
বিশাল দৈর্ঘ্যের সড়ক-মহাসড়ককে শতভাগ নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য জনবল বৃদ্ধি, আরও ৬৮টি নতুন থানা স্থাপন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে শক্তি-সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশের। এসব উদ্যোগের একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও একের পর এক ডাকাতি-ছিনতাই বা অপরাধ ঠেকাতে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয় হাইওয়ে পুলিশকে। যার মূলে রয়েছে এই ইউনিটের জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মারাত্মক সংকট। যতটুকু জনবল-সরঞ্জাম আছে, তা দিয়ে তিন হাজার কিলোমিটার সড়কের শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা দেখভাল করা হচ্ছে। অথচ সারা দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ৮৮৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে বৃহৎ অংশই হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি বা দেখভালের বাইরে রয়ে গেছে। তাই সারা দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ককে প্রায় শতভাগ নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করতে বাড়তি জনবল, থানা স্থাপনসহ নানা সরঞ্জাম যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা খবরের কাগজকে বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কগুলো শতভাগ নিরাপদ ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে অনেক সময় যথাযথভাবে কাজ করা যাচ্ছে না বা প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়। আমরা বিশ্বাস করি, নতুন প্রস্তাবিত জনবল ও থানা স্থাপনসহ অন্য অবকাঠামো-সরঞ্জাম যুক্ত হলে হাইওয়ে পুলিশ দেশের সড়কগুলোকে নিরাপত্তা দিতে পারবে। আমরা সেভাবেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
ঈদকেন্দ্রিক মহাসড়ক-ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, ‘গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারেও ঈদুল আজহায় জেলা পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। যখন যেখানে সহযোগিতা চাচ্ছি, সেখানেই তাদের আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব (জনবলসহ আনুষঙ্গিক) ঘাটতি থাকলেও সবাই মিলে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) মো. শামসুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের ৭৩টি থানার কার্যক্রম চলমান আছে। নতুন আরও ৬৮টি থানা চালুর প্রস্তাব গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া বর্তমানে জনবল রয়েছে ২ হাজার ৮৭৪ জন। নতুন করে আরও ৬ হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি হলেই হাইওয়ে পুলিশের জনবল দাঁড়াবে ৮ হাজার ৮৭৪ জনে এবং থানার সংখ্যা হবে ১৪১টি।’
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শামসুল আলম বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশকে সারা দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া আছে। সে অনুসারে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত জনবলসহ নানা সংকটের মধ্যে পড়তে হয়। তার পরও হাইওয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছে। দুই ঈদে ঘরে বা কর্মস্থলে ফেরা যাত্রী ও পশুবাহী গাড়িকে নিরাপত্তা দেওয়া, ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।’
হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে ৭৩টি থানার প্রতিটিতে গড়ে পুলিশ সদস্য রয়েছেন ৩৪ জন করে। এর মধ্যে অফিসারসহ ১২ জন থাকেন থানার প্রশাসনিক দায়িত্বে, বাকি ২২ জন থাকেন অভিযান, টহল, যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনার কাজে। সেখানেও আবার শিফটিং ডিউটি করলে লোকবল আরও কমে। এত কম জনবল দিয়ে গড়ে প্রতিটি থানাকে ৪১ কিলোমিটার সড়কের দেখভাল করতে হয়। প্রস্তাবিত মোট ১৪১টি থানার কাঠামোয় প্রতিটির জন্য গড়ে ৫২ জন পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে। তবে সড়কের দৈর্ঘ্য মোট ২১ হাজার ৮৮৮ কিলোমিটার ব্যাপ্তি হওয়ায় তখন আবার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বা সড়ক হবে ১৫৫ কিলোমিটার। তিন ক্যাটাগরির (এ, বি, সি) থানা ব্যবস্থাপনা থাকবে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬০ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৫০ জন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকবেন ৪৫ জন সদস্য। ভৌগোলিক অবস্থান, রাস্তাঘাট, যানজট ও শিল্প-কারখানার আলোকে এই ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ‘রিজিউন’ (অঞ্চল) ৮ থেকে বাড়িয়ে ১০টি এবং সার্কেল ১০ থেকে বাড়িয়ে মোট ৪০টি করা হবে। এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হলে স্বাভাবিকভাবেই হাইওয়ে পুলিশের শক্তি-সক্ষমতা আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।