ঢাকা ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
English

কোটিপতি কমলেও আমানত বেড়েছে

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
কোটিপতি কমলেও আমানত বেড়েছে
প্রতীকী ছবি

সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে। তবে বেড়েছে আমানতের পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ শেষে এক কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে, এমন হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৭১৯টি। একই সময়ে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছু সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তলব করা হয়েছে। এর ফলে বড় অঙ্কের আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তার কারণে ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা কমলেও কিছু অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। তাদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ যখন দিশেহারা, তখন একশ্রেণির মানুষের অর্থ বৃদ্ধি দেশে আয়বৈষম্য বাড়ার ইঙ্গিত। তাদের মতে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং সাম্প্রতিক সময়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে আশঙ্কাজনক হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী মানুষের আয় বাড়েনি। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় অর্থ জমানো দূরের কথা, অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এই সময় দেশের একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছেন পুঁজিপতি, বিত্তবান ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তাদের আয় আগেও বেশি ছিল, এখন আরও বেড়েছে। মূলত আয়বৈষম্যের কারণেই দেশের কোটি টাকার আমানত বাড়ছে। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও আয়বৈষম্য বাড়ায়। এসব কারণে একশ্রেণির মানুষের বৈধ-অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানেও আয়বৈষম্য কমানোর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোরও কোনো পদক্ষেপ নেই। এই অবস্থায় আয়বৈষম্য কমাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর অনেক মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এতে অনেক আমানতকারী তাদের আমানত সরিয়ে নিয়েছেন। ফলে কোটিপতি আমানতধারীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে এসব হিসাবে রাখা আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। এটা সমাজের আয়বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করার একটা অন্যতম দৃষ্টান্ত। দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার কারণেই এই আয়বৈষম্য বাড়ছে। তাই বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো না গেলে সামনে এটা আরও বাড়তেই থাকবে।’

একই বিষয়ে গতকাল বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে কর কাঠামোতে যে কয়েকটি স্তরের কথা বলা হয়েছে, সেখানেও বড় ধরনের বৈষম্য করা হয়েছে। অর্থাৎ নিম্নবিত্তদের বেশি ও উচ্চবিত্তদের কম কর দিতে হবে। যদিও বাজেটের মূল দর্শন হওয়া উচিত ছিল রাজস্বনীতির মাধ্যমে আয় বৈষম্য কমানো। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, যা গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ৭১৯টি কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি হিসাবগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে কোটিপতি হিসাবগুলোর আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। 

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে হিসাব ও আমানতের সংখ্যা বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি, আর মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার ৮২১টিতে। একই সময়ে আমানতের পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে প্রায় ২৪ লাখ ৬০ হাজারটি। আর আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটিপতি হিসাব মানেই তা ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। এসব হিসাবের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং একজন ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। ফলে হিসাবের সংখ্যা কমার অর্থ ব্যক্তি কোটিপতির সংখ্যা কমেছে, তা নির্ধারণ করা যায় না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ১৯৭২ সালে দেশে কেবল ৫ জন কোটিপতি হিসাবধারী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪৭ জন। এরপর ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি এবং ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের শেষে এ সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা মার্চে নেমে আসে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে। 

‘রাতের ভোটের’ জন্য পুরস্কৃতদের একজন এখন আইসিটির বিচারক!

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
‘রাতের ভোটের’ জন্য পুরস্কৃতদের একজন এখন আইসিটির বিচারক!
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮) ‘দিনের ভোট রাতে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত’ ১২ কর্মকর্তাকে ‘পুরস্কৃত’ করেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্ত করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদক বলেছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করে।

দুদকের তদন্ত ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় ওই সব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

যাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল হয়েছে তাদের একজন সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। এখন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর একজন বিচারক।

এই বিচারক ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের সময় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা (জেলা জজ) ছিলেন। এখানে সংযুক্ত থেকে ওই সময় তিনি কোর্ট অব সেটেলমেন্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের (জুলাই-আগস্ট ২০২৪) সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার বিচার চলছে।

ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিলের সপ্তাহ তিনেক আগে গত ১৭ জুন ট্রাইব্যুনাল-২-এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্যের একজন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারকদের ওই দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পথ চলি। তার ওপর নির্ভর করে কাজ করি। কেউ বোমা মারলেও ভয় পাব না। কেউ গুলি করে মেরে ফেললে আমার সব গুনাহ নিয়ে যাবে। ফলে আমার ভয়ের কারণ নেই। আমি কবরের পাশে দাঁড়ানো, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভয়ের কিছু নেই। আমরা এই তরি বয়ে নিয়ে যাব।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা এসব বিচারের তরি বয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করার সময় মো. মঞ্জুরুল বাছিদসহ ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই বিচারক উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ওই সময় আরও বলেন, ‘কিছু লোক গত ১৫ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। তারা নিষ্ঠুরভাবে শাসন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস করেননি। মানুষ নিজেদের কথা বলতে পারেননি। সেই ফ্যাসিস্টরা এখনো ফিরে আসার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে এখনো যথাযথ চিকিৎসা পাননি। বিচারকরা চেষ্টা করছেন ছাত্র-জনতার দুর্ভোগ কমাতে।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তাদের নাম উল্লেখ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে তারা কাজ করবেন। তাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করা যায়। তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলবেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিষয়গুলোও মেনে চলবেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমত্যাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের ওই সব ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল প্রভাবশালী এসব আমলা ও বিচারককে। এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল করে মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা ভেঙে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। 

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম গত বৃহস্পতিবার দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা প্রসিকিউশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলব না।’

রামকৃষ্ণ মিশন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি: কষ্টে শিক্ষার্থী, রোগী, সাধারণ মানুষ

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:০৯ এএম
রামকৃষ্ণ মিশন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি: কষ্টে শিক্ষার্থী, রোগী, সাধারণ মানুষ
ছবি: খবরের কাগজ

রাজধানীর পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রামকৃষ্ণ মিশন বা আর কে মিশন রোড এখন যেন এক দুর্ভোগের প্রতীক। সড়কটির প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ খোঁড়া হয়েছে। পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন লাইনের সংস্কারকাজের কারণে এই খোঁড়াখুঁড়ি। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কটিতে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।

শুধু যান চলাচলই নয়, বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে হেঁটেও চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর জন্য। এক মাসেরও বেশি সময় আগে এই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন হাজারও পথচারী। এই সড়কের আশপাশে রয়েছে একাধিক স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, আবাসিক ভবন ও ক্লিনিক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কার্যত এই পথটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত জুনে রাস্তার একাংশ খুঁড়ে ফেলা হয়। কাজটি করছে ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় পার হলেও কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বরং সড়কের অবস্থা আরও নাজুক করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আশপাশে কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড বা নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। কাজের জন্য রাস্তার পাশে রাখা পাইপ ও কাদা পানিতে ছোট শিশু কিংবা বয়স্করা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের চলাচলেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। অনেকে স্কুল বা কলেজে যেতে পারছেন না সময়মতো। এমনকি রিকশাও চলাচল করার সুযোগ নেই সড়কে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়ক খোঁড়া হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। টানা বৃষ্টিতে গর্তগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি সড়কের ওপরে রাখা হয়েছে পাইপ, বালু, ইট, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। ফলে এসব এলাকার রাস্তা আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কাদা পানির মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও সাধারণ পথচারীদের।

