ঢাকা ১৭ কার্তিক ১৪৩১, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

ইনজুরির মিছিলে পেসাররা

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
ইনজুরির মিছিলে পেসাররা
ছবি : সংগৃহীত

খেলার সঙ্গে খেলোয়াড়দের ইনজুরি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খেলা কিংবা অনুশীলন- যেকোনো মুহূর্তে খেলোয়াড়দের সঙ্গী হতে পারে চোট। ক্রিকেট মাঠও এর ব্যতিক্রম নয়। ক্রিকেটে ব্যাটারদের চেয়ে বোলারদের সখ্য ইনজুরির সঙ্গে বেশি। আবার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইনজুরিপ্রবণ পেসাররা। যার প্রমাণ পাকিস্তানি গতি তারকা শোয়েব আখতার ও বাংলাদেশি পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা। ক্যারিয়ারে সাতবার শল্যবিদের ছুরির নিচে যেতে হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে পারেননি বলে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন পাকিস্তানি পেসার শোয়েব আখতার। ইনজুরির সঙ্গে লড়তে পারেননি বলে অস্ট্রেলিয়ান পেসার শন টেইট ক্রিকেটকে বিদায় জানান ৩৩ বছর বয়সে।

বিশ্বজুড়ে পেসারদের এমন ইনজুরি প্রবণতা ছুঁয়েছে বর্তমান বাংলাদেশকেও। জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে খেলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা অন্তত ৪ পেসার রহনতদৌল্লা বর্ষণ, মুশফিক হাসান ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, অভিষেক দাসের পাশাপাশি ইবাদত হোসেন আছেন ইনজুরিতে। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর মতে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট, ক্রিকেট ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক শিক্ষার অভাব বাংলাদেশের পেসারদের অনেক বেশি ইনজুরিপ্রবণ করে তুলেছে।

২০১১ সালে মাত্র ১৮ বছরে অভিষেক হয় অস্ট্রেলিয়ান পেসার প্যাট কামিন্সের। ইনজুরিপ্রবণ হওয়ায় অভিষেক ম্যাচের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পেসারকে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলায়নি অস্ট্রেলিয়া। তার মতো ইনজুরিপ্রবণ হওয়ায় মাঝেমধ্যেই ম্যাচ মিস করেন আরেক অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। বিশ্বজুড়ে পেসারদের এই ইনজুরিপ্রবণতা বাংলাদেশকেও স্পর্শ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মানসম্পন্ন পেসার বাড়ায় তাদের ইনজুরির ব্যাপারটি চোখে লাগছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। কেন বাংলাদেশি পেসাররা এমন ইনজুরিপ্রবণ হচ্ছেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকা অপুষ্টি বেশি ভোগাচ্ছে বাংলাদেশি পেসারদের। গ্রামাঞ্চল ও দেশের দরিদ্রতম পরিবার থেকে উঠে এসেছেন বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। ফলে শৈশব থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গী অপুষ্টি সমস্যা।

দেশের পেসারদের ইনজুরির অন্যতম কারণ এই অপুষ্টি। এমনটা জানিয়ে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বড় ব্যাপার হলো অপুষ্টি। একটা ছেলে যখন আসে তখন সে ছোটবেলায় কেমন পুষ্টিসম্মত খাবার পেত বা গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তার মা কি রকম পুষ্টিসম্মত খাবার খেত, যা দরুণ তারা এখন ইনজুরিতে ভুগছে। এগুলো আসলে অপুষ্টির কারণ। খেলার জন্য তো শরীর গঠন করতে হবে। বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের শারীরিক গঠন ওই রকম না। আমরা ১৫-১৬ বছর বয়সে যখন ওদেরকে পাচ্ছি তখন কিছুটা সমর্থন বা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু যখন তাদের বয়স ৪-৫ বছর তখন তো সেটা পায়নি। গর্ভাবস্থায় থাকার সময় থেকে হিসাব করলে বোঝা যায় পুষ্টির ব্যাপার অনেক বড় বিষয়।’

পেসারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কে কত জোরে বল করতে পারে। এই প্রবণতা ক্রিকেটারদের অনেক বেশি ইনজুরিপ্রবণ করে তোলে। মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে জোরে বল করার প্রবণতা দেখা যায় পেসারদের মধ্যে। ওই বয়স থেকেই ইনজুরি বাসা বাঁধে পেসারদের শরীরে। মাংসপেশি গঠনের বয়সে পেসাররা ইনজুরিতে পড়াও সমস্যা বলে মনে করেন দেবাশীষ। তার কথায়, ‘আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সমস্যাগুলো (ইনজুরি) তৈরি হয় বয়সভিত্তিক দল থেকে। মূলত পেসাররা পিঠের ইনজুরিতে ভোগে। ১২-১৩-১৫ বছর বয়স থেকে ইনজুরি সমস্যা শুরু হয়। ওই বয়সে একটা ছেলেকে নির্বাচন করা হয় কত জোরে বল করতে পারে সেটা দেখে। ১৩-১৪ বছর বয়সে জোরে বল করে। এটা তো জোরে বল করার বয়স না। ওই সময় মাংসপেশির গঠন করার বয়স। তবুও তারা জোরে বল করছে। সমস্যাটা তখনই শুরু হয়। আর তখন ওদের সমস্যাগুলো দ্রুত ধরা সম্ভব হয়।’

কেন শৈশবে ইনজুরিতে পড়া ক্রিকেটারদের সমস্যা ধরা পড়ে না, সেটাও ব্যাখ্যা করেন দেবাশিস। তার মতে, দেশে প্রচুর তরুণের মধ্যে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন লুক্কায়িত থাকে। ওই বয়সে ক্রিকেটাররা জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে খেলে বলে সেটা সামনে আসে না। বিসিবির অধীনে আসার আগে পর্যন্ত অনেক তরুণ পেসারের মধ্যে থাকে ইনজুরি সমস্যা। তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকা এই পুরোনো ইনজুরিগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা তৈরি করে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তরুণ পেসাররাও হয়ে পড়ে ইনজুরিপ্রবণ। পাশাপাশি তরুণ পেসাররা শুরুতে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট শব্দের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে বলে জানান। তার কথায়, ‘পেস বিভাগটাই ইনজুরিপ্রবণ। গত ৫-৭ বছর ধরে সারা বিশ্বের এগুলো নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। গবেষকরা বের করেছেন বোলিং ওয়ার্কলোড একটা বড় ব্যাপার। বোলিং ওয়ার্কলোড যদি বেশি হয়ে যায়- সেটা একটা কারণ হতে পারে ইনজুরির জন্য। এটা আগে আমরা জানতাম না। আমরা এটা নতুন করে শিখেছি। আমরাও এখন বোলিং ওয়ার্কলোড ম্যানেজ করার চেষ্টা করি।’

পেসারদের ওয়ার্কলোড নিয়ে আরও বলেন, ‘আমার শরীরটা আমি বুঝতেছি কি না, বোলিংয়ের ব্যাপারটা বুঝতে পারছি কি না, এই দুই বিষয় যত ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে, তত নিজের সম্পর্কে জানতে পারবে ক্রিকেটাররা। তারা জোরে বল করতে চায়। জোরে বল করতে হলে শরীরের ভেতর থেকে শক্তি দরকার, বায়ো মেকানিক্স ঠিক হতে হবে। এটা নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে ঘাটতি রয়ে গেছে।’

এ ছাড়া তৃণমূলে কাজ করা কোচদের মধ্যে ওয়ার্কলোড ও ইনজুরি সম্পর্কে জ্ঞানের ঘাটতি থাকাও তরুণ পেসারদের ইনজুরির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘গ্রুমিং করা, ক্রীড়াবিজ্ঞান আমাদের তৃণমূলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।’ তৃণমূলে খেলা ক্রিকেটারদের পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘উন্নত দেশগুলোতে হয়তো এই রকম ব্যাপার একটু কম হয়। আমাদের এখানে যখন খেলোয়াড় খুঁজতে যায় তখন অনেক পাওয়া যায়। যারা সবাই ক্রিকেট খেলতে চায়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে ১০০ জন পাওয়াও কঠিন। যেহেতু ওরা কম খেলোয়াড় পায় তাই ওরা সবাইকে নজরদারি করতে পারে। আমাদের এখানে একদম তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে নজরদারি করা অনেক কঠিন কাজ।’

