ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

বাজেট পেশ সোমবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও দরিদ্রবান্ধব হচ্ছে

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ০৭:৩০ এএম
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও দরিদ্রবান্ধব হচ্ছে
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বড় পরিবর্তন আসছে। গরিবদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি আরও দরিদ্রবান্ধব করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার আগের তুলনায় ছোট হলেও ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে। তরুণদের জন্য থাকছে বিশেষ বরাদ্দ।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চূড়ান্ত করে ফেলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার ২ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে এবার তুলনামূলক ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। অর্থ উপদেষ্টা সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বাজেট হবে সমতাভিত্তিক ও জনকল্যাণমুখী। বাস্তবতার সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ বাজেট দেবেন তিনি।

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করবেন অর্থ উপদেষ্টা। নতুন কোনো করারোপ নয়, বরং করকাঠামোকে যৌক্তিকীকরণ করে ‘বাড়তি’ রাজস্ব আহরণের কৌশল  নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, করকাঠামো যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে কিছুটা ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করবেন সালেহউদ্দিন। সরকারি চাকরিজীবীদের খুশি করতে মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা থাকছে বাজেটে।

এই বাজেটে কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত থাকলেও কিছু খাতে নতুন করে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকছে, যাতে শহিদ পরিবারের সদস্যরা ও আহতরা সম্মানী ভাতা পান। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, যেহেতু আয় সীমিত। তাই ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করে নতুন বাজেট সাজানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গ সামাজিক কর্মসূচি: বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন। নতুন বাজেটে এই কর্মসূচি কমিয়ে ১০০টি করা হচ্ছে। তবে হতদরিদ্রদের জন্য ৩৮টি আলাদা কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।

কর্মসূচির সংখ্যা কমিয়ে আনার ফলে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া আছে, তা মোট বাজেটের ১৬ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, নতুন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা এখন আছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যেসব কর্মসূচি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এই কর্মসূচিকে দেখানো হতো এতদিন। এমন কিছু কর্মসূচি আছে, যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় পড়ে না- সেগুলোকেও আওতায় এনেছে বিগত সরকার। যেমন, পেনশন সুবিধাকেও এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়নসহযোগীরা এ ধরনের কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও বাস্তবমুখী করতে চায় বর্তমান সরকার। এ জন্য হতদরিদ্রদের জন্য পৃথক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ৩৮টি কর্মসূচির আওতায় ৫২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে বয়স্ক, বিধবাসহ অন্য উপকারভোগীর মাসিক ভাতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে উপকারভোগীর সংখ্যা। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো হচ্ছে। এখন সারা দেশে ৫০ লাখ  দুস্থ পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল খাওয়ানো হচ্ছে। এই সংখ্যা আরও ৫ লাখ বাড়ছে। তাদের জন্য ১০ লাখ টন চাল বিতরণের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে, যা এখন আছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায়  প্রতি পরিবারকে ছয় মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হবে। প্রতি কেজির দাম পড়বে ১৫ টাকা। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে গরিবদের জন্য আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি চালু রয়েছে। কাজের বিনিময়ে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয় উপকারভোগীকে। নতুন বাজেটে মজুরি বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হচ্ছে। এখন ৫ লাখ সুবিধাভোগী এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। আগামী বাজেটে সংখ্যা বাড়িয়ে  আরও ৫ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়,বর্তমান সরকার তারুণ্যের শক্তিকে দেশের উন্নয়নকাজে সম্পৃক্ত করতে চায়। সে জন্য তাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য  বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে:  ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট তুলনামূলক ছোট হলেও বাড়ছে ভতুর্কির পরিমাণ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে এটি বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে মোট বরাদ্দ  থাকছে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে তাতে ভর্তুকি ধরা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভর্তুকি অনেকে বেড়েছে। ফলে বাজেট বাস্তবায়নে চাপ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে ভর্তুকি খাতে ব্যয় মোট বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ। ভর্তুকি একটি অন-উৎপাদনশীল খাত। এ জন্য এই খাতে ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য উন্নয়নসহযোগীসহ দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা তাগিদ দিয়ে আসছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হয়। তবে কোন খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে, আর কোন খাতে দেওয়া হবে না- এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য আট বছরে ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ গুণ বা ৯০০ শতাংশ।

বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষি, রপ্তানি, খাদ্য ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে  ভর্তুকি দেয় সরকার। তবে ভর্তুকি ব্যয়ের বেশির ভাগ যায় বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে। বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই দুটি খাতে ভর্তুকি বেশি দিতে হচ্ছে সরকারকে। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুতে মূল বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। পরে সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ বেড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। নতুন বাজেটে প্রাথমিকভাবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ দ্বিগুণ হবে। পাঁচ বছর আগে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি তেলনির্ভর। তেলের দাম বেড়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যে কারণে ভর্তুকি বেশি লাগে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা, যা এখন আছে ৬ হাজার কোটি টাকা। খাদ্যে দেওয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা এখন আছে ৬ হাজার কোটি টাকা। কৃষিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে আছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে দেওয়া হচ্ছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি ও ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই দুটি খাতে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।

সুদ পরিশোধে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব: নতুন বাজেটে একক খাত হিসেবে ঋণের সুদ পরিশোধে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এবার সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২২ শতাংশ। যে অর্থবছরটি শেষ হতে যাচ্ছে তাতে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।  

জাপা থেকে বহিষ্কৃতরা দিশেহারা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১৩ এএম
জাপা থেকে বহিষ্কৃতরা দিশেহারা
খবরের কাগজ ইনফো

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পদ-পদবি খোয়ানো নেতা-কর্মীরা মহাবিপদে পড়েছেন। যদিও কিছু দলছুট নেতাকে সঙ্গে নিয়ে তারা কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু তাতে তারা হালে কতদূর পানি পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এর আগে পৃথক দল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে বড় কিছু করার নজির কম। 

দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভাঙার চেষ্টা অনেকবার হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং ভাঙতে যাওয়া নেতারাই আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেছেন। এই দুটি দলের মতো জাতীয় পার্টিতেও এখন উত্তরাধিকারের রাজনীতি চলছে। জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে জি এম কাদের দলের হাল ধরেছেন। ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি দলের প্রায় সব নেতা-কর্মীর সমর্থনও তার দিকে। এমন পরিস্থিতিতে বহিষ্কৃত নেতারা অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বলে জাপার নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।

দলটির কো-চেয়ার‌ম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চুন্নু সাহেবরা যে কাউন্সিলের আয়োজন করবেন, সেখানে চেয়ারম্যানকে বাদ দেবেন কেমন করে? চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল হয়? নাজিউর রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বেগম রওশন এরশাদরা দল থেকে বের হয়ে আরেকটা দল করেছেন। তাদের দল কি প্রকৃত জাতীয় পার্টি হতে পেরেছে? সেই ব্র্যাকেটবন্দি দলই তো থেকে গেছে। যারা দল থেকে বের হয়ে নতুন দল করেছেন, লোকে তাদের ভুঁইফোঁড় রাজনীতিবিদ বলেছেন।’
 
মোস্তফার ভাষ্যে, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুর ভোটের মাঠে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। 

তিনি বলেন, ‘তারা ভালো করেই জানেন, সোজা পথে নির্বাচন করে তারা কখনো জিততে পারবেন না। তাই তারা নানা দুরভিসন্ধি করেছেন। এবারও ভাবছেন কোনো একটা কারিশমা করে তারা আবারও নির্বাচিত হবেন। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে তারা নতুন দল করার কথা ভাবছেন। কিন্তু তৃণমূলের একজন নেতা-কর্মীও তাদের সঙ্গে নেই।’

রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা বিভাগে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেও বহিষ্কৃত নেতাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। খুলনার একজন নেতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘জি এম কাদের যাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান কি এখন আছে? এতদিন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের সময় তারা এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু এখন তাদের কোনো গতি নেই। তারা দিশেহারা হয়ে গেছেন। ষড়যন্ত্র তারা আগেও করেছেন, এখনো করছেন। আমরা অনেক দিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে পার্টির ফোরামে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। চেয়ারম্যান এতদিনে আমাদের দাবিতে সায় দিলেন। এখন তিনি দলটাকে নিজস্ব ধারায় পরিচালনা করবেন।’

দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত সোমবার জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ার‌ম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। তাদের সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়ামের আরও সাতজন নেতাকে তিনি অব্যাহতি দেন। 

এই ১০ নেতা মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। 

তারা দাবি করেন, জাতীয় পার্টিকে তারা ভাঙতে দেবেন না। দ্রুত দলের দশম জাতীয় কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজন করে জি এম কাদেরের ‘অগণতান্ত্রিক’ সিদ্ধান্তের জবাব দেবেন বলে হুঙ্কারও দেন। তারা বলেন, জি এম কাদের বিধিবহির্ভূতভাবে নেতাদের পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তারা মানেন না।

তবে জাপার নবনিযুক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ বিষয়ে খবরের কাগজকে জানান, জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক করা হয়েছে। 

যেভাবে বিতর্কের সূত্রপাত

গত ২৫ মে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় দলের দশম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। জি এম কাদের তখন দলের কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজন নিয়ে সায় দেন। তবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল বরাদ্দ না পাওয়ায় তিনি কাউন্সিল আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান ওই তিন শীর্ষ নেতা। একপর্যায়ে তারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন। তারা নিজেরাই কাউন্সিল আয়োজনের নানা তোড়জোড় শুরু করেন। গত ২৮ জুন রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারা কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজনের ঘোষণা দেন। তবে তৃণমূলের সমর্থন না পেয়ে তারা সেই কাউন্সিল আয়োজন করতে ব্যর্থ হন।
 
বহিষ্কৃতদের সংবাদ সম্মেলন, বললেন ‘দল ভাঙতে দেব না’

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি, চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতার ধারা বাতিল করতে বলেছি। আমরা হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি। আমাদের এসব কাজ কোনোভাবে দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।’

তিনি দাবি করেন, জাপার দশম কাউন্সিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে দলে কোনো কোরামের আয়োজন করা হয়নি। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপাও উপস্থিত ছিলেন। 

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি এমন কী অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও আমাকে অব্যাহতি দিলেন চেয়াম্যান জি এম কাদের। চেয়ারম্যানের সর্বময় ক্ষমতার ধারা কোনো রাজনৈতিক দলে নেই। আমি বললাম, এই ধারা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি ক্ষেপে গেলেন। বিগত নির্বাচনে আড়াই কোটি টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। সেই টাকার কোনো হিসাব দেননি। পার্টির চাঁদা এবং অনুদানের কোনো হিসাব দেননি তিনি। আমরা তার কাছে এসবের হিসাব চেয়েছি। এটাতো গঠনতন্ত্রবিরোধী হতে পারে না।’

এ সময় চুন্নু বলেন, ‘একতরফাভাবে নেতা নির্বাচিত হতে জি এম কাদের আমাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু আমরা জাতীয় পার্টির রাজনীতি ছাড়ব না। দলে আমাদের অবদান কোনো অংশে কম না। আমরা কোনোভাবে দল ভাঙতে দেব না।’ 

সব সিদ্ধান্ত গঠনতান্ত্রিক: শামীম হায়দার পাটোয়ারী 

বহিষ্কৃত নেতাদের সংসদ সম্মেলনের পর জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারির মতামত নেওয়া হয়েছে; সেই সিদ্ধান্ত প্রেসিডিয়াম সভায় চূড়ান্ত হয়েছে। প্রেসিডিয়াম সভার রেজল্যুশনের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, মানে নেতা-কর্মীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