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে খোঁড়াখুঁড়ির জায়গাগুলোতে জমেছে পানি। অনেক স্থানে নোংরা পানি এবং কাদার কারণে পিচঢালা রাস্তাটিও এখন কাঁচা রাস্তার মতো হয়ে গেছে। পয়োনিষ্কাশনের খোলা ড্রেনগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের দায়সারা কাজই এই ভোগান্তির জন্য দায়ী। কাজ কবে শেষ হবে সে বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। কোথাও সময়সূচি ঝোলানো হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ দ্রুত শেষ করে জনজীবন স্বাভাবিক করতে হবে। না হলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন তারা। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থীর মা হাসনা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তান স্কুলে যেতে পারে না, প্রতিদিন ভেঙে ভেঙে যেতে হয়। রিকশা চলে না, হাঁটাও যায় না- যেন আমরা অবরুদ্ধ হয়ে আছি।’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষার্থী পারভেজ বলে, ‘প্রতিদিন স্কুলে কাদা পেরিয়ে যেতে হয়। অনেক দিন জুতা-জামা নষ্ট হয়ে গেছে। এক দিন গর্তে পা পড়ে পড়ে গেছি।’

পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে একজন বৃদ্ধ রোগীর স্বজন বলেন, ‘রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারছি না। রিকশাও ঢুকতে চায় না এই রাস্তায়। যেন শহরের মাঝখানে বন-পাহাড় পেরিয়ে যেতে হচ্ছে।’

এদিকে সড়কটির দুই পাশে থাকা দোকানের কর্মচারীরা বলছেন, রাস্তা খারাপ থাকায় ক্রেতা আসছেন না, বিক্রি নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় এই অবস্থার কারণে ক্রেতা কমে গেছে। বিক্রি একেবারে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল। 

আর কে মিশন রোড ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত, যা অঞ্চল-৫-এর আওতাভুক্ত। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এমন অভিযোগ পাচ্ছি। ওই সড়কের পাশে অন্য এলাকায়ও একই অবস্থার অভিযোগ পাচ্ছি। কিছুদিন আগে আন্দোলনের (বিএনপি নেতা ইশরাকের আন্দোলন) কারণে কাজ বন্ধ হয়ে ছিল। এখন আবার বৃষ্টির কারণে প্রায়ই কাজ বন্ধ থাকে। ঠিকাদারের অবহেলা রয়েছে। সব মিলিয়ে আমরাও নানা জটিলতার মধ্যে রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা ছিলেন। তারা নাগরিক সেবাগুলো দেখতেন, এখন সব আমাদের দেখতে হচ্ছে। তাও পানি নিষ্কাশনের প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। আমি আবারও ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে কথা বলব।’

পদোন্নতি পাচ্ছেন ২০ ব্যাচের যুগ্ম সচিবরা

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:২৭ এএম
পদোন্নতি পাচ্ছেন ২০ ব্যাচের যুগ্ম সচিবরা

প্রশাসনের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ২০ ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ জন্য চলছে প্রস্তুতি। চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তারা আশা করছেন এবার তারা পদোন্নতি পাবেন। অপরদিকে একই ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা ২০১৮ সালে মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ সময় পর এবার উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাচের ২৯১ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০১২ সালের জুন মাসে। সে হিসাবে পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন ২০২২ সালের জুনে। এখন তিন বছর পর তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণ নিয়মে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে (ষষ্ঠ গ্রেড থেকে পঞ্চম গ্রেড) পদোন্নতির জন্য চাকরির কার্যকাল ১০ বছর হলেই হয়। তবে পদোন্নতির জন্য চাকরিকালে তার সততা, মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক অবস্থান বিবেচনা করে থাকে কর্তৃপক্ষ। সময়ের হিসাবে গত তিন বছর এই ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করতেই সময় বেশি পার হয়েছে। গত সরকারের সময়ে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হলেও বর্তমান প্রশাসন মনে করছে এটা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ গত সরকার দলীয় বিবেচনায় কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার অলিখিত নিয়ম চালু করেছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি দিতে নিরপেক্ষ, যোগ্য, দক্ষ কর্মকর্তা বাছাইয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। তাই দ্বিতীয় দফায় ৩০ ব্যাচের পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে সরকার। এ কারণে সময় ক্ষেপণ হয়েছে।

অপরদিকে অতিরিক্ত সচিব পদে ২০ ব্যাচের প্রায় ২০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ১২০ থেকে ১৩০ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী (ডিসি) কর্মকর্তা, আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তাসহ যাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে তারা পদোন্নতির বিবেচনায় থাকছেন না। এ ছাড়া ১৭ ও ১৮ ব্যাচের বঞ্চিত কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