বাংলাদেশ-আফগান সিরিজ লিটন নেই, নতুন মুখ নাহিদ রানা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
লিটন নেই, নতুন মুখ নাহিদ রানা
লিটন দাস ও নাহিদ রানা। ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দল নেই ওপেনার লিটন দাস। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন পেসার নাহিদ রানা। 

লিটন দাস কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। এই অসুখের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে তিনি ছিলেন স্কোয়াডের বাইরে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ডেপুটি হিসেবে থাকছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। 

আফগান সিরিজে সাকিব আল হাসান থাকবেন কি না, এ নিয়ে ছিল জোর গুঞ্জন। শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াই দল ঘোষণা করল বিসিবি। দলে ফিরেছেন নাসুম আহমেদ, জাকির হাসান ও সৌম্য সরকার।

শনি (২ নভেম্বর) ও রবিবার (৩ নভেম্বর) দুই ভাগে ভাগ হয়ে আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন ক্রিকেটাররা। তিন ম্যাচের সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ৬, ৯ ও ১১ নভেম্বর। সব ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে দুবাইয়ের শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। 

বাংলাদেশ দল

সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ (সহ-অধিনায়ক), রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও নাহিদ রানা।

৮ বলের ঝড়ে বিপাকে ভারত

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম
৮ বলের ঝড়ে বিপাকে ভারত
ছবি: সংগৃহীত

১ উইকেটে ৭৭ রান। মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্য বদল। আট বলের ব্যবধানে নেই আরও তিন উইকেট। মুম্বাই টেস্টের প্রথম দিন শেষে ভারতের স্কোর ৪ উইকেটে ৮৬ রান। নিউজিল্যান্ডকে আড়াইশর রানের নিচে আটকাতে পারলেও শেষ বিকেলের ঝড়ে বিপাকে স্বাগতিক ভারত। টানা দুই টেস্ট জিতে সিরিজ আগেই নিজেদের করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের জন্য শেষ ম্যাচটি ভারতের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

শুক্রবার (১ নভেম্বর) টস জিতে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। জাদেজা ও ওয়াশিংটনের স্পিন ঘূর্ণিতে ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন ড্যারেল মিচেল। উইল ইয়ংয়ের ব্যাটে আসে ৭১ রান। রবীন্দ্র জাদেজা ৫টি ও ওয়াশিংটন সুন্দর নেন চারটি উইকেট। 

শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে ভারতের প্রথম উইকেটের পতন দলীয় ২৫ রানে। ১৮ রান করে হেনরির বলে লাথামের হাতে ক্যাচ দেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপর জয়সওয়াল ও শুবমান ভালোই খেলছিলেন। তবে দলীয় ৭৮ রানের মাথায় রিভার্স সুইপের চেষ্টায় বোল্ড জয়সওয়াল (৩০)। ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমে প্রথম বলেই আউট মোহাম্মদ সিরাজ। 

পরের ওভারে পাগলাটে দৌড়ে রান আউট বিরাট কোহলি (৪)। ৩১ রানে শুবমান গিল ও ১ রান নিয়ে ঋশব পন্ত ক্রিজে অপরাজিত। ভারত এখনো পিছিয়ে ১৪৯ রানে। নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল নেন দুই উইকেট। বাকি একটি হেনরির।

ইউনাইটেড বিশ্বকাপ নিয়ে সন্দিহান মেসি

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম
ইউনাইটেড বিশ্বকাপ নিয়ে সন্দিহান মেসি
লিওনেল মেসি

কাতারে পরম আরাধ্যের বিশ্বকাপ জিতেছেন দুই বছর আগে। এরপর পিএসজি অধ্যায় শেষ করে ইন্টার মায়ামিতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন লিওনেল মেসি। সামনের ইউনাইটেড বিশ্বকাপ আসতে আরও বছর দুয়েক বাকি। ফুটবলের যে বৈশ্বিক আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায়। 

সময়ের হিসেবে সামনের বিশ্বকাপ বেশ দূরে থাকলেও একটি প্রশ্নের সামনে বারবার মুখোমুখি হন লিওনেল মেসি। আর তা হলো, সামনের বিশ্বকাপে দেখা যাবে তো মেসিকে? বরাবর একটাই উত্তর দেন আর্জেন্টিনার এই বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক, ‘সময়টাকে উপভোগ করছি এখন, সামনের বিশ্বকাপ নিয়ে আপাতত ভাবছি না।’

