
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের তুলনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে না। বরং বরাদ্দ কিছুটা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাজেট পরিকল্পনায় এবার দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেটে দুদকের জন্য মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ১২ কোটি ৭১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য গত বছরের ৬ জুন ঘোষিত বাজেট ঘোষণায় দুদকের জন্য মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭৯ কোটি ৩০ লাখ এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বাজেটের তুলনায় এবার পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন ব্যয় সামান্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে মঞ্জুরি ও বরাদ্দে দুদকের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি, কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সব জেলায় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘মহানগর বা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, সব উপজেলায় ৯ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি পুনর্গঠন ও পরিচালনা এবং ইউনিয়ন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম আগে থেকেই চলমান, তবে এবারই প্রথম ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা এ নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং গণসচেতনতা গড়ে তোলার কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে স্ব স্ব কর্ম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন- স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগী হিসেবে সততা সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষার্থীদের সততা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ নামে বিক্রেতাবিহীন স্টোর চালু করা হবে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সেবা নিশ্চিত করতে গণশুনানি কার্যক্রম চালু রাখা হবে। তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। দুদকের খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।
দুদকের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত ১৯১ কোটি টাকার বরাদ্দে ১৬৫ কোটি টাকার আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ মজুরি ও বেতন ৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, প্রশাসনিক ব্যয় ২১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার, ফি ও কমিশন ৫ লাখ ৫০ হাজার, প্রশিক্ষণ ৪ কোটি ২০ লাখ, পেট্রল ও ফুয়েল ৩ কোটি ৩ লাখ, ভ্রমণ ও বদলি ৬ কোটি ২১ লাখ ৩৬ হাজার, খাদ্য সরবরাহ ১০ কোটি, মুদ্রণ ও মনিহারি ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার, সাধারণ ও কাঁচামাল সরবরাহ ৩১ লাখ ৬৫ হাজার, পেশাগত সম্মানী ও সংরক্ষণ ৪ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার, মেরামত ও সংরক্ষণ ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার এবং স্থানান্তর ও শ্রেণিবদ্ধহীন ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য গত বছরের ৬ জুন ঘোষিত বাজেটে দুদকের জন্য ১৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও সংশোধিত বাজেটে ১৬৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৫৪ কোটি ৩০ হাজার টাকা এবং উন্নয়নে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটে ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। তবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৪৭ কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।