জিতলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর হেরে গেলে বাদ পড়ার শঙ্কা নিয়ে মাঠে নামে পিএসজি। এসবের মাঝেও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে পিএসজি। কিন্তু বারবার সুযোগ মিস করে তারা। অসংখ্য সুযোগ নষ্টের পঅর গোলও হজম করে বসে দলটি। ঘুরে দাঁড়িয়ে সমতা ফেরালেও জয়সূচক গোলের দেখা আর পায়নি তারা। ভাগ্যের সহায়তায় আরেক ম্যাচের ফল পক্ষে আসায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বের টিকেট পেয়েছে লুইস এনরিকের দল।
বুধবার রাতে সিগনাল ইদুনা পার্কে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। একই সময়ে শুরু আরেক ম্যাচে এসি মিলান জেতায় গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পরের ধাপে উঠেছে পিএসজি।
ঘরের মাঠে মিলানের বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গিয়ে আশা জোরাল করে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়ে ফেলে ইংলিশ ক্লাবটি। ম্যাচের চূড়ান্ত ফলাফলে ২-১ গোলে হেরে ছিটকে যায় ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা থেকে। আর তাতেই ভাগ্য খুলে যায় পিএসজির।
আগেভাগে নকআউট পর্বে খেলা নিশ্চিত করা ডর্টমুন্ড এই ড্রয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো। ছয় ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১১। পিএসজি ও এসি মিলানের পয়েন্ট সমান ৮। মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। তাই ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিল মিলান। তলানিতে থাকা নিউক্যাসলের পয়েন্ট ৫।
ম্যাচের শুরুতেই বিপদে প্রায় পড়তে বসেছিল পিএসজি। ডর্টমুন্ডের তরুণ ফরোয়ার্ড জেমি বিনো-গিটেন্স ডি-বক্সে একজনকে কাটিয়ে শট নিতে পারতেন; কিন্তু তিনি মার্কো রয়েসকে পাস দেওয়ার চেষ্টায় ভুলটা করেন। বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি।
পিএসজি ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয়। পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ভিতিনিয়ার ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর তখন পর্যন্ত সেরা সুযোগটি পান লি কাং-ইন; তবে সতীর্থের কাটব্যাক ছয় গজ বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশা বাড়ান দক্ষিণ কোরিয়ান মিডফিল্ডার।
একের পর এক আক্রমণের ঝড় তুলে পরের আট মিনিটে আরও তিনটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে পিএসজি, যদিও সাফল্য ধরা দেয়নি। ১৭তম মিনিটে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে লুকা এরনঁদেজের উঁচু করে বাড়ানো থ্রু বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপ্পে। গোলরক্ষককেও কাটিয়ে আলতো করে শট নেন তিনি। বলে খুব একটা গতি না থাকলেও গোলমুখীই ছিল; কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে অসাধারণ নৈপুণ্যে স্লাইড করে শেষ মুহূর্তে ঠেকিয়ে দেন নিকলাস সুলে।
এর ঠিক তিন মিনিট পর ব্র্যাডলি বারকোলার কোনাকুনি শট গিয়ে লাগে পোস্টে। এরপর দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে গতিতে প্রতিপক্ষের দুইজনকে পেছনে ফেলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান রন্দাল কোলো মুয়ানি। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে তিনিও নেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শট।
রোমাঞ্চে ভরপুর প্রথমার্ধের শেষ দুই মিনিটে উভয় পক্ষই তৈরি করে দারুণ দুটি সুযোগ। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতাকে কেউই কিছু করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকে চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। এর মাঝেই ৫১তম মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে পিএসজি। গোলটি করেন জার্মান ফরোয়ার্ড করিম আদেইয়েমি।
পাঁচ মিনিটেই গোল শোধ দেয় পিএসজি। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে এমবাপ্পে বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন। প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে বল পেয়ে যান ওয়ারেন জাইরে-এমেরি। ১৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পা ছুঁয়ে খুঁজে নেয় ঠিকানা। ম্যাচে তখন সমতা ফেরে ১-১ গোলে।
৬২তম মিনিটে আবারও দোন্নারুম্মার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় পিএসজি। ডাচ ফরোয়ার্ড ডোনিয়েল মালেনের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ইতালিয়ান গোলরক্ষক।
৭৫তম মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে গতিতে সবাইকে পেছনে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপ্পে। কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠিয়ে শুরুও করে দেন উল্লাস। কিন্তু, ভিএআরে দেখা যায় অফসাইডে ছিলেন তিনি।
বাকি সময়ে পিএসজি আর পারেনি তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে। তবে তাদের ভাগ্য খুলে যায় মিলানের ৮৫তম মিনিটের গোলে। সব শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার নানা ধাপ পেরিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টিকে থাকার স্বস্তিতে মাঠ ছাড়ে পিএসজি।