সম্প্রতি ফুটবলবিশ্বের পরিচিত মুখ সাংবাদিক ফাব্রিসিও রোমানোর সঙ্গে ‘দা ৪৩৩ অ্যাপ’ ও অ্যাপল টিভির জন্য এক সাক্ষাৎকারে মেসি একটু বিস্তারিতই বলেছেন সামনের বিশ্বকাপ নিয়ে। যেখানে অনেকটা কৌশলী ছিলেন ফুটবলের এই জাদুকর। যার সারমর্ম, ধাপে ধাপে এগুতো চান তিনি। তবে তিনি এও বলেছেন, সামনের বিশ্বকাপ তিনি খেলতে পারবেন কি না, তা তিনি জানেন না। 

মেসি বলেছেন, ‘আমি সত্যিই জানি না (২০২৬ বিশ্বকাপে খেলব কি না)। আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হয় এটা নিয়ে, বিশেষ করে আর্জেন্টিনায়। আপাতত আমার চাওয়া বছরটা ভালোভাবে শেষ করা। এরপর ভালো একটা প্রাক-মৌসুম কাটিয়ে নতুন বছর শুরু করা।’

চোটের কারণে ইন্টার মায়ামিতে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন মেসি। খেলতে পারেননি আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের কয়েকটি ম্যাচও। ভবিষ্যত নিয়ে আগাম কিছু বলা কঠিন। মেসি ভালো করে জানেন তা। সে কারণেই সব কিছু সময়ের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। 

মেসি বলেন, ‘নতুন মৌসুমে আমি দেখব, কেমন করছি এবং কেমন লাগছে। আমরা কাছাকাছি আছি, তবে পাশাপাশি এটাও সত্যি, অনেক সময় এখনও বাকি এবং ফুটবলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। আপাতত বেশি দূরে না তাকিয়ে প্রতিটি দিনে থাকতে চাই।’

যেকোন টুর্নামেন্টে সম্ভাব্য শিরোপাজয়ী দলের অধিনায়ক যেমনটি বলেন, ধাপে ধাপে এগুতে চাই। মেসিও তেমনটি চাচ্ছেন। মোদ্দা কথা, ততদিন পর্যন্ত (বিশ্বকাপ) ফিটনেস ও ছন্দ যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে মেসি সগৌরবে হাজির হবেন। আগাম কোন কিছু বলা থেকে তাই বিরত থাকছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। 

মেসির ভাবনা এখন ইন্টার মায়ামিকে ঘিরেই, ‘এই সময়, পারিপার্শ্বিকতা ও বয়সের কারণে খেলার ধরন বদলেছি আমি। সবকিছুতে একটু করে মানিয়ে নিচ্ছি। নিজেকে পুনরাবিষ্কার করছি আমি এবং এই লিগে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি, আমার জন্য যা নতুন। তবে শুরু থেকেই এখানে খুব স্বস্তি অনুভব করেছি।’

মেসি আসার আগে মেজর লিগ সকারে তলানির দল ছিল ইন্টার মায়ামি। তবে ক্ষুদে এই জাদুকরের ছোঁয়ায় বদলে গেছে অনেক কিছু। মেসি জাদুতে দলটি জিতেছে লিগস কাপ। এই মৌসুমে মেজর লিগ সকারে পয়েন্টের রেকর্ড গড়ে তারা জিতেছে সাপোর্টার্স শিল্ডও। এখন প্লে অফে খেলছে তারা এমএলএস কাপের জন্য।

এমএলএস কাপ জিততেই এখন মরিয়া ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘একটা ক্লাব গড়ে তুলতে শিরোপার প্রয়োজন পড়ে। বাজে একটা বছর (২০২৩) কাটিয়ে এসেছে এই ক্লাব এবং আমি আসার কিছুদিন পর লিগস কাপ জিতেছি আমরা, ক্লাবের প্রথম ট্রফি সেটি। আমাদের জন্য এটা ছিল অসাধারণ এবং এখন আমরা এখন মুখিয়ে আছি এই প্লেঅফ ম্য্যাচগুলি খেলতে এবং এমএলএস কাপ জিততে। ব্যক্তিগতভাবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ক্লাবের জন্য জিততে চাই।’

