে। অনেক বাড়ির নিচতলা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আগ্রাবাদ, বাকলিয়া ও শুলকবহর এলাকায় এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এসব ভবনের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করলে তা কয়েক হাজার কোটি টাকার কম হবে না। যদিও এ বিষয়ে কেউ কোনো সার্ভে করেনি। সড়কের সঙ্গে সঙ্গে ড্রেনও উঁচু হয়ে যাচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ জি এম সেলিম বলেন, ‘স্থাপনার প্লিন্থ লেভেলের বিষয়ে ইমারত নির্মাণ আইনে কিছু বলা নেই। যে কারণে ভবনের নকশা অনুমোদনের সময় এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয় না।’

চট্টগ্রামে এক দশকেও গতি হয়নি ২১ খালের

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৪৩ এএম
চট্টগ্রামে এক দশকেও গতি হয়নি ২১ খালের
সংস্কার কাজ শেষ করার পর আবারও পলিথিন, ককশিটসহ অপচনশীল দ্রব্যে ভরে গেছে চাক্তাই খাল। চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী রসুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে তোলা। খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে একেক সময় একেক রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশেষ করে ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা কথার ফুলঝুরি ফোটান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না! বৃষ্টি হলেই জলজটের কারণে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এই সমস্যার প্রধান কারণ শহরের খালগুলোর সংস্কার না হওয়া। নগরে খাল রয়েছে ৫৭টি। এর মধ্যে ৩৬টি খালের সংস্কারে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই মেগাপ্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। তবে এখানেও রয়েছে গলদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের বাইরে থাকা বাকি ২১টি খাল সংস্কার করতে না পারলে মেগা প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি মিলবে না। এমনকি এই কাজ যাদের করার কথা সেই সিটি করপোরেশনও গত এক দশকের প্রচেষ্টায় ওই ২১ খালের সংস্কারে কোনো প্রকল্প নিতে পারেনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের ৫৭টি খালের মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাজ চলছে ৩৬ খালের। যার দৈর্ঘ্য ৯৭ কিলোমিটার। প্রকল্পের বাইরে থাকা বাকি ২১ খালের দৈর্ঘ্য ৬৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই ২১ খাল থেকে মাটি উত্তোলনের প্রস্তাব ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ঘনমিটার।

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘ সময়ের। কিন্তু ২০১২ সালের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতে পুরো নগর ডুবে যাওয়ার পর এই সমস্যার দিকে নজর দেয় সরকার। ওই বছর সিটি করপোরেশন একটি নতুন খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করলে ২০১৪ সালের ২৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তা অনুমোদন হয়। বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের এ খাল খনন প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বিভিন্ন ধাপে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬২ কোটি টাকায়। কাজটি এখনো শেষ করতে পারেনি চসিক। 

এরপর ২০১৬ সালে চায়না পাওয়ার নামে একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো শহরের খাল-নালার সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করে চসিক। কিন্তু তার আগেই চট্টগ্রাম শহরের খাল নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তৈরি করা একটি ধারণাপত্রকে প্রকল্প বানিয়ে অনুমোদন করে নিয়ে আসে সিডিএ। এরপর থেকে আর কোনো খাল নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি সংস্থাটি। তাই মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খাল সংস্কার কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।

সম্ভাব্যতা যাচাইও করতে পারেনি চসিক
২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গৃহীত কার্যক্রমের একটি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় ২১ খাল নিয়ে চসিকের প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০২৩ সালে ২১টি খালের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। দরপত্রে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে আনার চেষ্টা করলে তারাও আসেনি।

