
একটি ট্রফির জন্য কত অপেক্ষা, কত হাপিত্যেশ, কত অশ্রু বিসর্জন। সবই একটা সময় দেখেছে আর্জেন্টিনা। কয়েকবার ফাইনালে উঠেও সাধের ট্রফি থেকেছে অস্পর্শ। মেসিদের হৃদয় ভেঙে হয়েছে চুরমার। আঁধার শেষে এক সময় দেখা মেলে আলোর রেখা। যেটা মেসিরা দেখেছিল ২০২১ সালে। এই বছরের কোপা আমেরিকা ভোজবাজির মতো বদলে দেয় আলবিসেলেস্তাদের গতিপথ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোনো শিরোপায় চুমু আঁকে মেসিরা। এরপর ফিনালসিমা জয়। তারপর মরুর বুকে ঐতিহাসিক ফাইনালে পরাশক্তি ফ্রান্সকে হারিয়ে সোনালি বিশ্বকাপে চুম্বন। দুই বছরে তিনটি শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনার সামনে আরও একটি ট্রফি জয়ের হাতছানি। কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ওঠেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়। ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা জেতে সর্বশেষ কোপা আমেরিকা। এরপর বিশ্বকাপের জন্য ৩৬ ও আন্তর্জাতিক যেকোনো ট্রফির জন্য ২৮ বছরের অপেক্ষা আর্জেন্টিনাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। বারবার শিরোপার কাছে গিয়েও হেরে যাওয়ায় আর্জেন্টিনাকে নিয়ে একটা প্রবাদ বেশ চাওড় হয়েছিল, ‘আর জেতে না, আর্জেন্টিনা’। তবে গত ১০ বছরে সেই চিত্রে এসেছে পরিবর্তন। এখন আর হয়তো সেই প্রবাদ বাক্যটি কেউ আওড়ায় না। বরং আর্জেন্টিনা মানেই যেন এখন ফাইনাল। কেউ কেউ আর্জেন্টিনা দলকে তাই ডাকছেন, ‘ফাইনাল্টিনা’ বলেও।
গত ১০ বছরে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপসহ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলেছে পাঁচবার। চলমান কোপা টুর্নামেন্ট ধরলে ষষ্ঠ ফাইনাল খেলার অপেক্ষায় আর্জেন্টিনা। ইতালির সঙ্গে এক ম্যাচের ফিনালসিমা ফাইনাল হিসেবে ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় সাতে। এর মধ্যে শিরোপা জয় তিনটি। ২০১৪ বিশ্বকাপ দিয়েই ধরা যাক। ব্রাজিলের মাটিতে অনুষ্ঠিত এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু জার্মান মেশিনে স্বপ্নযাত্রা থেমেছিল আর্জেন্টিনার। এরপর টানা দুই কোপার আসরের (২০১৫, ২০১৬) ফাইনালে গিয়েও চিলির সঙ্গে টাইব্রেকারে হার। ২০১৮ বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বিদায় ফ্রান্সের কাছে হেরে। এক বছর পরই কোপার সেমিতে ব্রাজিলের কাছে হার ২-০ গোলে। ২০২১ এসে আর্জেন্টিনা পায় নতুন পথের দেখা। ডি মারিয়ার স্মরণীয় গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে রেকর্ড ১৫তম কোপা শিরোপা জয় লাতিন আমেরিকার দেশটি। পরের বছর কাতার বিশ্বকাপে মেসিদের বিশ্ব জয়। এবার হাতছানি দিচ্ছে টানা দ্বিতীয় কোপার শিরোপা।
কোপার ইতিহাসে রেকর্ড ৩০তম ফাইনালে আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে কানাডাকে। গোটা টুর্নামেন্টে গোলহীন মেসি সেমিতে পেয়েছেন গোলের দেখা। বাকি গোলটি আলভারেজের। এক গোলে মেসি ছাপিয়ে গেছেন ইরানের আলী দাইকে (১০৮)। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির গোল এখন ১০৯টি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির সামনে এখন শুধুই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (১৩০)।
ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনটি বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জেতার রেকর্ড আছে স্পেনের। ২০০৮ ইউরো জেতার পর ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল জাভি হার্নান্দেজেরা। দুই বছর পর ২০১২তে জেতে আবারও ইউরো। স্পেনের সেই কীর্তি স্পর্শ করার সুযোগ এখন মেসিদের সামনে। ২০২১-এ কোপা, ২০২২-এ বিশ্বকাপ জেতার পর ২০২৪-এ কোপা জেতার সুবর্ণ সুযোগ মেসি-ডি মারিয়াদের সামনে। টানা তিন শিরোপা জেতার পথে আর্জেন্টিনার বাধা উরুগুয়ে অথবা কলম্বিয়া। আগামী ১৪ জুলাই কোপার ফাইনাল আর্জেন্টিনার জন্য স্পেশাল। কারণ এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেবেন আনসাং হিরো আনহেল ডি মারিয়া।
ডি মারিয়া ফাইনাল খেলেছেন, আর্জেন্টিনা সেই ফাইনাল হেরেছে, এমন রেকর্ড নেই। ফাইনালে থাকছেন ডি মারিয়া, আর্জেন্টিনার শিরোপা উৎসবের মধ্যমণিও কি তাহলে হচ্ছেন তিনিই? আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা।