ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

এনসিপির ৩ মাস: নতুন বন্দোবস্তে অনেক বাধা

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
এনসিপির ৩ মাস: নতুন বন্দোবস্তে অনেক বাধা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের তিন মাস পার হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তাদের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিরোধ, নানা বিতর্ক, মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে সংশ্লিস্টতা, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ, দলের নিবন্ধন ও সাংগঠনিক ভিত্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মন্তব্য আসছে বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকেও। অনেকের মতে, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিলেও দেশের দ্বিদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে নতুন বন্দোবস্ত অনেক কঠিন কাজ। 

তবে এনসিপির নেতারা মনে করছেন, জনগণের সমর্থন এখনো তাদের পক্ষে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় দেশের মানুষের মধ্যে নতুন সংস্কৃতির প্রত্যাশা রয়েছে। সেদিকে খেয়াল রেখেই তারা জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চান। আসন্ন ঈদে জনসংযোগের পরিকল্পনায় বিতরণ করা হবে লিফলেট। দলের নিবন্ধন, গঠনতন্ত্র, জেলা ও উপজেলা কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামীকাল সোমবারের সাধারণ সভায়। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ চিন্তক অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হঠাৎ করে হওয়ার নয়। গত ৫৪ বছরে রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। বছর তিনেক গেলে এনসিপি আসলেই কী করতে পারবে তা বলা যাবে। তবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দরকার। তারা প্রতিশ্রুতি যদি কার্যকর করার জন্য দিয়ে থাকে, তাহলে তা ইতিবাচক। কিন্তু পত্র-পত্রিকায় খবর দেখি, তাদের দলেও চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত লোক আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের রাজনীতির দিকে তাকাতে হবে। নেহরুর বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আসেনি।’

এনসিপির কার্যক্রম মূল্যায়নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘একটা পলিটিক্যাল পার্টি গড়ে তোলা অনেক কঠিন। বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট লাগে, সময় লাগে। সাংগঠনিক শক্তি লাগে, রিসোর্স লাগে। রাতারাতি কারও পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এনসিপি শুরু করেছে, তবে তারা প্রথম দিকে কিছু ভুল করেছে। এখন তারা সংশোধনের চেষ্টা করছে।’

‘তাদের (এনসিপি) একটা অ্যাডভান্টেজ আছে, বাংলাদেশের লোকেরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সিভিল সোসাইটি রাষ্ট্রের কাঠামো ধরে রাখতে চায়, যেখানে ৮০ শতাংশ লোক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ছাত্রদের অভ্যুত্থানে সেই কাঠামোটা ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। আমার মনে হয়, তাদের জনগণের সমর্থন আছে, সেটা ভালো করে পর্যবেক্ষণও করছে। নতুন রাজনৈতিক শক্তির দরকার বাংলাদেশে। সেই আশাটা তারা পূরণ করতে পারবে কি না, সেটা সময় বলবে। তারা যদি সততা, স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম এবং ত্যাগ দেখাতে পারে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে’ যোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনসিপির প্রতি জনগণের প্রত্যাশা আছে। যতদূর জানি, তারা নতুন কিছু করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টাও করছে। তবে তারা সফল হতে পারবে কি না, সময়ই বলে দেবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনসিপির রাজনৈতিক কার্যক্রমকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। তারা একটি সফল বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছে। বয়স কম হওয়ায় ভুল করবে স্বাভাবিক। তারা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করতে পারবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে।’

যেসব ইস্যুতে বিতর্ক
নেতৃত্বে কে থাকবেন এই ইস্যুতে মতভেদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটে এনসিপির। পরে নাহিদ-আখতারের নেতৃত্বে দলটির কার্যক্রম শুরু হয়। নির্বাচন, সংস্কার ইস্যু নিয়ে ভিন্নমত হয় বিএনপির সঙ্গে। দুই দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পাল্টাপাল্টি উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। 

জামায়াতের সঙ্গেও বিরোধ স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হলে তারা বিষয়টির সমালোচনা করেন। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হয়। পরে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে মব তৈরি করে ব্যবসায়ীকে হয়রানির চেষ্টাকালে আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়কসহ (পরে অব্যাহতি) দুজনকে ছাড়িয়ে আনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন দলের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। পরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

দলের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পর্যালোচনা করে শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করা হচ্ছে। অথচ আমাদের কোনো কমিটি নেই সেখানে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’

নতুন বন্দোবস্ত নিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণের প্রত্যাশা জনগণের আছে আমাদের প্রতি। কিন্তু সেটা এখনই পূরণ করা কঠিন। কারণ প্রতিষ্ঠিত শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, অনেক মেধাবী তরুণ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বিদেশ থেকে চলে এসেছেন দেশের জন্য কাজ করতে।’