পাওয়ার চায়নার কাছে আবারও দ্বারস্থ
২০১৬ সালে পাওয়ার চায়না একবার পুরো শহরের খালগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। তাদের আশা ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি তারা করবে। কাজ পাওয়ার আশায় এটা ছিল তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ। কিন্তু সিডিএ প্রকল্প নিয়ে নেওয়ায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এখন ৯ বছর পর তারা আবারও শহরের একাংশের খালের নতুন করে সংস্কার কাজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজের সুযোগ পাচ্ছে। তারা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি প্রকল্পের ডিপিপিও তৈরি করবে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, রাজধানীর একটি হোটেলে চীনের প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার রেন হাও- এর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। চীনা প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম শহরের ২১টি খালের সংস্কার কাজ করতে এখনো আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাওয়ার চায়না জি টু জি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী।’

ডা. শাহাদাত বলেন, ‘পাওয়ার চায়না সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মেয়াদকালে একবার স্টাডি করেছে। তাদের অভিজ্ঞতা আছে। তারপরও তাদের নতুন করে ২১টি খাল নিয়ে স্টাডি করতে বলেছি। স্টাডি শেষে তারা ডিপিপি প্রস্তুত করবে। প্রতিটি খালের পুরোনো রেকর্ড ঘেঁটে ‘আসল খাল’ বের করা হবে। এতে চসিকের কোনো অর্থ খরচ হবে না। কারণ কাজটি সরকারি অর্থায়নে হবে।’

চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যেখানে এক যুগে একটি খালের কাজ করতে পারেনি, সেখানে তারা ২১টি খালের কাজ করতে পারবে- এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তারপরও আমরা আশাবাদী হতে চাই। আমরা তাদেরকে সক্ষম হিসেবে দেখতে চাই। তাদেরকে সফল হিসেবে দেখতে চাই।’ 

তিনি বলেন, ‘সিডিএ ৩৬টি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। বাকি খালের উদ্যোগ সিটি করপোরেশন নিতে পারতো। সরকার যেখানে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ করছে, সেখানে ২১টি খালের সংস্কার কাজের জন্য টাকা দেবে না- এটা বিশ্বাস করতে চাই না। আমার ধারণা, সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে বিষয়টি যথাযথভাবে উত্থাপন করতে পারেননি।’ 

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও নগরবিদ প্রকৌশলী সুভাস বড়ুয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিয়ে মূল কাজ করছে সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন। দুই সংস্থার উচিত ছিল বাদ পড়া বাকি ২১ খাল হয় মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা, অথবা নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা। তারা এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও নগরবাসী এর সুফল পুরোপুরি পাবে না।’ 
চট্টগ্রাম নগরের যত খাল

সিইপিজেড আনন্দবাজার খাল, হোসাইন আহমেদ পাড়া খাল, চরপাড়া, ভাটিয়ারির ধামাইর খাল, চট্টেশ্বরী খাল, কৃষ্ণখালী খাল, ১৫ নং ঘাট এয়ারপোর্ট খাল, বালুখালী খাল, রামপুর খাল, কুয়াইশ খাল, উত্তর সলিমপুরের বারিঙ্গাছাড়া খাল এবং ফরেস্ট খাল। এ ছাড়া নেভাল অ্যাকাডেমি, সিইপিজেড নতুন পাড়া, উত্তর হালিশহর, উত্তর কাট্টলী, লতিফপুর এবং সলিমপুরের স্লুইস গেটের ১১টি সংযুক্ত খাল রয়েছে।

রাজধানীতে জমেনি পশুর হাট

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৭:২৫ এএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ১১:১৬ এএম
রাজধানীতে জমেনি পশুর হাট
ছবি: খবরের কাগজ

মাত্র চার দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাটগুলো। সন্ধ্যার পর থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরুসহ অন্য পশু নিয়ে হাটে ঢুকছেন ব্যাপারীরা। তবে এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি বেচাকেনা।

বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু ও কোরবানির অন্যান্য পশু পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দু-একজন এলেও পশু দেখে ও দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও বিক্রেতারা।