বাবা বেঁচে থাকলে বেশি খুশি হতেন : ঋতুপর্ণা

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
বাবা বেঁচে থাকলে বেশি খুশি হতেন : ঋতুপর্ণা
ঋতুপর্ণা চাকমা

কাল রাতে কি ভালো ঘুম হয়েছে? প্রশ্ন শুনেই ঋতুপর্ণা চাকমা হেসে উঠলেন। মুক্তো ঝরানো সেই হাসিতে তার উত্তর, ‘ঘুম হয়নি’। পরক্ষণেই আবার বলে উঠলেন, ‘ঘুম হয়েছে, তবে একটু দেরিতে’।

গত বুধবার স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালার রাতটা পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। পুরো আসরেই দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছেন এই লেফট উইঙ্গার। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে শুধু গোলে অবদান রেখে তৃপ্ত থাকতে হলেও সেমিফাইনাল ও ফাইনালে পান গোলের দেখা। নেপালের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ফাইনালে তার দেখার মতো গোলই গড়ে দেয় ম্যাচের ব্যবধান। সুবাদে এবারের সাফে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতে নেন ঋতুপর্ণা। এক দিকে দেশ দক্ষিণ এশিয়ার সেরা, অন্য দিকে নিজে টুর্নামেন্টের সেরা। ঋতুপর্ণা চাকমার রাতের ঘুমটা অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু দেরিতেই তো হওয়ার কথা।

ফাইনালের পর দশরথ রঙ্গশালায় ঋতুপর্ণার মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, গতকাল (বৃহস্পতিবার) কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও তাকে ঠিক একই রকম উচ্ছ্বসিত লাগছিল। ঢাকার বিমানে ওঠার আগে গল্প-আড্ডায় তার মনের ভেতরটা জানার চেষ্টা। আগের রাতেও এই প্রতিবেদককে নিজের অনুভূতি জানিয়েছিলেন তিনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি টুর্নামেন্ট সেরা হব।’

মাঠে সেদিন সময়টা সতীর্থদের সঙ্গে বেশ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কাটিয়েছিলেন ঋতুপর্ণা। টিম হোটেলে ফিরেও নিশ্চয়ই সেই আনন্দ চলেছে অনেকক্ষণ। কেমন ছিল ঋতুপর্ণার সেই রাতটা? কাল বিমানবন্দরে ঋতুপর্ণার সঙ্গে আলাপের শুরু এই প্রসঙ্গ দিয়েই। ঋতুপর্ণা জানান, টিম হোটেলে ফিরে সবাই কিছুটা শিরোপা উদ্যাপন করেছেন। তাই অন্যান্য দিনের চেয়ে সবাই ঘুমিয়েছেন একটু দেরিতে। তবে সতীর্থদের সঙ্গেই শুধু যে সময় কেটেছে তার, এমনটা নয়। জানান, ‘রাতে বাসায় সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার সাফল্যে অনেক অনেক খুশি তারা।’

ফুটবল মাঠে ঋতুপর্ণার পায়ে যেন মুক্তো ঝরে! বাঁ পায়ের কারুকাজে সবাইকে মুগ্ধ করেন তিনি। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই লেফট উইঙ্গার এবারের সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপকে বলতে গেলে নিজের করে নিয়েছেন। পুরো আসরেই খেলেছেন ছন্দময় ফুটবল। কোনো দলই তাকে আটকাতে পারেনি। প্রতিটি দলের কোচ-খেলোয়াড়রা তাই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার নামটা উল্লেখ করেছেনই। কত দর্শক যে বলেছেন- ‘সি ইজ অ্যা ক্লাস প্লেয়ার’।

আসলেই শৈল্পিক এক ফুটবলার ঋতুপর্ণা। যার উঠে আসা রাঙামাটি থেকে। বিকেএসপির ছাত্রী ছিলেন। এখন পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থাৎ মাঠের ঋতুপর্ণা পড়াশোনাতেও সেরা। 