গঠনতন্ত্র, জেলা-উপজেলা কমিটির খসড়া
এনসিপিসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের গঠনতন্ত্র তৈরি এবং নিবন্ধন প্রস্তুতির জন্য গঠিত সেল তাদের খসড়া জমা দিয়েছে। আগামীকাল সোমবার সেটি সাধারণ সভায় চূড়ান্ত হতে পারে। একই সঙ্গে অর্ধেকের বেশি জেলা ও উপজেলার কমিটির খসড়া তালিকা করা হয়েছে, যা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দলের লোগো এবং সম্ভাব্য প্রতীক নিয়েও কমিটির সদস্যরা মতামত দিয়েছেন।

সাংগঠনিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ইতোমধ্যে যুব, শ্রমিক, প্রকৌশল উইং গঠন করা হয়েছে। অন্য পেশাজীবীদের নিয়েও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। শহিদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন নিয়ে কর্মপরিল্পনা করছেন তারা।

অন্যদিকে সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়ন নিয়েও পর্যালোচনা চলছে এনসিপির মধ্যে। দলটির মৌলিক সংস্কারের রূপরেখায় সাংবিধানিক ব্যবস্থা, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংশোধনে গণভোটের বিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক পদে নিয়োগ, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার, দুদক সংস্কার, স্থানীয় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার এবং জনপ্রশাসন সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রূপরেখা প্রস্তুত ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘মানুষ নতুন কিছু দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। নতুন সংবিধান চাচ্ছেন। সেদিক থেকে জনগণের সাপোর্ট আছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা আমার কাছে মনে হয় সবাই একটা সম্মানজনক অবস্থায় আসবে ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে। বিভিন্ন দলের ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী। মানুষের কাছে এনসিপির নেতারা যখন আরও যাবেন, তখন গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।’

ঈদে ব্যাপক জনসংযোগের পরিকল্পনা, বিতরণ করা হবে লিফলেট
আসন্ন ঈদুল আজহায় দলটির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক জনসংযোগের পরিকল্পনা করছেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৯টি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে লিফলেট প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন, পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিলোপ, কৃষির আধুনিকায়ন, বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত, চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, নতুন সংবিধান এবং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চরম দ্বন্দ্ব

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:২০ পিএম
ঢাকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চরম দ্বন্দ্ব
ফাইল ছবি, খবরের কাগজ

ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটিতে (আরটিসি) বাস রুট অনুমোদনের জটিলতা শিগগির কাটছে না। আরটিসিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সবগুলো সংস্থার প্রতিনিধিরা বাস রুটের আবেদন নিয়ে আপত্তি তুলছেন। কিন্তু ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যরা এসব সংস্থার প্রতিনিধিদের কোনো যুক্তি শুনতে নারাজ। তাদের পক্ষে সদয় রয়েছেন আরটিসির ঊর্ধ্বতন সদস্যরা। এতে নতুন করে ২২ রুটে বাস চালানোর অনুমোদন পেতে ১৯ বাসমালিকের তেমন বেগ পেতে হবে না। আরটিসির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য এ কথা জানিয়েছেন। 

আপত্তি কোথায়

রাজধানীর সড়কে চলাচলের অনুমোদন নেই (রুট পারমিটবিহীন) এমন বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানির মালিক এখন অচল রুট সচল করার পরিকল্পনা নিয়ে আরটিসিতে দেন-দরবার করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেরই বাসের ফিটনেসও নেই। 

আরটিসি সভার নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, আবেদন করা নতুন রুটগুলোতে আগে থেকেই এক বা একাধিক কোম্পানির বাস চলমান। আগে থেকে ওই রুটগুলোতে চলাচল করা বাস কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য পরামর্শ এসেছে আরটিসি সভায়। কিন্তু সেই পরামর্শ মানছেন না আরটিসিতে থাকা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

বাসমালিকদের বেশ কয়েকজন আবার ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বতন্ত্র রুটের আবেদন করেছেন আরটিসিতে। তবে এই কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, নগর পরিবহন হিসেবে চলাচলের জন্য তাদের আবেদন করা রুটগুলো কার্যকরের কোনো যৌক্তিকতা নেই। জানা গেছে, প্রভাবশালীদের কারণে এই আপত্তিও ধোপে টিকছে না। 

এদিকে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের ২২টি রুটে বাস চালাতে যে ১৯ কোম্পানি আবেদন করেছে, সেগুলো হলো; ইউনাইটেড সার্ভিস, প্রত্যাশা পরিবহন, এরফান এন্টারপ্রাইজ, বিকাশ সেবা ট্রান্সপোর্ট, উত্তরা ঢাকা, আশুলিয়া লিংক এক্সপ্রেস, মাওয়া এভারগ্রিন, আরবি এন্টারপ্রাইজ, স্বাধীন বাংলা পরিবহন, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ, আজমেরী গ্লোরি, গোল্ডেন সিটি, বৈশাখ পরিবহন, আলিফ এন্টারপ্রাইজ, অভিজাত ট্রান্সপোর্ট, সেফটি পরিবহন, চ্যালেঞ্জার লাইন, ঢাকা চাকা ও মাশআল্লাহ এক্সপ্রেস। 

