
ঈদযাত্রায় স্বস্তি পেতে অনেকেই এখন প্রাধান্য দেন আকাশপথের ওপর। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ছুটি এবার একসঙ্গে শুরু হচ্ছে। ছুটির শুরুতে চাপ আছে ৪, ৫ ও ৬ তারিখের বেশির ভাগ রুটের ফ্লাইটে। আর ঈদের পর চাপ বেশি কক্সবাজারের ফ্লাইটে। ফলে ওই সব সময়ের উড়োজাহাজের টিকিটের দামও বাড়তি। তাই সম্প্রতি উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল/জেট ফুয়েলের দাম কমলেও তার প্রভাব পড়বে না টিকিটের দামে। এদিকে গত বছরগুলোর মতো এবারও চাপ সামলাতে বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর খবরের কাগজকে বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখী যাত্রীদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে এবং চাপ সামলাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ তিনটি জনপ্রিয় রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রুটগুলো হলো উত্তরের প্রবেশদ্বার সৈয়দপুর, ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী এবং দেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজার।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালিত হবে ২, ৫ ও ৬ জুন। ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে ২, ৩ ও ৫ জুন চলবে অতিরিক্ত ফ্লাইট। আর ৯ জুন ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটেও চলবে বাড়তি ফ্লাইট।
দেশে সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনসটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাপ কম আকাশপথে। এ জন্য আমরা এবার বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করিনি। এখন পর্যন্ত ৪, ৫ ও ৬ তারিখের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীগামী ফ্লাইটের টিকিট। এ ছাড়া ঈদের পর কক্সবাজারের টিকিটের চাহিদা বেশি।’ তিনি আরও বলেন, লম্বা ছুটি পড়ায় এবার সড়ক ও রেলপথকে অনেকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এ ছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকা-সিলেট রুটে আবারও ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রা। পাশাপাশি বর্তমানে এয়ার অ্যাস্ট্রা প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে চারটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে পাঁচটি এবং ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এদিকে চাহিদা বেশি থাকায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টিকিটের দাম বেশি ঈদের আগ মুহূর্তে। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বিশ্লেষণে দেখা যায়, এয়ারলাইনসভেদে ঢাকা-যশোর রুটে ৩০ মের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১১ হাজার টাকায়, যা ৩ মে তে পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৭ হাজার টাকায় আর ৫ জুন সেই একই টিকিটের দাম বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। ৬ জুনও এই দাম দেখাচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে আকাশপথের জনপ্রিয় রুট ঢাকা-রাজশাহীর ৩০ মের টিকিটের দাম দেখাচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত, যা ৩ জুন ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৭ হাজার টাকা এবং ৫ জুন তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঢাকা-সৈয়দপুর রুটের ৩০ মের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকায়, ৩ মের টিকিট পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৭০০ থেকে ৯ হাজার টাকায় এবং ৫ জুনের টিকিটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ঈদের আগে যেখানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে টিকিটের দাম ৩০ মে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার ৭০০ টাকা, ৩ জুন তা পাওয়া যাচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়, ৫ জুন তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সেই একই টিকিট ঈদের পর ৯ জুন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ৩০০ থেকে ১১ হাজার টাকায়। এয়ারলাইনসগুলো বলছে, উড়োজাহাজের টিকিটের দাম প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তন হতে থাকে। ফ্লাইটের দিন যত এগিয়ে আসে টিকিটের দাম তত বাড়ে। তাই এখন যে দাম দেখা যাচ্ছে তা দু-এক দিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে বিমান সংস্থাগুলো। এ ক্ষেত্রে আগেই টিকিট কেনার পরামর্শ তাদের।
এ বিষয়ে রওশন কবীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেসব রুটের টিকিটের চাহিদা বেশি বা বেশির ভাগ টিকিট সেল হয়ে গেছে, সেগুলোর টিকিটের দাম একটু বেশি। চাহিদা থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া ঈদের আগের ফ্লাইটগুলো যাত্রী নিয়ে গেলেও আসে খালি। ফলে সেই খরচও আমাদের যোগ করতে হয়। ঈদের আগে যাওয়ার টিকিটের দাম তাই কিছুটা বাড়ে। কারণ কেবল জেট ফুয়েলের ওপর টিকিটের প্রাইজ নির্ভর করে না। আরও অনুষঙ্গিক অনেক বিষয় থাকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দামই তুলনামুলক কম।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, যে তারিখগুলোতে চাপ বেশি সেদিনের টিকিটের দাম একটু বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সব মিলিয়ে চাপ কম থাকায় এবার টিকিটের দাম অনেকটাই কম। যারা পিকটাইমের টিকিট চান তাদের দ্রুতই টিকিট কাটার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিমানের টিকিটের দাম শেষ সময়ে বেশি বাড়ে। তাই আগে টিকিট কাটলে তুলনামূলক কম প্রাইজে পাওয়া যায়।