
ডি মারিয়াকে কোনো দিন ভুলতে পারবেন না লিওনেল মেসি। পারবে না আর্জেন্টিনাও। ১৯৯৩ সালে কোপা শিরোপা জেতার পর দীর্ঘ ২৮ বছর শিরোপা খরায় ভুগেছিল আর্জেন্টিনা। যতটা না আর্জেন্টিনা তার চেয়ে বেশি আক্ষেপ যেন ছিল লিওনেল মেসির। ক্লাব পর্যায়ে সব জেতার পরও ক্ষুদে এই জাদুকরের শোকেস ছিল ফাঁকা। যেখানে ছিল না আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো শিরোপা।
২০২১ কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ডি মারিয়ার একমাত্র গোল মেসিকে দেয় আন্তর্জাতিক ট্রফিতে চুমু খাওয়ার পরম উপলক্ষ। আর্জেন্টিনা পায় ২৮ বছর পর কোনো শিরোপা। ২০২২ সালে ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনা জেতে বিশ্বকাপও। ফাইনালে ছিল ডি মারিয়ার চোখ জুড়ানো একটি গোল। এর আগে ফিনালসিমার ফাইনালেও করেছেন গোল।
সেই ডি মারিয়াকে কীভাবে ভুলবেন মেসি তথা আর্জেন্টিনা। ভোলার কথা নয়। বরং বেলা শেষের গানে দীর্ঘদিনের সতীর্থকে দারুণ উপহারই দিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার জন্য ফাইনালে নামা আর্জেন্টিনা জিতেছে কোপার রেকর্ড শিরোপা। এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন আনহেল ডি মারিয়াও।
বিশ্বকাপ জেতার পরই অবসর নিতে চেয়েছিলেন ডি মারিয়া। তবে মেসির পরামর্শে সিদ্ধান্ত পাল্টান। তবে গত বছর জানিয়ে দেন, ২০২৪ কোপা আমেরিকার পর আর জাতীয় দলের হয়ে নামবেন না তিনি। কথা রাখলেন মারিয়া, তার শেষ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতে কথা রাখল মেসির আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ৬৩ মিনিটে চোট পেয়ে মেসি মাঠ ছাড়েন কান্নাভেজা চোখে। অতিরিক্ত সময়ে মাঠ ছাড়েন ডি মারিয়াও। মাঠ ছেড়ে সোজা চলে যান মেসির কাছে। কান্না চোখে দুজনের আলিঙ্গন আর্জেন্টিনার ফুটবলের অন্যতম এক স্থিরচিত্রই বলা যায়। যার শেষটা হয়েছে সুখের কান্নায়, ১৬তম কোপার ট্রফি জয়ে। যে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫তম ম্যাচটি (৩১ গোল) মারিয়ার জন্য হয়ে থাকল দারুণ এক মাইলফলকও।
আর্জেন্টিনার হয়ে অনুর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা ডি মারিয়া মেসির মতো শিরোপ খরায় ভুগেছেন। ক্লাব পর্যায়ে সাফল্য থাকলেও ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালসহ বেশ কিছু টুর্নামেন্ট ডি মারিয়াকে কাঁদিয়েছে অনেক। তবে শেষ ভালো যার সব ভালো তার, এই প্রবাদ বাক্যের মতো মারিয়াও হয়তো এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ফুটবলার।
লিকলিকে শরীরের অদম্য এই ফুটবলার ক্লাব পর্যায়ে আলো ছড়িয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, পিএসজি, জুভেন্টাসের মতো নামকরা সব ক্লাবে। ক্লাব পর্যায়ে অনেক শিরোপার পাশাপাশি ডি মারিয়ার শোকেসে এখন আর্জেন্টিনার হয়ে মেজর তিন তিনটা ট্রফি।
তবে গেল চার বছরে এই তিন শিরোপা জেতা সহজ ছিল না। ম্যাচ শেষে ডি মারিয়া বলেন, ‘এটাকে অনেক সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু এটা খুব কঠিন। যারা নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে, আমাদের এই প্রজন্মের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি যা খুব করে চেয়েছিলাম, তারা আমাকে সেটা অর্জন করতে দিয়েছে।’ রাজসিক বিদায়ে আপ্লুত মারিয়া, ‘এটাই লেখা ছিল এবং এভাবেই লেখা ছিল। আমি এই সবকিছুরই স্বপ্ন দেখেছি এবং আমি ছেলেদের এটা বলেছি। আমার মনে অনেক অনেক সুন্দর স্মৃতি।’
আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনির কাছে মারিয়াকে শেষ ম্যাচে মনে হয়েছে ২৫ বছরের টগবগে যুবক। তিনি বলেন, ‘সে (ডি মারিয়া) অসাধারণ অনেক ম্যাচই খেলেছে, কিন্তু আজকের ম্যাচটি ছিল তা সেরা ম্যাচগুলোর একটি। সে একজন কিংবদন্তি, তার মান বোঝানোর কোনো উপায় নেই। যেভাবে শেষ হয়েছে, তার গল্প যেন সিনেমার চিত্রনাট্য।’