মহাসচিবের পদে শামীম হায়দারকে নিয়োগ করায় বিতর্ক তুলেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ বিষয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘মহাসচিবের পদ শূন্য হয়েছে। সেই শূন্য পদে সম্পূর্ণ গঠনতান্ত্রিক উপায়ে, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চুন্নুরা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বলে মন্তব্য করেন জাপার নতুন মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সভায় ৭৮টি ইউনিটের মধ্যে ৬৫টি ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এক বাক্যে জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন। তারা বিকল্প কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে যারা বিতর্ক তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানকে তৃণমূলই অনুরোধ করেছে। সিদ্ধান্ত নিতে সভায় কোরাম না হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সত্যি না। কোরাম ছিল। সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র মেনে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন কাউন্সিল হলে জি এম কাদেরই ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।’

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম লাগামহীন

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম লাগামহীন
খবরের কাগজ (ফাইল ফটো)

ভরা মৌসুমেও এবার ইলিশের বাড়ি বরিশালেই চলছে ইলিশের আকাল। খুচরা বাজারে সহজে মিলছে না এ মাছের রাজার। চাঁদপুরেও লাগামহীন দাম। এই দুই জেলার মোকামেই আড়াই হাজার টাকার বেশি দরে ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেই ইলিশের কেজি রাজধানীতে ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, দাম ততই বাড়ছে। অনেকেই দাম শুনে চমকে উঠছেন। খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। ইলিশের এই চড়া দামের জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের। 

তারা বলছেন, আড়তে বেশি দর। এ জন্য কম দামে বিক্রি করা যায় না। অনেকে আবার বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ মাছের আহরণ কমে গেছে। জেলেরা নদীতে আগের মতো পাচ্ছেন না মাছ, যা পাচ্ছেন তা চাহিদার তুলনায় কম। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, এবার ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও বাজারে অতিচড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে সেটার দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে। জাটকার কেজিও ২ হাজার টাকার কমে মেলে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রমজান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই আড়তে দাম বেশি। আমদানি কম, তাই দাম বেশি। ১ কেজির ওপর ওজনের পদ্মার ইলিশের দাম ৩ হাজার টাকা কেজি। ছোটগুলো (২টিতে কেজি) ২ হাজার টাকা কেজি। একই বাজারের মহসিন আলীও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আড়তেই বেশি দর। বড়টি ৩ হাজার টাকা কেজি। এর কমে হবে না। দেখেন না ২ হাজার ৭০০ টাকা কেজি বলার পরও দিতে পারলাম না। কাস্টমার চলে গেল। বেশি দামের জন্য এভাবেই কাস্টমার চলে যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে এই মাছ বিক্রেতা বলেন, মোকামে আড়তদারদের জিজ্ঞাসা করেন এত দাম কেন? এ সময় ধানমন্ডি থেকে আসা এনায়েতউল্লা নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত দাম দিয়ে ইলিশ খাওয়া যাবে না। একেবারে আমাদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। অনেকক্ষণ থেকে বিভিন্ন জায়গায় দেখছি। কেউ দাম কমান না।’ হাতিরপুল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে এই চিত্র। দর বেশি। অনেকে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।
 
বরিশালেই ইলিশের আকাল 
এবার ইলিশের ভরা মৌসুমেও বরিশালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছটির দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশ আহরণ কম হওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈরী আবহাওয়া, নদীদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, নদ-নদীতে ডুবোচর, নদী মোহনায় নাব্যসংকট ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচার মাছ শিকারের মতো বিষয়গুলো নদ-নদীতে ইলিশ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য ও দূষণ নদীর পানির গুণমানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা ইলিশের আবাস ও চলাচলের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী ও ইকোফিশ প্রকল্পের সাবেক গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশে আহরিত মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশ আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে। কিন্তু গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে দেশে ৪২ হাজার টন ইলিশ কম উৎপাদন হয়েছে। নদী মোহনায় অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে, স্রোত নেই, দূষণ বেড়েছে- এসব মিলিয়ে নদীগুলো ইলিশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ‘পায়রায় স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে নির্গত বিষাক্ত উপাদান পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পানির পিএইচ ও অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, যা ইলিশের ডিম পাড়া ও বাচ্চা ফোটার পরিবেশ ধ্বংস করছে।’