ইউনাইটেড সার্ভিস ঘাটারচর থেকে ঢাকা উদ্যান, গাবতলী, মিরপুর হয়ে গাজীপুর সদর পর্যন্ত ৮০টি নন-এসি বাস নামাতে চায়। কিন্তু এ রুটগুলো আবার এ-২৭১, এ-২২০, এ-২২৫ রুটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক (ওভার‌ল্যাপ করছে)। এই রুটে প্রজাপতি, অভিজাত ট্রান্সপোর্টের বাস চলছে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত। রাজধানীর ভেতরে চলাচলকারী বাসগুলোকে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার দূরত্বে চলাচল করতে রুট পারমিট দেওয়ার একটা চল রয়েছে আরটিসিতে। এখন ইউনাইটেড সার্ভিস যে রুটের জন্য আবেদন করেছে তার দৈর্ঘ্য ৪৫ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। জানা গেছে, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ শিয়া মসজিদ থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার; আজমেরী গ্লোরি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাজীপুরের সফিপুর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার, আলিফ এন্টারপ্রাইজ সাভার থেকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার, অভিজাত ট্রান্সপোর্ট ঘাটারচর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার, সেফটি পরিবহন মিরপুর-১৪ থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত, চ্যালেঞ্জার লাইন চন্দ্রা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটের আবেদন করেছে। 

২০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্য সম্পন্ন রুটের জন্য এসব পরিবহনের বাস নামানোর আবেদনে আরটিসি সভায় আপত্তি উঠেছে। আরটিসির কয়েকজন সদস্য বলেন, ‘এখন ঢাকার ট্রাফিকের যে অবস্থা, তাতে মিনিবাস দিয়ে ২০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যে রুট পরিচালনা যৌক্তিক হবে না। আন্তজেলা রুটে যখন একাধিক কোম্পানির বাস চলছে, তখন নতুন করে এ বাস কোম্পানিগুলোকে কেন রুট পারমিট দিতে হবে, তা নিয়েও আরটিসি সভায় প্রশ্ন উঠেছে।’ 

আলিফ পরিবহন ৪০০টি নন-এসি মিনিবাসের রুট পারমিটের আবেদন করেছে। ডিটিসিএ কর্মকর্তারা মিনিবাস দিয়ে রুট পরিচালনায় আপত্তি জানিয়েছেন। বাকি বাস কোম্পানির আবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব রুটে আগে থেকে এক বা একাধিক কোম্পানির বাস চলছে। এরফান এন্টারপ্রাইজ সাভার থেকে আড়াইহাজার ফেরিঘাট; বৈশাখ পরিবহন পাটুরিয়া ঘাট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতে রুট পারমিটের আবেদন করেছে। তবে পূর্বাচলের তিনশ ফিট সড়কে বাস চালাতে গেলে রাজউকের অনুমোদন দরকার হবে। আরটিসি সভায় এই রুটের আবেদন নাকচ করে বলা হয়েছে, রাজউকের আবেদন পেতে আরও জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে বাসমালিকদের। 

রাজধানী বা রাজধানীর বাইরের সড়কে চলাচল করা এসি বাসের ভাড়া নিয়ে রয়েছে জটিলতা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এসি বাসের কোনো ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়নি। এতে পরিবহন মালিকরা খেয়ালখুশিমতো ভাড়া আদায় করছেন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট পর্যন্ত নন-এসি বাসের ভাড়া ৩০ টাকা। অন্যদিকে এফআর মোটরস আর গ্রিন ঢাকার এসি বাসে যেতে লাগে ৯০ টাকা। 

নতুন বাস রুটের আবেদনে ঢাকা চাকা ও মাশআল্লাহ এক্সপ্রেস ৩৩৫টি এসি বাস সড়কে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ বাসগুলোর ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে আরটিসিতে। তখন ঢাকার ভেতরে প্রথম দুই কিলোমিটারে জন্য ২০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ৫.৫০ টাকা হারে ভাড়া আদায়ের প্রস্তাব আসে আরটিসি সভায়। হিসাব কষে দেখা গেছে, গুলিস্তান থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক যেতে এখন ১০০ টাকারও বেশি খরচ করতে হবে এসি বাসের যাত্রীদের। হুট করে ভাড়া বাড়ানো হলে তা যাত্রীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে সভায় বিআরটিএ কর্মকর্তারা আপত্তি জানান। তাই এসি বাসের ভাড়া আপাতত নির্ধারণ করা যায়নি। 

