
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিলে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে আমদানি করা শতাধিক পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গাড়িতে বাড়তি কর পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে কঠোর হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাজস্ব মামলা নিষ্পত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্টদের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থবিলে বিভিন্ন ধারা যুক্ত করে পদে পদে রাজস্বের ভার বাড়ানো হয়েছে।
নতুনভাবে কোন খাতে কত শতাংশ রাজস্ব ধার্য করা হয় তার গাণিতিক হিসাব অর্থবিলে থাকে। এ ছাড়া রাজস্ব সংক্রান্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ ধারা বিদ্যমান রাজস্ব আইনে নেই, কিন্তু বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে রাজস্ব আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাও অর্থবিলে থাকে।
আগামী অর্থবছরের অর্থবিলে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে বাদাম, কমলালেবু, মাল্টা, আঙুর, আপেলের মতো সাধারণ মানুষের কাছে চাহিদা আছে এমন সব ফলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
শুধু এসব ফল না, মাখন, দুগ্ধজাত চর্বির দামও বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের মসলা যেমন, লবঙ্গ, জিরা, দারুচিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের পটেটো চিপসের দামও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ফলের জেলি ও জ্যাম বাজেট ঘোষণার পর বেশি দামে আমদানি করতে হবে। ফলের রস আমদানিতে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ফলের রসের দাম বাড়বে।
পারফিউম, শেভ করার সরঞ্জামাদি, সাবান ও টয়লেটে ব্যবহার করার সামগ্রীর ওপরও সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে। একইভাবে আমদানি করা হীরা, জুয়েলারি, পোশাক, পশমী কম্বলের দামও বাড়বে। রেডিও-টেলিভিশনের যন্ত্রপাতি আমদানির ওপরও সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবে শতাধিক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে বাড়বে এসব জিনিসের দাম।
অর্থবিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বাদাম আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাত নয় এমন তামাক আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। মার্বেল, চুনযুক্ত পাথর, গ্রানাইটের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১২ ধরনের পেইন্ট অ্যান্ড বার্নিশের শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। সাবান এবং সাবান হিসেবে ব্যবহৃত সারফেস অ্যাকটিভ সামগ্রী এবং সমজাতীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। মোড়কজাত পণ্য ও ডিটারজেন্টের শুল্ক ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অমসৃণ হীরার সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে শতাধিক পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব পণ্যের বেশির ভাগই প্রয়োজনীয় এবং সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। তাই আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।’
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থবিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বিলটি পাস হলে ১ জুলাই থেকে গাড়ির নিবন্ধন ও ফিটনেস নবায়নে অগ্রিম কর বাড়বে।
এখন ৫২টির বেশি আসনের বাসের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ১৬ হাজার টাকা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর এই গাড়িতে অগ্রিম কর দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা।
বর্তমানে ৫২টির বেশি আসন না, এমন বাসের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ১১ হাজার ৫০০ টাকা। আগামী বাজেটে এই গাড়িতে অগ্রিম আয়কর ২০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের অগ্রিম কর ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
আগামী অর্থবছর এই গাড়িতে অগ্রিম কর ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডাবল ডেকার বাস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস ও ৫ টনের বেশি ক্যাপাসিটির ট্রাক, লরি বা ট্যাংকের অগ্রিম কর ১৬ হাজার টাকা। আগামী বাজেটে এসব প্রতিটি যানের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন মিনিবাসের বর্তমান অগ্রিম কর ৬ হাজার ৫০০ টাকা। আগামী বাজেটে ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রাইম মুভারের বর্তমান কর ২৪ হাজার টাকা। আগামী বাজেটে ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে ৫ টনের বেশি নয়- এমন ক্যাপাসিটির ট্রাক, লরি বা ট্যাংকলরির ৯ হাজার ৫০০ টাকা। আগামী বাজেটে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে দেড় টনের বেশি নয়, তবে ৫ টনের কম নয় এমন ক্যাপাসিটির ট্রাক, লরি বা ট্যাংক, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, ম্যাক্সি বা অটোরিকশা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন ট্যাক্সিক্যাবের জন্য ৪ হাজার টাকার কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার দেড় টনের বেশি নয় এমন ট্রাক, লরি ও ট্যাংকলরির অগ্রিম কর ৭ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, ম্যাক্সি বা অটোরিকশা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় এমন ট্যাক্সিক্যাবের কর বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ১৫ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে একের অধিক গাড়ি ব্যবহার থাকলে বেশি কর দিতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ‘কার্বন ট্যাক্স’- এর আদলে কর বসানো আছে। এসব বহাল রাখা হয়েছে।