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইলিশের জন্য প্রবাহময়, দূষণহীন ও গভীর পানির নদী ইলিশের বসবাসের উত্তম পরিবেশ। কিন্তু নদীতে পরিবেশ না থাকায় ইলিশ ঢুকছে না।’ 

মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণ হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৪ টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। সে হিসাবে গত ১ বছরে বরিশাল বিভাগে ইলিশ আহরণ কমেছে ২৫ হাজার ৫০৯ টন। ঝালকাঠি মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. শহিদ বলেন, সুগন্ধা নদীতে আগে অনেক ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও এখন সারা দিনে একটি মাছও ওঠে না। নদী মোহনায় ডুবোচর ও নাব্যসংকটের কারণে সাগর থেকে মাছ আসছে না। কলাপাড়ার সাগর তীরবর্তী জেলে ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সাগরমুখী স্রোত অস্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে নদীতে জাল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজারে ইলিশ উঠছে না।’ 

গতকাল বরিশালের বড় পাইকারি মাছ বাজার পোর্ট রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারটি একেবারে ইলিশশূন্য। মৎস্য আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, ‘একসময়ে এই বাজারে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ আসত। সেখানে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ মণ ইলিশ আসছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম চড়া। বর্তমানে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা বা কেজি ১ হাজার ৭৫০ টাকা । ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম ১ লাখ টাকা বা কেজি ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কেজির ওপরের ইলিশ ১ লাখ ৮ হাজার থেকে ১ লাখ ১২ হাজার বা ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ 

ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী ইয়ার হোসেন বলেন, নদী-সাগরে মাছ ধরা কম পড়ছে। বাজারে সরবরাহ কম, এ জন্য দাম চড়া। বড়গুলো ৩ হাজার টাকা কেজি। ছোটগুলোও ২ হাজারের মতো। 

চাঁদপুরে ভিড় বাড়লেও বিক্রি কম
চাঁদপুরেও ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম। বাজারে ক্রেতার ভিড় রয়েছে। কিন্তু দাম শুনে অধিকাংশ ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে কথা হয় রাজধানী থেকে আসা ক্রেতা আবু রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে তো তেমন ইলিশ নেই, দাম আকাশচুম্বী।’ চাঁদপুর শহরের সায়েম মিয়া বলেন, ‘ঢাকা থেকে অতিথি এসেছেন, ভাবছিলাম ইলিশ খাওয়াব। কিন্তু বাজারে দেখি ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।’

মাছঘাটের ব্যবসায়ী নবীর হোসেন বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম হলেও পদ্মা-মেঘনায় এখনো তেমন ধরা পড়ছে না। আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ ঘাটে আসত। এখন ৫০ থেকে ১০০ মণ আসে না। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্রলারে করে যেসব ইলিশ চাঁদপুরে আসত, তা এখন অন্য বাজারে চলে যাচ্ছে।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার জানান, বাজারে বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। ১ কেজির ওপর বড় ইলিশ কেজি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। 

রপ্তানিতে বড় ঝুঁকির শঙ্কা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
রপ্তানিতে বড় ঝুঁকির শঙ্কা
খবরের কাগজ ইনফো

তিন মাস ধরে দরকষাকষি- চিঠি চালাচালির পর বাংলাদেশ আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের জন্য একটা ভালো খবর দেবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো কঠোর পদক্ষেপ নিলেন। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ সরকার কিংবা ব্যবসায়ীরা মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগের প্রস্তাবের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে এখন বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াল ৫১ শতাংশ। গত সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন– এটি কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছেন, এখনো দরকষাকষির সুযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশে বিভিন্ন হারে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। 

গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। একই দিনে বিশ্বের ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়। পরে বাড়তি শুল্ক কার্যকরের মেয়াদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, যার সময় আজ ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করে। ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর মোট ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। রপ্তানিকারক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ বড় ধরনের অর্থনৈতিক আঘাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, এখন তা তিন গুণেরও বেশি। হঠাৎ ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক, যার পরিমাণ প্রায় ৯৫ শতাংশ। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৬০০ কোটি ডলার। এ ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। 

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা বলেছেন, আলোচনার দুয়ার এখনো খোলা আছে। দরকষাকষি (নেগোসিয়েশন) শেষ হয়নি। বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের মতে, চীন, ভারতসহ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কী করছে, তাদের জন্য কত শুল্ক বসানো হলো- এসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের উদ্যোগ চূড়ান্ত নয়। ওয়ান টু ওয়ান বা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে দরকষাকষি হবে। এ জন্য আজ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক হবে। গতকাল সচিবালয়ে ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে। আরও আলোচনা হবে। আশা করছি, একটা ভালো ফল পাব।’ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দরকষাকষি হবে।’ 

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ ওয়াশিংটনে রওনা হচ্ছেন বাণিজ্য সচিব। দরকষাকষি চালিয়ে যেতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ১০ ও ১১ জুলাই আরও আলোচনা হবে। 

বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা শেষ হতে চলায় ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। 

তিন মাস ধরে দরকষাকষি চললেও বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ভিয়েতনাম এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাকি দেশগুলো চুক্তি করতে পারেনি। ভিয়েতনামের জন্য ৪৬ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাজ্যের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। 

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া মায়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর বাড়তি ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাসা গার্মেন্টসের কর্ণধার সামস মাহমুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ চূড়ান্ত নয়। আমি মনে করি, দরকষাকষির সুযোগ আছে। 

নেগোসিয়েশনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। 

ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়- এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন, তাহলে আমরা সম্ভবত এ চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্কহার আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নেয় তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভাগ্য। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং চলমান আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’ 

তিনি মনে করেন, যদি চীন ও ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের কাছাকাছি হয়, তা হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা করতে কোনো সমস্যা হবে না। ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের রপ্তানির সক্ষমতা বেশি। কাজেই ভিয়েতনাম নিয়ে কোনো ভয় নেই। 

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘লেট আস ওয়েট অ্যান্ড সি’। আলোচনার সুযোগ আছে। চালিয়ে যেতে হবে। 

এ বিষয়ে বিশিষ্টজনের অভিমত পড়তে ক্লিক করুন-

>দর-কষাকষি করতে হবে
>কতটুকু গিলতে পারব তা দেখার বিষয়
>রপ্তানি বড় ধরনের চাপে পড়বে

কৃত্রিম পায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ২৮ জুলাইযোদ্ধার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৮ এএম
কৃত্রিম পায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ২৮ জুলাইযোদ্ধার
ছবি: খবরের কাগজ

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কৃত্রিম পায়ে হাঁটার চেষ্টা করছেন জুলাইযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। তিনি হাঁটেন আর চিকিৎসকরা তা পর্যবেক্ষণ করেন। ঠিকঠাক হাঁটার জন্য একজন তাকে ‘ব্রিফ’ করেন। কৃত্রিম পায়ে ভালোভাবে হাঁটা-চলা রপ্ত করতে পারলেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন শফিকুল।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে ‘ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রে’ (বিএলবিসি) গিয়ে এমনটি জানা যায়। এখানে কেবল শফিকুল নন, তার মতো আরও অনেকেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণ করার পর কৃত্রিম হাত ও পা বা অঙ্গ সংযোজন করে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা খবরের কাগজকে বলেন, পা হারিয়ে তাদের মনে হয়েছিল আর কখনোই তারা হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু ব্র্যাক তাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও নিবিড় যত্নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাকের ওই প্রতিষ্ঠানটি। 

ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রের তথ্যমতে, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই সহিংসতায় হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা ও সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক। এদের মধ্যে কৃত্রিম হাত সংযোজন করা হয়েছে ৬ জনের এবং পা সংযোজন করা হয়েছে ২৮ জনের। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন, কেউবা শিগগিরই যাবেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৬ জুলাই গাজীপুরের সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমির সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন শফিকুল ইসলাম। এরপর তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। ব্র্যাক শফিকুলকে কৃত্রিম পা দিয়েছে। এখন তিনি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। আবারও ফিরে যেতে চান কর্মজীবনে। শফিকুলের ডান পা এখন অনেকটা রোবটের পায়ের মতো। তার কথা বলতে গেলে তিনি কৃত্রিম পা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করে দেখালেন। 

আলাপকালে শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি প্রথমে গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পঙ্গু জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গুতে দুই মাস চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় চলে যান। কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি হলে আবারও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, শফিকুলের পায়ে পচন ধরেছে, কেটে ফেলতে হবে। পরে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। 

তিনি বলেন, ‘পঙ্গুতে থাকতেই ব্র্যাকের চিকিৎসকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের সহায়তায় ব্র্যাক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য আসি। এখন পায়ে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে ও কৃত্রিম পা লাগিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। কৃত্রিম পা দেওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসার সব খরচ বহন করেছে ব্র্যাক।’

পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে শফিকুলের। তিনি বলেন, ‘দুজন কন্যাসন্তান আছে, একজন কলেজে পড়ে।’ জানান, তিনি ইজিবাইক চালাতেন। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আয় বন্ধ। দুই ভাই মাসে কিছু টাকা দেন তা দিয়ে একবেলা খাবার জোটে সন্তানদের।’ এসব করুণ অবস্থা বলতে গিয়ে শফিকুলের দুই চোখ ভিজে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

এই চিকিৎসাকেন্দ্রে আরও যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাহিদ খান, জহিরুল ইসলাম ও জোবায়ের হাসান। জুলাই আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তারা। ১৯ জুলাই রামপুরায় বাম হাতের কবজিতে গুলি লাগে জাহিদের। জাহিদ বরিশাল সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। জহিরুল ৫ আগস্ট উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন ও জোবায়ের ১৯ জুলাই রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হন। তাদের দুজনের ডান হাতে গুলি লাগে। 

জাহিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য রাস্তায় নামি। পুলিশের গুলি আমাকে দমাতে পারেনি। ওই দিন দুপুরে রামপুরায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। একটি গুলি বাম হাতের কবজিতে লাগে।’ 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবন নিয়ে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা। আমাকে কে চাকরি দেবেন। পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন চোখে-মুখে শুধু অন্ধকার দেখি!’ 

আহত জহিরুল ও জোবায়ের খবরের কাগজকে জানান, দুজনই বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতেন। তারা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। ওই দুই তরুণ আরও জানান, সরকারের কাছ থেকে এই এক বছরে এক লাখ টাকা ও হেলথ কার্ড পেয়েছেন। এই টাকায় কিছুই হয় না। ব্র্যাকের চিকিৎসা না পেলে তারা সেরে উঠতে পারতেন না।