রুট পারমিটে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, আরটিসি সদস্যদের দ্বন্দ্বে চরম বিরক্ত হয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আরটিসিকে নতুন করে রুট পারমিট না দিতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও সেই কার্যক্রম থেমে নেই। 

আরটিসি কমিটির সদস্য ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াছীনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা এ প্রতিবেদকের কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তবে কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার ও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘গণপরিবহনের চাহিদা রয়েছে বলেই বাসমালিকরা নতুন করে বাস রুটের আবেদন করেছেন। কিছু রুটে নতুন কোম্পানি এলে ওভারল্যাপ করবে। তবে তাতে যাত্রীদেরই যাতায়াতে সুবিধা বাড়বে। বারবার বাস বদলানোর দরকার হবে না।’ 

জাপা থেকে বহিষ্কৃতরা দিশেহারা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১৩ এএম
জাপা থেকে বহিষ্কৃতরা দিশেহারা
খবরের কাগজ ইনফো

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পদ-পদবি খোয়ানো নেতা-কর্মীরা মহাবিপদে পড়েছেন। যদিও কিছু দলছুট নেতাকে সঙ্গে নিয়ে তারা কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু তাতে তারা হালে কতদূর পানি পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এর আগে পৃথক দল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে বড় কিছু করার নজির কম। 

দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভাঙার চেষ্টা অনেকবার হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং ভাঙতে যাওয়া নেতারাই আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেছেন। এই দুটি দলের মতো জাতীয় পার্টিতেও এখন উত্তরাধিকারের রাজনীতি চলছে। জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে জি এম কাদের দলের হাল ধরেছেন। ব্যক্তি ইমেজের পাশাপাশি দলের প্রায় সব নেতা-কর্মীর সমর্থনও তার দিকে। এমন পরিস্থিতিতে বহিষ্কৃত নেতারা অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বলে জাপার নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।

দলটির কো-চেয়ার‌ম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চুন্নু সাহেবরা যে কাউন্সিলের আয়োজন করবেন, সেখানে চেয়ারম্যানকে বাদ দেবেন কেমন করে? চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল হয়? নাজিউর রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বেগম রওশন এরশাদরা দল থেকে বের হয়ে আরেকটা দল করেছেন। তাদের দল কি প্রকৃত জাতীয় পার্টি হতে পেরেছে? সেই ব্র্যাকেটবন্দি দলই তো থেকে গেছে। যারা দল থেকে বের হয়ে নতুন দল করেছেন, লোকে তাদের ভুঁইফোঁড় রাজনীতিবিদ বলেছেন।’
 
মোস্তফার ভাষ্যে, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুর ভোটের মাঠে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। 

তিনি বলেন, ‘তারা ভালো করেই জানেন, সোজা পথে নির্বাচন করে তারা কখনো জিততে পারবেন না। তাই তারা নানা দুরভিসন্ধি করেছেন। এবারও ভাবছেন কোনো একটা কারিশমা করে তারা আবারও নির্বাচিত হবেন। সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে তারা নতুন দল করার কথা ভাবছেন। কিন্তু তৃণমূলের একজন নেতা-কর্মীও তাদের সঙ্গে নেই।’

রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা বিভাগে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলেও বহিষ্কৃত নেতাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। খুলনার একজন নেতা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘জি এম কাদের যাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক অবস্থান কি এখন আছে? এতদিন তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের সময় তারা এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু এখন তাদের কোনো গতি নেই। তারা দিশেহারা হয়ে গেছেন। ষড়যন্ত্র তারা আগেও করেছেন, এখনো করছেন। আমরা অনেক দিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে পার্টির ফোরামে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। চেয়ারম্যান এতদিনে আমাদের দাবিতে সায় দিলেন। এখন তিনি দলটাকে নিজস্ব ধারায় পরিচালনা করবেন।’

দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত সোমবার জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ার‌ম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। তাদের সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়ামের আরও সাতজন নেতাকে তিনি অব্যাহতি দেন। 

এই ১০ নেতা মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। 

তারা দাবি করেন, জাতীয় পার্টিকে তারা ভাঙতে দেবেন না। দ্রুত দলের দশম জাতীয় কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজন করে জি এম কাদেরের ‘অগণতান্ত্রিক’ সিদ্ধান্তের জবাব দেবেন বলে হুঙ্কারও দেন। তারা বলেন, জি এম কাদের বিধিবহির্ভূতভাবে নেতাদের পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তারা মানেন না।

তবে জাপার নবনিযুক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ বিষয়ে খবরের কাগজকে জানান, জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক করা হয়েছে। 

যেভাবে বিতর্কের সূত্রপাত

গত ২৫ মে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় দলের দশম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। জি এম কাদের তখন দলের কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজন নিয়ে সায় দেন। তবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল বরাদ্দ না পাওয়ায় তিনি কাউন্সিল আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান ওই তিন শীর্ষ নেতা। একপর্যায়ে তারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন। তারা নিজেরাই কাউন্সিল আয়োজনের নানা তোড়জোড় শুরু করেন। গত ২৮ জুন রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারা কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজনের ঘোষণা দেন। তবে তৃণমূলের সমর্থন না পেয়ে তারা সেই কাউন্সিল আয়োজন করতে ব্যর্থ হন।
 
বহিষ্কৃতদের সংবাদ সম্মেলন, বললেন ‘দল ভাঙতে দেব না’

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি, চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতার ধারা বাতিল করতে বলেছি। আমরা হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি। আমাদের এসব কাজ কোনোভাবে দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।’

তিনি দাবি করেন, জাপার দশম কাউন্সিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে দলে কোনো কোরামের আয়োজন করা হয়নি। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপাও উপস্থিত ছিলেন। 

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমি এমন কী অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও আমাকে অব্যাহতি দিলেন চেয়াম্যান জি এম কাদের। চেয়ারম্যানের সর্বময় ক্ষমতার ধারা কোনো রাজনৈতিক দলে নেই। আমি বললাম, এই ধারা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি ক্ষেপে গেলেন। বিগত নির্বাচনে আড়াই কোটি টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। সেই টাকার কোনো হিসাব দেননি। পার্টির চাঁদা এবং অনুদানের কোনো হিসাব দেননি তিনি। আমরা তার কাছে এসবের হিসাব চেয়েছি। এটাতো গঠনতন্ত্রবিরোধী হতে পারে না।’

এ সময় চুন্নু বলেন, ‘একতরফাভাবে নেতা নির্বাচিত হতে জি এম কাদের আমাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু আমরা জাতীয় পার্টির রাজনীতি ছাড়ব না। দলে আমাদের অবদান কোনো অংশে কম না। আমরা কোনোভাবে দল ভাঙতে দেব না।’ 

সব সিদ্ধান্ত গঠনতান্ত্রিক: শামীম হায়দার পাটোয়ারী 

বহিষ্কৃত নেতাদের সংসদ সম্মেলনের পর জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র মোতাবেক করা হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারির মতামত নেওয়া হয়েছে; সেই সিদ্ধান্ত প্রেসিডিয়াম সভায় চূড়ান্ত হয়েছে। প্রেসিডিয়াম সভার রেজল্যুশনের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, মানে নেতা-কর্মীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

মহাসচিবের পদে শামীম হায়দারকে নিয়োগ করায় বিতর্ক তুলেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ বিষয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘মহাসচিবের পদ শূন্য হয়েছে। সেই শূন্য পদে সম্পূর্ণ গঠনতান্ত্রিক উপায়ে, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

কাউন্সিল আয়োজন নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চুন্নুরা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বলে মন্তব্য করেন জাপার নতুন মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জাতীয় পার্টির সভায় ৭৮টি ইউনিটের মধ্যে ৬৫টি ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এক বাক্যে জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছেন। তারা বিকল্প কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে যারা বিতর্ক তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানকে তৃণমূলই অনুরোধ করেছে। সিদ্ধান্ত নিতে সভায় কোরাম না হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সত্যি না। কোরাম ছিল। সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র মেনে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন কাউন্সিল হলে জি এম কাদেরই ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।’

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম লাগামহীন

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম লাগামহীন
খবরের কাগজ (ফাইল ফটো)

ভরা মৌসুমেও এবার ইলিশের বাড়ি বরিশালেই চলছে ইলিশের আকাল। খুচরা বাজারে সহজে মিলছে না এ মাছের রাজার। চাঁদপুরেও লাগামহীন দাম। এই দুই জেলার মোকামেই আড়াই হাজার টাকার বেশি দরে ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেই ইলিশের কেজি রাজধানীতে ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, দাম ততই বাড়ছে। অনেকেই দাম শুনে চমকে উঠছেন। খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। ইলিশের এই চড়া দামের জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের। 