এদিকে গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির ফলে হাটগুলোতে ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি পশুর মলমূত্র জমতে শুরু করেছে। এতে করে একদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, অন্যদিকে হাটের আশপাশের বাসিন্দাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কাস্টমার না থাকায় ব্যাপারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প আর আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন তারা। গতকাল রাজধানীর হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, এবার খামারে পশুর খাবারের দাম বেড়েছে। সঙ্গে শ্রমিক খরচও। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, হাটে ভালো দামে গরু বিক্রি হবে। কিন্তু বেচাকেনা না থাকায় লোকসানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতেই রাজধানীতে শেষ তিন দিন পশু বিক্রি বাড়ে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে ক্রেতা কম দেখা যাচ্ছে। এ বছর বড় গরুর চাহিদাও কম। ছোট ও মাঝারি পশুর চাহিদা রয়েছে। অথচ বড় পশুতে লাভ বেশি হয়। হাটে যতদিন থাকতে হবে, ততদিন ব্যাপারী-শ্রমিকদের নিজস্ব একটা খরচ রয়েছে এবং হাটের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া শেষে লাভ নিয়ে একধরনের শঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় বসেছে পশুর হাট। তবে হাটের নির্ধারিত স্থানের বাইরেও বড় অংশ আবাসিক এলাকা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে পশুর হাট। সড়কের দুই পাশে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি রাখা হয়েছে গরুসহ অন্য পশু। ফলে যানজট, আবর্জনা ও দুর্গন্ধে এখনই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।

হাজারীবাগের হাট ঘুরে দেখা যায়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে অস্থায়ী ছাউনির নিচে গরুর ব্যাপারীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করে আর আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। আর ক্রেতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। হাশেম নামে এক ব্যাপারী বলেন, গত বছর এই সময় দিনে অন্তত ৫-৭টা গরু বিক্রি হতো, এবার ২-৩টাও বিক্রি হচ্ছে না। হাটে লোকজন ঘোরেন, দেখে চলে যান, দাম বললেই চলে যান। কাল থেকে বিক্রি বাড়তে পারে আশা বিক্রেতাদের।

তবে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে হাজারীবাগ হাটে একজন ক্রেতার দেখা মেলে। তিনি বলেন, অনেক বিক্রেতা এখনো চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে দাম কিছুটা কমার আশায় তারা অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে পশুর হাট ও পোস্তগোলা পশুর হাট প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাঁশ, লাঠি এবং ছাউনি তৈরি করে পশু রাখার প্রস্তুতি চলছে হাটে। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে হাটে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ব্যবসার কথা মাথায় রেখে হাট কর্তৃপক্ষ বালু ফেলে গরু রাখার উপযোগী করে তুলেছেন হাটগুলো। ইতোমধ্যে হাটের কয়েকটি স্থানে গরু উঠেছে। কিন্তু হাট এখনো জমে ওঠেনি। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। হাট জমতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পোস্তগোলা পশুর হাটের ব্যাপারী কালাম বলেন, হাটে গরুসহ অন্য পশু আসতে শুরু করেছে। এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। কাস্টমারও তেমন নাই। যারা আসতেছেন, তারা গরু দেখার জন্য আর দাম জানার জন্য আসতেছেন। আশা করছি ঈদের আগে আগে বিক্রি বাড়বে।

এদিকে দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতিও অনেকটা ঢিলেঢালা চলেছে। সংস্থা দুটির অধীনে ১৯টি পশুর হাট বসার কথা। নানা জটিলতায় এখনো হাটগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ইজারাদারদের। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা রাসেল রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ১১টি হাট বসার কথা থাকলেও কোর্টের নির্দেশে দুটি হাট স্থগিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি হাট চূড়ান্ত হয়েছে, বাকি ৩টি সরকারি মূল্যে ইজারা পাওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দক্ষিণের অধীনে হাটের মধ্যে উত্তর শাজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা, হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গায় সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে ডিএসসিসি। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়ের খালি জায়গা নানা জটিলতার কারণে এখনো ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

উত্তর সিটির অধীনে ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গায়, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের খালি জায়গা, মিরপুর-৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা এবং কাঁচকুড়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্টসংলগ্ন পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা ও ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা স্লুইস গেট পর্যন্ত খালি জায়গায় হাট বসবে।