২০ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের আদেশ পালন করেছি মাত্র। কারণ চাকরি বিধি অনুযায়ী সরকার চাইলে, যেকোনো সময় যেকোনো সমমর্যাদার পদে একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারে। এখানে একজন কর্মকর্তার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, ‘‘সে সময় সরকারি আদেশ অমান্য করলে আমার শাস্তি হতো। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হতাম। আবার যেহেতু গত সরকারের সময় রিটানিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, তাই গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের ‘দিনের ভোট রাতে’ এর কুশীলব বলে চিহ্নিত করেছে।’’ 

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, খুব শিগগির অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

জানা গেছে, সম্প্রতি পদোন্নতিসংক্রান্ত সর্বোচ্চ ফোরাম সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের কর্মজীবন, পারিবারিক তথ্য, বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, গোয়েন্দা তথ্য নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। 

সূত্র জানায়, কয়েকটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার কিছু শীর্ষ পদও খালি রয়েছে। এসব পদ সচিব ও সচিব পদমর্যাদার হওয়ায় প্রশাসন ব্যাচের নিয়মিত ১৫ ব্যাচের এক ডজন অতিরিক্ত সচিবকে যোগ্য হিসেবে চূড়ান্ত করে তালিকা করেছে এসএসবি। জনপ্রশাসনসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন নিয়ে সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সচিব পদোন্নতি দিয়ে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শূন্য থাকা সচিব পদে নিয়োগ দেবে সরকার।

তবে পদোন্নতির এই ধারায় এর আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাননি বিসিএস ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা। এবার তাদের পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে যেসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, পদোন্নতির লক্ষ্যে এসএসবির নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এসব বৈঠকে সব বিষয় পর্যালোচনা করে পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। দ্রুত সব কার্যক্রম সম্পন্ন হলে পদোন্নতিসংক্রান্ত আদেশ জারি হবে। 

জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য কোনো দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য না দিয়ে যোগ্যতা, মেধা ও সততাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদেরও তালিকায় রাখা হয়েছে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিতদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য এসএসবির বৈঠকে বিবেচনায় আনা উচিত। পেশাদার, দলনিরপেক্ষ, সৎ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। এসবের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। কোনো কারণে বঞ্চিত হলেন সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট করে জানায় না। এমন অজানা কারণে তারা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে থাকেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এসএসবির সদস্যরা আসন্ন পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তারা। 

৮০ শতাংশ মালিকানাতেও সন্তুষ্ট নয় বিদেশি মোবাইল কোম্পানি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:১০ এএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:১০ এএম
৮০ শতাংশ মালিকানাতেও সন্তুষ্ট নয় বিদেশি মোবাইল কোম্পানি
খবরের কাগজ ইনফো

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রস্তাবিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা-২০২৫’ (খসড়া) প্রকাশ হয়েছে এ বছর এপ্রিলে। সম্প্রতি এই খসড়ার সংশোধিত প্রস্তাব তৈরি করেছে সরকার। সেখানে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে বিদেশি মালিকানা সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যাবে বলে মত দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাকি ২০ শতাংশ দেশিয় মালিকানার আওতায় থাকতে হবে। তবে এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট নয় বিদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলো। তারা সরাসরি বা লিখিতভাবে না জানালেও শতভাগ মালিকানা চায়। এই নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করছেন তারা। আবার এ দেশিয় মোবাইল কোম্পানিগুলোও হাঁটছে বিদেশিদের পথেই। 

জানা গেছে, সরকারের ৮০ শতাংশ বিদেশি মালিকানার প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর। যাদের মূল কোম্পানি বিদেশি। তারা এক চিঠির মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের অসন্তোষের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিদেশি কোম্পানিগুলোর আশঙ্কা- প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বর্তমানে চলমান ও ভবিষ্যতের বিনিয়োগ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দেশি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ নয়, অংশীদারত্ব আরও কমানো উচিত। তা না হলে টেলিকম খাত দেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সংশোধিত নীতিমালায় যে ৮০-২০ শতাংশ মালিকানার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কোনো পক্ষের জন্যই খুব একটা সমস্যা নয়। বরং এটি এই খাতে একটি ভারসাম্য আনবে। 