তারা বলছেন, আড়তে বেশি দর। এ জন্য কম দামে বিক্রি করা যায় না। অনেকে আবার বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ মাছের আহরণ কমে গেছে। জেলেরা নদীতে আগের মতো পাচ্ছেন না মাছ, যা পাচ্ছেন তা চাহিদার তুলনায় কম। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, এবার ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও বাজারে অতিচড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে সেটার দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে। জাটকার কেজিও ২ হাজার টাকার কমে মেলে না। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রমজান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই আড়তে দাম বেশি। আমদানি কম, তাই দাম বেশি। ১ কেজির ওপর ওজনের পদ্মার ইলিশের দাম ৩ হাজার টাকা কেজি। ছোটগুলো (২টিতে কেজি) ২ হাজার টাকা কেজি। একই বাজারের মহসিন আলীও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আড়তেই বেশি দর। বড়টি ৩ হাজার টাকা কেজি। এর কমে হবে না। দেখেন না ২ হাজার ৭০০ টাকা কেজি বলার পরও দিতে পারলাম না। কাস্টমার চলে গেল। বেশি দামের জন্য এভাবেই কাস্টমার চলে যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে এই মাছ বিক্রেতা বলেন, মোকামে আড়তদারদের জিজ্ঞাসা করেন এত দাম কেন? এ সময় ধানমন্ডি থেকে আসা এনায়েতউল্লা নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত দাম দিয়ে ইলিশ খাওয়া যাবে না। একেবারে আমাদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। অনেকক্ষণ থেকে বিভিন্ন জায়গায় দেখছি। কেউ দাম কমান না।’ হাতিরপুল বাজার, কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারেও দেখা গেছে এই চিত্র। দর বেশি। অনেকে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।
 
বরিশালেই ইলিশের আকাল 
এবার ইলিশের ভরা মৌসুমেও বরিশালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে মাছটির দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশ আহরণ কম হওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈরী আবহাওয়া, নদীদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, নদ-নদীতে ডুবোচর, নদী মোহনায় নাব্যসংকট ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচার মাছ শিকারের মতো বিষয়গুলো নদ-নদীতে ইলিশ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য ও দূষণ নদীর পানির গুণমানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা ইলিশের আবাস ও চলাচলের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী ও ইকোফিশ প্রকল্পের সাবেক গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশে আহরিত মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশ আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে। কিন্তু গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে দেশে ৪২ হাজার টন ইলিশ কম উৎপাদন হয়েছে। নদী মোহনায় অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে, স্রোত নেই, দূষণ বেড়েছে- এসব মিলিয়ে নদীগুলো ইলিশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ‘পায়রায় স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে নির্গত বিষাক্ত উপাদান পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পানির পিএইচ ও অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, যা ইলিশের ডিম পাড়া ও বাচ্চা ফোটার পরিবেশ ধ্বংস করছে।’

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইলিশের জন্য প্রবাহময়, দূষণহীন ও গভীর পানির নদী ইলিশের বসবাসের উত্তম পরিবেশ। কিন্তু নদীতে পরিবেশ না থাকায় ইলিশ ঢুকছে না।’ 

মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণ হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৪ টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। সে হিসাবে গত ১ বছরে বরিশাল বিভাগে ইলিশ আহরণ কমেছে ২৫ হাজার ৫০৯ টন। ঝালকাঠি মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. শহিদ বলেন, সুগন্ধা নদীতে আগে অনেক ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও এখন সারা দিনে একটি মাছও ওঠে না। নদী মোহনায় ডুবোচর ও নাব্যসংকটের কারণে সাগর থেকে মাছ আসছে না। কলাপাড়ার সাগর তীরবর্তী জেলে ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে সাগরমুখী স্রোত অস্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে নদীতে জাল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজারে ইলিশ উঠছে না।’ 

গতকাল বরিশালের বড় পাইকারি মাছ বাজার পোর্ট রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারটি একেবারে ইলিশশূন্য। মৎস্য আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, ‘একসময়ে এই বাজারে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ আসত। সেখানে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ মণ ইলিশ আসছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম চড়া। বর্তমানে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা বা কেজি ১ হাজার ৭৫০ টাকা । ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম ১ লাখ টাকা বা কেজি ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কেজির ওপরের ইলিশ ১ লাখ ৮ হাজার থেকে ১ লাখ ১২ হাজার বা ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ 

ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী ইয়ার হোসেন বলেন, নদী-সাগরে মাছ ধরা কম পড়ছে। বাজারে সরবরাহ কম, এ জন্য দাম চড়া। বড়গুলো ৩ হাজার টাকা কেজি। ছোটগুলোও ২ হাজারের মতো। 

চাঁদপুরে ভিড় বাড়লেও বিক্রি কম
চাঁদপুরেও ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম। বাজারে ক্রেতার ভিড় রয়েছে। কিন্তু দাম শুনে অধিকাংশ ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে কথা হয় রাজধানী থেকে আসা ক্রেতা আবু রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে তো তেমন ইলিশ নেই, দাম আকাশচুম্বী।’ চাঁদপুর শহরের সায়েম মিয়া বলেন, ‘ঢাকা থেকে অতিথি এসেছেন, ভাবছিলাম ইলিশ খাওয়াব। কিন্তু বাজারে দেখি ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।’