তবে নিজের এই যে ছুটে চলা, এই যে এত এত সাফল্য, এ সবের মাঝেও সব সময় একটা অপূর্ণতা কাজ করে ঋতুপর্ণার মাঝে। বাবা বরজ বাঁশি চাকমা যে তার সাফল্যের কিছুই দেখে যেতে পারলেন না। ত্রিভুবন বিমানবন্দরে হাসি-আনন্দে মেতে থাকা ঋতুপর্ণা বাবার কথা মনে করে হঠাৎই কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমার বাবা অনেক ফুটবলপ্রেমী ছিলেন। আমার বাবা যদি থাকত, আজ আমার থেকে আমার বাবা অনেক বেশি খুশি হত। অনেক গর্ববোধ করত আমাকে নিয়ে। বাবা-মায়েরা যেমন তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রাউড ফিল করে, আমার বাবা যদি থাকত, তার থেকে অনেক বেশি প্রাউড ফিল করত।’

২০১৫ সালে যখন ঋতুপর্ণার বাবা মারা যান, তখন সবে পঞ্চম শ্রেণি পেরিয়েছেন তিনি। এরপর মা, সঙ্গে তিন বোন ও এক ভাই নিয়ে ছিল তার ভুবন। কিন্তু ২০২২ সালে একমাত্র ভাইটাকেও হারাতে হয় তাকে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তার ভাই। বাবা আর ভাই হারানোর এই কষ্টটা ঋতুপর্ণা ভুলে থাকতে চান ফুটবলের মাঝে আনন্দ খুঁজে নিয়ে।

আনন্দের দিনে কষ্টগুলোকে টেনে আনাটা আসলে অন্যায়। তাই ঋতুপর্ণার সঙ্গে আলাপে প্রসঙ্গ পাল্টানো হলো দ্রুত। জানতে চাওয়া, তার নিজের কাছে এবারের সাফে সেরা খেলোয়াড় কে? ঋতুপর্ণা উত্তর দিতে গিয়ে বললেন মনিকা চাকমার কথা, ‘আমার টিমমেটরা সবাই ভালো খেলোয়াড়। সবাই ভালো খেলেছে। তবে আমাকে টুর্নামেন্টসেরা বেছে নিতে বললে আমি বলব মনিকার কথা।’ কেন, মনিকা কেন? এ প্রশ্নের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ঋতুপর্ণা, ‘মনিকা আমাদের ওয়ান অব দ্য টপ খেলোয়াড়। মিডফিল্ডে অনেক ভালো একজন খেলোয়াড়। শুধু মনিকা না, মারিয়া আপু আছে, স্বপ্নাও আছে। তারাও অনেক ভালো খেলোয়াড়। তবে মনিকার কোয়ালিটি বেস্ট।’

মনিকার সঙ্গে মাঠের বাইরে বেশ মিলও দেখা যায় ঋতুপর্ণার। সাফ জয় করে দেশে ফেরার বিমানধরার আগে বিমানবন্দরে দুজনকে যেমন জুটিবদ্ধভাবে দেখা গেল বেশ কবার। নেপালের বিপক্ষে বুধবার রাতের ২-১ গোলের জয়ে বাংলাদেশের গোলদাতাও আবার এই দুজন। তাহলে মনিকাই কি ঋতুপর্ণার প্রিয় বন্ধু? আর প্রিয় বন্ধু বলেই ঋতুপর্ণার চোখে মনিকা সেরা?

ঋতুপর্ণার উত্তর, ‘আমার দলের সবাই আমার খুব প্রিয়।’

রাজসিক প্রত্যাবর্তন

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৫ পিএম
রাজসিক প্রত্যাবর্তন
বিমানবন্দর থেকে ফেরার সময় ছাদখোলা বাসে ট্রফি হাতে সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দল। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশ বিমানের ‘বিজি-৩৭২’ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতেই তুমুল করতালি। এই করতালি যাত্রী আসনে বসে থাকা সদ্য সাফজয়ী মেয়েদের। সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দা, ঋতুপর্ণা চাকমাদের অভিনন্দনে সিক্ত হন পাইলটরা।