জানা গেছে, বর্তমানে বিদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধু শতভাগ মালিকানা রয়েছে বাংলালিংকের। 

সংশোধিত এই প্রস্তাবে তিনটি প্রধান বেসরকারি মোবাইল অপারেটরের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর (গ্রামীণফোন), আজিয়াটা (রবি) ও ভিওন (বাংলালিংক)- প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর চিঠি দিয়েছে। 

চিঠিতে অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতে সংস্কারের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায় এবং বিটিআরসির গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করে। তবে নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কারসংক্রান্ত নীতিমালার খসড়ায় যে কিছু নতুন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বর্তমানে চলমান ও ভবিষ্যতের বিনিয়োগ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

গত ৩ জুলাই পাঠানো চিঠিতে গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান (মাদার কোম্পানি) ‘টেলিনর’ এশিয়ার প্রধান ইয়োন ওমুন্ড রেভহাউগ, রবি আজিয়াটার সিইও বিবেক সুদ ও বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওনের সিইও কান তেরজিওগ্লো জানান, এ ধরনের নীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেবে এবং খাতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করবে। 

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খসড়ায় শুধু মোবাইল অপারেটরদের নয়, অন্য ডিজিটাল অবকাঠামোভিত্তিক অপারেটরদের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানার সীমা পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা তাদের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয়।

তারা আরও মন্তব্য করেন যে, দেশের টেলিযোগাযোগ খাত দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত ও সহায়ক বিদেশি বিনিয়োগ নীতি মেনে চলেছে, যা এ খাতের দ্রুত উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তবে এখন প্রস্তাবিত সীমা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনীহা তৈরি করবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিপন্থি।

চিঠিতে টেলিনর, আজিয়াটা ও ভিওন উল্লেখ করেছে, যেকোনো স্তরে বিদেশি মালিকানায় সীমা নির্ধারণ করা হলে টেলিযোগাযোগ খাতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাদের মতে, প্রস্তাবিত নতুন লাইসেন্স কাঠামোতে মোবাইল অপারেটরদের কার্যপরিধি আগের তুলনায় সীমিত করা হয়েছে। এতে ফাইবার সংযোগ ও আন্তর্জাতিক এসএমএস পাঠানোর অধিকার সরাসরি তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা একটি কঠোর ও হস্তক্ষেপমূলক নিয়ন্ত্রক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের নির্দেশ মোবাইল অপারেটরদের অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়াতে পারে এবং এর ফলে দেশের পুরো ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তারা প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক পদ্ধতিগত ও সর্বগ্রাহ্য আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই নীতিমালার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুধু বিদেশি বিনিয়োগেই নয়- বরং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথেও বাধা হতে পারে। 

এদিকে সংশোধিত এই খসড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত দেশের ব্যবসায়ীরাও। তাদের মতে, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য অসম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করবে। কিছু ব্যবসায়ী বিশ্বাস করেন, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নতি ও নতুন পুঁজির প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, ৮০ শতাংশ মালিকানার নীতি দেশের স্বার্থ রক্ষা ও সুশাসনের ক্ষেত্রে তেমন কার্যকরী না-ও হতে পারে। তাদের মতে, এ ধরনের নীতি দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, দেশের স্ট্র্যাটেজিক বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। 