ব্র্যাক জানায়, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের কয়েকটি টিম কাজ করেছে। আন্দোলনে যারা গুলিবিদ্ধ বা বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন তারা তাদের তালিকা করে চিকিৎসা দিয়েছে। এই তালিকায় ঢাকার ১৩টি হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে। প্রথমে তারা ৪১৬ জনের একটি তালিকা করে। তাদের ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও ৬১ জনকে চিকিৎসা উপকরণ, ৪৮ জনকে ফিজিওথেরাপি, ৮০ জনকে ওষুধসহ মেডিকেল সার্ভিস ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. শাহিনুল হক রিপন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্র্যাকের উদ্যোগে বিনামূল্যে তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা ও সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশের যেকোনো দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। ব্র্যাক দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ৫ বছরের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন যারা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তারা আগামী পাঁচ বছর সব ধরনের ফলোআপ সেবা পাবেন।’ 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বলা হয়। সরকার প্রতিবছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে। দিনটিতে সাধারণ ছুটি থাকবে।

নতুন কর্মকর্তাদের দিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
নতুন কর্মকর্তাদের দিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। স্বচ্ছ, কর্মঠ, পেশাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিতে কর্মকর্তাদের ভাইভা নেওয়া শুরু হয়েছে।

মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ডিসিরাই নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। একজন ডিসি সংশ্লিষ্ট জেলার শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান ইতিমধ্যে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব। এমন সব সংশোধনী এনে গত ৩০ ‍জুন ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 

সরকার এসএসবির মাধ্যমে এমন কর্মকর্তা বাছাই করতে চাইছে, যাদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হলে ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ বা ‘দিনের ভোট রাতে’ এমন অভিযোগ বা বিতর্ক না ওঠে এবং নতুন সরকারের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। উল্লেখ্য, দেশে অনুষ্ঠিত বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সর্বাগ্রে নিরপেক্ষ মাঠ প্রশাসন প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসি নির্বাচন ঘিরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে চাইছে প্রশাসন।

সরকারের এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন রয়েছে প্রশাসনে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জীবনবৃত্তান্ত, অতীত কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা, পারিবারিকসহ ছাত্রজীবনের ইতিহাস ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তারই ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে ডিসিদের। এ কারণেই ইতোমধ্যে ডিসি ফিটলিস্টে উত্তীর্ণ ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদেরও তথ্যও নতুন করে মাঠ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। চার মাস আগে বর্তমানে ডিসি পদে দায়িত্ব পালনকারী ২৪ ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে সেসব জেলায় তাদের পরিবর্তে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। সরকারের  চলমান এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই প্রত্যাহার করা ডিসিদের পদে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার আদেশ জারি করবে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই গত সেপ্টেম্বরে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রণীত তালিকায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের ১০৬ জন কর্মকর্তাকে রাখা হয়। এর মধ্যে ৬৪ জনকে ডিসি করা হয়। পরে পুরোনো তালিকা অনুসরণ না করে নতুন ফিট লিস্ট করে ডিসি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। ২৪ ব্যাচের ২১ জন ডিসি চার মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাদের জেলা থেকে এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।
 
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট ২৫তম এবং ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে নিয়োগ পান। তারাই এখন ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। প্রথম দফায় ২৪, ২৫, ২৭ ব্যাচের উপসচিবদের ডিসি মনোনয়নে ফিটলিস্ট প্রস্তুত করা হয়। তাদের বিভিন্ন সময়ে এসএসবির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ডাকা হয়। পরে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নিয়োগ দেওয়া সব জেলার ডিসিদের প্রত্যাহার করে এই তিন ব্যাচ থেকেই ডিসি পদে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। 

ইতোমধ্যে উপসচিব (ডিসি) থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ কর্মকর্তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে এনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে সেই সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ প্রয়োজন। এই জেলাগুলো হলো ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠি, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাদারীপুর, গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ডিসি পদে নিয়োগে যাতে কোনো বিতর্ক না হয়, সে জন্য এবার অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তাই কর্মকর্তাদের নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। সৎ, যোগ্য, পেশাদার কর্মকর্তাদের বিশেষ বিবেচনায় আনা হবে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে বিবেচনায় আনা হবে না। নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বিধায় নতুন ডিসি নিয়োগে কিছুটা সময় লাগছে। বাছাই তালিকা চূড়ান্ত শেষে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিদের স্থলে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।