আগের দিন সাবিনারা স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছেন। দুই বছর আগে যে ট্রফি তারা প্রথমবার জিতেছিলেন, এবার সেটা নিজেদের কাছেই রেখে দিতে পেরেছেন। ট্রফি নিয়েই সাবিনারা বাংলাদেশ বিমানের ‘বিজি-৩৭২’ ফ্লাইটে করে ঢাকায় এসেছেন। ট্রফিসহ সাবিনা ব্রিগেডদের নিরাপদে দেশে আনার দায়িত্ব তো ছিল পাইলটেরই। সাবিনাদের সঙ্গে ছিলেন বাফুফের কর্মকর্তা, সাফ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকসহ সাধারণ অনেক যাত্রীরাও। তাই বিমান ঢাকার মাটি ছুঁতেই পাইলটদের সাবিনাদের এমন স্বীকৃতি।

কাঠমান্ডু টু ঢাকা, বাংলাদেশ বিমানের গতকালের দুপুরের ফ্লাইটটি আসলে অন্য রকমই ছিল। সাধারণ যাত্রীদের অনেকেই তো রীতিমতো বিস্মিত। সদ্য সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী দল যে তাদের সহযাত্রী। পাইলট, কেবিন ক্রুরাইবা বাদ থাকলেন কই। সাবিনারা বিমানে উঠতেই ট্রফি সঙ্গে নিয়ে ছবির জন্য পোজ দিলেন দুই পাইলট। পরে খেলোয়াড়রা একে একে গিয়ে দুই পাইলটের সঙ্গে ছবি তুললেন। বিমানের ভেতর তখন উৎসবের আমেজ।

আর এই বিমানটি কাঠমান্ডুর আকাশে ওড়ার ২০ মিনিটের মধ্যে সবার আনন্দ আরও বেড়ে গেল। ঘোষণা এল, বাঁ পাশের জানালা দিয়ে দেখা যাবে মাউন্ট এভারেস্ট। এক দিন আগে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়া সাবিনারা সেই মাউন্ট এভারেস্ট দেখলেন বেশ রোমাঞ্চ নিয়ে। ডান পাশের রোতে যারা বসে ছিলেন, তারাও তাকিয়ে রইলেন বাঁ পাশের জানালার দিকে। খেলোয়াড়দের কেউ কেউ তো ডান পাশ থেকে বাঁ দিকেই চলে এলেন। প্রকৃতির অপূর্ব এই দৃশ্য এত সুন্দর করে দেখার সুযোগ করে দেওয়াতেই কি পাইলটদের উদ্দেশে সাবিনাদের করতালির আওয়াজ জোরালো ছিল!

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চ্যাম্পিয়নদের সহযাত্রী হয়ে এই প্রতিবেদকের সাফ কাভার করে ফেরা। চ্যাম্পিয়নরা কীভাবে বিমানে ওঠেন, কীভাবে তারা বিমানে সময় কাটান মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতাই হলো।

রোমাঞ্চিত ছিলেন সাবিনা, ঋতুপর্ণারাও। সেটা শুধু টানা দ্বিতীয়বার সাফের শ্রেষ্ঠত্ব জিততে পারার জন্যই নয়। দেশের মানুষকে দেওয়া কথা রাখতে পারার জন্য। ট্রফি নিয়ে তারা ফিরতে চেয়েছিলেন। সব বাধা অতিক্রম করে সেই ট্রফি নিয়েই তারা কাল কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় পা রেখেছেন।

চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ঢাকায় পা রাখলে উৎসবের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সাবিনারা বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর পান ফুলেল শুভেচ্ছা। তাদের জন্য বিমানবন্দরের বাইরে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ছাদখোলা বাস। মেয়েদের বহনকারী বিমান ৩টা নাগাদ ঢাকায় পা রাখলেও বিমানন্দরে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেয়েরা ছাদখোলা বাসে ওঠেন ৪টা নাগাদ। বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি তো ছিলই, সাধারণ মানুষেরও উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ছাদখোলা বাসে করে সাবিনারা বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হলে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা।

বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক শ মানুষ। হাত নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। নিচ থেকে কেউ কেউ ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন।