মাছঘাটের ব্যবসায়ী নবীর হোসেন বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম হলেও পদ্মা-মেঘনায় এখনো তেমন ধরা পড়ছে না। আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ ঘাটে আসত। এখন ৫০ থেকে ১০০ মণ আসে না। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্রলারে করে যেসব ইলিশ চাঁদপুরে আসত, তা এখন অন্য বাজারে চলে যাচ্ছে।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার জানান, বাজারে বর্তমানে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। ১ কেজির ওপর বড় ইলিশ কেজি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। 

রপ্তানিতে বড় ঝুঁকির শঙ্কা

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
রপ্তানিতে বড় ঝুঁকির শঙ্কা
খবরের কাগজ ইনফো

তিন মাস ধরে দরকষাকষি- চিঠি চালাচালির পর বাংলাদেশ আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের জন্য একটা ভালো খবর দেবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো কঠোর পদক্ষেপ নিলেন। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশ সরকার কিংবা ব্যবসায়ীরা মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আগের প্রস্তাবের চেয়ে মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে এখন বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াল ৫১ শতাংশ। গত সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন– এটি কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছেন, এখনো দরকষাকষির সুযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশে বিভিন্ন হারে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। 

গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। একই দিনে বিশ্বের ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়। পরে বাড়তি শুল্ক কার্যকরের মেয়াদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, যার সময় আজ ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করে। ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর মোট ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। রপ্তানিকারক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ বড় ধরনের অর্থনৈতিক আঘাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, এখন তা তিন গুণেরও বেশি। হঠাৎ ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক, যার পরিমাণ প্রায় ৯৫ শতাংশ। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৬০০ কোটি ডলার। এ ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। 

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা বলেছেন, আলোচনার দুয়ার এখনো খোলা আছে। দরকষাকষি (নেগোসিয়েশন) শেষ হয়নি। বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তাদের মতে, চীন, ভারতসহ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কী করছে, তাদের জন্য কত শুল্ক বসানো হলো- এসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের উদ্যোগ চূড়ান্ত নয়। ওয়ান টু ওয়ান বা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে দরকষাকষি হবে। এ জন্য আজ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক হবে। গতকাল সচিবালয়ে ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা আছে। আরও আলোচনা হবে। আশা করছি, একটা ভালো ফল পাব।’ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দরকষাকষি হবে।’ 

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ ওয়াশিংটনে রওনা হচ্ছেন বাণিজ্য সচিব। দরকষাকষি চালিয়ে যেতে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ১০ ও ১১ জুলাই আরও আলোচনা হবে। 

বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা শেষ হতে চলায় ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। 

তিন মাস ধরে দরকষাকষি চললেও বিশ্বের ৬০টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ভিয়েতনাম এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাকি দেশগুলো চুক্তি করতে পারেনি। ভিয়েতনামের জন্য ৪৬ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাজ্যের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। 

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া মায়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর বাড়তি ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সাসা গার্মেন্টসের কর্ণধার সামস মাহমুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ চূড়ান্ত নয়। আমি মনে করি, দরকষাকষির সুযোগ আছে। 

নেগোসিয়েশনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। 

ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়- এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন, তাহলে আমরা সম্ভবত এ চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্কহার আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নেয় তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভাগ্য। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং চলমান আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’ 

তিনি মনে করেন, যদি চীন ও ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের কাছাকাছি হয়, তা হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা করতে কোনো সমস্যা হবে না। ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের রপ্তানির সক্ষমতা বেশি। কাজেই ভিয়েতনাম নিয়ে কোনো ভয় নেই। 

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘লেট আস ওয়েট অ্যান্ড সি’। আলোচনার সুযোগ আছে। চালিয়ে যেতে হবে। 

এ বিষয়ে বিশিষ্টজনের অভিমত পড়তে ক্লিক করুন-

>দর-কষাকষি করতে হবে
>কতটুকু গিলতে পারব তা দেখার বিষয়
>রপ্তানি বড় ধরনের চাপে পড়বে

কৃত্রিম পায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ২৮ জুলাইযোদ্ধার

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:১৮ এএম
কৃত্রিম পায়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ২৮ জুলাইযোদ্ধার
ছবি: খবরের কাগজ

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কৃত্রিম পায়ে হাঁটার চেষ্টা করছেন জুলাইযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। তিনি হাঁটেন আর চিকিৎসকরা তা পর্যবেক্ষণ করেন। ঠিকঠাক হাঁটার জন্য একজন তাকে ‘ব্রিফ’ করেন। কৃত্রিম পায়ে ভালোভাবে হাঁটা-চলা রপ্ত করতে পারলেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন শফিকুল।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে ‘ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রে’ (বিএলবিসি) গিয়ে এমনটি জানা যায়। এখানে কেবল শফিকুল নন, তার মতো আরও অনেকেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণ করার পর কৃত্রিম হাত ও পা বা অঙ্গ সংযোজন করে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা খবরের কাগজকে বলেন, পা হারিয়ে তাদের মনে হয়েছিল আর কখনোই তারা হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু ব্র্যাক তাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও নিবিড় যত্নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাকের ওই প্রতিষ্ঠানটি। 

ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রের তথ্যমতে, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই সহিংসতায় হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা ও সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক। এদের মধ্যে কৃত্রিম হাত সংযোজন করা হয়েছে ৬ জনের এবং পা সংযোজন করা হয়েছে ২৮ জনের। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন, কেউবা শিগগিরই যাবেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৬ জুলাই গাজীপুরের সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমির সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন শফিকুল ইসলাম। এরপর তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। ব্র্যাক শফিকুলকে কৃত্রিম পা দিয়েছে। এখন তিনি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। আবারও ফিরে যেতে চান কর্মজীবনে। শফিকুলের ডান পা এখন অনেকটা রোবটের পায়ের মতো। তার কথা বলতে গেলে তিনি কৃত্রিম পা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করে দেখালেন। 

আলাপকালে শফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনি প্রথমে গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পঙ্গু জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গুতে দুই মাস চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় চলে যান। কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি হলে আবারও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, শফিকুলের পায়ে পচন ধরেছে, কেটে ফেলতে হবে। পরে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। 

তিনি বলেন, ‘পঙ্গুতে থাকতেই ব্র্যাকের চিকিৎসকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাদের সহায়তায় ব্র্যাক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য আসি। এখন পায়ে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে ও কৃত্রিম পা লাগিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি। কৃত্রিম পা দেওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসার সব খরচ বহন করেছে ব্র্যাক।’

পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে শফিকুলের। তিনি বলেন, ‘দুজন কন্যাসন্তান আছে, একজন কলেজে পড়ে।’ জানান, তিনি ইজিবাইক চালাতেন। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আয় বন্ধ। দুই ভাই মাসে কিছু টাকা দেন তা দিয়ে একবেলা খাবার জোটে সন্তানদের।’ এসব করুণ অবস্থা বলতে গিয়ে শফিকুলের দুই চোখ ভিজে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

এই চিকিৎসাকেন্দ্রে আরও যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাহিদ খান, জহিরুল ইসলাম ও জোবায়ের হাসান। জুলাই আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তারা। ১৯ জুলাই রামপুরায় বাম হাতের কবজিতে গুলি লাগে জাহিদের। জাহিদ বরিশাল সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। জহিরুল ৫ আগস্ট উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন ও জোবায়ের ১৯ জুলাই রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হন। তাদের দুজনের ডান হাতে গুলি লাগে। 

জাহিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য রাস্তায় নামি। পুলিশের গুলি আমাকে দমাতে পারেনি। ওই দিন দুপুরে রামপুরায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। একটি গুলি বাম হাতের কবজিতে লাগে।’ 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবন নিয়ে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা। আমাকে কে চাকরি দেবেন। পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন চোখে-মুখে শুধু অন্ধকার দেখি!’ 

আহত জহিরুল ও জোবায়ের খবরের কাগজকে জানান, দুজনই বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতেন। তারা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। ওই দুই তরুণ আরও জানান, সরকারের কাছ থেকে এই এক বছরে এক লাখ টাকা ও হেলথ কার্ড পেয়েছেন। এই টাকায় কিছুই হয় না। ব্র্যাকের চিকিৎসা না পেলে তারা সেরে উঠতে পারতেন না।

ব্র্যাক জানায়, জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের কয়েকটি টিম কাজ করেছে। আন্দোলনে যারা গুলিবিদ্ধ বা বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন তারা তাদের তালিকা করে চিকিৎসা দিয়েছে। এই তালিকায় ঢাকার ১৩টি হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে। প্রথমে তারা ৪১৬ জনের একটি তালিকা করে। তাদের ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও ৬১ জনকে চিকিৎসা উপকরণ, ৪৮ জনকে ফিজিওথেরাপি, ৮০ জনকে ওষুধসহ মেডিকেল সার্ভিস ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ব্র্যাক কৃত্রিম পা সংযোজন ও চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. শাহিনুল হক রিপন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্র্যাকের উদ্যোগে বিনামূল্যে তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাত বা পা হারানো ৩৪ জনকে চিকিৎসা ও সহায়তা দিয়েছে ব্র্যাক।’ 

তিনি বলেন, ‘দেশের যেকোনো দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। ব্র্যাক দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ৫ বছরের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন যারা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তারা আগামী পাঁচ বছর সব ধরনের ফলোআপ সেবা পাবেন।’ 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন হয়। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বলা হয়। সরকার প্রতিবছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে। দিনটিতে সাধারণ ছুটি থাকবে।