
দেশে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দুই যুগ পার হলেও এখন সঠিক ও কার্যকর বিকল্প তৈরি হয়নি। ফলে দৈনন্দিন জীবনে উল্টো বেড়েছে এর ব্যবহার। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভবিষ্যতে বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্লাস্টিক দূষণ অনেক বড় কারণ হয়ে উঠবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমন বাস্তবতায় আজ ৫ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘এন্ডিং প্লাস্টিক পলিউশন’ এবং স্লোগান হচ্ছে ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এর ভাবানুবাদ করেছে ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এবং ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ২০০২ সালে দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার দুই যুগ পার হলেও সেই নিষেধাজ্ঞাটা কার্যকর করা যায়নি। বর্তমান সরকারকে আমরা এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়ন নেই। পলিসি বাস্তবায়নে আমাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব প্লাস্টিক কারখানা তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সেখানেও অনেকের কর্মসংস্থান আছে। তাই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পলিসি নিতে হবে।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন নিয়ে জনগণ সচেতন আছে। কিন্তু প্লাস্টিকের বিকল্প বের করতে হবে। যেটা সহজে সবাই ব্যবহার করতে পারবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। রিসাইক্লিং করতে হবে। একবার ব্যবহার করা হয়, এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার দৈনন্দিন জীবন সাময়িক সহজ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় ক্ষতি করছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ দশকে বিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতিবছর আনুমানিক আট মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য মহাসাগরে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশেও নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার দ্রুতই বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানীতে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ বছরে গড়ে সাড়ে ২২ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করছে। যার বড় অংশ খাল, জলাশয় হয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে। চলতি বছর গবেষণা জার্নাল স্প্রিঞ্জারে প্রকাশিত প্রবন্ধ অনুযায়ী, আগামী ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অধিক ঝুঁকি তৈরি করবে। যার অন্যতম কারণ হবে প্লাস্টিক দূষণ।
অন্যদিকে প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে প্লাস্টিকের স্তর জমা হচ্ছে; যা আমাদের খাবারের চক্রে প্রবেশ করছে। সামনে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানবস্বাস্থ্য ও জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিচ্ছে, মহাসাগরকে দূষিত করছে এবং বন্য প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।’ প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আগামী দিনে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য বিএনপির বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান চরম অবনতিশীল জলবায়ু সংকট ও শিল্পদূষণের প্রেক্ষাপটে এখন একটি বাস্তবমুখী ও দূরদর্শী জাতীয় কৌশল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন। বিএনপি যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পায়, তাহলে আমরা নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়ার অঙ্গীকার করছি, যাতে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা করা যায়।’
জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন ৬ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ও প্রচার এবং পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ প্রদানের জন্য তিনজন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ব্যক্তিপর্যায়ে মনোনীতরা হলেন পঞ্চগড়ের মাহমুদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সিডিএ আবাসিক এলাকার মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ও প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ। আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকার ধামরাইয়ের ‘স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড’, পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট’ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।