বিমানবন্দরে থেকে সেই ছাদখোলা বাসে করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাবিনাদের নিয়ে যাওয়া হয় বাফুফে ভবনে। দুপুর থেকেই বাফুফে ভবন ঢাকঢোল, আর বাদ্যবাজনায় মুখর ছিল। সাবিনারা বাফুফে ভবনে পা রাখতে রাখতে সন্ধ্যা। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করে এক কোটি টাকার চেক তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সাবিনারা ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। টিম বাসে করে হোটেল থেকে তারা বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ দলের চেক-ইন করার দৃশ্যটাও ছিল দেখার মতো। শুধু চ্যাম্পিয়নের ট্রফিই নয়। ঋতুপর্ণা টুর্নামেন্টসেরা ও রুপনা হয়েছেন সেরা গোলরক্ষক। এই দুটি ট্রফিও ছিল বাংলাদেশ দলের সঙ্গী। ঋতুপর্ণা ও রুপনা সর্বক্ষণ তাদের ব্যক্তিগত স্মারকটা নিজেদের কাছে রেখেছেন। বিমানবন্দরে অনেকের ছবির আবদার মিটিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো মালদ্বীপ দলও একই দিন কাঠমান্ডু ছেড়েছে। মালদ্বীপের খেলোয়াড়দের সঙ্গেও সাবিনারা আনন্দঘন সময় কাটিয়েছেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরে।

এবারের সাফে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতা তহুরা খাতুন। মোট ৫ গোল করেন তিনি। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করার পর সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। তবে ফাইনালে গোল পাওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তৃতীয় স্থানে থেকে তাকে আসর শেষ করতে হয়েছে। ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন ভুটানের ডেকি হাজম। ৭ গোল করে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নেপালের রেখা পৌদেল। যিনি কার্ড নিষেধাজ্ঞায় খেলতে পারেননি ফাইনালে। তহুরা শেষ পর্যন্ত ডেকি ও রেখার চেয়ে গোল সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও দলীয় সাফল্যে যোজন যোজন এগিয়ে। তাই সর্বোচ্চ গোলদাতা না হওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপই নেই তার। তবে ত্রিভুবন বিমানন্দরে চেক-ইন করার সময়ে তহুরা আক্ষেপ করলেন ফাইনালের দ্বিতীয় মিনিটেই তার শট বারে লাগা নিয়ে। তার কথায়, ‘শট বারে লাগাটা আসলে কুফা। বারে লাগলে আর গোল হয় না।’

বিমানে ওঠার পর তহুরাকে এ বিষয়ে মনে করিয়ে দিতেই হেসে বললেন, ‘আসলে গোল পেতে কিন্তু কপালও লাগে। ফাইনালে আমার কপাল ভালো ছিল না। তাই গোল পাইনি।’ তবে দল তো জিতেছে। তহুরা বলছিলেন, ‘এ জন্যই ট্রফিটা নিয়ে ফিরতে পারছি। না হলে এই ট্রফি রেখেই বিমান ধরতে হতো।’

বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য বিমান ওঠা, বিমান থেকে এভারেস্ট দেখাটা নতুন কিছু নয়। এবার সাফ খেলতে নেপালে যাওয়ার সময়ও তারা এভারেস্ট দেখতে দেখতে গিয়েছেন। কিন্তু ট্রফি নিয়ে ফেরার সময় মাউন্ট এভারেস্ট দেখাটায় তাদের মধ্যে ছিল অন্য রকম তৃপ্তি। তাদের ভেতর কাজ করছিল অন্য রকম আত্মবিশ্বাসও। ঋতুপর্ণা যেমন বললেন, ‘এভারেস্ট দেখতে সব সময়ই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। নেপালে যাওয়ার সময়ও দেখেছি। এই এভারেস্ট জিততে মানুষ কত কষ্ট করে। অনেক কষ্ট শেষে যখন কেউ এভারেস্ট জিততে পারে, তখনই না পরিশ্রম সার্থক হয়। এভারেস্ট দেখলে তাই সব সময় অন্য রকম আত্মবিশ্বাস কাজ করে। মনে হয় আমরাও পারব।’

এই যে বিশ্বাস, এটাই আসলে বাংলাদেশের মেয়েদের শক্তি। এই বিশ্বাস থেকেই তারা জয় করে চলেছে সব। সাফের ট্রফি জয় শেষে মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে দেখতে দেশে ফেরা ঋতুপর্ণারা যেন নিজেদের আরও উঁচুতে তুলে নেওয়ারই ছবি আঁকলেন!