বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষ যে অনেক বড় পরিসরের, তা নয়। তবে এই কক্ষেই বাফুফে তাদের সব আনুষ্ঠানিকতা সারে নির্বিঘ্নে। কিন্তু গতকাল বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচের সংবাদ সম্মেলন ভালোমতো শেষ করতে বাফুফের কর্মীদের বেশ বেগই পেতে হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন কক্ষে যে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। উপচে পড়া উপস্থিতি ছিল সংবাদকর্মীদের। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া যে দৃশ্য দেখে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করলেন। সাংবাদিকরা বসার চেয়ার না পেয়ে নিচে বসে পড়া দেখে বলে উঠেন, ‘এখানে এত সাংবাদিক আমি প্রথম দেখছি। কিন্তু আমার কষ্ট লাগছে আপনারা নিচে বসে আছেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলের দৃশ্যটা আসলে বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ঘিরে সংবাদ মাধ্যমের তুমুল আগ্রহ। কারণ আর কিছুই নয়, হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলার বাংলাদেশ দলে নাম লেখাতেই গোটা দেশের ফুটবলের চিত্র বদলে গেছে। ফুটবলারদের অনুশীলন দেখতেও এখন স্টেডিয়াম আঙনায় ভিড় জমাচ্ছেন সমর্থকরা। সংবাদকর্মীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি তো থাকছেই। গতকালের বাফুফে ভবনের চিত্রটাকে তাই অস্বাভাবিক বলার উপায় নেই। বরং এটা না হওয়াটাই এখন অস্বাভাবিক। আর ভুটানের বিপক্ষে এই ম্যাচটার তো অন্য রকম একটা আবেদন আছে। এই ম্যাচ দিয়ে যে ঘরের মাঠে অভিষেক হওয়ার কথা হামজার।
ভুটান ম্যাচ না সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে হামজার ঘরের মাঠে অভিষেক হবে, এ নিয়ে একটা দ্বিধা ছিল। সেই দ্বিধা গতকালের সংবাদ সম্মেলনে কেটে যেতে পারে বলে আভাস ছিল। হয়েছেও সেটা। বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘হামজা কালকের (আজ) ম্যাচের জন্য অ্যাভেইলেবল।’ অর্থাৎ সব ঠিক থাকলে আজ দেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হবে হামজার। গত মার্চে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে যিনি দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচটি খেলেছেন।
জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘদিন পর দেশের প্রধান ভেন্যুতে ফুটবল ফিরবে। তবে এই ম্যাচটি মূলত আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতি বলা চলে। পুরো দলের মূল নজর সিঙ্গাপুর ম্যাচের দিকে। জামাল ভূঁইয়া যেমন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তবে কালকের ম্যাচও ভুটানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমরা আমাদের সেরাটা দেব। এখন আমাদের প্রধান ফোকাস হচ্ছে ভুটান ম্যাচে। ম্যাচটা জিততে হবে।’
ভুটানের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে। দুই দলের ১৬ দেখায় বাংলাদেশ জিতেছে ১২টিতে। ভুটানের জয় ২টিতে। ড্র হয়েছে দুটি। তবে দুই দলের সবশেষ লড়াইয়ে জিতেছে ভুটান। গত বছর ভুটান সফরে দুটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রথমটি ১-০ তে জিতলেও পরেরটিতে একই ব্যবধানে হারে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। অন্য হারটি ২০১৬ সালের, যে হারের ফলে তোলপাড় পড়ে দিয়েছিল দেশের ফুটবলে। সবশেষ ভুটান সফরের পারফরম্যান্স নিয়ে জামালকে খুব বেশি চিন্তিত মনে হয়নি। তার কথায়, ‘সবশেষ আমরা যখন ভুটানের বিপক্ষে খেলছি, তখনকার আর এখনকার অবস্থাটা ভিন্ন। ওই ম্যাচের আগে আমাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই প্রায় ৩-৪ মাস ধরে খেলার মধ্যে ছিল না। এখন লিগ মাত্র শেষ হয়েছে, তো সবাই খেলার মধ্যে আছে, মানে চিত্রটা ভিন্ন।’
এ ছাড়া এখন হামজা চৌধুরীর মতো হাইপ্রোফাইল খেলোয়াড় দলে রয়েছেন। আছেন ফাহামেদুল ইসলাম। যাকে এদিন পুরো ম্যাচ না খেলালেও কিছুটা সময় যে খেলানো হবে সেটি নিশ্চিত করেছেন কাবরেরা। বলেছেন, ‘ফাহামিদুলের কিছু সময় খেলার সম্ভাবনা আছে।’ আরও এক প্রবাসী সামিত সোম আজ ভোরেই দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তবে তাকে নিয়ে কাবরেরা বলেছেন, ‘লম্বা ভ্রমণ করে সে আসবে, তাকে নিয়ে আমাদের আরও একটু বেশি সতর্ক হতে হবে।’ অর্থাৎ সামিতের খেলার সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ দলে এই যে প্রবাসী ফুটবলারদের মেলা, তাতে দলটির শক্তি যে অনেক বেড়েছে, এটি বলতে কোনো দ্বিধা করেননি ভুটান দলের কোচ আতসুশি নাকামুরা ও অধিনায়ক নিমা ওয়াংদি। নাকামুরার কথায়, ‘আমরা অনেক সৌভাগ্যমান যে হামজা চৌধুরীর মতো খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলতে পারব। হামজা খুবই ভালো মানের খেলোয়াড়। আশাকরি ছেলেদের খুব ভালো অভিজ্ঞতা হবে। আমি ম্যাচটা নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত।’ আর নিমা ওয়াংদির কথা তো, ‘হামজা যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল।’ তবে এই বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো ফলের প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন ভুটান কোচ নাকামুরা, ‘ব্রানাইয়ে বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আগে এই ম্যাচটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই এই ম্যাচে আমরা আমাদের সেরাটা দেব।’ উল্লেখ্য, ভুটান দুলেও দুজন অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী ফুটবলার রয়েছেন।