একজন টেলিকম অপারেটর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা কমে গেলে পলিসি মেকিংয়ে দেশীয় বাজারে প্রভাবশালী খেলোয়াড়রা নিজেদের স্বার্থে নীতি প্রণয়নে হস্তক্ষেপ করতে পারে- এই আশঙ্কা করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এতে তাদের বর্তমান ব্যবসায়িক পলিসি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, এখানে সোজা কথায় বলতে গেলে বিদেশি ইনভেস্টররা যখন ৭৫ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার থাকেন তখনই তারা ওই কোম্পানির পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হন। ফলে তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোম্পানির স্বার্থে। এ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের তেমন কিছু করার থাকে না। সুতরাং সেদিক থেকে বিদেশি বিনিয়োগ আসা নিয়ে আমি তেমন কোনো সমস্যা দেখি না। এ ছাড়া গ্রামীণফোন ও রবির কিছুটা শেয়ার ইতোমধ্যেই দেশীয় প্রতিনিধির কাছে আছে। নেই শুধু বাংলালিংকের। আমার মনে হয়, যদি এই শেয়ার ছাড়ার সময় কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলে এটা তেমন কোনো সমস্যা নয় বরং দেশীয় ইনভেস্টরদের জন্য ভালো। তারাও এই খাতে যুক্ত হতে পারলেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, দেশীয় বিনিয়োগের জন্য এই নীতি সহায়ক হলেও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ অনেক বিদেশি কোম্পানি একা হাতে চালাতে চায়। কারও সঙ্গে শেয়ারে যেতে চায় না। তাই এটি নিয়ে দেশীয় অপারেটররা কিছুটা শঙ্কায় আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। কারণ এখন যে ইনভেস্টর আছেন তিনি যদি কারও সঙ্গে শেয়ারে যেতে না চান তা হলে তিনি তার ইনভেস্টমেন্ট গুটিয়ে নিতে পারেন। এতে ঝুঁকি বাড়বে এই খাতের। আর আমাদের দেশেও এমন বড় ইনভেস্টর নেই, যারা এর ব্যাকআপ দিতে পারেন বা বিদেশি বিনিয়োগের রিপ্লেস করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে দুটি বিকল্পই রাখা যেতে পারে, একটি হলো আগে যে সুবিধা ছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারী চাইলে পুরো শেয়ার নিজেদের হাতেই রাখতে পারেন। অন্যটি, তারা ৮০ শতাংশ রেখে ২০ শতাংশ দেশি বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দিতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খসড়া নীতিমালাটি দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ভবিষ্যৎ রূপ নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে। তবে নীতিনির্ধারকদের উচিত, সব দিক বিবেচনা করে একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা। যাতে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।

বৈদেশিক ঋণে নির্ভরতা বাড়ায় কমেছে দেশি ঋণ

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
বৈদেশিক ঋণে নির্ভরতা বাড়ায় কমেছে দেশি ঋণ
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ কমেছে। অর্থবছরের শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বেশ কিছু দাতা সংস্থার ঋণ পেয়েছে সরকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ঋণের এই অর্থ রিজার্ভে যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণের পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দিনেই বাংলাদেশ ব্যাংককে ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা পরিশোধ দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। 

এর আগে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাস ১৫ দিনেই সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল। ১ জুলাই থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সময়ে শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত না হওয়ায় ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের পরিশোধ বাড়িয়েছে সরকার। এতে তারল্যসংকটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরও চাপে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকারকে ব্যাংকমুখী না হয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যত সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। 

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে এমনিতেই চাপে রয়েছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। তাই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। সরকারের ঋণের জোগান দিচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যদিও বর্তমানে অনেক ব্যাংকেই তারল্যসংকট রয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগেও একধরনের স্থবিরতা চলছে। এর মধ্যে যদি সরকার বেশি ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিনিয়োগ কম হবে, আর বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থান কম হবে। ফলে প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় কমে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় নেমেছে; সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৯৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায় হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর মানে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আয় কম হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এর পরও গত অর্থবছরের শেষ সময়ে ব্যাংকঋণ কমেছে বিপুল অঙ্কের বিদেশি ঋণের কারণে। জুনের শেষ সপ্তাহে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। যে কারণে অনেক ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে।

সরকারের নিট ঋণ কমার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ সময়ে বেশ কিছু বৈদেশিক ঋণ রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া অনেক ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে। এ কারণেই নিট ঋণ কমেছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে। সরকারকে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো বেশি মুনাফা পাচ্ছে। এভাবে ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে। তবে বেসরকারি খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও কিছুটা কমে যাচ্ছে।