গোলের পর নানা ঢঙে উদযাপন করে থাকেন ফুটবলাররা। আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসি যেমন গোলের পর আকাশের দিকে তাকিয়ে খোঁজেন প্রিয় দাদীকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর উদযাপন অবশ্য ভিন্ন। মাঠের কোনায় দুই হাত ওপরে তুলে লাফিয়ে উঠে করেন ‘সিউ’ উদযাপন। অনেকে আবার গোলের আনন্দে খুলে ফেলেন জার্সি। যাতে ঘটে বিপত্তিও। কপালে জোটে হলুদ কার্ড।
গোলের পর জার্সি খুললে রেফারি দেখান হলুদ কার্ড। এতে কি ফুটবলারদের আনন্দ-উদযাপনে বিঘ্ন ঘটছে না? কারও মতে, এই হলুদ কার্ড ফুটবলারদের রোবট বানিয়ে ফেলছে। আনন্দ প্রকাশের জায়গা হচ্ছে সংকুচিত। কমে যাচ্ছে ফুটবলারদের আবেগও। তবে উল্টো যুক্তিও আছে ফিফার কাছে। জার্সি খুললে কী সমস্যা, তা ব্যাখ্যা করেছে বিশ্বফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থা।
২০০৪ সালের আগে মাঠে জার্সি খুলে ফেললেও হলুদ কার্ড হজম করতে হতো না ফুটবলারদের। তবে সময়ের আবর্তে বদলেছে নিয়ম। তা মানতে হচ্ছে ফুটবলারদের। যদিও আছে ব্যতিক্রম। ফিফার এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনেকে খুলে ফেলেন জার্সি। উদযাপন করেন মনের মতো।
ফুটবলের আইন কী বলে? ফিফা তাদের রুলবুকের ১২ নম্বর উপধারায় উল্লেখ করেছে। মাঠের চারপাশের উঁচু বেড়ার নিরাপত্তা বেষ্টনী বেয়ে ওঠা কিংবা সেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ডিঙিয়ে সমর্থকদের কাছে চলে যাওয়া। দর্শকদের দিকে উসকানিমূলক কিংবা ব্যঙ্গাত্মক কোনো অঙ্গভঙ্গি করা, মুখোশ বা একই রকম কোনো বস্তু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, জার্সি খুলে ফেলা এবং জার্সি খুলে তা মাথায় বেঁধে রাখা, এগুলো কিছুই করা যাবে না ফুটবল মাঠে।
জার্সি খুললেই এখন দেখানো হয় হলুদ কার্ড। এর পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ। স্পন্সররা খেলোয়াড়দের জার্সিতে তাদের নাম ও লোগো বসিয়ে দেয় প্রচারের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় যাতে তাদের নাম স্পষ্ট দেখা যায়। গোলের পর আইকনিক সেলিব্রেশনগুলো জমা থাকে ফটোগ্রাফারদের জন্য। ওই ছবিগুলোই ফলাওভাবে প্রচার হয় পুরো বিশ্বে। এমন মুহূর্তে যদি গায়ে জার্সি গায়ে না থাকে, তাহলে স্পন্সরদের প্রচারের একটি বড় সুযোগ হারিয়ে যায়।
জার্সি খুলে উদযাপন করাকে মাত্রাতিরিক্ত সেলিব্রেশন হিসেবেও ধরা হয়। জার্সি খুলে এভাবে সেলিব্রেশন অনেক সময় উত্তেজিত করে তোলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় ও দর্শকদের, পরে যা রূপ নেয় সহিংসতায়।
অনেকে জার্সির নিচে আলাদা শার্টে একটি বার্তা লিখে তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বার্তাগুলো অনেক সময় হয় উসকানিমূলক, রাজনৈতিক, কিংবা ধর্মীয়। এসব রুখতেই ফিফার এই নিয়ম।
২০১০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করে জার্সি খুলে ফেলেছিলেন স্পেনের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। জার্সির নিচে থাকা গেঞ্জিতে ইনিয়েস্তা নিজের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের প্রয়াত সতীর্থ দানি হারকে উদ্দেশ্য করে একটি বার্তা দিয়েছিলেন। এটি উসকানিমূলক না হলেও নিয়ম রক্ষার খাতিরে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল ইনিয়েস্তাকে।
কিছু বার্তা অবশ্য মজাদারও হয়। যেমন ইতালির মারিও বালোতেল্লি। ম্যানচেস্টার ডার্বিতে ম্যানইউর বিরুদ্ধে গোল করার পর জার্সি উঁচিয়ে ধরে দেখিয়েছিলেন তিনি। গেঞ্জিতে লেখা ছিল, “Why always me?” বার্তাটি যে পরিষ্কারভাবে তার বারবার ঝামেলায় জড়ানো নিয়ে, তা বুঝতে কষ্ট হয়নি কারও।
গোলের পর জার্সি খুলে ফেলা মোটেই কোনো অপকর্ম নয়, কিন্তু ফুটবলের ক্ষেত্রে এটি প্রচণ্ড অর্থবহ। একটি হলুদ কার্ডের সতর্কতা দিয়ে খেলোয়াড়দের প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়া হয়, প্রতিপক্ষ ও দর্শককে সম্মান করার কথা। যেকোনো অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ রোধেই এই নিয়ম নিয়ে আসা। সীমার বাইরে উদযাপন যেকোনো সময়ই খেলার গতি নষ্ট করে দিতে পারে।