
বন্দর নগর চট্টগ্রামে চলছে ডেঙ্গু, করোনা ও ডায়রিয়া আক্রান্তের প্রতিযোগিতা। প্রতিদিনই এসব রোগে কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের বেডে করোনায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় খুব একটা দেখা যায়নি। তবে বাকি দুই রোগে আক্রান্তের হার চোখে পড়ার মতো।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন করোনায় ও ৩৪৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
চট্টগ্রামে গত এক দিনে ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ জনে। একই সময়ে নগরের দুটি সরকারি ও ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালে ১২৯ জনের করোনা পরীক্ষা শেষে ছয়জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের ছয়জনই নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
করোনার তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ পুরুষ, ২৩ নারী ও এক শিশু রয়েছে। সব মিলিয়ে নগরে ৪৩ জন ও বিভিন্ন উপজেলায় সাতজন করোনায় আক্রান্ত। সেই হিসেবে বলা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরেই করোনা সংক্রমণের গতি বেশি। তা ছাড়া এই রোগে এখন পর্যন্ত একজন মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রাথমিকভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বয়স্ক, প্রসূতি নারী ও করোনাযুদ্ধে প্রথম সারিতে থাকা নাগরিকদের। গত বুধবার মেমন জেনারেল হাসপাতালে ফাইজারের বুস্টার ডোজ টিকাদানের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়।
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তাই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা দেখছি না। মাস্ক পরতে হবে, বার বার হাত ধুতে হবে। আমি নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।’
এদিকে চট্টগ্রামে চলতি বছরের প্রতি মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চট্টগ্রাম জেলায় গত সাড়ে পাঁচ মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুন) ৩৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৭০ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮, মার্চে ২২, এপ্রিলে ৩৩, মে মাসে ১১৬ ও জুন মাসের ১৯ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ জন। মোট আক্রান্ত ৩৪৫ জনের মধ্যে ১৯৪ পুরুষ, ৯৬ নারী ও ৫৫ শিশু রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তে দুই পুরুষ মারা গেছেন।
চট্টগ্রামে গত বছরগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ছিল চোখে পড়ার মতো। এই রোগে ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন, ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৮৭ জন ও ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৩২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রোগটিতে মৃত্যুর হারও কম নয়। ডেঙ্গুতে ২০২২ সালে ৪১ জন, ২০২৩ সালে ১০৭ জন ও ২০২৪ সালে ৪৫ জন মারা গেছেন।
এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় মারা যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত মাসে ১১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৭৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক বলা যাবে না। রোগীদের সব রকম সেবা দিতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডায়রিয়া নিয়েও উদ্বেগের কিছু নেই। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেমন- মাস্ক পরা, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরে থাকা, এসব বিষয় মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।